
ছোটবেলা ২১ সে ফেব্রুয়ারির আমেজটাই অন্যরকম ছিলো। আগের রাতে ফুলের তোড়া বানিয়ে রাখতাম। কাকু বা বাবা বানিয়ে দিতো। ফুল পাতাবাহারে জড়ানো তোড়া। ভোরেরও অনেক আগে মা উঠে রেডি করে দিতো। সাথে মাও রেডি হতো। মা বাবা আমি মাঝে মাঝে কাকুও থাকতো তার মেডিকেল কলেজ বন্ধ থাকলে বাড়িতে আসতো। আমরা সবাই বের হয়ে যেতাম। বাবা চলে যেতেন তার কলেজে আমরা বাকিরা মায়ের স্কুলে।
একেবারে খালি পায়ে বাড়ি থেকে বের হতাম আমরা। বাবার কলেজ দূরে বলে বাবা বাইকে যেতেন। আমাদের বলতেন স্কুল অব্দি এগিয়ে দিবেন কিন্তু আমরা হেঁটেই যাবো। মায়ের স্কুল প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। তখন ছিলো ইটের রাস্তা। ভেজা অসমান ইটের রাস্তায় খালি পায়ে হেঁটে যেতাম। গ্রামের দিকে তখন বেশ শীতও থাকতো। আমিও হয়তো ক্লাস টু বা থ্রিতে পড়ি। তবু কষ্ট হতো না। মায়ের স্কুলে গিয়ে আবার র্যালির সাথে আরও আশেপাশের স্কুলে যেতাম। সাথে গলায় “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” গান। শহীদ বেদীতে পুষ্পার্পণ এতো কিছু সব শেষ হয়ে যেতো ভোর হতে হতেই।
সেই সময়গুলাতে এই উদযাপনে শ্রদ্ধা ছিলো, ভালবাসা ছিলো, প্রাণ ছিলো। বড় হতে লাগলাম সব হারিয়ে যেতে লাগলো। এখনতো হাইভলিউমে গান আর চিৎকার চেঁচামেচি, রাজনৈতিক বক্তৃতা শুনি।
পুস্পিতা আনন্দিতা, নিউইয়র্ক।
৫টি মন্তব্য
শামীনুল হক হীরা
খুব সুন্দর একটা লেখা উপহার দিলেন। ভীষণ ভালো লাগল।শুভেচ্ছা জানবেন সতত।
তৌহিদ
আমরা এখন অনেকেই শো অফ করি। বাংলা ভাষার ইতিহাস ঐতিহ্যকে হৃদয়ে ধারন করিনা, যা খুবই দুঃখজনক।
শুভকামনা।
পপি তালুকদার
এখনো ভালো মনে আছে কলোনির সবাই মিলে শহিদ মিনার বানাতাম আর ফুল চুরি করে তা শহিদ মিনারে দিতাম।সত্যিই সেই দিনগুলো অন্য রকম ছিল।
ভালো থাকুন সবসময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সবকিছু ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। আগের সেই আবেগ অনুভূতি নেই। ভার্চুয়াল উদযাপন টাই মোক্ষ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম। শুভ রাত্রি
আরজু মুক্তা
কথা সত্য। সব নিষ্প্রাণ। আমেজ নেই। নিজের স্বত্বা হারিয়ে গেছে।