
ইদানিং মায়ের রুমের সামনে আসলেই পায়ের গতি শ্লথ হয়। ঘটক পাখি ভাই এর নিত্য আনাগোনা চলছে। আমিও আড়িপাতি।
মা, তোমরা যতই যাই বলো। চশমা পরা ছেলে ছাড়া আমি বিয়ে করবো না। আর দরজা লাগায় দাও।
অফিস থেকে ফিরে দেখি, টেবিলের উপর চশমা পরা মায়াবী ছেলের এক ছবি। নীচে একটা কাগজে মায়ের হাতের লেখা চিরকুট। ” ছেলেটা খুব ভালো। মোবাইল নং দেয়া থাকলো। কথা বলে দেখো। ”
তিনবার রিং হওয়ার পর ধরলো।
কল রিসিভ করতে এতো সময় লাগে কেনো?
না, মানে!
মিনমিনে স্বভাবের ছেলে আমার পছন্দ না।
হৃদ কম্পন বেড়ে গেছে!
কি? আমাকে ডাইনী মনে হয়? বশীকরণ করবো? আপনার ঘাড় মটকায় দিবো?
তা, না! কখনো এভাবে মেয়ের সাথে কথা বলিনি।
ন্যাকামো! যতো সব। অফিসে মেয়ে কলিগ নাই? এখন কী করেন?
ছাদে, চাঁদ দেখি।
আমিও দেখতেছি।
মিল পাওয়া যাচ্ছে।
মা তো বলে, আপনি ঠাণ্ডা। মুখে রা নেই।
কেনো আমি বোবা?
সেটা বলিনি। ভালোই কথা জানেন ; সেটা ভাবছি। আচ্ছা, আমার সাথে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে পারবেন?
সব পারবো।
তাহলে ছাদ থেকে লাফ দেন এখনি।
এটা কি করে সম্ভব?
কেনো? আপনি তো বললেন, সব পারবেন!
এটা তো, ইয়ে!
বুঝছি, আপনি খুব রোমান্টিক ! আজ রাখি। শুভ রাত।
আর একটু কথা বললে হয় না?
কি?
আচ্ছা। শুভরাত।
বাড়ি থেকে ওদের পরিবারে জানিয়ে দেয়া হলো। ছেলে মেয়ে কাল দেখা করবে।
আমি হৈমন্তী! একটু চঞ্চল। তবে, ধৈর্যশালী। ছেলেটির ছবি দেখছি আর ফোনালাপ ভাবছি। চশমিশ, মায়াবী চেহারা। লাজুক ভাব। জ্বালানো যাবে। মনের অজান্তে ভালো লাগা কাজ করলো।
পরদিন, নীল রং এর শাড়ি পরে তৈরি হয়ে নিলাম। সাথে ভাই, বোন, মামা, মামি। গিয়ে দেখি, ছেলেটা ফুল হাতে বসে আছে। মজা করার জন্য পিছন থেকে গিয়ে বললাম, ” খোঁপায় ফুলটা পরিয়ে দেন। ”
শাওন তো দারুণ ভাবে চমকে গিয়ে ; আমাকে দেখে বেমালুম সব ভুলে গেলো।
এই যে মিস্টার! চোখের সামনে হাত ইশারা করে বললাম।
ও হ্যাঁ! কোথায় পরাবো?
হায় কপাল! ফুল কোথায় পরে, তাও জানেন না! এই যে, চোখ দেখছেন না? চোখ বরাবর।
ছেলেটা মনমরা হয়ে চুপ করে থাকলো।
আমি বললাম , ” কবিতা শুনবেন? ”
শাওন কিছু বলে না।
শুনুন তাহলে :
“যদি মেঘলাদিনের এক বিকেলে
কবি হয়ে আসি ; তোমার প্রিয় শহরে
কফি হয়ে হাঁটবে কি হৃদয়ের আলপথ ধরে?”
না! মন ভালো হলো না !
আচ্ছা, গান শোনেন। ” তুমি বরুণা হলে হবো আমি সুনীল। তুমি আকাশ হলে হবো শঙ্খচিল। ”
এইবার হেসে ওঠে। বলে, ” এই গানটা ওর ভীষণ পছন্দ! ”
কেমন জানি বাচ্চাদের মতো নির্মল হাসি। অদ্ভুত আর মায়াবী দৃশ্য। হারিয়ে ফেলি নিজেকে অন্য এক ভালোলাগায়। মানসপটে শুধু দুজন। আচমকা দেখি, শাওনও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে, মা কে বলি, ” ছয় ঋতু আর বারো মাসের প্রত্যেক দিন ; এই ছেলের সাথে কাটাবো। ”
মা সুখবরটা সবাইকে জানানোর জন্য মোবাইল বের করতে করতে ; ফিসফিসিয়ে কী বললো জানেন?
“পাগল।”
ছবি : নেট
২৫টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
‘আমাকে ডাইনী মনে হয়? ‘
এই লাইনটি দেখে চমকে গেলাম। দেখা যাচ্ছে ডাইনীরা আমাদের আশেপাশেই আছে/থাকে।
ছোট গল্পের রকম-সকম দেখছি আর দেখছি।
পাগল না কিন্তু!!
আরজু মুক্তা
হায় হায়! আপনার কবিতার ডাইনী কিন্তু আমার গল্পের নায়িকা নয়। একদম, পাগল নয়। দারুণ ব্রেনি।
ছোট গল্প নিয়ে ঘষামাজা চলছে।
সুপায়ন বড়ুয়া
রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে, মা কে বলি, ” ছয় ঋতু আর বারো মাসের প্রত্যেক দিন ; এই ছেলের সাথে কাটাব। ”
মা ফিসফিসিয়ে কী বললো জানেন?
“পাগল।”
শেষ পর্যন্ত পাগলের সাথেই হলো দেখা ?
পরে ঘর , কে বা আপন কে বা পর ?
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
শুভ কামনা দাদা।
গল্পে কতোকিছুই থাকে বা ঘটে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কি সব রোমান্টিক ব্যাপার স্যাপার! বাবা আমার মাথায় ঢুকে না। মনে হচ্ছে শীত জেকে বসেছে প্রেম সাথে নিয়ে।
কিন্তু ভালো যে লেগে গেল চাশমিশ লেখিকার লেখা! ভাবছি তার কি হবে? যাই হোক সবার জন্য দু- চারটে গোলাপ দেয়াই যায়।🌹🌹🌹🌹
আরজু মুক্তা
গোলাপ কম হয়ে গেলো না?
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চমৎকার ছোট গল্প। কাব্যিক প্রেমের কথোপকথনে মনটা রসাল হয়ে উঠলো। এমন পাগলামি সত্যিই মজার। চাশমিক লোকেরা একটু বেশি ই কিউট আর ভালো হয় মনে হয়।বছর, ছয় ঋতু, বারো মাস,সপ্তাহ, দিন, ঘন্টা, সেকেন্ড একমূহুর্ত ও তাকে ছাড়া থাকা সম্ভব নয়। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
রোকসানা খন্দকার রুকু
ছয়ঋতু আর বারোমাস ছিল! এখানে দেখছি ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড মুহূর্তও বাদ গেল না। প্রেমের ছয়চাষ বানিয়েই ছাড়বে এরা😜😜😜
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ঠিক তাই আপু।
আরজু মুক্তা
প্রেমের বারোটা
আরজু মুক্তা
কাব্যিক প্রেম চলবে।চাশমিশ যে কিউট হয় এই প্রথম জানলাম।
চলুক বারোমাসি প্রেম।
শুভকামনা
তৌহিদ
প্রেমে পড়লে মাথা পাগলই হয়ে যায়, সে প্রথম দেখাতেও হতে পারে। মনকে বোঝা বড্ড মুশকিল।
চমৎকার প্রেম ফুটে উঠেছে ছয় ঋতু আর বারো মাসের সময়ে। ভালো থাকুন আপু।
আরজু মুক্তা
মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো।
শুভকামনা
আলমগীর সরকার লিটন
বেশ রোমান্টিক অনেক শুভ কামনা মুক্তা আপু
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন সবসময়
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর গল্প পড়ে পাগলই হলাম। পড়তে পড়তে মনে হল সত্যই।
সবাই বিদেশি খোজে!
আরজু মুক্তা
এই বললেন গল্প পড়তে পড়তে মনে হলো, সত্যি।
এটাতেই আমার লিখার স্বার্থকতা।
ধন্যবাদ ভাই।
শামীম চৌধুরী
হবু বরের সঙ্গে রাতে কর্কশ বা কাটা-ছিঁড়া ফনোলাপে যে কোন চশমাওয়ালা ডাইনীই মনে করবে। ভাগ্য ভালো ছেলেটা বলার আগেই আপনি ডাইনী সেই পরিচয় দিতে পেরেছেন। আর আপনার সাহসের তারিফ করছি ছেলের হাতের ফুল আপনার চুলে গুজে দেবার প্রস্তাবে। ইশশশশশ…আপনার কি একটুও লজ্জ্বা শরম নেই।
যাক শেষ পর্যন্ত ৬ ঋতু ও ১২ মাস এই চশমাওয়ালার সঙ্গে জীবন কাটানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।
আরেকটা কথা, আপনার চশমাওয়ালাকে সাবধানে রাখবেন। এমন করে মিডিয়াতে মেলে ধরবেন না। বলাতো যায় না কত বাবুরা ক্রাশ খাবে।
খুব উপভোগ করলাম লেখাটা আপু।
আরজু মুক্তা
বাবুদের জ্বালায় জীবন শেষ।
আপনার কমেন্ট পড়ে আমি হাসতে হাসতে শেষ।
শুধু আমি না, বাসার সবাই। গল্প ভালো লাগলেই আসে লেখার সার্থকতা।
আপনার জন্য শুভকামনা। 🌹🌹🌹🌹
খাদিজাতুল কুবরা
বাহ্ রোমান্টিক গল্প!
যতই মিচকা হোক এমন পরিস্থিতিতে সবাই রোমান্টিক হয়ে যায়। চশমিশ ছেলে পাগলী মেয়ে দারুণ জুটি।
খুব ভালো হয়েছে অনু গল্প।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
শুভকামনা
শামীনুল হক হীরা
অপূর্ব ভাবনার অনন্য উপস্থাপনা করলেন প্রিয়,ভীষণ ভাল লাগ।।। শুভেচ্ছা রইল পাতায় সম্মানিত কবি।
আরজু মুক্তা
কমেন্ট পড়ে ধন্য হলাম।
শুভকামনা ভাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
“আপনার চশমাওয়ালাকে সাবধানে রাখবেন। এমন করে মিডিয়াতে মেলে ধরবেন না। বলাতো যায় না কত বাবুরা ক্রাশ খাবে” এই লাইন গুলো শামীম ভাইয়ের কাছ থেকে ধার নিলাম। ছোট গল্প অনেক ভালো লাগলো। শুভ কামনা 🌹🌹
আরজু মুক্তা
আপনাকেও ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন। শুভকামনা