
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত্রি যখন ছুঁইছুঁই, তখনই নতুন আত্মীয়রা কাজলকে এই ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলো। এতোদিনে নিজের একটা ঘর হওয়াতে তার বেশ ভালোই লাগছে। নিজের ঘর! নিজের মতো সাজিয়ে-গুজিয়ে রাখা, নিজের মতো করে থাকা! কার না ভালো লাগবে! ওর ইচ্ছে করে এখনই ঘরটা সুন্দর করে সাজিয়ে নিতে। খাটের রেলিংয়ে ঝুলে থাকা নানারঙের প্লাস্টিকের ফুল আর ঝুল, ঘরভর্তি রঙ্গিন কাগজের নকশায় তৈরি শোপিস গুলো তার ভালো লাগছে না। এরা ঘর সাজাতে-সাজাতে সিলিং ফ্যানটাকেও সাজিয়ে ফেলেছে। ফ্যানের ঠিক মধ্যখানে বেশ বড়সড় একটা ফুলের থোঁকা আঠা দিয়ে লাগানো। ওদিকে তাকালেই ওর গরমে অতিষ্ঠ দেহটা আরও ঘেমে উঠছে।
– আসসালামু আলাইকুম
চমকে উঠে কাজল, চোখ না তুলেই সালামের জবাব দেয়। তাকে বলা হয়েছে প্রথমেই সে যেন চোখে-চোখ না রাখে। কিন্তু তাই বলে সে কিছুই দেখবে না নাকি! আড়চোখে দেখে নেয়, তিনি তার প্রতিকী পোশাক পাল্টে বাসায় পরার লুঙ্গিটাকে কোমড়ে গিঁট দিয়ে নিলো। “ গরমে পাগল হয়ে গেছি, এই গরমে পাগল ছাড়া কেউ বিয়ে করে! ”
খাটের পাশে বসে একদৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে আছেন তিনি। কাজল একটু একটু কাঁপছে। এখন গরম-শীত কিছুই অনুভব করছে না ও। চোখ তুলে অর্ধনগ্ন ব্যক্তিটাকে সে এখন আর দেখতেও চাইছে না।
ঘরের ভেতর ঘুটঘুটে অন্ধকার। সবই দেখতে পাচ্ছে চোখ খুলে-না খুলেও! বজ্রপাত নেই, বৃষ্টির শীতল-স্নিগ্ধতা নেই। দেহের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রবল ঝড়-ঝঞ্ঝা, রুদ্ধশ্বাসে মনের উপরেও বয়েছে, যা কোনদিন ভুলতে পারবে না, ভোলা যাবে না।
এই ঘর কাজলের নয়,
এই পুকুর?
ক্লান্ত বিধ্বস্ত শরীরে শীতল পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে কেউ! পুকুরের পানি হঠাৎ করেই খুব আপন মনে হয়..খুউউব।
* ছবি- নেট থেকে নেয়া।
১৪টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চমৎকার বর্ণনায় বাসর রাতের চিত্র দেখলাম। মেয়েদের আপনালয় এমন করেই গেঁথে যায় মনে যা থেকে আদৌ সরে যাওয়া যায় না। আপন না হলেও আপন করে নিতে হয়, চাওয়া পাওয়ার কোন মূল্য নেই । একরাশ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
সাবিনা ইয়াসমিন
এমন করেই সব আপন হয়ে যায় একদিন, স্বেচ্ছায়/ অনিচ্ছায়-ও।
ধন্যবাদ প্রথম মন্তব্যর জন্য 🌹🌹
প্রদীপ চক্রবর্তী
খুবি ভালো লাগলো ছোটগল্প পড়ে দিদি।
সংসারে মেয়েদের আপনালয় আপন করে নিতে হয়।
সাবিনা ইয়াসমিন
ছোট গল্প লেখার চেষ্টা করছি। ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ, শুভ কামনা 🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
লুঙ্গি পরিহিত বর আর বাসর বমি পেয়ে গেল॥
ওঠ ছুড়ি তোর বিয়ে- এ জামানা শেষ হবে কবে?
মেয়েদের চাওয়া পাওয়ার কোন মূল্য নেই। কেউ দেবেও না।
ছোটগল্প কিন্তু অভিব্যক্তি সমুদ্রসম। আপনি যাই লিখেন কি যেন থাকে পড়তে ভালো লাগে। শুভ কামনা রইলো।🌹🌹
সাবিনা ইয়াসমিন
ওঠ ছুড়ি তোর বিয়ে-র ফ্যান্টাসি যতদিন থাকবে ততদিন এই জমানা শেষ হবার নয়।
বমি পেলে কী আর করার, দিনশেষে সবাই আটপৌরে 🙂
গল্পের বিষয়টা আপনি ধরতে পেরেছেন! অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা আপনাকে 🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
এই ঘর কাজলের না হলেও পুকুরটা কাজলের।
আমাদের সমাজে এমন কাজলেরই আধিক্য,
তাদের কান্না তাদের কাছেই থাকে।
লেখা ভালো হয়েছে।
শুভ কামনা।
** একটি লেখার বিষয়বস্তু পেলাম আপনার লেখা পড়ে। সময় পেলে কিছু লেখার ইচ্ছে আছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
সাবিনা ইয়াসমিন
ঘর অথবা দোর কিছু না কিছু আপন হয়েই যায়, এভাবেই কাজলেরা গড়ে নেয় আপনাপন আপনালয়।
লিখবেন, আমাদেরও পড়তে ভালো লাগবে।
তৌহিদ
আমাদের সমাজে মেয়েদের এই পরিস্থিতি আমাদেরই চাপিয়ে দেয়া। একটা সময় দেখা যায় সেই নারী অনিচ্ছায় হলেও এসবকিছু মেনে নিয়ে নিজের মত সবকিছু সাজিয়ে নিয়েছে। কে রাখে তার মন পোড়ার যন্ত্রণা।
চমৎকার করে বাস্তব একটি বিষয়কে ফুটিয়ে তুললেন আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
সব কিছুকে মেনে নিয়ে চলতে জানে বলেই হয়তো নারীকে মাটির সাথে তুলনা করা হয়। মাটি যেমন সব গড়তে পারে, সইতে পারে, মেয়েরাও তাই।
সুন্দর মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ আপনাকে 🌹🌹
খাদিজাতুল কুবরা
আজকে একটি জীবন গল্প শুনলাম এমনই বৃত্তান্ত।
যে মেয়ের বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের রাতটি এমন ভীবৎসতায় পার করার অভিজ্ঞতা আছে তাকেও হাসিমুখে সংসার করে যেতে হয় আজীবন। ছোট গল্প হলেও এর ব্যাপকতা বৃহৎ। বিষয়বস্তু ও স্পর্শকাতর।
খুব ভালো লিখেছেন আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
আমাদের আশেপাশে, চেনাশোনা এমন অনেক কাজলের জীবনের গল্প এটা। এমন গল্পের নাম/চরিত্র গুলো পালটায়, কিন্তু থেমে থাকে না।
ভালোবাসা নিরন্তর ❤️❤️
সুপায়ন বড়ুয়া
গ্রামীন ছবির সাথে গল্পের চমৎকার মিল
ছেলেবেলার কথাই মনে পড়ে গেল।
ভালই হল। শুভ কামনা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ দাদা।
ছবিটি আমারও খুব পছন্দের।
শুভ কামনা 🌹🌹