
‘বড় গলা গগণবেড়’ Pelecanidae পরিবারে অন্তর্ভুক্ত একটি বৃহদাকার জলচর পাখি। পাখিটির দৈর্ঘ্য ১৮২ থেকে ১৮৫ সে.মি. এবং ওজন ১১ থেকে ১২ কেজি। বিশ্বে ৯ প্রজাতির Pelican বা গগণবেড় দেখা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে কোথাও এই পাখির অস্তিত্ব নেই। তবে গত ২০১৭ সালে নভেম্বর মাসের শেষ দিকে রাজশাহীর পদ্মার চরে এক ঝাঁক রাঙ্গা মানিকজোড়ের সঙ্গে একটি গগণবেড় দেখা যায়।
খবর পেয়ে ঐদিন রাতেই বার্ডস ফটোগ্রাফার আদনান আজাদ আসিফকে সঙ্গে নিয়ে চলে যাই রাজশাহী। ছবি তোলার চেয়ে বেশী আগ্রহ ছিলো এত ওজনের পাখিটি উড়ে কীভাবে দেখা। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে কোথাও গগণবেড় দেখা যায়নি। বর্তমানে মিরপুর চিড়িয়াখানায় তিনটি গগনবেড় খাঁচারপাখি বা কেইজ বার্ড হিসেবে আছে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ পাখিগুলোর উপযুক্ত খাবারের মাধ্যমে যত্নে লালন পালন করছে। ডানার পালক কেটে দেয়ার কারণে উড়তে না পারলেও পাখিগুলো চিড়িয়াখানার লেকে অন্যান্য কাজ মুক্ত ভাবেই করে বেড়াচ্ছে।
বিশালদেহী জলচর বড় গলা গগণবেড় পাখি অত্যন্ত লম্বা। ঠোঁট ভারী ও নমনীয়। ঠোঁটের উপরি ভাগ চ্যাপ্টা ও শেষ মাথা বাঁকানো। গলায় বিশাল থলি আছে। যখন থলিটিকে প্রসারিত করে তখন যে কোনো শিশু বাচ্চাকে অনায়াসে সেই থলির ভিতর বসিয়ে রাখা যাবে। প্রজননের সময় পুরুষ পাখির দেহ সাদা ও মাথার পিছনে ঝুঁটি ঝুলে থাকে। কপালের পালক ঠোঁটের উপর থরে থরে সাজানো। ডানার দুই পাশে কালো দাগ স্পষ্ট দেখা যায়। চোখ গাঢ় লাল বর্ণের। ঠোঁটের প্রান্ত লাল হয়। ঠোঁটের মাঝখানে হালকা খয়েরী-নীল বর্ণের ও মাঝখানে সাদা বিন্দুর নকশা করা। ঠোঁটের নিচের অংশ হলুদ বর্ণের। গলায় বড় থলি আছে। যা প্রয়োজনে প্রসারিত করে। থলের চামড়া হলুদ। প্রজনন সময় ছাড়া এরা পালকহীন থাকে। তখন মাথায় ঝুটি থাকে না। এদের শরীরে পালক বাদামী সাদা। ঘাড় ও পিঠ বাদামী।
এরা হাওর, বিল, বড় জলাশয় ও উপকূলে বিচরণ করে। সচরাচর জোড়ায় থাকতে পছন্দ করে। মাঝে মাঝে ছোট ছোট ঝাঁকেও থাকে। সাঁতার কেঁটে পানিতে ভেসে এরা আহার খোঁজে। মাছ ও চিংড়ি জাতীয় প্রাণী এদের প্রিয় খাবার। শিকারের সময় অগভীর পানিতে মাছের ঝাঁক ঘিরে ফিলে। বিশাল হাঁ করে নিচের ঠোঁট পানিতে ডুবিয়ে গলার থলি প্রসারিত করে জালের মতো বিস্তার করে মাছ শিকার করে। এদের মাছ শিকারের পন্থাটা অভিনব। শিকারের ফাঁকে ফাঁকে ঘোঁতঘোঁত শব্দ করে। এরা ব্যাঙের মতো কর্কশ গলায় ডাকে।
ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস এদের প্রজনন সময়। প্রজননের পর ভারতের গুজরাট ও মধ্য এশিয়ায় হাওর, বিল বা জলাশয়ের ধারে মাটিতে ডাল দিয়ে বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় ৩ থেকে ৪টি ডিম পাড়ে। এদের ডিম ফুঁটতে এক মাসের অধিক সময় লাগে। বাচ্চা ফুঁটতে সময় নেয় প্রায় ৬০-৭০ দিন।
এরা বাংলাদেশে অনিয়মিত পাখি। ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায় এই পাখি উনিশ শতকে ঢাকায় দেখা গিয়েছিল। আর শেষ দেখা যায় ২০১৭ সালে নভেম্বর মাসের শেষে রাজশাহীর পদ্মার চরে। এ ছাড়া ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, আফ্রিকা ও ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলে এদের বৈশ্বিক বিস্তৃত আছে।
বাংলা নাম: বড় গলা গগণবেড়
ইংরেজি নাম: Pelican
বৈজ্ঞানিক নাম: Pelecanus onocrotalus
৩১টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
১২ কেজি ওজন। বিশাল বড়। উপরের ছবিটা মন ভোলানো। খুব সুন্দর লাগছে ভাই। নিচে কত বড় হা করে বসে আছে। ভয় ও লাগে।
ধন্যবাদ বড় গলা গগণবেড় দেখানোর জন্য।
শামীম চৌধুরী
শুভ কামনা রইলো ভাই।
ভালো থাকুন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বাপরে শিশু বাচ্চা কে থলিতে রাখা যায় আর অনেক বড় পাখি। শিকার ধরার কায়দা টা সত্যিই অসাধারণ একদম মানুষ যেভাবে জাল ফেলে মাছ ধরে। অনেক সুন্দর পাখিটি বিশেষ করে গায়ের রং টা অসম্ভব সুন্দর। আবারো অফুরন্ত ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো
শামীম চৌধুরী
দিদিভাই, একদম সঠিক বলেছেন। নবজাতক শিশু গলঃধকন হয়ে যাবে।
সুন্দর ও উৎসাহমূলক মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞ রইলাম।
ছাইরাছ হেলাল
এ দেশে এই পাখি আছে ভাবতে অবাক লাগে, আমিও ভাবি কেমনে উড়ে,
আপনি রাজশাহী গিয়ে কী কী কেমনে কী করলেন তা কিন্তু জানান -নি!! দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
হা দেখে তো ভয় লেগে যাওয়ার মত অবস্থা।
শামীম চৌধুরী
রাজশাহী যেয়ে উনাকে পাইনি। তবে ভরতপুরে উনাকে মনের মতন পেয়েছি।
সুপায়ন বড়ুয়া
আপনার সাথে আমরা ও সৌভাগ্যবান বলা যায়
এত বেশী ওজনের পাখি ওড়ন্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ ভাইজান।
সুপায়ন বড়ুয়া
উড়ন্ত অবস্থায়।
শামীম চৌধুরী
নাহ ঠিক আছে বুঝতে পেরেছি।
হালিম নজরুল
পাখি নিয়ে আপনার একটা বই চাই।
শামীম চৌধুরী
খুব শীঘ্রই শিশুতোষ পাখির উপর বই বাজারে আসছে।
ফয়জুল মহী
দারুণ অভিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ।
আরজু মুক্তা
আমি দেখেছি। সম্ভবত দিনাজপুরে রামসাগরে।
বাকি ইতিহাস জেনে ভালো লাগলো
শামীম চৌধুরী
নাহ আপু,
এটা কখনই দিনাজপুরের রাম সাগর দাঘিতে যায় নি। ১৯ শতকে একবাই বাংলাদেশে দেখা গিয়েছিল। আর শেষ দেখা যায় ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর রাজশাহীর পদ্মার চরে।
আরজু মুক্তা
আমি এ্যালবাম ঘাটলাম। ছবিটা দিবো বলে। পেলাম না
শামীম চৌধুরী
মুক্তা আপু,
সেটা সম্ভবত এশিয়ান ওপেনবিল বা শামুকখোল পাখি হবে। ছবিটা পেলে দেখাবেন। তবেই বলতে পারবো। যদি পেলিকেন হয় তবে আমাদের জানা ইতিহাসটা ভাঙ্গবে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
চীনের লোকজন এরকম পাখি ছেড়ে দিয়ে মাছ ধরে। নাম জানিনা। ভাইয়া আপনার জীবন স্বার্থক অসাধারণ দৃশ্য দেখে দেখে।
শুভ কামনা ভাই।
শামীম চৌধুরী
জ্বী সঠিক বলেছেন। আমাদের দেশের উদ দিয়ে যেমন ফাঁদ পাতে তেমনি
খাদিজাতুল কুবরা
আপনার ভ্রমণের কাহিনী সাথে দুর্লভ পাখির বৃত্তান্ত পড়ে সত্যি লোভ হয়।
বাপরে! বার কেজি ওজনের পাখি ভাবা যায়না।
আবার গলায় থলে আছে বাচ্চা রাখার জন্য।
খুব ভালো লাগলো জানতে পেরে।
স্বচক্ষে তো আর দেখা হবেনা।
আপনার ছবিতে দেখলাম।
শামীম চৌধুরী
একবা স্বপরিবারে চলুন আমার সঙ্গে ভ্রমন হবে সাথে পাখি দেখা।
ভাল থাকবেন নিরন্তর।
শুভ কামনা রইলো।
খাদিজাতুল কুবরা
আপ্লূত হলাম ভাইয়া এমন আন্তরিক নিমন্ত্রণ পেয়ে।
ইনশাআল্লাহ আশা রাখছি
শামীম চৌধুরী
ইনশাল্লাহ। সময় ও সুযোগ হল্ দুই পরিবার যাওয়া হবে।
তৌহিদ
পাখিটি দেখতেও কিন্তু দারুণ! বড়গলার গগনবের তার নামটাও কিন্তু ভিন্নরকম। আরো যে কত কত পাখি সম্পর্কে জানবো আপনার মাধ্যমে ভাবতেই আনন্দ লাগছে।
ভালো থাকুন ভাইয়া।
শামীম চৌধুরী
৪৫০+ পাখির ছবি তোলা আছে। এক এক করে সব দেখতে ও জানতে পারবে। যদি বেঁচে থাকি।
তৌহিদ
অপেক্ষায় আছি অবশ্যই।
জিসান শা ইকরাম
এত ওজনের পাখি! এতো বড় একটি ছাগলের ওজনের চেয়েও বেশি!
Pelican বা গগণবেড় পাখি সম্পর্কে তেমন কিছু জানতামই নাম, বিস্তারিত জানানোর জন্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
রাজশাহীতে দেখতে পেলে তো জানতাম যে মুক্ত গগণবেড় পাখি আমাদের শামীম ভাই নিজে চোখেই দেখেছেন আমাদের দেশে।
চিড়িয়াখানায় গিয়ে এবার ভালোভাবে দেখবো।
শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
রাজশাহীতে যদিও মুক্ত গগনবেড় দেখা পাইনি সত্যি। তবে ভরতপুরে ঠিকই মুক্ত গগনবেড় দেখলাম। আর এত ওজনের পাখি কিভাবে উড়ে সেটা দেখার যে শখ ছিলো সেটাও পূরন হলো ভাইজান।
ধন্যবাদ মল্তব্যের জন্য।
সুরাইয়া পারভীন
বাপরে বিশাল দেহের অধিকারী এই গগণবেড় উড়তে পারে! ঠোঁটের নিচের থলিতে আবার একটা শিশুও রাখা যায়! এমন পাখি এদেশে আছে ভাবায় যায় না।
অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি দাদাভাই এই বিশাল দেহের গগণবেড় এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
শামীম চৌধুরী
আপনিও ভাল থাকুন আপু।