দুর্লভ পাখি কাস্তেচরা

শামীম চৌধুরী ২ অক্টোবর ২০২০, শুক্রবার, ০৬:১৫:৪৪অপরাহ্ন পরিবেশ ৩০ মন্তব্য

মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ। খোলা আকাশের নিচে হাঁটছি। বেশ ক্লান্ত। বিশ্রামের জন্য বাইক্কা বিলের টাওয়ারে উঠে বসে আছি। টাওয়ারের সামনে অল্প পানিতে পদ্মপাতা ভেসে আছে। সেই পাতার নিচে খুঁজে খুঁজে শৈবাল খাচ্ছে জলচর পাখি।। এমন সময় পাখির একটি ঝাঁক এসে বসলো জলজ উদ্ভিদের উপর। পাখিগুলো দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম বক জাতীয় পাখি। পরে এই পাখির পরিচয় জানতে পারি। এদের নাম ‘কাস্তেচরা’। অনেকেই মনে করেন এরা পরিযায়ী পাখি। আসলে এরা পরিযায়ী নয়। আমাদের দেশের দুর্লভ পাখি।

কাস্তেচরা Threskionis পরিবারের অন্তর্ভূক্ত মাঝারি আকারের ৭৫ সেমি দৈর্ঘ্যের জলচর পাখি। বয়স্ক পাখির মাথা ও ঘাড় পালকহীন। ঠোঁট নিচে বাঁকানো ও কালো রঙের। মাথা ও ঘাড় ছাড়া দেহ সাদা। ঘাড়ের গোড়ায় কিছু পালক ঝুলে থাকতে দেখা যায়। ডানা সাদা-ঢাকনিতে ধুসর আভা। বুকে হলুদ আভা। অনেক সময় কাঁধে সাদা পালক থাকে। ঘাড় নীলচে কালো। চোখ লাল বাদামী। পা লম্বা। পায়ের পাতা কুচকুচে কালো। প্রজননের সময় পুরুষ পাখির ঘাড়ে পালকে সজ্জিত থাকে। পুরুষ ও মেয়ে পাখির চেহারায় ভিন্নতা আছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও ঘাড়ের নিচের অংশ কালো ও নরম পালক থাকে। ঘাড়ের সামনের অংশ সাদা।

কাস্তেচরা জলাভূমি, নদী, তৃণভূমি, ধানক্ষেত, কাদাচরা ও উপকূলের জোয়ার-ভাটার খাঁড়িতে বিচরণ করে। এরা সচরাচর দল বেঁধে থাকে। একেকটি ঝাঁকে অন্তত ২০০-২৫০ পাখি দেখা যায়। কাদা বালু ও অগভীর পানিতে ঠোঁট ঢুকিয়ে এরা খাবার খুঁজে খায়।  মাছ, ব্যাঙ, ছোট শামুক, কেঁচো, শৈবাল এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে। শীত মৌসুমে এরা নীরব থাকে, কিন্তু গরমের সময় ঘোঁত ঘোঁত শব্দ করে ডাকে। ওড়ার সময় এরা বকের মত গলা ভাঁজ করে না।

জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এদের প্রজনন সময়। প্রজননকালে বক ও পানকৌড়ির সঙ্গে মিশে যায়। পানির ধারে জলমগ্ন গাছে কিংবা গ্রামের কুঞ্জবনে ডালপালা দিয়ে ছোট মাচার মত বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়ে পাখিটি ২-৪টি সাদা ডিম পাড়ে। ২০-২৫ দিনের মাথায় ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। মা-বাবা উভয়েই বাচ্চা লালন-পালন করে।

কাস্তেচরা আমাদের দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। শীত মৌসুমে বরিশাল, হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ, মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ, শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিল, টাঙ্গুয়ার হাওর, রাজশাহীর পদ্মার চর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ভোলায় দেখা যায়। এ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমারসহ এশিয়ার অনেক দেশেই এদের বিচরণ রয়েছে। বিশ্বে ৫ প্রজাতির কাস্তেচরা আছে। কিন্তু আমাদের দেশে এক প্রজাতি দেখা যায়।

বাংলা নাম: কাস্তেচরা

ইংরেজি নাম: Black-headed Ibis

বৈজ্ঞানিক নাম: Threskionis melanocephalus

ছবিগুলো হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপের দমারচর  ও ভারতের ভরতপুর থেকে তোলা।

১২৮৪জন ১১৩৭জন
0 Shares

৩০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ