
লাইনটা যে কেটে গেছে সেদিকে খেয়ালই নেই সুনয়নার। ফোনটা কানে ধরে রেখেই যেনো ভাবনার অতলে হারিয়ে গেছে সে। সুনয়নার ব্যাপারটা একদম ঠিক লাগছে না। মনের মধ্যে অজস্র প্রশ্নের আনাগোনা। হঠাৎ এতো অস্বস্তি লাগছে কেনো? মন বলছে কিছু একটা ঘটতে চলেছে। কিন্তু কী ঘটতে পারে তা সে আন্দাজও করতে পারছে না। কতোকিছু আবল তাবল ভাবার ফলে মস্তিষ্কে চাপ পড়ে সুনয়নার মাথার যন্ত্রণাটা যেনো তড়তড় করে বেড়েই চলেছে। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। হঠাৎ চমকে উঠে দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকায় সুনয়না। সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে, নিশ্চয়ই সেঁজুতি এসেছে! আসছি সোনা বলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো সুনয়না।
-মামুনি কী করছিলে এতোক্ষণ? কখন থেকে কলিংবেল দিচ্ছি।
-স্যরি সোনা!
-মামুনি তুমি কী ঘুমাচ্ছিলে?
-না সোনা। তুমি তো জানোই আমার দিনে ঘুম আসে না।
-সে তো জানি। কিন্তু তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? তোমার মাথার যন্ত্রণা কী বেড়ে গেছে?
-ঐ একটু। সিরিয়াস কিছু না। যাও ফ্রেশ হও আমি তোমার জন্য নাস্তা বানাচ্ছি।
-মামুনি শোনো না আজ তোমাকে কিছু বানাতে হবে না। তুমি বসে রেস্ট নাও আমি আসছি একটু পর।
-সোনা তোমার খুদা পেয়েছে তো।
-আহা! একটু চুপ করে বসো তো। আসছি আমি
সেঁজুতি ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গেলো। পাঁউরুটির ঝাল ডিম টোস্ট বানানো। সেঁজুতি ডিম টোস্ট এবং দুই মগ কফি নিয়ে বেলকনিতে গেলো। গিয়ে দেখলো সুনয়না রেলিং এ ভর দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। সেঁজুতির মনের মধ্যে কেমন করে উঠলো! এ কাকে দেখছে সে? যেনো অদ্ভুত সুন্দর মায়াবতী এক মধ্যবয়স্কা নারী! সুনয়না যে আজ নীল শাড়ি পরেছে তা এই এক্ষুনি দৃষ্টি গোচর হলো সেঁজুতির। মনে মনে ভাবছে বাহ্ এতো সুন্দর আমার মামুনি!
সেঁজুতির বুদ্ধি হবার পর থেকে সে তার মামুনিকে কখনো শাড়ি পড়তে দেখেনি। সালোয়ার কামিজ ই পড়েছে তাও কিনা সাদা কালো। অন্য কোনো রঙের জামা কাপড় তার পরোনে দেখেনি। সেঁজুতি টি-টেবিলে নাস্তার ট্রে রেখে চেয়ারে বসে পড়লো। গালে হাত দিয়ে চেয়ে রইলো সুনয়নার দিকে । হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো আকাশনীলা। সুনয়না বললো
-আকাশনীলা! সেটা আবার কে?
-মামুনি তুমি, তুমিই আকাশনীলা! দেখো না, দেখো আকাশের নীল এসে যেনো তোমার অঙ্গে মিশেছে। তোমায় অপরূপ সুন্দরী করে তুলেছে। মামুনি এই যে এতো রূপ, সৌন্দর্য কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলে!
সুনয়না একটু লজ্জা পেয়ে বলল…
-সেঁজুতি কি হচ্ছে এসব!
-চুপ, চুপ করো থাকো এবং আমাকে দু’চোখ ভরে দেখতে দাও।
সুনয়না সেঁজুতির কান আলতো করে চেপে ধরে বলছে-
-খুব পেকে গেছো তাই না। দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা…
-উফ্! মামুনি ছেড়ে দাও না, লাগছে তো
-সে একটু লাগুক। একটু লাগলে কিছু হয়না।
-মামুনি দেখো আমি তোমার জন্য তোমার প্রিয় ঝাল ডিম টোস্ট আর কফি বানালাম আর তুমি কী না আমার কান ধরে আছো! কফি ঠান্ডা হবে তো। নাও তো তাড়াতাড়ি খেয়ে বলো তোমার মেয়ে কেমন কফি বানিয়েছে।
-তুমি এতো কষ্ট করতে গেলে কেনো? আমিই বানাতাম
-মামুনি রোজ তো তুমিই করো আজ না হয় আমিই করলাম। এ আর এমন কী কষ্ট? নাও নাও
সুনয়না এক কামড় টোস্ট মুখে নিয়ে বললো বাহ্ দারুণ হয়েছে তো খেতে। বলেই গবগব করে দুটো খেয়ে নিলো। পানি খেয়ে হাতে কফির মগ নিয়ে রেলিং এর কাছে গেলো। এক চুমুক কফি খেয়ে বললো বাহ্ সেঁজুতি!
-তুমি তো আমার থেকে ভালো কফি বানাতে পারো। এখন থেকে তো রোজ তোমার হাতের কফিই খেতে হবে।
সেঁজুতি চেয়ার থেকে উঠে কফির মগ হতে নিয়ে মায়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো…
-আহ্! এমন মিষ্টি সুন্দরী সুদর্শিনী মায়ের মেয়ে আমি। এটুকু গুণ তো আমারও থাকবে তাই না। জানো মামুনি নীল রঙের শাড়িতে দারুণ লাগছে তোমাকে। কী সুন্দর মানিয়েছে। আগে কেনো শাড়ি পরোনি? আচ্ছা মামুনি তুমি শুধু সাদা কালো ড্রেস পরো কেনো?
-এমনিই সোনা। আমার সাদা কালো পোশাকে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আর আমি শাড়ি কেরি করতে পারি না তাই পরি না। ছাড়ো এসব তোমার ইউনিভার্সিটির প্রথম দিন কেমন কাটলো বলবে না আমাকে….
সেঁজুতি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সুনয়নার দিকে। মনে মনে ভাবে মানুষটাকে সবসময় কড়া ধাঁচের মনে হয়েছে। হ্যাঁ মামুনির সাথে আমার বন্ডিংটা দারুণ। তবে আগে কখনো এতো অন্যরকম দেখিনি।
-সেঁজুতি,এই সেঁজুতি!
-হ্যাঁ মামুনি বলছি বলছি…
ছবি-গুগল
১৬টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
ভালোই লাগলো মা মেয়ের কথন। পারিবারিক বন্ধন এমন হওয়া উচিত।
শুভকামনা
সুরাইয়া পারভীন
একদম সঠিক বলেছেন আপু
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
শামীম চৌধুরী
দারুন ফুটিয়ে তুলেছেন মা মেয়ের কথোপকথন। আপনার লেখা ভাল।
সুরাইয়া পারভীন
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদাভাই
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
দোয়া করবেন আমার জন্য
সুপায়ন বড়ুয়া
মা মেয়ের ডায়লগে মনটাই গেল ভরে
মা মেয়ের প্রশংসা ধন্য কজনাবাই পারে।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
ছন্দে ছন্দে মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ সহ কৃতজ্ঞতা জানবেন দাদা।
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মায়ের জন্য মেয়ের এমন আবেগ, ভালোলাগা খুব ভালো লাগলো আপু। খুব সুন্দর আগাচ্ছে। কিন্তু এতো গ্যাপে দিলে গল্পের মজাটা ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা অবিরত
সুরাইয়া পারভীন
আর গ্যাপ দেবো না দিদিভাই
এবার আগে গল্পটা শেষ করবো তারপর অন্য লেখা।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দিদিভাই।
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
রোকসানা খন্দকার রুকু
মা মেয়ের বন্ডিংটা দারুন লাগলো।এমন সম্পর্কই হওয়া উচিতএকেবারে বন্ধুর মত।তাহলে সন্তান খারাপ পথে যায় না।
মা কিন্তু সুন্দরই হয়।
ভালো লাগলো আপু।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
সব সন্তানের চোখে মা সুন্দর। অদ্ভুত সুন্দর
একদম সঠিক বলেছেন আপু
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
রেজওয়ানা কবির
আগের পর্বগুলো পড়া হয়নি, কিন্তু এই পর্বে মা মেয়ের সম্পর্ক দারুন লাগল,পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি।
সুরাইয়া পারভীন
পরের পর্ব দেবো আপু তাড়াতাড়ি ই
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
ছাইরাছ হেলাল
১৯ তারিখের পর এতদিন বাদে পর্ব দিলে মনে থাকে কী করে!!
এমনিতেই ভুল মন!
মা মেয়ে পর্ব ভালই, নীলাকাশ তো চেয়ে আছে বারান্দাতেই।
সুরাইয়া পারভীন
আমি দুঃখিত ভাইয়া এতো দিন পর গল্পের পর্ব দেবার জন্য 😰 এখন থেকে রেগুলার লিখবো। আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
তৌহিদ
আগের লেখা পর্বের এতদিন পরে এই লেখা পড়ে খেই হারিয়ে ফেলেছি আপু। চলুক গল্প। মা মেয়ের কথোপকথন ভালো লেগেছে।
শুভকামনা রইলো।
সুরাইয়া পারভীন
এখন থেকে রেগুলার লিখবো ভাইয়া
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়