আমরা ভরতপুরের কেওলাদেও ন্যাশনাল পার্কে একটানা দু’দিন বিচরন করে শেষ দিনে সন্ধ্যা ৭:০০টায় মূল ফটকে পৌছালাম। জীতেনদের পারিশ্রমিক মিটিয়ে সবাইকে নিয়ে বনের ক্যাফেটরিয়াতে ঢুকলাম। সারাদিনের অর্ধাহার ও টানা কাজে দেহ-মন ক্লান্তিতে অবসাদ হয়েছিল কিছুটা সময় বিশ্রমা নিলাম। আস্তে আস্তে ঠান্ডা বাড়তে শুরু করলো। সবাই কফি ও হালকা নাস্তা নিলাম। কফির পেয়ালায় চুমুক দিয়ে ভাবছিলাম-
আবার কবে আসা হবে কে জানে! দুদিনের সফরে বনটাকে নিজের অজান্তে ভালোবেসে ফেলেছি। কিছুতেই বন ছেড়ে যেতে ইচ্ছা হচ্ছিলো না। কিন্তু ফিরে না আসার কোন উপায় নেই। আর নিয়মত্রান্তিক ভাবে সব চলে। নিয়মের বাহিরে এক পা অগ্রসর হবার ক্ষমতা কারো নেই।
আমরা যখন বনের ফটক থেকে বের হই তখন খেয়াল করলাম জীতেন, রতন সিং ও অরবিন্দ সিং ফ্যাঁল ফ্যাঁল করে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন পর রতন সিং সামনে এসে জানতে চাইলো আগামী মৌসুমে আসবো কিনা?
আমি মাথা নেড়ে সায় দিয়ে রতন সিংয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,
তোমরা ভালো থেকো ।
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের চেনা-অচেনা মানুষের সঙ্গে একবার মন খুলে কথা হলে সেই মানুষদের ভুলে থাকা খুবই কষ্টের।তাই যে কোন বিদায় পর্বটাই বেদনার। বন্ধুত্বের সঙ্গে যেমন স্বার্থ জড়ায় না, তেমনই স্বার্থযুক্ত সম্পর্কে বন্ধুত্ব হয় না। বন্ধুত্ব হয় নিঃস্বার্থ। আমার সারা জীবনে ওরা আমার বন্ধু হয়ে থাকুক। যতদিন বেঁচে থাকবো তোমাদের ভুলে যাওয় সম্ভব না।
পৃথিবীটা গোল ও ঘূর্নমান। যদি কোন দিন ঘুরতে ঘুরতে ওদের মাঝে ফিরে আসি তবে,
আবারও দেখা হবে।
কথা হবে।
ভালোবাসা আরো দৃঢ় হবে।
সে পর্যন্ত জীতেনরা ভালো থাকুক। আমি ওদের সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করছি।
বনের গেট থেকে বের হয়ে হোটেলের উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠলাম। আমরা হোটেল রুমে পৌছে যার যার রুমে চলে গেলাম। সারাদিনের খাঁটুনি আর শরীরের ঘামের সঙ্গে বনের ধুলা যুক্ত হয়ে চামড়ার উপর একটা পরু পলেস্তার পড়েছে। গ্রীজার অন করে শাওয়ার নিয়ে বিছানায় শরীরটা ছেঁড়ে দিলাম। মনে হলো স্বর্গটা বিছানায়।
কিছুক্ষন পর হোটেল বয় গরম কফি ও স্ন্যক্স দিয়ে গেল। ছেলেকে নিয়ে কফি পান করে হোটেলের লবিতে বসলাম। সতীর্থরাও একে একে সবাই আসলো। সবাই ক্লান্ত হলেও মনের ভিতর এখনো সতেজতা রয়ে গেছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ভরতপুর শহরটা ঘুরে দেখবো। আমাদের ট্যুর অপারেটর সুজিত বেরা সবাইকে সঙ্গে করে বের হলেন। হোটেল লাগোয়া একটা দৃষ্টি নন্দন পার্ক। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানলাম ভরতপুর শহরবাসী রাতে এই পার্কে ভিড় জমায়। রাতের ভরতপুর বৈদ্যুতিক আলোতে অপূর্ব। পার্কের ভিতর ছেলেকে নিয়ে ছবি তুললাম।
ভরতপুর শহরে এশার আজান শুনলাম। মনের ভিতর একটা কৌতুহুল জাগলো। জানতে ইচ্ছে হলো এই নান্দনিক শহরে শতকরা হারে কতজন মুসলমানের বাস। স্থানীয় লোকজনের কাছে জানলাম হিন্দু ধর্মালম্বী ৮৪.০৯% এবং ইসলাম ধর্মালম্বী ১৪.৫৭% জন। জেনে ভাল লাগলো। কারন ভারতের রাজস্থান রাজ্যের একটি জেলা শহরে মুসলমানদের সংখ্যা একশত জনের মধ্যে প্রায় ১৫ জন জেনে।
দেশে সবার পরিবার আছে। সন্তান-সন্তানাদিও আছে। কেনা-কাটার জন্য পরিবারের সদস্যদের কিছু দাবী ছিলো। তাই সুজিত বেরা-কে বললাম কোন শপিং মলে নিয়ে যেতে। ভরতপুরের বিলাস বহুল শপিং মল “ক্ল্যাসিকে” নিয়ে গেল। সেখানে যার যার মতন পছন্দনুসারে কাপড় কিনলাম। আমি আমার সহধর্মনীর জন্য তিনটা শাড়ী ও মেয়ের জন্য দুই সেট টু পিস কিনলাম। প্রযুক্তির যুগ। সেটাকে ভাল ভাবেই কাজে লাগালাম। হোয়াটস আপে ভিডিও কলে গিন্নী ও মেয়েকে কাপড় দেখালাম। তারা নিজেরাই নিজেদের পোষাক পছন্দ করলো। ছেলে তিনটা পলো শার্ট নিলো। আমি ক্রেডিট কার্ডে মূল্য পরিশোধ করে নাঁচতে নাঁচতে হোটেল রুমে চলে আসলাম।
পরের দিন ভোর ৬ টায় আমরা রাজস্থান রাজ্যের আরেক জেলা রন্থাম্ভোর যাবো। ভরতপুর থেকে ৩৮০ কিলো মিটার সড়ক পথ। লম্বা সফর। ঘুমেরও দরকার। রাত ১০টার মধ্যে হোটেলের ডাইনিং-এ ভাত,রুটি.পনির কাবাব, পনির মাসালাম ও ডাল দিয়ে রাতের খাবার শেষ করলাম। খাবারের পর কমলালেবুর জুস পান করে যার যার রুমে আসলাম। ঘুমানোর আগে কবি গুরু রবি ঠাকুরের সোনার তরী কাব্য গ্রন্থের “যেতে নাহি দিবো” কবিতার এই লাইনগুলি বার বার মনে পড়ছিলো-
“দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি; বেলা দ্বিপ্রহর;
হেমন্তের রৌদ্র ক্রমে হতেছে প্রখর;
জনশূন্য পল্লিপথে ধূলি উড়ে যায়
মধ্যাহ্ন বাতাসে; স্নিগ্ধ অশত্থের ছায়
ক্লান্ত বৃদ্ধা ভিখারিণী জীর্ণ বস্ত্র পাতি’
ঘুমায়ে পড়েছে; যেন রৌদ্রময়ী বাতি
ঝাঁ ঝাঁ করে চারিদিকে নিস্তব্ধ নিঃঝুম;-
শুধু মাের ঘরে নাহি বিশ্রামের ঘুম।”
কবিতাটি ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম, আর কিছুই বলতে পারবো না।
রাতের ভরতপুর বৈদ্যুতিক আলোতে অপূর্ব।
পার্কের ভিতর ছেলেকে নিয়ে ছবি তুললাম।
ছবিগুলো হলো অপূর্ব। ডিজিটাল যুগে পরিবারের
পছন্দে শপিং করা ভ্রমনটাই সার্থক হয়ে উঠলো।
সাথে আমরাও ভ্রমন করছি মনে হচ্ছে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
স্বার্থ থাকলে কোন সম্পর্ক ই ঠিক থাকে না। মানুষ সত্যিই সামাজিক জীব। ঘোরাঘুরি খাওয়া দাওয়া ভালো ই হলো। বনের মধ্যে এভাবে ঘুরলে সেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন, মনটা ছটফট করে। সবার জন্য কিনলেন নিজের জন্য কিছু কিনলেন না? আগামী ভ্রমণ শুভ হোক। ভালো থাকবেন সবসময়
দিদিভাই
সঠিকটাই বলেছেন। ফটোগ্রাফীর সঙ্গে যুক্ত হবার পর থেকে ভ্রমন খাওয়া দা্ওয়া ও ভিন্ন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার একটা যুগসূত্র আছে। আমি নিজের জন্য বার্ডস অব এশিয়া ও মাথার একট হ্যাট কিনেছিলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে। তবে সোনেলায় সর্বোচ্চ মন্তব্য কারিদের স্কীন শট দেয়ায় খুব কষ্ট পেয়েছি। আপনার মতন এমন একজন সৃজনশীল ব্যাক্তির কাছ থেকে এটা কখনই আশা করিনি আমি। কাউকে ব্যাক্তিগত আক্রমন করে বা কটাক্ষ করে কেউ বড় হতে পারে না। বরঞ্চ উল্টা সে সমালিচত হয়। ভাল থাকবেন। সুস্থ্য থাকবেন।
হা হা হা কামাল ভাই সঠিক বলেছেন। আমরা প্রথমে সবাই হেসে উঠে। তাদের সেলসম্যানরা খদ্দের আকৃষ্ট করার জন্য অভিনব পন্থা জানে। সে নিজেই প্রতিটি শাড়ী পড়ে আমাদের বুঝাচ্ছিল কোন শাড়ীর আঁচল কেমন হবে দেখতে। পরে তার দোকান থেকেই শাড়ী কিনেছিলাম। আর তার শাড়ি পড়া ভিডিও বাসার সবাই দেখেই শাড়ি পছন্দ করেছিলো।
ধন্যবাদ।
অসাধারণ উপস্থাপন। চমৎকার সাজিয়েছেন ভাই।
“বন্ধুত্বের সঙ্গে যেমন স্বার্থ জড়ায় না, তেমনই স্বার্থযুক্ত সম্পর্কে বন্ধুত্ব হয় না। বন্ধুত্ব হয় নিঃস্বার্থ। আমার সারা জীবনে ওরা আমার বন্ধু হয়ে থাকুক।”
আপনিও সারাজীবন আমার বন্ধু হয়েই থাকুন।
২৪টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
রাতের ভরতপুর বৈদ্যুতিক আলোতে অপূর্ব।
পার্কের ভিতর ছেলেকে নিয়ে ছবি তুললাম।
ছবিগুলো হলো অপূর্ব। ডিজিটাল যুগে পরিবারের
পছন্দে শপিং করা ভ্রমনটাই সার্থক হয়ে উঠলো।
সাথে আমরাও ভ্রমন করছি মনে হচ্ছে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ কবি দা।
শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
চলুক। আমরাও এগোতে থাকি।
শুভ কামনা ভাইয়া।
শামীম চৌধুরী
সঙ্গে চলার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ভাল থাকুন নিরন্তর।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
স্বার্থ থাকলে কোন সম্পর্ক ই ঠিক থাকে না। মানুষ সত্যিই সামাজিক জীব। ঘোরাঘুরি খাওয়া দাওয়া ভালো ই হলো। বনের মধ্যে এভাবে ঘুরলে সেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন, মনটা ছটফট করে। সবার জন্য কিনলেন নিজের জন্য কিছু কিনলেন না? আগামী ভ্রমণ শুভ হোক। ভালো থাকবেন সবসময়
শামীম চৌধুরী
দিদিভাই
সঠিকটাই বলেছেন। ফটোগ্রাফীর সঙ্গে যুক্ত হবার পর থেকে ভ্রমন খাওয়া দা্ওয়া ও ভিন্ন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার একটা যুগসূত্র আছে। আমি নিজের জন্য বার্ডস অব এশিয়া ও মাথার একট হ্যাট কিনেছিলাম।
ইঞ্জা
বিদায় সবসময় কষ্টের হয়, সময় কারো জন্য অপেক্ষা করেনা, সবাই তার নীড়ে ফিরে যায়।
পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
শামীম চৌধুরী
এটাই চিরন্তন সত্য ভাই।
সঙ্গে থাকার জন্য কৃতার্থ।
ইঞ্জা
শুভকামনা সবসময় ভাই
ফয়জুল মহী
দুর্দান্ত , সাবলীল উপস্থাপন । ভালো লাগা অবিরাম ।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ আপনাকে। তবে সোনেলায় সর্বোচ্চ মন্তব্য কারিদের স্কীন শট দেয়ায় খুব কষ্ট পেয়েছি। আপনার মতন এমন একজন সৃজনশীল ব্যাক্তির কাছ থেকে এটা কখনই আশা করিনি আমি। কাউকে ব্যাক্তিগত আক্রমন করে বা কটাক্ষ করে কেউ বড় হতে পারে না। বরঞ্চ উল্টা সে সমালিচত হয়। ভাল থাকবেন। সুস্থ্য থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
আব্বুটা আপনার চাইতে হ্যান্ডছাম।
চালু থাকুক।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ ভাইজান
কথায় আছে না বাঁশের চেয়ে কঞ্চি শক্ত।
কামাল উদ্দিন
শাড়ি পড়া ভদ্রলোককে দেখে খুব মজা পাইছি বড় ভাই, আগাতে থাকেন সামনে আমরা সাথেই আছি।
শামীম চৌধুরী
হা হা হা কামাল ভাই সঠিক বলেছেন। আমরা প্রথমে সবাই হেসে উঠে। তাদের সেলসম্যানরা খদ্দের আকৃষ্ট করার জন্য অভিনব পন্থা জানে। সে নিজেই প্রতিটি শাড়ী পড়ে আমাদের বুঝাচ্ছিল কোন শাড়ীর আঁচল কেমন হবে দেখতে। পরে তার দোকান থেকেই শাড়ী কিনেছিলাম। আর তার শাড়ি পড়া ভিডিও বাসার সবাই দেখেই শাড়ি পছন্দ করেছিলো।
ধন্যবাদ।
আলমগীর সরকার লিটন
অনেক শুভ কামনা এবং সব যাত্রা শুব হোক
শামীম চৌধুরী
কৃতার্থ সুহৃদ।
আলমগীর সরকার লিটন
জ্বি আপনাকেউ
আরজু মুক্তা
আপনার সাথে ঘোরার মজাই আলাদা। কবিতা, পাখি, বন সব কিছু চেনা হয়ে যায়। ধন্যবাদ আপনাকে।
শামীম চৌধুরী
আপু
বাকি পর্ব ও শেষ পর্ব পর্যন্ত সাথে ঘুরতে থাকুন। সামনে অনেক চমক আছে আপনার এই ভ্রমনে।
শুভ কামনা রইলো।
তৌহিদ
আমাদের ভাতিজা কিন্তু দারুণ কিউট দেখতে! এরপরে শুরু হবে রন্থাম্ভোর ন্যাশনাল পার্কের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। এক্সাইটেড হয়ে আছি কিন্তু! লেখা এবং ছবি পাবার আশায়।
শুভকামনা ভাইজান।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ তৌহিদ।
রন্থাম্ভোর পার্ক ভ্রমন ছিলো আমার জীবনের এক অলৌকিক ভ্রমন। সামনে অনেক চমক দেখতে পারবে আমার সঙ্গে ভ্রমনে থাকলে।
শুভ কামনা রইলো।
হালিম নজরুল
অসাধারণ উপস্থাপন। চমৎকার সাজিয়েছেন ভাই।
“বন্ধুত্বের সঙ্গে যেমন স্বার্থ জড়ায় না, তেমনই স্বার্থযুক্ত সম্পর্কে বন্ধুত্ব হয় না। বন্ধুত্ব হয় নিঃস্বার্থ। আমার সারা জীবনে ওরা আমার বন্ধু হয়ে থাকুক।”
আপনিও সারাজীবন আমার বন্ধু হয়েই থাকুন।
শামীম চৌধুরী
ভাইজান
বহুদিন পর আপনার মন্তব্য পেয়ে আপ্লুত হলাম। আপনার মন্তব্য আমাকে আরো কাজের আশা যোগায়।
আপনিতো আমার বন্ধুই হয়ে আছেন। সঙ্গে বোনাস ভাই।
শুভ কামনা রইলো