প্রিয়ার বিরহে

কাজী মোতাহার হোসেনকে লেখা

কাজী নজরুল ইসলাম এর চিঠির অংশবিশেষ।

 

বন্ধু,

আকাশের সবচেয়ে দুরের যে তারাটির দীপ্তি চোখের জলকণার মত ঝিলমিল করবে,মনে করো সেই তারাটিই আমি। আমার নামেই তার নামকরণ করো,কেমন?

মৃত্যু এতকরে মনে পড়ছে কেনো,জানো? ওকে আজ আমার সবচেয়ে সুন্দর মনে হচ্ছে বলে। মনে হচ্ছে, জীবনে যে আমায় ফিরিয়ে দিলে, মরণে সে আমায় বরণ করে নেবে।

সমস্ত বুকটা ব্যথায় দিন-রাত টনটন করছে। মনে হচ্ছে, সমস্ত রক্ত যেন ঐখানে এসে জমাট বেঁধে যাচ্ছে। ওর যদি মুক্তি হয়, বেঁচে যাবো। কিন্তু কি হবে, কে জানে?

তোমার চিঠি পেয়ে অবধি কেবলি ভাবছি আর ভাবছি। কত কথা, কত কী, তার কি কূলকিনারা আছে?

আমার ব্যথার রক্তকে রঙিন খেলা বলে উপহাস যিনি করেন তিনি হয়তো দেবতা। আমার ব্যথা অশ্রুর বহু উর্ধ্বে। কিন্তু আমি মাটির নজরুল হলেও সেই দেবতার কাছে অশ্রুর অঞ্জলি আর নিয়ে যাবোনা।

ফুল ধূলায় ঝরে পড়ে। পায়ে পৃষ্ঠও হয়। তাইবলে কি ফুল এত অনাদরের?

ভুল করে সে ফুল যদি কারো কবরীতে খসে পড়ে এবং তিনি যদি সেটাকে উপদ্রব বলে মনে করেন, তাহলে ফুলের পক্ষে প্রায়শ্চিত্ত হচ্ছে, তক্ষুনি কারো পায়ের তলায় পড়ে আত্মহত্যা করা।

সুন্দরীর অবহেলা আমি সইতে পারিনে বন্ধু, তাই এত জ্বালা!

ভিক্ষা যদি কেউ তোমার কাছে চাইতেই আসে অদৃষ্টের বিড়ম্বনায়, তাহলে ভিক্ষা তাকে না-ই দাও, কুকুর লেলিয়ে দিওনা যেনো! আঘাত করবার একটা সীমা আছে। যেটাকে অতিক্রম করলে আঘাত অসুন্দর হয়ে ওঠে। আর তখনই তার নাম হয় অবমাননা।

ইতি,

তোমার বন্ধু নজরুল।

 

★★ অসামান্য এই চিঠিখানা পড়ে সবাই আপ্লুত হবেন।

★★ সংগৃহিত

 

১৩৩০জন ১০৫০জন
0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ