
কেউ কেউ বলেন বাংলার কাশ্মীর, মূলত এটা একটা পরিত্যক্ত লাইম-স্টোন লেক, যা কেয়ারী লাইম স্টোন লেক নামে পরিচিত। এছাড়া কেয়ারী লেক, আবার অনেকে নীলাদ্রি নামে ডেকে থাকেন নীল পানির কারণে। তবে ইদানিং ভ্রমণ পিপাসুরা নীলাদ্রি নামটাকেই মনে হয় বেশী পছন্দ করছেন। তবে জায়গাটাকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন সৌন্দর্য্যে যে কেউ জায়গাটার প্রেমে পড়তে বাধ্য।
সিমান্তের উপারের মেঘালয়ে পাহাড়ের সর্বশেষ অংশটা এই লেকের পানিতে এসে ডুবে গেছে। এই লেকটাও এক সময় ঐ পাহাড়েরই একটা অংশ ছিল, কিন্তু বাংলাদেশ অংশের চুনা পাথরগুলো উঠিয়ে ফেলার কারণেই এই লেকের সৃষ্টি হয়েছে, আর অন্য দিকে সিমান্ত ওপারের বিশাল চুনা পাথরের পাহাড়টা এখনো পুরোপুরি অক্ষত। আর আমাদের টাঙ্গুয়ার হাওড়ের শুরুটাও এখান থেকেই বলা চলে।
পাহাড়ের নিচু অংশে রয়েছে ভারতের কাটা তারের বেড়া। লেকের পাড়েই চুনা পাথরের একটি পরিত্যক্ত ফ্যাক্টরি, সাথেই আছে ব্রিটিশ আমলের রেলওয়ে সিস্টেম। আর অগনিত লোহা লক্কর আর বিশালাকার পরিত্যক্ত দুটি ক্রেন। এককালে যে এখানে কোলাহলপূর্ণ কর্মযজ্ঞের যৌবন ছিল তার চিহ্ন বর্তমান।
সীমান্তবর্তী ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের পরিত্যক্ত এই কোয়ারীটি ১৯৪০ সালে চুনাপাথর সংগ্রহ শুরু করে। এখানে চুনাপাথর সংগ্রহ করে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় নির্মিত আসাম বাংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটানো হত। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বিভিন্ন সমস্যা ও ব্যয় বৃদ্ধি দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় এর সকল কার্যক্রম।
পরে ১৯৬০ সালে সিমেন্ট ফ্যাক্টরী চালু রাখার জন্য চুনা পাথরের প্রয়োজনে ভূমি জরিপ চালিয়ে সীমান্তবর্তী ট্যাকেরঘাট এলাকায় ৩২৭ একর জায়গায় চুনাপাথরের সন্ধান পায় বিসিআইসি কতৃপক্ষ। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৬ সালে খনিজ পাথর প্রকল্পটি মাইনিংয়ের মাধ্যমে র্দীঘদিন পাথর উত্তোলন করা হয়। ১৯৯৬ সালে এই প্রকল্পটি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ কোয়ারী থেকে চুনাপাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। আর সেটাই বর্তমান সময়ে আমাদের কাছে হয়ে উঠে এই সময়ের নীলাদ্রি।
(২) সুনামগঞ্জ থেকে নিলাদ্রী যাওয়ার পথেই দেখা পেলাম কয়েকটি শামুক খোল পাখি।
(৩) যাদুকাটা নদীর তীরে এটা একটা প্রাচীন রাজ্য। যা লাউর রাজ্য নামে পরিচিত ছিল, এখন একটা ছোট্ট সুন্দর গ্রাম যা ভারত বাংলাদেশ সিমান্তে অবস্থিত। যাদুকাটা নদী থেকে তোলা পাথর ব হন করছে শ্রমিকরা।
(৪) ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়ের উপর মেঘ জমেছে, এপারের সমতলে সবুজ ধান ক্ষেত, দেখলে দৃষ্টি জুড়িয়ে যায়।
(৫) যাদুকাটায় মাছ ধছে জেলেরা।
(৬/৭) যাদুকাটা নদী পারি দিতে হলে বর্ষায় দুটি পথ, বর্ষায় ট্রলার কিংবা বাইকে আর শুকনো মৌশুমে শুধু মাত্র বাইকে।
(৮) যাদুকাটা পারি দিলেই বারিক টিলার উপর ১২০৩ নং সিমানা পিলার। আগে ওপেন ছিল এখন পিলারের গায়ে বাশের বেড়া।
(৯)সিমান্তের ওপারে যাখানটায় শাহ আরেফিনের মাজার বলে লোকজন আমাকে দেখিয়েছিলো ওখানটায় বর্যায় দেখছি ঝর্ণার সৃষ্টি হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের দোলপূর্ণিমার ১৩ দিন পর লাউড়ের গড়ের অদূরে পূণ্যতীর্থ ধামে হয় বারুণী স্নান ও মেলা। একই দিনে লাউড়ের গড়ে শুরু হয় শাহ আরেফিনের মেলা, চলে ৩ দিন। এই দুই মেলাকে ঘিরে এখানে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসে লক্ষ লক্ষ মানুষ। ঠিক কত বছর আগে শাহ্ আরেফিনের মেলা শুরু হয়েছিল সঠিকভাবে বলা মুশকিল। এটুকু জানা যায় এই মেলার বয়স ১০০ বছরেরও বেশী। আগে এই মেলার দিনে বিডিআর বিএসএফের সমঝোতায় ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হত। দু’দেশের লোক জমায়েত হত তখন এই মেলায়। কিন্তু মেলায় গন্ডগোলের পর থেকে এখন আর সীমান্ত খোলা হয় না।
(১০) ঘোড়ার প্রচলনটাও এই এলাকায় বেশ।
(১১/১২) লাউড়ের গড়, যাদুকাটা আর বারিক টিলা পারিদিয়ে এক সময় আমরা পৌছে যাই কাংখিত চুনাপাথরের লেকএ। কিছু উঁচু ঢিবি মাঝখানে লেক ওপারে সুউচ্চ খাসিয়া পাহাড়, সত্যিই অপরূপ।
(১৩/১৪) স্কুল সবে মাত্র ছুটি হয়েছে, আর শুরু হয়েছে বড় বড় ফোটার বৃষ্টি। বাচ্চারা ছুটছে বাড়ির দিকে।
(১৫/১৬) যখন এখানটার যৌবন ছিল তখনকার কিছু স্মৃতি।
(১৭/১৮) মুলত এই লেকের পাড় থেকেই টাঙ্গুয়ার হাওড় শুরু হয়েছে।
(১৯) এখানে রয়েছে এমন কিছু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি।
(২০/২১) আর এখানে গেলে গ্রীষ্মের লাল কিংবা বর্ষার সবুজ শিমুল বন দেখতে ভুল করাটা ঠিক হবে না।
৩২টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনার চোখ দিয়ে এতো সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখে মনটা ছটফট করে যাবার জন্য। সবগুলো ছবিই সুন্দর। পাথর তুলে এমন একটি লেকের সৃষ্টি করলো! অদ্ভুত সুন্দর নামটির মতোই। শুভ কামনা রইলো
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, ব্লগে আসলে আপনাদের এমন সুন্দর মন্তব্যে মনটা ভরে যায়। সময়াভাবে আসাটা বেশ দূরুহ হয়ে পড়ছে, তবে মনটা তো সব সময়ই এখানে পড়ে থাকে……..কেমন আছেন আপনি?
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এইতো আছি ভাইয়া। আপনি?
কামাল উদ্দিন
ঈদের আগেই গিন্নীর করোনা হইছিলো, তাই ওকে নিয়ে ব্যপক দুশ্চিন্তায় ছিলাম। অনেক কষ্টে তিন দিন আগে নেগেটিভ এসেছে। এখন অনেকটাই ভালো, আশা করছি সামনের দিনগুলোতে ব্লগে কিছুটা হলেও সময় দিতে পারবো।
ছাইরাছ হেলাল
শেষের দুটি ছবি ও ৪ নং টি প্রাণ মন কেড়ে নেয়ার জন্য যথেষ্ট ,
লেখার সাথে এমন কিছু তথ্য জুড়ে দিলে আমরা আনন্দিত হই অবশ্যই।
অনেক অনেক দিন পর এপথে দেখা দিলেন!!
তও ভাল থাকুন এ চাওয়া রয়েই যায়।
কামাল উদ্দিন
আপনার মতো গুণী জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার মতো ছবি দেওয়াটা আমার মনে হয় ঠিক হয়নি, ভালো থাকবেন বড় ভাই।
সুরাইয়া পারভীন
আহ্! চোখ জুড়ানো মন ভরানো দৃশ্য দেখলে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বড়ই নিরুপায়
সবগুলো ছবিই দারুণ
কামাল উদ্দিন
হুমম, জীবনটা এমনি, ইচ্ছে থাকলেও সব সময় উপায় বের করা সহজ হয়ে উঠে না। ভালো থাকবেন আপু।
সুপায়ন বড়ুয়া
অনেক দিন পরে এলেন
অপরুপ ছবির বাহার নিয়ে।
আপনি না এলে যে মিস করে যাই
দৃস্টিনন্দন ছবির সাথে রূপের বর্ণনা গুলো।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
আসতে তো চাইই দাদা, কিন্তু পিছু টান যে ছাড়ে না……..ভালো থাকবেন সব সময়।
নিতাই বাবু
আগে জানা ছিলো না। আপনার পোস্ট থেকেই নীলাদ্রি’র অপরূপ দৃশ্য দেখা হলো। জানা হলো, এই জায়গাটার বিস্তারিত তথ্য।
শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা। তো এতদিন কোথায় ছিলেন? কেমন আছেন?
কামাল উদ্দিন
ভালো আছি দাদা, তবে বেশ ব্যস্ত আছি।
ইঞ্জা
নিউজ পেপারে বেশ কয়েকবারই নীলাদ্রির কথা শুনেছি, আজ আপনার ছবি আর লেখায় তা পরিপূর্ণতা পেলো, মন প্রাণ ভরে দেখলাম নীলাদ্রিকে যা যেন এক টুকরো কাশ্মীর।
অসাধারণ লেগেছে ভাই।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ বড় ভাই, শুভ কামনা জানবেন।
ইঞ্জা
ভালো থাকবেন ভাই।
রেজওয়ানা কবির
অসাধারণ লাগল।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, ভালো থাকবেন সব সময়।
ইসিয়াক
আপনার ছবি তোলার হাত সত্যি অসাধারণ।ছবি আর বর্ণনা পড়ে,ওহ! আমার তো এখনই মনে হচ্ছে নীলাদ্রি লেকে চলে যাই্ ।যাবো অবশ্যই। খুবই মনোমুগ্ধকর পোস্ট।ধন্যবাদ
কামাল উদ্দিন
কোথাও গেলে ভালো কিছু ছবি তোলার চেষ্টা সব সময়ই করি ইসিয়াক ভাই, কতোটা পারি জানি না, তবে চেষ্টা থাকে ষোল আনা…….শুভ সকাল।
ফয়জুল মহী
বেশ দারুণ ,
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ভাইজান।
তৌহিদ
অসম্ভব সুন্দর সব ছবি। বাংলার এই প্রকৃতি আমাদের প্রাণ জুড়ানোর জন্য যথেষ্ট।
ভালো থাকুন ভাই।
কামাল উদ্দিন
হুমম, বাংলার আনাচে কানাচে কতোযে সৌন্দর্য্য লুকিয়ে আছে, তার কতোটাই আর আমরা দেখেছি ভাই……..শুভ কামনা জানবেন তৌহিদ ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
আবার ফিরে গেলাম স্কুল ছুটিতে কে কার আগে বাড়ি ফিরব সেটা চাক্ষুস।
মনোরম সব ছবি ইবাক করে দিলেন কামাল ভাই।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ মজিবর ভাই, এমন ছবিগুলো সত্যিই মনটাকে নষ্ট্যালজিক করে তোলে।
মোঃ মজিবর রহমান
ধন্যবাদ ভাইটি
আরজু মুক্তা
বাংলার প্রকৃতি অসাধারণ
কামাল উদ্দিন
হুমম, ধন্যবাদ আপু, ভালো থাকবেন সব সময়।
খাদিজাতুল কুবরা
নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্বলিত লেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো।
কিছু ছবি সংগ্রহেে রেখেছি।
নীলাদ্রি লেকের একটি দৃশ্য নিয়ে কয়েক লাইনের একটি লেখা ব্লগে জমা দিয়েছিলাম।
বিস্তারিত জেনে ভালো লাগলো।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, ওই এলাকাটা এতো সুন্দর যে কি আর বলবো।
সাবিনা ইয়াসমিন
নীলাদ্রির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলাম। পাথর বহনকারী শ্রমিকদের দেখলে প্রকৃতির সৌন্দর্যের পাশাপাশি নিয়তির নির্মমতাও উপলব্ধ হয়ে যায়। ১৩/১৪ নাম্বার ছবি দুটি আশার আলোর প্রতীকী বহন করে।
ভালো থাকুন কামাল ভাই। শুভ কামনা নিরন্তর 🌹🌹
কামাল উদ্দিন
হুমম, যতো সৌন্দর্য্যই থাকুক কেন আপু, দারিদ্রতা আমাদের সর্বত্র কম বেশী বিরাজমান। তাই এমন চিত্র খুব একটা অস্বাভাবিক নয়………ভালো থাকবেন।