বসে বসে ভাবছিলাম।টুং শব্দে ফোনে smsএল। “আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে আনমনেশবসে আছ আকাশ পানে”।বাংলা ব্যান্ড সংগীতের লাইন বোধহয় একটু এলোমেলো হয়েছে॥আমাকে উদ্দেশ্য করে হলেও আমি আবার তাকেই প্রশ্ন করলাম “কি হয়েছে কেন মন খারাপ তোমার?
উওর এল-“এরকম দিনে জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে মন কেমন উদাস হয়ে যায়।”
কি হয়েছে?
তেমন কিছু না।
-তোমার জামাই কি করে?
-জানি না আছে হয়ত কোথাও?
-ঝগড়া হয়েছে?
-আরে না সেরকম কিছু না?
-তাহলে সবার সাথে গল্প কর ভালো লাগবে।
-না গল্প করতে ইচ্ছে করছে না। একা বসে থাকতে ভালো লাগছে।
মেয়েটি আমার অনেক কাছের।তার পছন্দের বিয়ে।স্বামী স্ত্রী দু’জনেই সরকারী কলেজ এ লেকচারার। বাচ্চাও আছে ।সেদিন তারা বেড়াতে গেছে মায়ের কাছে। বাড়িতে ভাই বোনেরাও আছে।অতি প্রিয় মানুষটাও কাছে।তাহলে মন উদাস কেন?আর কেনই বা আমাকে খুঁজছে?
কলেজ যেহেতু নেই তাই আগের মত আর ব্যস্ততাও নেই।কোন কারন ছাড়াই এটা সেটা হয় আমার। তিনদিন ধরেই মাথা ব্যাথা চলছে॥ দিপ্তি খুব জেদ করছিল আপু চল বেড়িয়ে আসি ভালো লাগবে। নীল শাড়িতে সেজেগুজে গেলাম দুজনে।ধরলা নদীর পানি টইটুম্বুর একেবারে কানায় কানায়। ব্রিজ এর উপর লোকজনও কম।বেশ লাগছে। দিপ্তী তো টাইটানিকের মত দুহাত মেলে ধরলো বাতাসে। খুশিতে গানও ধরল। অন্যসময় হলে আমিও গান গাইতাম। কিন্তু কি হল জানিনা বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো।বমি বমি লাগলো।দিপতীকে বুঝতে দিলাম না।কেন এমন লাগছে কারন খুঁজে পেলাম না। খুব একা বোধ হতে থাকলো।ভালো লাগার বদলে চরম হাহাকার নিয়ে ফিরে এলাম।
কুসুম গরম পানিতে গোসল সারলাম ॥কফি খেলাম হয়ত ভালো লাগবে।কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না।
আমি অকপটে স্বীকার করার মানুষ। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় অধিকাংশ মানুষই বলতে পারি না।স্বীকার করাকে নিজের দুর্বলতা ভেবে চেপে যাই।
সন্তান সংসার চাকরী ব্যবসা ভালো টাকাপয়সা থাকলেই বলি বাহ্ মানুষটা কি সূখী। একেবারে ঢলঢল অবস্থা। আসলেই কি তাই!
আমার কাছে মনে হয় এটা সত্যি নয়। আমাদের অভিনয় করেই জীবনটা কাটাতে হয়। অধিকাংশ মানুষই গ্রীষ্মের রোদে,কনকনে শীতে, টিপটিপবৃষ্টিতে, স্নিগ্ধ বিকেলে, ঝলমলে চাঁদের আলোয়, পাশে কেউ থাকার পরও উদাস হয়ে যায়, ভীষন একা বোধ করে।
মনটা দগদগে হয়ে যায়।মন উড়ে যেতে চায়, ছটফট করে,বিষন্ন হয়,ক্লান্ত হয়, কাজ ছাড়াই অবসাদ ঘীরে ধরে। মন চায় দুরে কোথাও চলে যাই।মনটা মুক্তি চায় একঘেয়ে জীবন থেকে।একা বসে থাকি কিংবা নদীর পাড় ধরে হাঁটতে থাকি॥আদতে কিছুই করা হয়না।
ফিরে আসতে হয় নিজের জগতে। যেখানে সন্তান সংসার নিয়ে,হাসি হাসি মুখ করে বড়মাপের অভিনয়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হয় আমিই সেরা সূখী।।॥।।।
২০টি মন্তব্য
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আসলে আমরা সবাই ভালো থাকার নিপুণ অভিনয় করি। খুব সুন্দর উক্তি — “মনটা দগদগে হয়ে যায়।মন উড়ে যেতে চায়, ছটফট করে,বিষন্ন হয়,ক্লান্ত হয়, কাজ ছাড়াই অবসাদ ঘীরে ধরে। মন চায় দুরে কোথাও চলে যাই।মনটা মুক্তি চায় একঘেয়ে জীবন থেকে।একা বসে থাকি কিংবা নদীর পাড় ধরে হাঁটতে থাকি॥আদতে কিছুই করা হয়না” ।
শুভেচ্ছা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
আমরা সারাজীবন ভেবে যাই লোকে কি বলবে।এই ভয়ে নিজের অপুর্নতাগুলোকে ওভাবেই রেখে চলে যাই। ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
পাছে লোকে কিছু বলে এই ভয় সবার মনে ভয়ভীতির সঞ্চার করে বৈ কি !
জীবন মানেই যেন অপূর্ণতায় ভরা একটা অসহনীয় বোঝা।
ভালো থাকবেন। প্রীতিময় শুভেচ্ছা রইলো।
তৌহিদ
একাকীত্বতা প্রত্যেক মানুষের নিত্য সঙ্গী। কেউ প্রকাশ করে কেউ করেনা। তবে নিজের বাস্তব জীবন থাকলেও সবাই কিন্তু কিছুক্ষণের জন্যে হলেও তার নিজস্ব আকাশে বিচরণ করতে ভালোবাসে। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
ভালো লিখেছেন আপু। শুভকামনা সবসময়।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
মোঃ মজিবর রহমান
মন জগত বড়ই অদ্ভুত। কখন কি চাই বা ঘটায় বুঝায় যায়না।
আমরা হাসপাতালে রুগি দেখতে গিয়েও প্রশ্ন করি “কেমন আছে?”. রুগিও উত্তর দেয়,” ভাল” যাক এটাই হইত জিবনেরই অংশ। ভাল লাগল।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
আসলেই তাই। ধন্যবাদ ভাইয়া॥
ফয়জুল মহী
অনবদ্য প্রকাশ।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
ধন্যবাদ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
একাকীত্ব নিয়ে দারুণ একটি লেখা পড়লাম। সবার মধ্যেই কমবেশী একাকীত্ব বাস করে , তাই একে চাইলেও সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব নয়। শুভ কামনা রইলো
রোকসানা খন্দকার রুকু।
ধন্যবাদ আপু।
ইঞ্জা
আসলে আমরা সবাই ভালো থাকার নিপুণ অভিনয় করি।
অসাধারণ উক্তি, আপনার লেখার বেশ ধার আছে, ভালো লাগলো লেখাটি।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
অভিনয় না করে আর উপায় কি বলেন।।।।
ইঞ্জা
হাঁ এ পৃথীবিটি যে এক নাট্যমঞ্চ।
আরজু মুক্তা
একাকীত্ব এখন বিলাসিতা
রোকসানা খন্দকার রুকু।
একা সবাই থাকতে পারে না যে পারে সেটা যদিও তার ক্রেডিট কিন্তু সেটা মাঝে মাঝে। ধন্যবাদ আপু।
আলমগীর সরকার লিটন
ভাল লেখেছেন অনেক শুভেচ্ছা রইল রুকু আপু
রোকসানা খন্দকার রুকু।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
উর্বশী
জীবনের নাট্যমঞ্চে কম বেশী আমরা অভিনেতা,অভিনেত্রী।বুকে চাপা কষ্ট নিয়েও মুখে হাজির জোয়ার এনে দেই কখনও, ভাল থাকার শৈল্পিক ভাব বজায় রেখেই পথ চলি তাইনা আপু ? অবশ্য আগামীর পথ চলার এটি চালিকাশক্ত এটি আমার ধারনা।
অনেক ভাল লাগলো।আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
অনেক পরে সেজন্য সরি।। ধন্যবাদ আপু।