
আমার অফিস লাগোয়া একটা চায়ের দোকান আছে.. বহু পুরানো…আমার চাকরির থেকে এই চায়ের দোকানের বয়স বেশি… আর যিনি দোকান চালান সেই চাচার বয়স প্রায় ষাটের কাছাকাছি ।
আমি এই দোকানে রোজই চা খাই.. কখনো দুধ চা, কখনো রঙ চা….আর সাথে প্রজাপতি বিস্কুট কিংবা ক্রীমরোল…..অনেক বড় বড় দোকানে, রেস্টুরেন্টে চা খেয়েছি.. তবে চাচার দোকানের চা এর মত স্বাদ কোথাও পাইনি.. অফিসে থাকলে সারাদিনে মোটামুটি দশ থেকে বারো বার চাচার দোকানে চা খেতে বের হই ।
চাচার দোকানের চা খাওয়ার জন্য আমার বাস মিস হয়.. অনেক সময় দেরী করে বাড়ি পৌঁছাই….এমনকি যেদিন চা খেতে যাইনা সেদিন চাচা নিজে অফিসের ভিতরে এসে আমাকে চা দিয়ে যায়..অফিস না আসলে অন্যের কাছে আমার খোঁজ পর্যন্ত নেয়,
চাচা বলে- “আপনি চা না খেলে আমার সারাদিন মন খারাপ থাকে, আর চা খেলে কেনাবেচা ভালো হয়”.।
আজকে প্রথমে বড়ো মাটির ভাঁড়ে একভাঁড় চা খেলাম গল্প করতে করতে… তারপর চাচা আরও এককাপ চা দিলো…সেটা শেষ হওয়ার পর আরও এক কাপ চা খেলাম ।
বিল হলো ২১টাকা.., এবার টাকাটা দিতে যাওয়ার সময়েই যত্তো ঝামেলা… কোনোভাবেই চাচা টাকাটা নিতে রাজি হোলোনা…বাপ যেমন মেয়ের উপর রাগ দেখায় আর অভিমান করে, ঠিক সেরকমই চাচা আমার উপর রাগ দেখিয়ে টাকা নিলোনা এবং কথা শোনালো..
তারপর আমি আর জোর না করে হেসে চলে এলাম আর কিছুক্ষণ পরে একটা রসগোল্লার প্যাকেট কিনে চাচাকে দিলাম…
চাচার প্রশ্ন: “কি উপলক্ষ্যে মিষ্টি দিলেন?”
আমি বললাম: এমনিই চাচা, ভালোবেসে দিলাম.. তুমি তো সবসময়ই আমাকে এতো ভালোবেসে চা খাওয়াও, তাই,,
চাচা: (হো হো করে একটা প্রাণখোলা হাসি হাসতে হাসতে বললো )আপনার জন্মদিনেও খাইয়ে ছিলেন আমার মনে আছে,,থ্যাঙ্ক্যু থ্যাঙ্ক্যু
আমি মুগ্ধ হয়ে চাচার মুখের দিকে তাকিয়ে আব্বুকে অনেক মিস করছিলাম সেই সময়…যাই হোক এই হাসিটার কোনো তুলনা হয়না, এতোটাই নিষ্পাপ আর স্বার্থহীন ছিল হাসিটা..
শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় এই মানুষটা আমার মনে অনেক আগেই একটা জায়গা করে নিয়েছে ❤️
রিজু। কলকাতা ।
১৮টি মন্তব্য
নাজমুল হুদা
এই মানুষগুলোর ভালোবাসা পবিত্র। বেঁচে থাকুক ভালোবাসাগুলো বহুবছর।
রেজিনা আহমেদ
এনাদের ভালোবাসা নিখাদ
ভালো থাকবেন
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বাপরে এতো দেখি চা-খোরনী। হাহাহা । আপনার আর চাচার ভালোবাসা টা অকৃত্রিম, পবিত্র। বাপ-মেয়ের মতো ভালোবাসা, আত্নীয় না হয়েও , রক্তের না হয়েও কত আপন করে নেয় কিছু মানুষ। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো
রেজিনা আহমেদ
আমি অনেক চা খাই আপু
সুপায়ন বড়ুয়া
মাটির কলসীর কলকাতার চা
স্বাস্থ্যকর কিনা জানি না খেতে ভারী মজা।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
রেজিনা আহমেদ
মাটির ভাঁড়ে চা আর্সেনিক ফ্রি,
ছাইরাছ হেলাল
এমন প্রীতিময় নিষ্পাপ ভালোবাসা সহজে পাওয়া যায় না।
রেজিনা আহমেদ
জি কথা সত্য
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
ভালোবাসা নেবেন
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
সুন্দর অনুভূতির চমৎকার প্রকাশ। শ্রদ্ধা আর ভালবাসা জাত পাত ধনী গরীব বুঝে না। শেষ মন্তব্যটা খুব চমৎকার — “শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় এই মানুষটা আমার মনে অনেক আগেই একটা জায়গা করে নিয়েছে “❤️
ভালো থাকবেন। শুভ কামনা ।
রেজিনা আহমেদ
আপনি ও ভালো থাকবেন দাদাভাই
প্রদীপ চক্রবর্তী
সে তো এক অকৃত্রিম ভালোবাসা।
অটুট থাকুক।
ছবি দেখে ভাবছিলাম স্টারকাবাবের চা না কী!
বেশ ভালো উপস্থাপন।
রেজিনা আহমেদ
নাহ্, কোনো বড়ো দোকানের চা নয়, রাস্তায় ফুটপাতে দোকানের চা ,যেটায় ভালোবাসা আছে, আন্তরিকতা আছে
ফয়জুল মহী
পড়ে মন পুলকিত হল। সুখময় হোক সাহিত্যে বিচরণ ।
রেজিনা আহমেদ
আপনার জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইলো
আরজু মুক্তা
প্রাণ খোলা মানুষের প্রাণ খোলা হাসি।
এরা আছে বলেই পৃথিবীটা সুন্দর মনে হয়
রেজিনা আহমেদ
জি আপু
হালিম নজরুল
এমন চাচা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
রেজিনা আহমেদ
❤️