কবে কোন সময়ের বলয়ে পড়েছিলাম রবীবাবুর কেয়াপাতার নৌকোর দোলায়! কত কত প্রাহরিক বিচ্ছিন্নতার বিয়োগে নারকেল আর সুপারি বাগানও বিলুপ্ত হয়ে গেছে সময়ের কড়ালে। কবে কখন নিয়েছে নিবাস মনের ঘরে কবিতার ভাবনা! আজো ভাবিয়ে চলে নিরবধি। আমাকে মুক্তি দেয়না, দেয়না ছাড়: যখন তখন বাতাসে টান দেই দীর্ঘনিশ্বাস! শরত আসেনি বুঝি? ঝরে পরি নিঃশব্দে শিউলী ঝরার মতো। স্মৃতীর পাতা ওল্টানো লাগেনা ; খোলা পরে থাকে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা! ওখানে চলন্ত বায়োস্কোপে হরদম রিলে হচ্ছে সকালবেলা থেকে দুপুর অব্দি, দুপুর থেকে বিকেলের আলস্যি মাখা খেলার মাঠ আর দুরন্ত সব ভাঁটফুলের ঘ্রাণ নিয়ে ছোটাছুটি। কৃষ্ণচুড়া গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে থাকা কাজলপরা চোখে হাজারো প্রশ্নের ফড়িংয়ের ওড়াউড়ি।
হাত বাড়িয়ে দেই অজান্তেই, এই বুঝি ছুঁয়ে যাবো নিমিষেই আমার আমিকে।বাঁদিকে মোড় নিলেই একটু দূরে পথের ধারে ধারে ফুটে আছে ভাঁট ফুলের ঝার। মৃদুগন্ধে কালোমতো বেঢপ আকারে পোকাটার কি নাম? জানি না।সবকটা ফুলে ফুলে উড়ে উড়ে যেন পাহারা দিচ্ছে। অবাক চোখে তাকিয়ে দেখা। ফ্রকটাকে টুকরি বানিয়ে ফুলগুলি ছিঁড়ে নেই টোকর ভরে। কাঁটা ভর্তি কি একটা গাছ ওটা? ছোট্ট বেগুনগাছের মত দেখতে লাগে! ছোট ছোট গোল গোল ফল ধরে আছে। সেলিনা, শিউলী, লাভলী, মুক্তি ওরা বলে এটা বিষফল। ‘খবরদার ওর ধারে কাছে যাবিনা’ না – যাইনি/ যাবো না।একা এলাম কেন এখন এখানে? ধুর… ভর দুপুরে এসব জায়গায় আসে নাকি কেউ? একটুবাদেই ছেলেদের ছুটি হয়ে গেলেই দলে দলে রাস্তাটা ভরে যাবে দুষ্টু ছেলেদের বাসায় ফেরা কলকাকলিতে। উল্টোদিকে দৌঁড়। রিজার্ভ পুকুর পার হতে হতে লম্বা তালগাছটার দিকে চোখ আটকে যায় আবার। মাঝবরাবর গাছটার অনেকখানি ফাঁকা। ওই গাছে নাকি ভূত থাকে! ভরদুপুর, সন্ধ্যার সময়গুলো খুব খারাপ। এ সময়ে এখান থেকে যাকে পাবে তাঁকেই ধরবে। আচ্ছা! কিভাবে ধরে ভূতে? কেমন দেখতে ভূত? সাতপাঁচ কতকি ভাবনারা ভীড় করে মনে! এই যাহ্…… আম্মা তো মাটি নিতে বলেছে পুকুর পাড় থেকে! মাটির চুলা বানাবে! সকাল সকাল ঘুমভাঙা বাসি মুখে জোর করে কতখানি কাঁচা হলুদের রস খাইয়ে দিলো ছোট ভাই বোন আর আমাকে! আবার নিম পাতার বরি গিলিয়ে দিলো ওষুধের মতো! মনে পরতেই মুখ ভর্তি তেতো স্বাদ ভরে গেলো। মাটি কাটতে কাটতে বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ করতে লাগলো। ঠিক পেছনেই ঠাঁয় এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে তালগাছ। মাঝ বরাবর গাছটার ফাঁকা। ওখানে বোধহয় ভূত থাকে! এখানে এখন আমি একা। আমার ঘাড় মটকে দিলে কেউ দেখবেও না। ধুর ছাই……আর পারবো না, অনেক হয়েছে।
পুতুলবিয়ে দেবো আজ। আমার মেয়ে আর বনানী’র ছেলের। বিকেলে বরযাত্রী আসবে। কত্ত আয়োজন বাকি এখনো। আমার কাছে তো আট আনাও নেই! মিষ্টি কিনবো কি করে? সেদিন লাইজু ফুপুর মেয়ে (পুতুল মেয়ে) বিয়ে দিলো। কত কত আয়োজন করলো! ছোট ছোট মিষ্টি, আবার পোলাও মাংসও রান্না করলো সত্যি সত্যি। ছেলে’র মা হ্যাপী ফুপুর আবদার ছিলো যে! নইলে হ্যাপী ফুপু ছেলে বিয়েই দেবে না লাইজু ফুপুর মেয়ের সাথে!
— আম্মু, খিদা লাগছে, কি খাবো? ভেঙে খান খান হয়ে গেলো স্মৃতী’র বায়োস্কোপ!
আমার মন কেমন করে -কে জানে -কে জানে- কে জানে কাহার তরে — মন কেমন করে………….
# আবার আসবো।খুব শীঘ্র।
১৫টি মন্তব্য
প্রদীপ চক্রবর্তী
আহা!
শৈশববের স্মৃতি, প্রকৃতি তারমধ্য ভূত।
দারুণ একটা লেখা উপহার দিলেন দিদি।
শীতের শিউলি ঝরা ভোর মধ্যদুপুরের বায়স্কোপ আজকাল আর এসব দেখা হয় না!
স্মৃতিরা জাগরিত জেগে উঠে বারংবার।
বন্যা লিপি
মনতো এজন্যেই কাঁদে রে দাদাভাই।পুরোনো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়! শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
তালগাছের বিষয়টি সত্যিই একটু ভয়ের লাগলো। তারপর একা ছিলেন স্বাভাবিক ভাবেই ভয় পাবার কথা। স্মৃতির বায়োস্কোপ টা মাঝপথে ভেঙে খান খান হয়ে গেল। আহারে! মনটা আবার কাহার তরে আনচান করে? পুতুল বিয়ের ব্যাপারটা দারুন লাগলো। শুভ কামনা রইলো স্মৃতির বায়োস্কোপ এর জন্য
বন্যা লিপি
আমি ঠিক জানতাম…শিরোনাম নিয়ে এরকম একটা মন্তব্য কেউ না কেউ ঠিক ক্যাঁক্ করে একেবারে জায়গামতো একটা খোঁচা মেরে বসবে! ‘মন কেমন করে – কে জানে কাহার তরে’ যাস্ট চ্যালেঞ্জ নিলাম নিজে নিজে…. আর ঠিক জিতে গেলাম আমার চ্যালেঞ্জে আমি নিজেই।
আমি বলতে চাই- শৈশব বা ফেলে আসা যাবতীয় স্মৃতী কথার প্রতি মন কেমন না করে কার কার? একটু হাত তুলে বলুন তো!
শুভ কামনা ছোটদি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হুম আমি দুটো অপশন রেখেছিলাম। এক. অতীত নিয়ে মনের আকুলতা , দুই. এমন কাউকে অপ্রকাশিত রাখলেন যাতে করে পরবর্তীতে আরেকটা পর্বে তার বিষয়টি নিয়ে লেখা পাবো। ধন্যবাদ আপু। অবশ্যই আমিতো এখন প্রতিনিয়ত অতীতকে খুঁজি, ফিরে যেতে চাই বারবার সেই স্বর্ণালী দিনে। বুড়া বয়সের জীবন একদম ভালো লাগে না। আগে ভাবতাম কেন বিখ্যাত ব্যক্তিরা ছোটবেলায় ফিরে যাবার কথা সবসময় বলে, এখন বুঝি বাল্যকাল, টিন এজ বয়সটাই আসলে আনন্দের
ফয়জুল মহী
কমনীয় ভাবনায় সৃজনশীল লেখা।
বন্যা লিপি
ভালো থাকুন
সাবিনা ইয়াসমিন
বেশ ভালোই এগুচ্ছিলো। পুতুল বিয়ে নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়ে যাচ্ছিলাম, ভাবলাম আমার পুতুল মেয়ের বিয়েতে খরচা করে যেসব উপহার পেয়েছি, ওগুলো থেকে কিছু তোমাকেও পাঠিয়ে দিবো। আর আমার কাছেও কিছু খুচরা পয়সা আছে ওগুলোও হাতে গুঁজে দিবো একফাকে। বিয়েতে কত কিযে আয়োজন করা লাগে!!! 🙁
কেমন ডুবে যাচ্ছিলাম সোনালী স্মৃতির সেইসব দিনগুলোয়!
সব ভন্ডুল হয়ে গেলো এক নিমিষেই।
এভাবেই মনটাকে রেখে ফিরে আসতে হয় বর্তমানে,
হারানো মনকেই খুঁঁজে ফিরি হারানো দিনের পথে।
আবার এসো, শিগগিরই।
ভালোবাসা অবিরাম ❤❤
বন্যা লিপি
রোসো রোসো! এখনই কি হলো? জমা রাখো তোমার উপহার আর খুচরো পয়সার সঞ্চয়! আমি কড়ায় গন্ডায় সবটুকু নেবো তোমার কাছ থেকে।
মন কেমন করা শৈশবে ফিরতে বিরতি দিতে চাইনা এবার আর! কি জানি যদি আর সময় না পাই? যদি বেঁচে যাই ২৪ ঘন্টার পরও, একটু সময় নিয়ে বিয়ের আয়োজন নিয়ে আসছি ইনশাল্লাহ্।
মাঝে মাঝে ফিরেও আসতেই হবে বাস্তবতায়! তা নইলে ব্যালেন্স হবে কিভাবে?
অনেক ভালবাসা তোমাকে❤❤❤❤❤
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
সুন্দর অনুপম অনবদ্য অনুভূতির প্রকাশ। শুভ কামনা ।
বন্যা লিপি
ধন্যবাদ রইলো
সুপায়ন বড়ুয়া
শীতের শিউলি ঝরা ভোরে
মধ্যদুপুরের বায়স্কোপ আর হয় না দেখা।
স্মৃতির আড়ালে ভেষে বেড়ায় আজ
অনেক মধুর স্মৃতি। ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
হালিম নজরুল
চমৎকার স্মৃতিকথা। পুতুল বিয়ে আমাকে শৈশবে নিয়ে গেল। আপনি একা আর তালতলায় যাবেন না, আমরা ভয় পাই।
বন্যা লিপি
হা হা হা হা,…… না ভাই আমি আর জীবনেও কোনো তালগাছের নীচে যাইনাই।ভবিষ্যতেও আর যাবার ইচ্ছে নেই।
ভালো থাকবেন ভাই।