
প্রিয়,
পত্রের শুরুতেই তোকে জানাতে চাই একগুচ্ছ তীব্র সু-ঘ্রাণ যুক্ত শুভ্র দোলনচাঁপার শুভেচ্ছা। আশা নয় বিশ্বাস করতে চাই তুই ভালো আছিস। তুই ভালো থাকবি এর চেয়ে বেশি কিছু চাইবার নেই আমার জীবনে। তোর ভালো থাকায় একমাত্র কাম্য আমার কাছে। হয়তো তুই ভাবছিস এটা নেহাতই আমার কথার কথা। নয়তো আমি কি করে তোকে এতো আঘাত দিতে পারি, কষ্ট দিতে পারি! কিন্তু কী করবো বল? মাঝে মাঝে আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি,ডেস্পারেট হয়ে যাই আর তখনই তোকে আঘাত করে বসি, কটুক্তি করে ক্ষতবিক্ষত করি । কিন্তু তুই কী এটা জানিস, আমি তোকে একবার আঘাত করলে শত সহস্র বার নিজেই যন্ত্রণায় বিদগ্ধ হই। তোকে একবার কটুক্তি করলে অজস্র বার ধিক্কার দেই নিজেকে। আর আমি যা কিছুই করি না কেন সবটাই অভিমান থেকে।
হয়তো তুই ভাবছিস কিসের এতো অভিমান আমার তোর উপর! বিশ্বাস কর আমি নিজেও জানি না, কেনো তোর প্রতি আমার এতো অভিমান, এতো অধিকার বোধ? আমি জানি আমার তোর প্রতি এমন কোনো শব্দ উচ্চারণ করা উচিত নয় যাতে তোর অমঙ্গল হয় তুই কষ্ট পাস। তবুও করে ফেলি আর তারপরেও কতশত বার যে তওবা করি, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি তোর যেন কোনো ক্ষতি নয় হয়। তিঁনি যেনো তোকে সবসময় ভালো রাখেন। বিশ্বাস কর তোর প্রতি রাগ অভিমান কোনোটাই আমার মন থেকে নয়। থাক সে সব কথা
জানিস আমার নতুন বন্ধু জুটেছে। বন্ধু ঠিক নয় শুভাকাঙ্ক্ষী। যেমনটা আমি তোর। দূরের কেউ নয় ছেলেটি আমার অফিস কলিগ। আমার থেকে প্রায় ৩/৪ বছরের ছোট। সেদিন হাসপাতাল থেকে ফিরার পর প্রায় ২৪ ঘন্টায় আমার খোঁজ খবর নিচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই আমাকে একা থাকতে দিচ্ছে না। সে নাকি নিজেকে কথা দিয়েছে বন্ধ ঘরে আবদ্ধ থেকে গুমড়ে গুমড়ে মরতে দেবে না আমাকে। আমি নাকি এটা ডির্জাব করি না। ছেলেটির ভাষ্যমতে তুই মরীচিকা আর আমি মরীচিকা মানে তোর পিছনে ছুটছি। ওর মতে ‘সে আপনাকে ছাড়া ভালো আছে তবে আপনি কেনো তার জন্য এমন পাগলামী করছেন। আপনি যে সমাজে বসবাস করেন তাতে এমন কিছু করা ঠিক নয় যাতে আপনার দিকে সবাই বিচ্ছি বিভৎস দৃষ্টি দিয়ে তাকায়। ছোট মানুষ তাই হয়তো বুঝতেও পারছে না তুই আমার কী, তুই আমার কতোটা! সমাজ সংসার এক পাশে আর তুই আরেক পাশে। কারণ এই এক জীবনে পাওয়া সমস্ত কিছুর চেয়ে দামী তুই আমার কাছে।
আজ নিশ্চয়ই অবাক হয়েছিস তাই না! যে মেয়েটা তোকে একদম তুই বলতে চাইতো না। তুই বলা নিয়ে প্রচণ্ড ঝামেলা করত, গাল ফুলিয়ে থাকতো। সে আজ কত অবলীলায় তুই বলে সম্বোধন করছে! ভাবছিস হয়তো বদলে গেছি। তোর অনুপস্থিতিতে ভুলে গেছি,বদলে গেছি। না একদমই না। বরং তুই আর তুমি পার্থক্য করতে শিখে গেছি। তুমিতে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে যা ডিঙিয়ে মনের কথা গুলো বলা যায় না। তুইতে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। তোকে বলার অনেক কথা থাকলেও সবটা বলতে পারি না। বলা ঠিকও নয়।
সে যা হোক পরিশেষে তোকে একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, তুই আমাকে কথা দিয়েছিলিস তোর অন্তিম সময় আমি তোর পাশে থাকবো, তোর সেবা করবো। যদি তোর আগে আমার অন্তিম যাত্রা সম্পূর্ণ হয় তবে ঠিক আছে। কিন্তু সেটা যদি না হয় আশা করছি তুই তোর কথা রাখবি। আমার কাছে আমার কথার মূল্য আমার জীবনের চেয়েও বেশি দামী। তোর কাছেও নিশ্চয়ই তাই। তুই আমাকে ভুলে যেতে চাইলে যেতে পারিস শুধু আমাকে দেওয়া সেই কথাটা ভুলিস না কখনো যে তুই আমার কোলে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চেয়েছিস। আমি অপেক্ষা করবো সেদিনের। খুব ভালো থাকিস আর সুখে শান্তিতে থাকিস। অনেক অনেক দোয়া ও শুভকামনা রইল তোর/তোদের জন্য।
ইতি
তোর আজীবনের শুভাকাঙ্ক্ষী
৩১টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
বন্ধুর কাছে চিঠি! কিন্তু এতো প্রেমের চিঠি, প্রেমিক তো শুধু বন্ধু না, তার থেকে বেশী কিছু,অন্য কিছু।
“ছোট মানুষ তাই হয়তো বুঝতেও পারছে না তুই আমার কী, তুই আমার কতোটা! সমাজ সংসার এক পাশে আর তুই আরেক পাশে। কারণ এই এক জীবনে পাওয়া সমস্ত কিছুর চেয়ে দামী তুই আমার কাছে।” এটি কী বন্ধুত্ব!!
লেখায় ফিরছেন দেখে ভাল লাগল।
সুরাইয়া পারভীন
ইশ্ কোথায় লিখেছি বন্ধুর চিঠি। দেখেন তো 🙈🙈
মজা করলাম
হুশ এতো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে হয় নাকি!!
বন্ধু হোক বা প্রেমিক
চিঠি তো চিঠিই তাই না
ইঞ্জা
চিঠি তাও বন্ধুর, খুব সুন্দর ভাব দেখছি, খুব ভালো লাগলো আপু।
সুরাইয়া পারভীন
কৃতজ্ঞতা অশেষ ভাইয়া
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
ইঞ্জা
আপনিও ভালো থাকুন সবসময় আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বন্ধুত্বে ভালোবাসা ধরলো নাকি ভালোবাসায় বন্ধুত্ব ভর করলো বুঝলাম না। তবে বন্ধু থেকেই হোক আর ভালোবাসা থেকেই বন্ধু হোক আমার মতে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব পরিপূরক হলে ভালোবাসা টা পোক্ত হয় আর গভীর হয়। বেঁচে থাকুক ভালোবাসার বন্ধন । অফিস কলিগ ঠিকই বলেছে বয়সে ছোট হলেও । সে আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে ভালো বলেছেন। শুভ কামনা রইলো
সুরাইয়া পারভীন
সে যাই হোক মন্তব্য কিন্তু দারুণ করেছেন দিদি।
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
ফয়জুল মহী
মানবিক ও মননশীল, সৃজনশীল I আপনাকে ধন্যবাদ ।
সুরাইয়া পারভীন
ধন্যবাদ অশেষ
ভালো থাকুন
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
অভিমান কার সঙ্গে করা যায়, মনে হয় ভালবাসার মানুষের সঙ্গে। কথাগুলো তাইই প্রমাণ করে — হয়তো তুই ভাবছিস কিসের এতো অভিমান আমার তোর উপর! বিশ্বাস কর আমি নিজেও জানি না, কেনো তোর প্রতি আমার এতো অভিমান, এতো অধিকার বোধ? — সুপাঠ্য , সুন্দর অভিমান , ভালবাসা পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ফুটে উঠেছে — আমি অপেক্ষা করবো সেদিনের। খুব ভালো থাকিস আর সুখে শান্তিতে থাকিস।
শুভ কামনা ।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
সুপায়ন বড়ুয়া
রোমান্টিক পত্রখানি এসেছিল কোন এক শীতের সকালে
মিঠে কড়া রোদে বসে চুরি করে পড়ার সময় তুমি এলে
নিভৃত কোনে
মুচকি হেসে বললো সেদিন ভালবাসি সোনা।
আবার মনে পড়ে যায় কৈশোর প্রেমের কথা।
আপু চিঠি খানি পড়ে।
ভাল লাগলো শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
আরে বাহ্ দারুণ তো
তারপর কী হয়েছিল?
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদা
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
খাদিজাতুল কুবরা
আবেদন নিবেদন এবং সম্পর্কের গভীর উপলব্ধি আছে চিঠিতে।
হৃদয় নিংড়ে লিখেছেন আপ।
খুব ভালো লাগলো।
সুরাইয়া পারভীন
কৃতজ্ঞতা অশেষ আপু
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
তৌহিদ
বন্ধুর কাছে লেখা চিঠি পড়ে মনে হলো প্রেমিকা তার সমস্ত বিরহ অভিমান নিয়ে চিঠি লিখতে বসেছে! বন্ধুর চেয়েও সে বেশি কিছু তাই না?
আবেগময় লেখা পড়ে ভালো লাগলো আপু। শুভকামনা জানবেন।
সুরাইয়া পারভীন
হয়তো তাই
শুধু বন্ধু নয় অথবা গভীর কিছু
সে যা হোক চিঠি কিন্তু চিঠিই
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
নিতাই বাবু
প্রিয় বন্ধুর কাছে মনের মান, অভিমান, রাগ-বিরাগ, সুখ-দুখ নিয়ে লেখা চিঠি পড়ে সত্যি ভালো লেগেছে, শ্রদ্ধেয় দিদি। শুভকামনা থাকলো।
সুরাইয়া পারভীন
কৃতজ্ঞতা অশেষ দাদা
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
প্রদীপ চক্রবর্তী
আহা!
অনেকদিন পর আপনার লেখা চিঠি পড়লাম দিদি
ভালো লাগলো।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদা
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
আরজু মুক্তা
গভীর ভালোবাডায় চিঠি লিখলেন। আমরা নীরবে পড়লাম
সুরাইয়া পারভীন
নিরবে নিভৃতেও আসে ভালোবাসা
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
আলমগীর সরকার লিটন
সুন্দর চিঠি লেখেছেন আপু
আসলে আমরা চিঠি লেখা ভুলতে বসেছি———
সুরাইয়া পারভীন
হুম একদম সঠিক
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
জিসান শা ইকরাম
অত্যন্ত আবেগ দিয়ে লেখা চিঠিটি অন্তর ছুয়ে গেলো। একান্ত আপনকে আঘাত দিলে নিজেরই কস্ট লাগে খুব।
তাকে লেখা শেষ চিঠি না হোক এটি।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
চমৎকার লিখেছেন ভাইয়া
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন।
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
হালিম নজরুল
মনের ভেতর প্রেম দানা বেঁধে উঠলে, সেখানে বিরহ খেলা করবেই।
সুরাইয়া পারভীন
এটা আপনি একদম সঠিক বলেছেন ভাইয়া
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
উর্বশী
মান, অভিমান, আবেগ,চাওয়া,না পাওয়া,রাগ,কষ্ট এসব কিছুই ভাল লাগা ও ভালোবাসার মানুষের প্রতি স্থাপন হয়ে থাকে। আর সেই বন্ধুত্বের আড়ালে কিছু বিরহ তো লুকোচুরি করবেই। চিঠি পড়ে ভাল লাগলো।বেশ বড় চিঠি,তবে আমার চিঠিগুলো এতো বড় নয়।আমারও লিখতে ভালই লাগে। অনেক শুভ কামনা আপু।ভাল ও সুস্থ থাকুন।
সুরাইয়া পারভীন
এটা অনেক বড় হয়ে গেছে
কষ্ট করে পড়েছেন বলে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়