
নারী মাত্রই অশালীন মন্তব্য শোনার জন্য দুকান নিয়ে জন্মায়…এ ধারণা সমাজের অনেক কীটপতঙ্গ তাদের মস্তিষ্কে ধারণ করে। এখন সমাজে কিছুটা সচেতনতা সৃষ্টি হওয়ায় তারা আশ্রয় নিয়েছে অনলাইনে। কিন্তু অনলাইনেও যে এখন তাদের জন্য সেইসব অসহায়, কেঁদে ভাসানো নারীরা বসে নেই, তা হয়ত তাদের জানা ছিলো না!
নারী হবার সুবাদে প্রায়ই অশ্লীল বার্তা পেতে হয়, এমন অভিজ্ঞতা এই জগতে আসা প্রায় ৯৯% মানুষেরই রয়েছে। এমনকি ছেলে হয়েও যারা মেয়ের নামে আইডি ব্যবহার করে তারাও পেয়ে থাকে এরকম বার্তা। এসব বার্তা দেখে আজকাল আর অবাক হই না। কিন্তু সেদিন সত্যিই অবাক হলাম, যখন একটা কলেজের প্রভাষক এধরনের বার্তা পাঠালেন!
১৭ জুন ২০২০। কয়েকটা গ্রুপে আমি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত পোস্ট দেই এবং নিয়মিত ফিল্টার ম্যাসেজ, ম্যাসেজ রিকোয়েস্ট চেক করতে থাকি। একজন গনিতের প্রভাষক আমাকে নক দেয়। ওনার এলোমেলো ইংরেজি আমাকে গ্রামার ভুলিয়ে দিচ্ছিলো। থাক সে প্রসঙ্গে আর নাই গেলাম। ওনার ছাত্ররা ওনার কাছে গণিত পড়তে যাবে, ইংরেজি নয়। তবে ওনি আমার প্রোফাইল দেখে আমার পেশা সম্পর্কে নিশ্চিত হলেন, ম্যাডাম ডেকে সম্বোধন করলেন। আমিও জানতে চাইলাম, কি করতে পারি ওনার জন্য। ওনি বললেন:
Specific no reason.
Complete of my dinner.
বুঝে নিলাম। তারপর পাঠালেন স্বল্পবসনা এক নারীর গানের ভিডিও। নারী হয়েও এমন এক ভিডিও দেখে চোখ মেলতে ইচ্ছে করছিলো না। কিছু বলতে গেলাম, তখনি পাঠালেন ১৮+ নিম্নমানের জোকস। সাথে সাথে দিলাম ব্লক।
তারপর ভাবলাম, ব্লক কি কোন কিছুর সমাধান? এরপর ওনি আরেক নারীর ইনবক্সে যাবেন,তাকেও এসব দিবেন। তাছাড়া ওনার কলেজের ছাত্রীরাই বা কতটা নিরাপদ ওনার কাছে? আজ যদি আমি মুখবুজে থাকি, কাল ছাত্রীরা যে এর লাম্পট্যের শিকার হবে না, তা কে বলতে পারে? আমারওতো কলেজে এই বয়সী ছাত্রী আছে। তাদের আগলে রাখাই আমার দায়িত্ব। তাই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই Save Our Woman (SOW) গ্রুপে এই ঘটনা স্ক্রিনশটসহ পোস্ট করি। তারা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেয়। কিছু ম্যাম্বার এসব স্ক্রিনশট ঐ প্রভাষকের পোস্টে গিয়ে কমেন্ট বক্সে রেখে আসে। কেউ আবার ওনার কলেজের ছাত্রদের খুঁজে বের করে ঘটনা জানিয়ে দেয়। আর সো এডমিনরা ঘারাও টিম গঠন করে। তারা ওনার কলেজে ফোন করে বিষয়টি জানায়।
এসবকিছুর পর ওনি আমার কাছে মাফ চান। যদিও ভুল ইংরেজি ব্যবহার করে মাফ চান। আমি তবু মাফ করি। অতপর তিনি নিজ প্রোফাইল ছবি, কভার ছবি, নাম ইত্যাদি পাল্টে আইডি লক করে কোথায় পালাবেন তার পথ খুঁজে পান না…
এই ঘটনার পর আমার মনে হয়, তিনি একটু হলেও ভয় পাবেন পরবর্তীতে আর কোন নারীকে হয়রানি করার আগে। তিনি এটুকু বুঝবেন, এখন দিন পাল্টেছে। নারীরা এখন হয়রানিকে নিজের লজ্জা ভেবে চুপসে রয় না, বরং হেনস্তাকারীকে লজ্জা দিয়ে দিতে জানে।
২০টি মন্তব্য
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
নারীরা রিয়েল জগত বলি আর ভার্চুয়াল জগত বলি সবখানেই নানানমুখী হয়রানী, কটূক্তি সহ্য করতে হয়। হত্যা খুন ধর্ষণ যৌন নিপীড়ন ও হয়রানী এ দেশের মা বোনদের নিত্য সঙ্গী। ভার্চুয়াল জগতে আপনার মতো অনেকেই নানানমুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনার সাহসী ভূমিকা এবং লেখা অনেক মা বোনদের এই অশুভ পাঁয়তারা রুখে দাঁড়াবার সাহস যোগাবে বলে আমার ধারণা। আপনার সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ।
নীরা সাদীয়া
ঠিক বলেছেন। নারী সর্বত্রই হয়রানির শিকার। তাদেরকে সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
শুভ কামনা নিরন্তর ।
কামাল উদ্দিন
প্রতিবাদী হলে এমন লোকজন পালাবার পথ খুঁজে পাবে না। আশা করছি আমাদের মা বোনেরা বুকে সাহস নিয়ে এমন প্রতিবাদী হয়ে উঠবে। কিছু সংখ্যক পুরুষ মানুষের জন্য অন্যেরা লজ্জায় ডুবতে চায়না বলে তারা সবাই মা বোনদের পাশেই থাকবে এটা আপনাদের জানা থাকা উচিৎ। সুন্দর প্রতিবাদী পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ আপু।
নীরা সাদীয়া
মনে সাহস নিয়ে এগিয়ে চলা উচিত। কারণ অপরাধ যে করে লজ্জাটা মূলত তার। তাই তাকে শাস্তি দিলে এরা উচিত শিক্ষা পাবে।
সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব ভালো করেছেন । এমন করেই এসব লম্পট দের শিক্ষা দেয়া উচিত। এভাবে যদি সবাই এগিয়ে আসত আর অপরাধীরা নিজেদের শুধরে নিতে তাহলে আর এসব দেখতে , শুনতে হতো না। ভালো থাকবেন
নীরা সাদীয়া
এই লোকের ২টা সন্তান আছে। তার মানে স্ত্রী ও আছে। কিন্তু তারপরও তার চরিত্রে কোন দৃঢ়তা নেই৷
এদেরকে ধোলাই না করলে উচিত শিক্ষা হবে না।
ভালো থাকুন, সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদ থাকুন।
ফয়জুল মহী
পাঞ্জল শব্দের গাঁথুনি।
নীরা সাদীয়া
এখানে শব্দের ব্যবহারে কি প্রাঞ্জলতা দেখলেন, ঠিক বুঝলাম না।
আরজু মুক্তা
আমি কখনোই চুপ থাকিনা। না বললে তো এরা আরও মাথা চাড়া দিবে।
এমনও ঘটনা আছে রাস্তায় দুই চারটা চর থাপ্পড় দিয়েছি।
বেয়াদব বেয়াদবই। পদবী যাহাই হোক
নীরা সাদীয়া
খুব ভালো করেছেন। এদেরকে এভাবেই শাস্তি দিতে হয়।
সুরাইয়া নার্গিস
আপু পোষ্ট পড়ে মুগ্ধ হলাম।
এমন ঘটনা আমাদের জীবনে প্রায়ই ঘটে আপনাকে স্যালুট জানাই ভালো কাজটার জন্য।
আমিও প্রতিবাদ করি পরে ব্লক দেই,আমি নিজেই তাদের শাস্তি দেই।
আমাকে যা ইনবক্স করে সব তার টাইম লাইনে পোষ্ট করে দেই,কমেন্টসে দেই।তার পরিবারে পরিচিতদের পরিচিতদের সে গুলো ইনবক্স জানাই।
কারন তার থেকে তার পরিবারও নিরাপদ নয় সেটা বুঝিয়ে দেই।
আমার এই রকম সাহসীকতার জন্য বর্তমানে আমাকে ইনবক্স করতেও অনেকে ভয় পায়।
ভালো থাকবেন আপু।
ধন্যবাদ।
নীরা সাদীয়া
এটা খুব ভালো বলেছেন। এরকমটাই করা উচিত।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
তৌহিদ
মেয়ে দেখলেই কিছু মানুষের চুলকানি ওঠে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীতো আর বললেই পরিবর্তন হবেনা। গোড়াতেই পারিবারিক এবং সামাজিক গলদ শিক্ষায় শিক্ষিত জাতির জন্য নারী এখনো ভোগের বস্তু!
ভালো থাকুন।
নীরা সাদীয়া
ঠিক বলেছেন। এরা উপযুক্ত শিক্ষা পায় না বলেই এমন করে।
জিসান শা ইকরাম
নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী আমাদের সমাজ ব্যাবস্থারই একটি অংশ। সমাজ যেভাবে নারীকে দেখে সেভাবেই দেখার অভ্যস্থতা তৈরী হয়।
মুখ বুজে সহ্য না করে তোমার মত প্রতিবাদ করতে হবে।
শুভ কামনা।
নীরা সাদীয়া
ঠিক বলেছেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
সঞ্জয় মালাকার
প্রতিবাদী হলে এমন লোকজন পালাবার পথ খুঁজে পাবে না।
চমৎকার উপস্থাপন দিদি।
নীরা সাদীয়া
ঠিক বলেছেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আশা করছি পরের পর্বগুলোতেও পাশে পাবো।
হালিম নজরুল
নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে চমৎকার উচ্চারণ
নীরা সাদীয়া
অনেক ধন্যবাদ।