
তিন.
কলিং বেল বাজছে। বড়ই মেহেবানী দরওজা খুলিয়ে।বাংলাদেশে অন্য ভাষার চাষ হচ্ছে। বিষয়টা তমিজ উদ্দিনকে ভাবিয়ে তুলছে। রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই বলে আন্দোলন করেছে ছাত্র বয়সে ।আজ সেই ভাষা বাদ দিয়া অন্য ভাষা ফিরে আসছে নবরুপে। আফসোস! বড়ই আফসোস! দড়জা খুললেন তিনি।
আসাসালামু আলাইকুম।আমি সাজ্জাদ।
ওয়ালাইকুম আসসালাম! তোমাকেতো চিনলাম না বাবা!
আমি নাবিল স্যারের ছাত্র। স্যার এই ফ্লাওয়ার বাস্কেটটা পাঠিয়েছেন।
তোমাকে পাঠালো কেন? ও আসবে না?
না মানে স্যার হাসপাতালে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
আহা! দাড়িয়ে আছ ভিতরে আসতে বলা হয়নি। আস আস ভিতরে আস।
না ! হাসপাতালে রোগির খুব চাপ। তারাতারি যেতে হবে। দেরি করা যাবে না। আসি চাচা।
ঠিক আছে বাবা।ফি আমানিল্লাহ!
ছেলেটারে যত বেকুব ভাবছি আসলে তত বেকুব না! মেমোরি ভালই টনটনে। সব দেখি মনে রাখছে।ফারজান! ফারজানা!
জি বাবা ! আসছি।
এই দেখো নাবিলের কান্ড! তোমাদের দিনটি ঠিক মনে রেখেছে। দেখো দেখো কি পাঠাইছে।
ফারজানা শশুরের হাত থেকে ফ্লাওয়ার বাস্কেট টি নেওয়ার সময় লজ্জা রাঙা হয়ে গেল। হাত কাপতে লাগল। কোনরকম হাতে নিয়েই এক দৌড়ে সেখান থেকে প্রস্থান করল।
পুলিশ ক্যাম্পে যখন তার জ্ঞান ফিরল সামনে উর্দী পড়া কিছু পুলিশকে তার দিকে ঝুকে থাকতে দেখল। বড়ই অস্বস্থি হচ্ছিল।কে একজন বলল জ্ঞান ফিরছে স্যার।আরেকটা কন্ঠ বলল কি হয়েছিল? বাসা কোথায় নোট করুন।দুর্বল শরীরে সে কোন রকম ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলেছিল সব।এমন সময় সেখানে অন্য একজন কে আবিষ্কার করে সে। পাসে বসে তার হাতটা আলতো করে তুলে নিল।মানুষটাকে সে ভালভাবে দেখতে পারেনি সে সময়। ঝাপসা ঝাপসা একটু দেখেছিল।এপ্রনপড়া ডাক্তারের মত কেউ হবে। পড়ে পুলিশ ভ্যানে এক সাথে যাওয়ার সময় ঘটে গেল যা ঘটার।
পুলিশ ভ্যানিটি ছুটে চলছে।দুজন অপরিচিত মানব মানবি চুপচাপ বসে। কারো মুখে কোন রা নেই। কথা বলছে চোখ।ক্ষনে ক্ষনে একে অন্যকে চোরা চোখে দেখছে। আবার চোখাচোখি হলে দৃষ্টি সড়িয়ে নিচ্ছে। বাহিরে বৃষ্টি পড়ছে। কখনো জোড়ে কখনো আস্তে।বৃষ্টি পানি ছিটে মেয়েটার মুখে এসে লাগছে। পানির ছটায় মেয়েটা থেকে থেকে শিহরিত হচ্ছে। বৃষ্টি থেমে গেছে এসময় ঘটল ঘটনাটা।
হঠাৎ বিকট আওয়াজ দ্রুম দ্রুম দ্রুম!পুলিশের গাড়িতে বোমা মেরেছে কারা যেন।কিছু বুঝে উঠাবার আগেই আরও একটি বোমা ভ্যানের ভিতরে এসে পড়ল ফারজানার গায়ে।আগুন ধরে গেল মুহুর্তে।পেট্রল বোমা হবে হয়ত।সে এতটা দুর্র্ল ছিল যে ঠিকমত চিৎকারও করতে পারছিল না। হতবিহবল নাবিল তখন নিজের গায়ের এপ্রনটি খুলে সেটা দিয়ে আগুন নেভানো চেষ্টা করছিল।আর হেলপ হেলপ বলে চিৎকার করছিল। পুলিশ ভ্যানের ড্রাইভার পালিয়ে গিয়েছে। সাহায্য করবে এমন কাউকে সে খুজছিল। কিন্তু আসেপাসে সবাই তখন ছুটছুটি করছে। কে কাকে দেখে।একজন মহিলা কোথা থেকে দৌড়ে এল। যেন ইশ্বরের দুত।দ্বিতীয়বারের মত জ্ঞান হারল ফারজানা।
ফ্লাওয়ার বাস্কেটটি হাতে নিয়ে সেই ভয়ংকর আর সুখের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেলো তার।যখন তার জ্ঞান ফিরল কিছু কথা বার্তা কানে আসছিল তার। আল্লাহ জব্বর বাচাইছে।২০% পুড়েছে। মেয়েটার সৌভাগ্য বলতে হয়। নাবিল স্যার এর মত ডাক্তারকে পাসে পেয়েছে সেসময়।পায়ের কাছে বেশকিছু ক্ষতি হয়েছে। সময়মত ফাস্ট এইড দেওয়াতে সেটাতেও আর রিস্ক নেই।কোন রকম উঠতে চাইলো সে।তখন কে যেন বলে ওঠল-
আরে করেনকি করেন কি।আস্তে আস্তে।
চোখ খুলে এই প্রথম ভালো করে তাকিয়ে দেখল সে মানুষটিকে।
আমি বাসায় যাবো।
যাবেন।অবশ্যই যাবেন।আপনার পায়ে একটু ক্ষত হয়েছে। হাটতে পারবেন না। হাসপাতালে হুইল চেয়ার আছে ওটাতে বসেন। এম্বুলেন্স এ করে আপনাকে পৌছে দেব।
কিন্তু যে বাসায় যাওয়ার জন্য তার এ তারা সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছিল আরেক নাটকিয়তা।
চার.
কমলা রানীর বেশ মন খারাপ। সে বিবাহ বার্ষিকির একটা দাওয়াত পেয়েছে কিন্তু দেশের ভজঘট অবস্থার কারনে যেতে পারছে না।একটা উপহারও সে কিনে রেখেছিল কপককপতির জন্য।একটা শিশুর ছবি।ন্যাংটো একটা ছেলে মুখে ফিডার নিয়ে বসে আছে।তার নিচে কায়দাকরে টানা হাতে ইংরেজীতে লেখা- Happy anniversary Dear N & F ।বাংলায় লেখা- ছোট্ট সোনামনির আগমনে আনন্দময় হোক তোমাদের জীবন।
এই যুগলের সাথে তার নাটকিয়তায় পরিচয়।এদের বিয়েতেও সে ছিল।মুসমান বিয়েতে এই প্রথম তার অংশগ্রহন।মনে পড়ে যাচ্ছে একের পর এক করে ঘটানাগুলো।মেয়েটা একটা পুলিশ ভ্যানে আগুন লাগা অবস্থায় তরপাচ্ছিল মেয়েটি। ছেলেটি আগুন নেভানো চেষ্টা করছে হাতে কাপরের মত কিছু দিয়ে।কম্বল বানাতে দিয়েছিল সে । কিন্তু শীত শেষ হয়ে গেছে সে কম্বল আনা হয়নি।সেই কম্বল নিয়ে ফেরার সময় দেখতে পেলে আক্রান্ত পুলিশ ভ্যানটি। কম্বলটি নিয়ে রিক্সাতে যখন উঠে তখন আকাশে রোদের ঝিলিক ছিল।হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে কম্বল একাকার। ভাগ্য ভাল কম্বলটি ভেজা ছিল।সেটা যে এমন একটা মহৎ কাজে লাগবে কে জানত?
দিদি! দিদি! ও দিদি!
ভাবনায় বাধা পড়ল। ছোট বোন নিপার ডাকে।
কিরে কি হয়েছে?
ছোড়াটা না আজকে আবার আমার পিছু নিয়েছে।
কে কার্তিক!
না দিদি ও না ওতো খুব ভাল ছেলে।
বাহ! এইতো সেদিন ওর নামে আমার কাছে নালিশ করলি।আর আজ ভালো হয়ে গেল!
করেছিলাম নাকি? মেন নেইতো।
কিরে সিংকিং সিংকিং ড্রিংকিং ওয়াটার নয়তো। সাবধান!
আরে ধুর! ওসব না! ওই ওর কাছে ভাল কিছু নভেল আছে ।মাঝে মাঝে নিয়ে পড়ি।
তাহলে কে তোর পিছনে পড়ে আছে?
আরে মনে নেই? ঐ ছেলেটা।যার দাদা তোমাকে বিয়ের করতে চেয়েছিল।
রজতের ভাই দিনেশ!
হ্যা ঐ ছোড়াটাই।আমার কলেজের সামনে দাড়িয়ে থাকে আর ছুটির পরে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে টিচ করে।
হ্যা তুই আগে একবার বলেছিলি।রজত তখন ওকে খুব মেরেছিল।
সেই জন্যইতো সে আরো ক্ষেপে উঠেছে।
আচ্ছা আমি রজতের সাথে এটা নিয়ে কথা বলব। এখন যাতো মোড়ের দোকান থেকে এই ছবিটা একটু রেপিং করে আনতো।
কিসের ছবি।দেখিতো।ওমা! এটাতো একটা বেবির ছবি। কি সুন্দর! মায়া মায়া।কাকে দেবেগো দিদি!
সেটা তোর না জানলেও চলবে। যা যা তারাতারি করে যা।
৮টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
আচ্ছা জিন্নাহ যদি ৫২ সালে ইংরেজি রাষ্ট্র ভাষা হবে বলতো তাহলে কি হতো
আতা স্বপন
সব ভাষার সেরা আমার মায়ে ভাষা। এ ভাষার উপরে কোন ভাষা হতে পারে না। সেটা হিন্দি, উর্দু কিংবা ইংরেজি বা অন্য কোন ভাষা । মাতৃভাষার মর্যদা সবার আগে। ধন্যবাদ
শামীম চৌধুরী
দারুন লাগলো দাদা ভাই।
আতা স্বপন
ধন্যবাদ
হালিম নজরুল
ভালভাবে এগুচ্ছে
আতা স্বপন
চেষ্টা করে যাচ্ছি। আল্লাহ ভরসা। ধন্যবাদ
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চমৎকার উপস্থাপনা করেছেন। ভালো লাগলো অনেক। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
আতা স্বপন
আপিনিও সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ