
মাঝবরাবর পুকুর থেকে বুদবুদ ওঠে। ১০/১২ বছরের দু’ বেনী ঝোলানো ফ্রকপরা মেয়োটা নানা বাড়ির ভেতরবাড়ির শানবাঁধানো ঘাটলায় দাঁড়িয়ে দেখছে। পুকুরের চারদিক ঘন গাছপালা ঢাকা। এ সময়টা বড্ড সুনসান নিরবতা বিরাজ করে চারদিক। ছমছম করা এক ভয় কাজ করে অযথাই।
কি এক অজানা আকর্ষণ আছে এই পুকুরঘাটে! মাটির ছোটো চুলায় ছোটো ছোটো হাড়িপাতিলে রান্নাবাটি খেলা ছেড়ে বার বার সে আকর্ষন টেনে নিয়ে আসে এই পুকুর ঘাটে।
প্রচুর মাছ আছে এ পুকুরে। হবে হয়তো, মাছেদের খেলা! ছোটো খালা গলা ছেড়ে চিৎকার করে ডেকে ওঠে -” ও বানু গেলি কই? তর চুলার আগুন দেহি নিভ্যা গেলো?”
প্রতিবার ছোটো খালা বানু’র জন্য ছোটো চুলা(মাটির) ছোটো হাড়িপাতিল জোগাড় করে রাখে। বোনের মেয়েটা বেড়াতে এলে এগুলো নিয়ে খেলবে।
বানু পুকুর পাড়ে যেন বেশি না যায়। কোন ফাঁকে কখন কেমন করে বানু পুকুরপাড় চলে আসে কেউ টেরও পায়না। গলার আওয়াজে বানুর সম্বিৎ ফিরে আসে। ধ্বক্ করে ওঠে ছোট্ট কবুতরের মতো বুকটা।
ইতিউঁতি তাকায়,খালা বা মা কোথায় আছে এখন, সামনে দিয়ে গিয়ে হাজির হওয়া যাবে না,তাইলেই পিটানি খাইতে হবে।
একদিন মিথ্যামিথ্যি ভাত রান্না করতে গিয়ে সত্যি সত্যি আগুন নিয়ে খেলতে গিয়ে নারকোলের আঁইচা(নারকেলের শুন্য খোলস) তে আগুন লেগে গিয়েছিলো। পানি নিতে পুকুরঘাট থেকে ফেরার সময় পড়লো ছয়/সাত হাত লম্বা সাপের সামনে। পানি হাতে বরফের মতো ঠান্ডা হাত পা নিয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিলো। আধাহাত পাশ দিয়ে সাপটা নেমে পুকুরে সাঁতার দিলো।
ভাবতেই চারপাশটা ভালো করে দেখে নিলো আবার বানু। বানু সাঁতারও জানে না। পা পিছলে গেলেই শেষ। জানবেও না কেউ, বানু কখন পুকুর পাড়ে গিয়েছে।
সেই বানুটা একদিন ঠিক বড় হয়ে গেলো। জানতে পারে, তাঁকে কুঁড়িয়ে পাওয়া হয়েছিলো।
কেউ তাঁর আপন নয়।
না মা
না বাবা
না দাদা
না দাদী
না খালা
না ফুপু
কেন কোনোদিন বুঝতে পারে নি বানু, আসলে আপন বলতে কখনোই কেউ থাকে না আসলে!
আপন হবার ভাণ করে কেবল সবাই শুধু।
আসলে আপন বলতে কি বোঝায়? বানু আজ পরের ঘরে জমিয়ে সংসার করছে। বানুকে মা ডাকার মতো দু’টো সন্তান আছে।
বউ বলে ডাকার মতো শাশুড়ি শশুড় আছে। ভাবি, মামি,চাচি,বলে সম্বোধন করার মতো কত কত স্বজন আছে, আছে একজন স্বামী, যে কিনা তাঁর স্বামীত্বের দাবী পূরণ করে নেয় জোড় অধিকারের অধিকার বলে।
বানু কার আপন?
কে বানুর আপন?
আপন—- কারে কয়?
বানু এসব প্রশ্নও জানে না।
নিশ্চিন্তে ভাতঘুম
দেয় ক্লান্ত দুপুর বেলা।
২৫টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
লেখা পড়ে ভালো লেগেছে।
বন্যা লিপি
আন্তরিক ধন্যবাদ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
যারা আপন পরের হিসাব বোঝেনা তারাই নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে। এ জগৎ সংসারে কেউ আপন নয়। রক্তের সম্পর্ককে আপন বলা হলেও আত্নার সম্পর্কই আপন হয়। কুড়িয়ে পাওয়া বানুর জীবনটা পড়ে ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপু। শুভ কামনা ও শুভ সকাল
বন্যা লিপি
অনেক ধন্যবাদ ছোটদি। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষরা জোর করেই অধিকার খাটায় অধিকারের দোহাই দিয়ে। এটাই আমাদের সমাজের অলিখিত নিয়ম বা চুক্তি। ধন্যবাদ আপনাকে
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আরেকটা কথা হলো নারীরা সবসময়ই কারো না কারো অধীনে থাকে। এটাও একটা অলিখিত চুক্তি
ইঞ্জা
রক্তের সম্পর্ক যখন সময়ে দূরে চলে যায়, তখনও নিজেকে একা মনে হয়, মাঝে মাঝে আমারও তেমনি মনে হয়, সত্যিকার অর্থে নিজের পরিবারই আসল পরিবার, বাকি সবই মেকি।
অসাধারণ লিখলেন প্রিয় আপু।
বন্যা লিপি
বিশ্লেষণে যাচ্ছিনা ভাইজান। আপন আপন করি কারে…. সে তো আপন নয়… এটা একটা গানের লাইন। গল্পের মাঝে অনেক মেসেজ রেখেছিলাম। পাশ কেটে গেছে সবাই বুঝলাম। আমারো আর ব্যাখ্যা করতে ইচ্ছে করছে না।
কৃতজ্ঞতা জানবেন। শুভ কামনা।
ইঞ্জা
সত্যি কি তাই, আমিও তো কমেন্টে একটা মেসেজ দিলাম, কই রিপ্লাই তো পেলাম না।
মাহবুবুল আলম
বানুরা সব সময় অসহায়। হাহাকারের ভীষণ এক বোঝা তারা সারাজীবন বয়ে বেড়ায়।
ভাল একটি বিষয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ।
বন্যা লিপি
আপনাকে ধন্যবাদ মন্তব্যে। শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
চমৎকার লেখা, পড়ে ভালো লাগছে।
ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা রইল আপু।
বন্যা লিপি
কৃতজ্ঞ হলাম মন্তব্যে, ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা।
সুপায়ন বড়ুয়া
“বানু কার আপন?
কে বানুর আপন?
আপন—- কারে কয়?”
বড় জটিল প্রশ্ন আপু
আপন খোঁজা বড় কষ্ট হয়।
যদি না আপেক্ষিক হয়।
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
ধন্যবাদ। শুভ কামনা জানবেন। ভালো থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন।
কামাল উদ্দিন
গানের সূরে বলতে হয় এই সংসারে কেউ নয় আপনজনা…..তবে আপন করে নিতে জানলে সমস্যা হওয়ার কথা তো নয়।
বন্যা লিপি
ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য।
ভালো থাকবেন। শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
কে কার আপন কেউ জানে না
এ জগত সংসারে কেউ কারো আপন নয়
বানু মনে এসব প্রশ্ন নেই বলেই হয়তো চিন্তে ভাত ঘুম দিতে পারছে।
চমৎকার লিখেছেন আপু 💜
বন্যা লিপি
একদম….. যথাযথ বলেছো সুরু।
ভালো থেকো নিরাপদে থেকো।
সঞ্জয় মালাকার
আসলে আপন বলতে কখনোই কেউ থাকে না আসলে!
আপন হবার ভাণ করে কেবল সবাই শুধু।
দিদি এই সংসারে, আপন খোঁজা বড় কষ্ট হয়।
শুভ কামনা দিদি 🌹🌹
বন্যা লিপি
শুভ কামনা দাদা।ভালো থাকবেন সবসময়।
জিসান শা ইকরাম
প্রকৃত বিচারে মানুষ কেহ কারো আপন নয়।
আবার সবাই আপন।
এমন প্রশ্ন মানুষকে কস্টের মাঝে নিক্ষেপ করে। বানুরা এমন প্রশ্ন জানেনা বলেই নিশ্চিন্ত তারা।
লেখা ভালো হয়েছে।
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
আপন বলতে শুধুই নিজের কাছে নিজে।আমার এমনই মনে হয়।
কি এক বোধ এলো মনে! কোনোরকম পূর্বপ্রস্ততি ছাড়া, ভাবনা ছাড়া গটগট করে লিখে গেলাম একটা গ্রুপে। লেখার পরে কপি করে সেভ করলাম। তারপর এখানে দেবার কথা ভাবলাম। থাকুক জমা এখানে।
লেখা ভালো হয়েছে* এমন মন্তব্য আমার জন্য প্রেরণা।
অসংখ্য কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধা।
ভালো থাকবেন সবসময়।
হালিম নজরুল
আপন-পর সবই আপেক্ষিক
বন্যা লিপি
সহমত আপনার সাথে।
মূল্যবান মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।