
পাড়ায় একটা চোর ধরা পড়েছে। কয়েকটা মাস্তান টাইপের ছেলে চোরের দফারফার কাজে ব্যস্ত।
মদনা নামের এক মাস্তান বলল-
ক- বেটা চুরি করছস কেন?
আমি চুরি করি নাই ভাইজান!
চুরি করস নাই ! তাইলে ঐ বাড়িতে ঢুকছিলি কেন?
আমি চোক্কে কম দেহি, ভুল কইরা ঢুইক্যা পরছি।
চুপ কর বেটা মিথ্যাবাদী। চুরি কইরা আবার মিথ্যা কথা, একটা থাপ্পর দিয়া পাপরভাজা বানাইয়া ফালামু।
আমি মিথ্যা কইনা ভাইজান!
আরে আমার সত্যবাদীরে।
মাস্তান লিডার বল্টু বলল-
এমনে সোনার চান্দরে স্বীকার করান যাইবনা। এক কাম কর হালার লুঙ্গি খুইল্যা ফেল, দেখবি আপছেই সত্য বাইর হইব। লজ্জার উপর অষুদ নাই। হা-হা-হা।
কামডাকি ঠিক হইব ?
ঠিক বেঠিক আমি বুঝমুনে, তোরে যেই কাম করতে কইছি হেইডা কর।
মদনা চোরটাকে লক্ষ্য করে বলে-
ঐ বেটা তোর নাম কি?
গরিবের নাম হারেছ আলি , ভাইজান!
নামতো একখান রাখছস নবাবি কিসিমের।
আমাগো বংশ এককালে নবাব আছিল , ভাইজান!
ঐ মদনা! তোরে না কইছি হালার লুঙ্গি খুইলা ফেলতে । সোনার চানের নবাবি ভাগবো।
মদনা হারেছ আলি লুঙ্গি ধরে।
ভাইজান! লজ্জা হইল মাইনষের ভুষন, আমারে লজ্জা দিয়েন না। খোদা নারাজ হইব।
ঐ বেটা! এতই যদি লজ্জা পাস, চুরি করস কেন?
আমি চোর না ভাইজান!
খাটিকথা , তুই চোরনা ! তুই হইলি ডাকাইত। চোরের বড়ডা।
মস্তানদের সাথে হারেছ আলির লুঙ্গি নিয়ে টানাটানি চলার সময় পাস দিয়ে যাচ্ছিল পুলিশের হাবিলদার দবির মোল্লা। রাস্তায় গোলমালটা কিসের দেখার জন্য থামল।
এই খানে গন্ডোগোলটা কিসের?
পুলিশ ভাইজান! আমার ইজ্জত বাচান।
আমি বাচামু কেমনে। বাচানের ক্ষমতা আল্লাাহপাকের হাতে।
ঐ মিয়ারা ! তোমারা হের লুঙ্গি ধইরা টানাটানি করতাছ কেন?
এইডা হইল একটা রাম চোর। চুরি কইরা স্বিকার যায় না। হেরলাইগা লুঙ্গি খুইলা কথা বাইর করবার চাই- বলল মদনা।
অভাবে পইরা বেটায় না হয় চুরি করছে। যারে বলে অভাবে স্বভাব নষ্ট। হের লগে এমন করন ঠিকনা। হেওতো মানুষ! কুকুর বিড়ালত না।
এইডা বড় বজ্জাত স্যার !
বেশি বুইঝনা হের ছাইরা দাও।
যদি না ছারি, বলল বল্টু।
ঐ বেডা তুই কেডারে ! আমার লগে তেজ দেখাইয়া কথা কস।
তোর বাপ, শালা!
মুখ সামালাইয়া কথা বল , হারামির বাচ্চা। একটা থাপ্পর দিমুনা পেসাব হইয়া যাইব লগে লগে।
রেগে গেলেন দবির মোল্লা। মদনা অবস্থ বেগুতিক দেখে বলল-
ওর কথায় কিছু মনে নিয়েননা , স্যার!
না মনে করনের কি আছে। লাল দালানে ঢুকলে ওই বাপরেই আমার পায়ে পরতে হইব কইয়া রাখলাম।
মদনা! এই ঠোলার কথা হুইনা কাম নাই। তুই হের লুঙ্গি খোল -বলল বল্টু।
হঠাৎ হারেছ আলি বলে উঠে- আমি চোর, চুরি করছি। লুঙ্গি খুইলেননা ভাইজান!
যা আজকার মত ছাইরা দিলাম-বলল বল্টু।
কিন্তু আমি ছাড়ু–ম না, হারামজাদারে চুরি করনের মজাট টের পাওয়াইয়া দিমু ।
আমারে মাফ দেওন যায় না , পুলিশ ভাইজান!
চুপ! একট কতা কবিনা, চল আমার লগে।
কই যামু ,ভাইজান!
শশুর বাড়ি।
আমি এহন বিয়াই করি নাই ভাইজান! শশুর বাড়ি আইব কইথেইকা!
চোর আর ডাকাইতগো বিয়া করন লাগে না। রেডিমেট শশুর বাড়ি হইয়া যায়। চল এহন। দেখবি তোর শশুর তোরে কেমন আদরইনা করে!
হাছা কইতাছেনতো ভাইজান!
মিথ্যা আমি কইনা , পাপ হয়।
তাইলে চলেন ভাইজান! দেরি করনডা ঠিক হইব না।
২.
অ- পুলিশ ভাইজান! আমারে থানায় আনলেন কে ? শশুর বাড়ি নিবেন না!
চুপ কইরা থাক , চোরের বাচ্চা ! এইডাই তোর শশুর বাড়ি। ভিতরে যাইয়া দেখ, তোর শশুর ডান্ডা হাতে বইয়া আছে।
ডান্ডা কেন ? ভাইজান!
জামাই বরনের লাইগা ! সোহাগ করনের লাইগা, বেটা বেক্কেল!
কয়েকজন পুলিশ হারেছ আলিকে ধরে গারদে ঢুকিয়ে দিল।
হ-য-ব-র-ল অবস্থার স্বীকার হারেছ আলি অবাক দু নয়নে পুলিশের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল –
চুরি করতে গিয়া এইডাকোন পেচগিতে পরলাম !!!
১৩টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
সুন্দর উপস্থাপন । দারুণ লেখা
আতা স্বপন
ধন্যবাদ। আল্লাহ আমাদের সবার উপর রহমত বর্ষন করুন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভালো লাগলো গল্পটা। সবারই ইজ্জত আছে এটা হলো সত্যি কথা। ভালো থাকবেন সবসময়
আতা স্বপন
ধন্যবাদ। আল্লাহ আমাদের সবার উপর রহমত বর্ষন করুন।
জিসান শা ইকরাম
চোরের জায়গা ডান্ডা ওয়ালা শ্বশুর বাড়িই,
ভালো লিখেছেন।
নিয়মিত লিখুন, অন্যদের লেখাও পড়ুন।
শুভ কামনা।
আতা স্বপন
ধন্যবাদ। আল্লাহ আমাদের সবার উপর রহমত বর্ষন করুন।
কামাল উদ্দিন
আমি তো ভাবছিলাম পুলিশ ব্যাটা বুঝি ঘুষ খাইয়া রাস্তায় নিয়া ছাইড়া দিবো।
আতা স্বপন
এমনই হবার কথা। কিন্তু কিছুটা ব্যতিক্রম করলাম আরকি।
ধন্যবাদ। আল্লাহ আমাদের সবার উপর রহমত বর্ষন করুন।
কামাল উদ্দিন
আমিন
হালিম নজরুল
শুভকামনা রইল।
আতা স্বপন
ধন্যবাদ। আল্লাহ আমাদের সবার উপর রহমত বর্ষন করুন।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
খুব সুন্দর লিখেছেন। যে অবস্থা পড়েছে, একটু মজার গল্প না পড়লে দিন যাচ্ছে না।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আতা স্বপন
ধন্যবাদ। আল্লাকে সর্বদা স্মরণ করুন।