
কাপ্তাই হৃদে নামলে প্রথমেই আমার যে কথাটা মনে হয় তা হল পবিত্রতা। ট্রলার নিয়ে কাপ্তাই হৃদে যারা ঘুরে বেড়িয়েছেন তারা আশা করছি আমার সাথে একমত হবে। হৃদের পানি যেমন স্বচ্ছ তেমনি আশে পাশের টিলাগুলো, কোন ময়লা আবর্জনা নাই, সুনসান নিরবতা। মাঝে মাঝে কিছু আদিবাসী বাড়িঘর ও তার ঘাটে বাধা দু’একটি নৌকো থাকে, তাও যেন প্রকৃতিরই একটা অংশ। ভীষণ উপভোগ্য একটা যায়গা। সেই পবিত্র প্রকৃতির একটা অংশ হয়ে দুয়েক দিন কাটিয়ে দেওয়ার কথা আগে চিন্তাও করা যেত না। নেটের কোথাও থেকে নাম্বার নিয়ে এক বন্ধু ফোন দিয়েছিল, ওরা যেতে আহ্বান করায় একদিন সময় করে চলে গেলাম। দেখলাম ফোন ধরা ঐ লোক আসলে একজন সেনা অফিসার, এবং ওনার বাড়ি আমাদের নরসিংদীর বেলাব থানায়। ঘটনা চক্রে ওনার শ্বশুর বাড়ি আর আমার শ্বশুর বাড়ি একই গ্রামে। আর ওনাদের আথিথেয়তায় সত্যিই আমাদেরকে খুব মুগ্ধ করেছে।
সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের পাহাড়ঘেরা কাপ্তাই ক্যাম্পটি কিছুদিন আগেও ছিল নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায়। সেখানে ছিল না সাধারণ লোকজনের অবাধ বিচরণ। পার্বত্য শান্তিচুক্তির শর্ত অনুযায়ী ক্যাম্পটি তুলে ফেলা হয়েছে কিছুদিন আগে। কিন্তু লেকের পাড়ের ছোট ছোট টিলায় ক্যাম্প অফিসগুলো পরিত্যক্ত রাখা হয়নি। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সেখানে তৈরি করা হয়ছে দৃষ্টিনন্দন বাহারী কটেজ। নাগরিক কোলাহল ছেড়ে আপনি ইচ্ছে করলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যে কোন মুহূর্তে ঘুরে আসতে পারেন কাপ্তাই লেকের পাড়ের সদ্যবিলুপ্ত এ ক্যাম্প এলাকায়।
এছাড়াও লেক ভিউতে রয়েছে চমৎকার একটি বজরা নৌকা। চিত্রশিল্পী সুলতানের ‘বজরা’ এর আদলে গড়ে তোলা হয়েছে এই বজরা। নাম দেওয়া হয়েছে ‘নীলকৌড়ি’। এই নীলকৌড়ি ছোট কোনো পাখি নয়। এটি আসলে ৫০ ফুটের একটি অভিজাত বজরা নৌকা। এতে রয়েছে বেতের তৈরি দুটি ডাবল খাট, সঙ্গে লাগোয়া টয়লেট। ছয়জনের রাতযাপনের ব্যবস্থা আছে এতে। শয়নকক্ষে আছে কুলার মেশিন। বারান্দায় এক সেট সোফায় বসে কিংবা ছাদে উঠে চা পান করতে পারেন আয়েশি ভঙ্গিতে। কোন এক সময় এই এলাকার ছবি তোলাও নিষিদ্ধ ছিল, তখন ট্রলারের নিচে থেকে চুপি চুপি ছবি তুলেছিলাম। যেখানেই ছবি তোলা নিষেধ সেখানে ছবি তোলার জন্য আমার হাত নিষপিষ করে সব সময়। তো চলুন ঘুরে আসা যাক সেই লেকভিউ আইল্যান্ড থেকে।
(২) লেকভিউ আইল্যান্ডের অপর পাড়ে হিলটপ রিসোর্টের ঘাট থেকে বোটে চড়ে আসতে হয় এখানে, ইচ্ছে করলে কাপ্তাই জেটি ঘাট থেকেও এখানে আসা যাবে।
(৩) সেনা বাহিনী পরিচালিত জলকৌড়ি, জলকিন্নরী এমন বাহারি নামক নৌযান গুলো পর্যটকদের পৌছে দেবে লেকভিউ আইল্যান্ডে।
(৪) কাপ্তাই লেকের শান্ত নীল জলরাশি পার হয়ে যখন লেকভিউ আইল্যান্ডের দিকে বোট ছুটবে তখন নিজের অজান্তে মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসবে এমন দেশটি কোথাও খুঁজে…….
(৫) ট্রলার থেকে নেমে কয়েকটি ধাপ বেয়ে উঠে যেতে হয় আইল্যান্ডে।
(৬) রিসোর্টের কাঠের রেলিং দিয়ে ঘেরা বারান্দায় বসে কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায় চমৎকার ভাবে।
(৭) ইয়েলো জোন, এখানে রয়েছে এসি/নন এসি কটেজ, থাকা খাওয়ার সব রকম সুব্যবস্থা।
(৮/৯) “দাও ফিরিয়ে সেই অরণ্য” অরেঞ্জ জোনে যাওয়ার পথ। তৈরি করা হয়েছে কিডস কর্ণার, যাতে শিশুদের জন্য নানা ধরনের খেলনা রাখা আছে। আর বড়দের জন্য গাছের উপর তৈরি করা হয়েছে দুটি মাচা। একটি থেকে অন্য মাচায় যেতে তৈরি করা হয়েছে মিনি ঝুলন্ত সেতু। যার কিছু অংশ কাঁচ দিয়ে তৈরি। রয়েছে বড়শি দিয়ে লেকের জলে মাছ ধরারও সুব্যবস্থা।
(১০/১১) মিনি ঝুলন্ত সেতু। যার কিছু অংশ কাঁচ দিয়ে তৈরি, কাঁচের অংশটুকু পাড়ি দেওয়াটা খুবই ভয়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
(১২) এই অংশে রয়েছে মোটামুটি বেশ কিছুটা প্রসস্ত খোলা জায়গা।
(১৩) বাচ্চাদের জন্য এমন কিছু বাদরামির জায়গা।
(১৪/১৫) যারা তাবুতে থাকার এ্যডভ্যাঞ্চার ভালোবাসেন তাদের জন্য রয়েছে এমন ব্যবস্থা, এবং অবশ্যই নিরাপদ।
(১৬) যাদের প্রেসার হাই কিংবা টক খেতে ভালোবাসেন টাদের জন্য রয়েছে এমন প্রাকৃতিক ব্যবস্থা।
(১৭) অরেঞ্জ জোনের শেষাংশে রয়েছে এমন একটা জিরো, হয়তো বুঝানো হয়েছে এটাই লেকভিউ আইল্যান্ডের জিরো পয়েন্ট।
(১৮) সুমধুর কিছু গান শুনে তাকিয়ে হয়তো খুজে পাবেন এমন সাম্পানওয়ালাদের। পাহাড়ি ভাষা হয়তো ঠিক বুঝা যাবেনা, তবে সুরে মুগ্ধ হতে হবে নিশ্চিৎ।
(১৯) ইচ্ছে হলে এখানে বসে দুয়েকটি কবিতা লিখেই ফেলা যায়।
(২০/২১) এমন চমৎকার বজরায় আয়েশি ব্যবস্থা বাংলাদেশে একমাত্র লেকভিউ আইল্যান্ডেই সম্ভব।
(২২/২৩) কাপ্তাই বাধের সুন্দর রূপের ছবি তোলা এতোদিন সম্ভব ছিল না, এখন ইচ্ছে হলে অনায়াসেই তা করা যায়।
(২৪) লেকভিউ আইল্যান্ডে থেকেই দেখা যায় ওপারের কাপ্তাই জেটিঘাট বাজার, ইচ্ছে হলে আদিবাসী সংখ্যাগরিষ্ঠ এ বাজারটি থেকে ওদের তৈরি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বা ফল-মুল কিনে নিতে পারেন সুলভ দামেই।
৩৫টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
আমার প্রিয়তম জায়গার একটি
যেখানে মন টানে ঘুরে বেড়ানোর জন্য।
অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর করে তুলে ধরবার জন্য।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ দাদা, আপনার পছন্দের সাথে আমার পছন্দের ভালোই মিল রয়েছে দেখছি।
তৌহিদ
লেকভিউ আইল্যান্ড কত সালে হয়েছে ভাই? আমি অনেক আগে কাপ্তাই গিয়েছি। তখন পাইনি।
সুন্দর পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
কামাল উদ্দিন
এটা ২০১৭ সালে গড়ে তোলা হয়েছে তৌহিদ ভাই।
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই।
জাহাঙ্গীর আলম
বিনাখরচে ঘুরে এলাম কাপ্তাইর লেকভিউ আইল্যান্ড কামাল ভাই এর বদৌলতে । ধন্যবাদ কামাল ভাই ।
কামাল উদ্দিন
এখন বিকাশ করো, করোনাকালে এমনিতেই সংকটে আছি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
🤣🤣🤣 বিকাশ পেলে আমাদের ও দিয়েন ট্রিট।
কামাল উদ্দিন
আগে তো আমি পেয়ে যাই আপু 😀
জাহাঙ্গীর আলম
কামাল ভাই আমি এখন নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে লকডউনে আছি। তাই আমি অন্তরের অন্তস্থল থেকে দুঃখিত। তবে আমি কথা দিচ্ছি লকডাউন শেষ হলে আমি নিজেই আপনার অফিসে এসে এককাপ তেতুল চা সাথে টা খাব। ইনশাআল্লাহ।
কামাল উদ্দিন
তোমার বিকাশ ব্যবস্থা তো দেখছি বেশ চমৎকার 😀
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভাইয়া খুব ভালো লাগলো জায়গাটা । ৪ নং ছবিটা খুব ভালো লেগেছে। অসাধারণ লাগলো কাপ্তাই ভ্রমণ। শ্বশুর বাড়ির লোকজন তো খাতির করবেই। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো
কামাল উদ্দিন
হুমম, ৪ নং ছবিটাতে টাইটানিকের ভাব আছে…..শুভেচ্ছা জানবেন আপু।
ফয়জুল মহী
দুর্দান্ত প্রকাশ। ভালো লাগলো
কামাল উদ্দিন
হুমম, ধন্যবাদ।
প্রদীপ চক্রবর্তী
চমৎকার বর্ণনা
মন ভরে গেলো দাদা।
ভালো লাগলো অনেক।
চমৎকার একটি জায়গা। সে জায়গায় ঘুরতে হবে।
কামাল উদ্দিন
আমার ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে ফ্যামেলী নিয়া ওখানে রাত কাটানো। ধন্যবাদ দাদা, ভালো থাকুন সব সময়।
ইঞ্জা
অনেক বছর যাওয়া হয়নি কাপ্তাই, আমার এক চাচা কাপ্তাই পানি বিদ্যুতে ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন বলে এক সময় অনেক কিছু দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো।
আপনার লেখার মাধ্যমে স্মৃতি গুলো আবার চাঙ্গা হলো।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ বড় ভাই, স্মৃতি বড় জ্বালাময় 😀
ইঞ্জা
জ্বলাময় কি সবসময় হয়, স্মৃতি অনেক সময় মধুরও হয়।
কামাল উদ্দিন
হুমম, তা ঠিক
জিসান শা ইকরাম
মুগ্ধ হয়ে পোস্টটি পড়লাম, দেখলাম আর জানলাম। এখানে থাকা যায় তা জানাই ছিল না। থাকার ইচ্ছে খুবই প্রবল হলো।
পোস্ট প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম যাতে কখনো গেলে সুবিধা হবে।
কিভাবে যাওয়া যায় এবং কোথায় যোগাযোগ করতে হবে, এটি পোস্টে লিখে দিলে ভালো হয়।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
ইন্টারনেটের যুগে আসলে সব কিছুই এখন আমাদের হাতের নাগালে। নেটে সার্চ দিলেই ওদের ফোন নাম্বার পেয়ে যাবেন হয়তো, সুতরাং নো চিন্তা……ভালো থাকবেন বড় ভা
ইসিয়াক
ঝুলন্ত সেতুতে কাঁচ দিয়ে তৈরি অংশটুকু কি আপনি পার হয়ে ছিলেন কামাল ভাই? ছবি দেখেই তো আমার গা শির শির করছে। ছবিগুলো খুব সুন্দর।
শুভকামনা।
কামাল উদ্দিন
চায়নারা বিশাল এক কাচের সেতু নির্মান করেছে। নেটে ঐ সেতু পারাপারের অনেক দৃশ্য দেখা আছে আমার। কিন্তু চায়নার প্রযুক্তি থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে তাই ভয়টা বেশীই লেগেছিলো। মনে হচ্ছিল কাঁচ ভেঙ্গে কেটে কুটে না নিচে পড়ে যাই……শুভ কামনা জানবেন ইসিয়াক ভাই।
মাহবুবুল আলম
ভাল লেগেছে লেখাটা। ওখানে গেলেও থাকা হয়নি। পরেরবার চেষ্টা করবো। শুভেচ।
কামাল উদ্দিন
আগে অশ্য থাকার সিষ্টেমটা ছিলোনা, এখন যেহেতু হয়েছে, আপনার মতো কবিরা ওখানে থাকলে নিশ্চৎ আমরা অনে ভালো কিছু পাবো……..ভালো থাকবেন বড় ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
একদম ডিটেলে লিখুন, কীভাবে যেতে হয়, কটেজে টাকা-টুকা কিরাম লাগে, কত আগে বুকিং দিতে হয়,
সব চাই, কপালে কী লেখা আছে জানি না, তবে ইচ্ছেটি প্রবলতর হচ্ছে।
কামাল উদ্দিন
আসলে বন্ধুর সাথে গিয়েছি ওর পরিচিত জন আছে বলে। এখন ডিটেলস জানতে কোন সমস্যাই নাই নেটে সার্চ দিয়ে ওদের সাথে কথা বলে নিলেই হয়। বাকীটা তো শুধু আমাদের বাসে চেপে কাপ্তাই যাওয়া……. ভালো থাকবেন বড় ভাই।
আতা স্বপন
ধন্যবাদ। খরচ কেমন পরবে? ওখানে যেতে হলে কোন পারমিশন কি লাগবে? একজন সাধারন পর্যটক ওখানে কিভাবে ভ্রমন করতে পারবে?
কামাল উদ্দিন
বিষয়টা আসলে আমার জানা নাই, কারণ ওখানে গিয়ে আমার থাকা হয়ে উঠেনি। যেটুকু জেনেছিলাম সেটুকুও এখন আর মনে নাই। নেটে সার্চ দিয়া ওদের সাথে কথা বলে নিতে পারেন ভাই……..শুভ সন্ধ্যা।
তূয়া নূর
খুব সুন্দর বর্ণনা।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ভাইজান, ভালো থাকবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
বেড়াতে যাওয়ার জন্যে খুবই সুন্দর একটা জায়গার সন্ধান পেলাম। ছবি আর বর্ননা ভালো লাগলো, তবে আপনিই যদি আরেকটু বিস্তারিত লিখে দিতেন তাহলে এক পোস্টেই সব তথ্য পেয়ে যেতাম। নেট সার্চ দিয়ে সময় নস্ট করা লাগতো না।
অবরুদ্ধ থাকার এইদিন গুলোতে ভ্রমণের আনন্দ পাচ্ছি আপনার নিয়মিত ভ্রমণ লেখায়। তাবু আর বজরার ছবিটা দিয়ে পোস্টে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছেন।
শুভ কামনা কামাল ভাই,
কামাল উদ্দিন
এখন তো হাতে অঢেল সময় আপু, নেটে সার্চ দিয়া সময়টা ভালোভাকে কেটে যেতে পারে……..শুভ কামনা।