রাত্রি গভীর।

বিলাসবহুল কামরায় দুটি বিছানা থাকলেও রাঘবের পাশে শুয়ে আছে বিনু।   পাড়াটা শান্ত হলেও কখনো ঝিঁঝির শব্দ কখনো অদ্ভুত কন্ঠে ফিসফিস শব্দ। এমন অদ্ভুত শব্দে ভয়ে ভূত ভূত বলে চিৎকার করে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠেছে বিনু। ঘুমঘোরে ক্লান্ত রাঘব সেও লাফ দিয়ে উঠে বলছে ভূত কোথায় ভূত কোথায়!

রাঘব এদিকওদিক টর্চলাইট দিয়ে খুঁজে ভূতের কোন সাঁড়া না পেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।

বিনু ভয়ে হতবিম্ব হয়ে আছে কখন জানি ভূত তাকে আবার ঘাপটি মেরে ধরে।

রাত্রি তখন প্রায় তিনটে। রাতের শেষ প্রহরে বহিছে মৃদু হাওয়া। প্রচন্ড শীত তারমধ্য বিনু মনে ভূতের আনাগোনা। এসবে যেন কিছুতেই মনের সংশয় কাটছে না।

এদিকে রাঘব ঘুম থেকে উঠে হাতে টর্চ লাইট নিয়ে বারান্দায় একা বসে আছে। ভূত ধরার নেশায়!

রাঘবের এমন অগত্যা ভাবনা দেখে বিনু হতবাক হয়ে আছে।

বিনু সায়েন্সের ছাত্র ছিলো একসময় সে ভূতপ্রেত কিছুই বিশ্বাস করে না। তার মনে একটাই ধারণা পৃথিবীতে ভূত বলতে কিছুই নেই। কিন্তু রাঘব ভূতপ্রেত আছে বলে বিশ্বাস করতো এছাড়া এসব ভূতপ্রেত দেখার জন্য সবসময় অস্থির ছিলো। তবে কারো মুখে ভূতের অদ্ভুত গল্প শুনলে ভয়ে আতঙ্ক হয়ে উঠে।

কখনো কখনো অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লম্বা হয়ে পড়ে থাকে।

রাঘব বিনু বলছে সত্যি কি ভূত দেখেছিস? দেখেনি তবে ভূতের পায়ের অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ শুনেছি। নিশ্চয় এ বাড়ির আশেপাশে কোথাও ভূতের আনাগোনা আছে!

রাঘব বলছে তাহলে বেশ হয়রে। ভূতের সাথে আমার যে দেখা করতেই হয়। কতদিন হলো ভূত ধরা তো দূরের কথা আজব্ধি একটাও ভূত দুচোখ ভরে দেখতে পারি নাই।

ভোর হতে চলছে ভূতের দেখা নেই রাঘবের। বিনু মনের ভেতর একটু একটু করে সাহস যোগাচ্ছে। কেননা ভোর হলেই আলোর দেখা মিলবে।

ভূতপ্রেতের কোন আনাগোনা থাকবে না।তাছাড়া আজ রবিবার। রাতে ভূতের অদ্ভুত অদ্ভুত অদৃশ্য ফিসফিস শব্দ থাকবে না। মনের এ আকস্মিক ভাবনায় বিনু শরীরের বেশ জম্পেশ শক্তি জমেছে। মনে হয় দিনের বেলা ভূত আসলে একসাথে সবকটি ভূতকে ধরে মেরেই ফেলবে!

সকাল হলেও রাঘব এখনো হাতে টর্চলাইট নিয়ে বসে আছে বারান্দায় ভূত ধরার নেশায়।

সারারাত ভূতের নেশা কাটিয়ে দুজন হালকা খাবার খেয়ে চলে গিয়েছে বাজার করতে। দুজনের কাছে এ আনন্দপুর অচেনা অদেখা হলেও রাঘবের কাছে তা কোন বিষয় ছিলোনা। সে যে জায়গায় যেতো সকলকে মাতিয়ে তুলতে তার বেশ অভিজ্ঞতা ছিলো। যা বিনু নেই। হঠাৎ করে নদীতীর ধরে হাঁটতে গিয়ে দেখা হয় অচেনা এক ব্যক্তির সাথে বয়স প্রায় আশির কাছাকাছি। রাঘবের কাছে মনে হলো এ বয়স্ক বৃদ্ধার কাছ হতে জানা যাবে এ গ্রামে আর কোথাও ভূত আছে কি না।

বয়স্কবৃদ্ধার সাথে ভূতের কথা বলতে বলতে রাঘব আরেকটি জায়গায় ভূতের সন্ধান পেয়েছে। জায়গটা আনন্দপুরের ঠিক দক্ষিণ পাশে বাড়িটির নাম ভূতবাড়ি।

বাজার শেষ করে রাঘব ও বিনু দুজনি পৌঁছে গিয়েছে হরিবাবুর বাগানবাড়ি।

আজও আবার দুজন মিলের বাড়িটির চারপাশ ঘুরে দেখলো কিন্তু ভূতের কোন পদচিহ্ন পাইনি। ভূতের কোন সাড়া না পেয়ে পুুুুুনরায় দুজন ঘরে ফিরে ভূতের গল্প করতে লাগলো। যদিও এমন শীতের ভরদুপুরে ভূতের চলাফেরা নেই। তবুও হঠাৎ করে কোনকিছু শব্দ হলে বিনু কাছে মনে হয় এইবারও বুঝি ভূত তাকে ঘাপটি মেরে ধরে।

আনন্দপুর নামটা মনজুড়ানো হলেও গ্রামটা ছিলো ভূতের কান্ডকারখানায় ভরপুর।      ইয়া বড় বড় বটগাছ, পুরনো আমগাছ আর প্রতিটি প্রাচীরের গা বেয়ে তরুলতা। একেকটা গাছের উচ্চতা প্রায় পঞ্চাশ কিংবা ষাট ফুট উঁচু। দেখতে বড্ড ভয়ানক।

৫৭৯জন ৪৯০জন

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ