
ইরা দোটানায় পড়ে গেলো। সে একবার ভাবছে শফিক সত্যিই হয়ত বদলে গেছে। আরেকবার ভাবছে এসবই ভুল। কারণ এমন মানুষ কখনোই বদলায় না। তাছাড়া একটা সময় শফিকের মুখে এসব মিথ্যে প্রতিশ্রুতি শুনতে শুনতে সে ক্লান্ত হয়ে গেছিলো। তাই এখন আর এসব বিশ্বাস করতে মন চায় না। সে ভাবতে শুরু করলো দশ বছর আগের কথা।
সদ্য এইচএসসি পাস করা সুন্দরী মেয়ে ইরা। পরীক্ষা শেষ হতেই নানা দিক থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু হলো। এমনি করেই একদিন শফিকের বাড়ি থেকে প্রস্তাব এলো। ইরার মা ভেবেছিলেন অনার্স শেষ হলে বিয়ে দেবেন। কিন্তু বাবার জোড়াজুড়িতেই শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে মা সম্মতি দিলেন। বেশ ধুমধাম করে প্রখ্যাত শিল্পপতি শফিক তুহিনের সাথে বিয়ে হয়ে গেলো ইরা আদিবার। কিন্তু বিয়ের পরও পড়াটা চালিয়ে যেতে লাগলো সে। অবশেষে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে কোর্টে প্র্যাক্টিস শুরু করলো। এই বিষয়ে শফিকের কখনও কোন দ্বিমত ছিলো না। কিন্তু কিছু দিন পরই ইরার চোখের সামনে সত্য ঘটনাগুলো সব গল্পের বইয়ের মত করে ধরা দিতে লাগলো। কোট কাচারীর এসব বিষয়ের সাথে জড়িত হবার পর অন্ধকার জগতের মানুষগুলোকে সে চিনতে থাকলো। কিন্তু সে কোনদিন ঘূনাক্ষরেও ভাবেনি এসব নামের মাঝে শফিকের নামটাও চলে আসবে। প্রথম যখন সে নামটা শুনেছিলো তখন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনি। ভেবেছিলো, এটা অন্য কোন শফিক। কিন্তু পুরোটা জেনে দেখলো এটাই শফিক, ‘শফিক গ্রুপ’ এর মালিক শফিক! সেদিন বাড়ি ফিরে নিশ্চিত হবার জন্য সে সব কিছু জানতে চেয়েছিলো। শফিকের এলোমেলো যুক্তি তার কাছে ভালো লাগেনি। তবুও সে জোর করে সেদিনের বিষয়টাকে গিলে ফেলেছিল। দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যেতে চেয়েছিলো। এদিকে তার সিনিয়রের কাছে একের পর এক এসব কেস আসতে লাগল এবং এসবের মাঝে দু একটা কেসে সরাসরি শফিকের নাম জড়িত ছিলো। কিন্তু প্রতিবারই টাকার জোরে এবং ক্ষমতার দাপটে এসব কেস ধামাচাপা পরে যেতো এবং বাদী পলাতক হিসেবে খাতায় নাম লেখাতো। এভাবেই চলছিলো দিনগুলি। প্রতিদিন বাসায় ফিরে একরাশ তীব্র ঘৃণা নিয়ে একই ছাদের তলায় একজন আসামী ও একজন আইনজীবী বাস করতো। শফিক যদি আগে এই পরিণতি টের পেত তাহলে কিছুতেই ইরাকে আইন বিষয়ে পড়তে দিতো না।
ইরা আর ভাবতে পারছে না কী দূর্বিষহ ছিলো শফিকের সাথে কাটানো প্রতিটি দিন। দেখতে দেখতে ভোরের সূর্য জানালর ফাঁক গলে ভেতরে প্রবেশ করলো। সে দ্রুত উঠে নাশতা বানিয়ে খেতে বসলো টেবিলে। এমন সময় আবার মনে পড়লো, শফিক ঘুম থেকে উঠেছে কি? নাশতা খেয়েছে তো? আবার পরক্ষণেই ভাবলো, ‘ও যা খুশি তা করুক। একটা অন্যায়কারীর কথা ভেবে দিনটাকে নষ্ট না করাই শ্রেয়।’ নাশতা করে দ্রুত তৈরি হয়ে অফিসে গেল ইরা। এখন সে আর কোন সিনিয়রের নেতৃত্বে নেই। বরং সে নিজেই এখন সিনিয়র। তার কাছে শিখতে আসে বেশ কজন ছেলেমেয়ে। এদেরকে শেখাতে তার বরং ভালোই লাগে।
অফিসের বারান্দায় জুনিয়রদের নিয়ে বসে ছিলো ইরা। এমন সময় তাদের দিকে এগিয়ে এলো ওসমান নামের একটি যুবক। বয়স হবে পঁচিশ কি ছাব্বিশ। ছেলেটি এসেই ইরাকে সালাম জানালো। ইরা তাকে বসতে দিলো। এরপর তার মুখ থেকে ঘটনার যে বিবরণ শুনলো তার সারমর্ম হলো, ওসমান সখীপুর বস্তির একমাত্র শিক্ষিত ছেলে। তার ধারণা বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে আগুনটা লাগেনি। বরং ইচ্ছে করেই লাগানো হয়েছে। কিছু দিন যাবত এখানে শফিক গ্রুপের সাইনবোর্ড ঝুলছিলো যা তারা আগে কখনও দেখেনি। তারপর প্রায় প্রতি রাতেই তাদের ঘরের চালে কে যেন ঢিল ছুঁড়তো। কখনো তাদের ঘরের বেড়া কেটে নিয়ে যেতো। অদ্ভুত আওয়াজ করতো। বস্তিবাসীর ধারণা এসব নাকি জীন ভূতের আছড়। ওসমান এসব বিশ্বাস করেনি। তারপর একদিন মাঝরাতে দেখে আগুন! সব পুড়ে ছারখার। সব শুনে ইরা বেশ বুঝতে পারলো ঘটনা কী ঘটেছে। সে ঠিক করলো এই কেস সেই লড়বে।
পর্ব-২
চলবে…
১৭টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন।
বিত্তশালীর কালো হাত সর্বত্র বিরাজমান।
ভুমি দষ্যুদের কালো থাবা থামছেই না।
শুভ কামনা।
নীরা সাদীয়া
এই ভূমি দস্যুদেরকেই তুলে আনার চেষ্টা করেছি এই গল্পের মাধ্যমে। আশা করি আপনাদেরকে পাশেই পাবো। শুভকামনা জানবেন ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এভাবেই এরা ভূমি দখল করে , ব্যবসা করে কোম্পানির মালিক হয়ে যায়। সুন্দর গল্প। এগিয়ে যান। ভালো থাকুন সবসময় শুভ কামনা রইলো
নীরা সাদীয়া
এরা অধিক লোভে মত্ত হয়ে এমন করে।
আশা করি আপনাদেরকে পাশেই পাবো। শুভকামনা জানবেন ।
জিসান শা ইকরাম
নীতিবান একজন আইনজীবি হিসেবে শফিকের সাথে একই ছাদের নীচে অবস্থান করার কষ্টটা বুঝতে পারছি।
ইরা এই কেসটি নিক, দেখা যাক স্বামীর বিরুদ্ধে কতটা লড়তে পারে ইরা।
ভালো লাগছে গল্প,
শুভ কামনা।
নীরা সাদীয়া
নীতি আর দূর্নীতির লড়াই চলে আজীবন। আশা করছি এমন লড়াইতে আপনাদেরকে পাশেই পাবো। শুভকামনা জানবেন ।
ফয়জুল মহী
বেশ ।ভালোবাসা ও শুভ কামনা আপনার জন্য।
নীরা সাদীয়া
আপনিও শুভ কামনা জানবেন।
হালিম নজরুল
ইরা, শফিক আর আগুনের দ্বন্দ্বে পুড়ে যাওয়া বিশ্বাস হয়তো ছাইয়ে রূপান্তরিত হবে।দেখা যাক।
নীরা সাদীয়া
সেই ছাই থেকে উড়িয়ে আবার নতুন কিছু মিলে কিনা দেখা যাক।
এই অন্বেষণেে আশা করি আপনাদেরকে পাশেই পাবো। শুভকামনা জানবেন ।
সুরাইয়া নার্গিস
অনেক সুন্দর গল্প পরবর্তী পর্ব দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
শুভ কামনা রইল আপু
নীরা সাদীয়া
পরবর্তী পর্ব দেয়া হয়েছে। আশা করি পাশেই থাকবেন। অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো।
এস.জেড বাবু
বাস্তবতা মুখর একটা ধারাবাহিক পড়ছি
/////তার ধারণা বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে আগুনটা লাগেনি। বরং ইচ্ছে করেই লাগানো হয়েছে।
এগিয়ে যাক সমান তালে।
শুভকামনা আপু
নীরা সাদীয়া
পরবর্তী পর্ব দেয়া হয়েছে। পাশেই পাব এই প্রত্যাশা। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভ কামনা জানবেন।
ইঞ্জা
শত্রুতে বসবাস, চমৎকার গল্প এইটি, এক দূর্বৃত্তের সাথে বসবাস কত যে কঠিন তা শুধু ভুক্তভোগীই জানে, অসাধারণ লিখছেন্নাপু, লেগে থাকুন।
নীরা সাদীয়া
এটা একটা জটিল মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। দেখা যাক শেষ অব্দি কি ঘটে…
পরের পর্ব দেয়া হয়েছে। পাশে থাকবেন এই প্রত্যাশা।
ইঞ্জা
কিছুক্ষণ পর যাচ্ছি আপু