
অনিক চোখে জল নিয়ে তাকিয়ে রইলো ছায়ার যাওয়া, বুক থেকে হাহাকারের নিশ্বাস বেরিয়ে এলো, কিছুক্ষণ দম ধরে বসে রইলো, এক পর্যায় উঠে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ব্ল্যাক লেভেলের বোতল আর গ্লাস নিয়ে ফিরে এলো ড্রয়িংরুমে, লার্জ একটা পেগ নিয়ে সোজা সব পেটে চালান করে দিলো, এরপর গ্লাসে কিছু বরফ নিয়ে মদ ঢাললো।
অনিক অনিক, উঠো আমি রুমে দিয়ে আসছি, ফিস ফিস করে ছায়া বললো, ঘুম আসছিলোনা তাই উঠে এসে দেখি তুমি এখানে।
অনিক ধীরে মাথাটা তুলে তাকালো আর বললো, ছায়া, ও ছায়া একটু বসো, কথা বলি।
না এখন কোন কথা নয়, রাত সাড়ে তিনটা বাজে, পুরা বোতলই শেষ।
বসো, কঠিন গলায় বললো অনিক।
ছায়া চমকে কেঁপে উঠলো, এ কণ্ঠ সে অনেক বছর পর শুনছে, সেই ইউনিভার্সিটি লাইফে অনিকের কণ্ঠ এমন ছিলো, ছায়া জট করে সোফায় বসে পড়লো।
ছায়া, তুমি তো সব কথা বললে, জড়ানো কণ্ঠে অনিক বলে চলেছে।
তুমি কি একবারও ভেবেছো এতো বছর ধরে আমি কেন বিয়ে করিনি, কাঁপা হাতে সোফার নিচ থেকে অর্ধেক বোতলের ব্ল্যাক লেভেল আরেকটা বের করে কিছুটা গলায় ঢাললো, তুমি জানো আমি এখনো তোমায় ভালোবাসি, তুমি কি বলতে পারবে তোমার মনের কোনে আমি নেই, বলো তুমি, চুপ করে রয়েছো কেন?
ছায়া উঠে দাঁড়ালো, বললো অনিক তুমি এখন ঠিক নেই, তোমার সাথে আমি কাল কথা বলবো, উঠো এখন বলেই হাত ধরে উঠালো, অনিক ব্যালেন্স হারাচ্ছে দেখে একটা হাত নিজের কাঁদে নিয়ে এগুলো অনিকের কামড়ার দিকে।
অনিক উঠ বাবা, আজ এতো দেরি কেন তোর, অনিকের মা ডাকলেন।
অনিক ধীরে চোখ মেলে তাকালো।
তুই উঠে রেডি হয়ে আয়, তারপর ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি তোকে।
অনিক উঠে বসতে গেলো, মাথাটায় প্রচন্ড ভারি হয়ে রয়েছে, রিস্টওয়াচটা টেনে নিয়ে টাইম দেখে অবাক হলো, সকাল এগারোটা।
দ্রুত উঠে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এসে ড্রেস চেইঞ্জ করে নিলো, এরপর ডায়নিংয়ে এসে চেয়ারে বসে অবাক হলো ছায়াকে না দেখে।
মা ছায়াকে দেখছিনা?
ও রুমে আছে।
মা আমাকে লেবু পানি দাও তো?
কেনরে, রাতে কি ড্রিংক্স করেছিস?
হাঁ মা একটু করেছিলাম।
ব্রেকফাস্ট করে উঠে যাচ্ছিলো অনিক, ওর মা বললেন, তুই রুমে যা আমি আসছি একটু কথা আছে।
অনিক অবাক হলো, এরপর রুমে ফিরে গেলো।
কিছু সময়ের মধ্যে ওর মা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে পাশে বসলেন।
কি ব্যাপার মা, কোন বিশেষ কিছু বলবে?
হাঁরে বাবা, আসলে বলতে চাইছিলাম তোর তো বিয়ের বয়স শেষ হতে চলেছে, বিয়ে তা করবিনা?
অনিক চুপ করে রইলো।
একটা ছবি এগিয়ে দিয়ে বললেন, শুন ঢাকাতে তোর বাবার বন্ধুর মেয়ে, ফার্মেসিতে মাস্টার্স করেছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে।
মা এইসব বাদ দাও তো, অনিক বিরক্ত হয়ে বললো।
কি বলিস এতো গুণী মেয়েকে না করছিস।
অনিক বিরক্ত হয়ে বললো, মা।
তাহলে আরেকটা মেয়ে হাতে আছে, আমাদের সবার পছন্দ হয়েছে, আফরিন।
অনিক অবাক চোখে তাকিয়ে বললো, কি বলোনা মা, ও আমার সেক্রেটারি, মাথা খারাপ হয়েছে স্বগতোক্তি করলো।
কি বলিস এইটাও না, ওটাও না, তাহলে কি তুই বিয়েই করবিনা?
অনিক হাসলো, কে বলেছে বিয়ে করতে চাইনা?
তাহলে?
তোমার ঘরেই তো মেয়ে আছে?
অনিকের কথায় আশ্চর্য হয়ে বললেন, কার কথা বলছিস?
ছায়া।
অনিকের মা যেন একটা ধাক্কা খেলেন।
হয়ত তুমি বলবে ও বিধবা, কিন্তু মা তুমি কি জানো ওকে পাবোনা জেনেই আমি দেশ ছেড়েছি, ওকে পাবোনা জেনেই আমি এতো বছর বিয়ে করিনি, ওকে যদি বিয়ে নাই করতে পারি তাহলে বিয়ে আমি করবোনা।
অনিকের মা শক্ত হয়ে বসে রইলেন।
মা তুমি চাওনা তোমার ছেলে বিয়ে করুক?
অনিকের মা শুণ্য চোখে ছেলের দিকে তাকালেন, মনে প্রচন্ড ঝড় বয়ে যাচ্ছে?
মা কই কিছু বললেনা?
মেয়েটাও কি তোকে ভালোবাসে?
না মা, জানিনা।
অনিক রুম থেকে বেরিয়ে দেখে ছায়া লাঞ্চের ব্যবস্থায় ব্যস্ত, অনিক ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করে গ্লাসে পানি নিয়ে খেলো।
কি রান্না করছো?
হাঁস আর রুই মাছ।
অনিক খেয়াল করলো, ছায়া মুখ কালো করে রেখেছে।
আমি বিকালে একটু বেরুবো, তুমি সাথে যেতে পারবে?
ঠিক আছে যাবো, বলেই তাকালো ছায়ার দিকে, মুখটা থমথমে হয়ে রয়েছে।
ব্যাপার কি, কি এমন হয়েছে ওর যে মুখটা কালো হয়ে রয়েছে, অনিক চিন্তায় পড়ে গেলো, গতরাতের কথা ও মনে করতে পারছেনা।
অনিল ড্রয়িংরুমে ওর বাবা ও রওশনের বাবার সাথে গল্পে যোগ দিলো।
ওদিকে অনিকের মা রুমে খুব চিন্তিত মনে বসে আছেন, ভাবছেন ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে, এক সময় উঠে ড্রয়িংরুমে এসে রাশেদ সাহেবকে ডেকে নিয়ে গেলেন কথা আছে বলে।
……. চলবে।
ছবিঃ গুগল।
২৩টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আচ্ছা এবার শুরু হলো সাসপেন্স। বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত এদের সহজে কেউ ছেলের বৌ হিসাবে মানতে চায় না। দেখি আগামী পর্বে কি হয়! ধন্যবাদ ভাইয়া
ইঞ্জা
হুম এইবার সাসপেন্স শুরু হলো, দেখা যাক আপু কি হয়।
ধন্যবাদ।
তৌহিদ
অনিক ছায়াকে ভালোবাসে কিন্তু ছায়া? অনিকের মা কি ছায়াকে অনিকের স্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইবে? বাঙালিদের মন এখনো উদার হয়নি এত!
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দাদা।
ইঞ্জা
বাঙ্গালীর সেকেলে মন মানষিকতার কাছে মানবিক মূল্যবোধ এই গল্পেও তুলে ধরছি ভাই, জানিনা কতটুকু সফল হতে পারবো, দোয়া রাখবেন ভাই।
ধন্যবাদ।
তৌহিদ
অবশ্যই ভাই। ভালো থাকবেন।
ইঞ্জা
ভালোবাসা নিরন্তর
সুপায়ন বড়ুয়া
উত্তেজনাটা বা নাটকটা জমে উঠলো বলে
দেখা যাক কি হয় ?
ইঞ্জা
হাঁ দাদা, আগের গল্প গুলো পড়া থাকলে বুঝতে পারবেন গল্পের ধীর গতি থেকে ধীরেধীরে উচ্চগতিতে যাচ্ছে এইবার, এর অর্থ সমাপ্তি শীগ্রম।
সুপায়ন বড়ুয়া
ঠিক তাই।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আবারও
মোঃ মজিবর রহমান
জটিল অবস্থায়। ছায়াও অনিককে ভালবাসতে কিন্তু অনিকের অফার করার পুর্বেই রওশনকে একেওপরকে ভালবাসা বাস্ত। তাই এই অবস্থা।
কিন্তু অনিকের মাও মেনে নেবে আর রুশনেরবাবাও মানবে আমার মনে। কারন সেও ছায়াকে খুব ভালবাসে মেয়ের মতও।
দেখি লেখক কোথায় কলম লাগায়।
ইঞ্জা
বাঙ্গালীর সেকেলে মনমানসিকতার মাঝে মানবিক মূল্যবোধ কি হেরে যাবে ভাই?
ভাবছি আর কতদূর টেনে নেওয়া যায়, সাথে থাকবেন ভাই, ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
সংগে আছি। যাক দ্দেখা কতদুর যায়।
ফয়জুল মহী
সাবলীল সুন্দর উপস্থাপন ।
ইঞ্জা
আন্তরিক ধন্যবাদ ভাই
ছাইরাছ হেলাল
এই তো শুরু,
সাথে এক চিমটি মাফিয়া দিয়েন, ভাই।
ইঞ্জা
আমি চিমটিতে বিশ্বাসী নই ভাইজান, আমার পুরা গামলায় দরকার। 😆
সুরাইয়া নার্গিস
চমৎকার লেখা।
শুভ কামনা রইল ভাইয়া
ইঞ্জা
অফুরান ধন্যবাদ আপু।
জিসান শা ইকরাম
কি যে হবে এর পরের পর্বে!
অনিকের মা কিভাবে নিবেন ছায়াকে?
অনিকের বাবার কেমন মনোভাব হবে?
ছায়া কি রাজি হবে?
অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে অপেক্ষা করতেই হবে।
শুভ কামনা ভাইজান
ইঞ্জা
কি হবে বা পরের পর্বে কি করা যায় তাই ভাবছি ভাইজান, আগামীদিন লেখা শুরু করবো, দোয়া রাখবেন।
হালিম নজরুল
বহুরৈখিকতা ভাল লাগছে।
ইঞ্জা
পাশে থাকবেন ভাই, আনন্দিত হলাম মন্তব্যে।
নিরন্তর ধন্যবাদ।