
সবাই বসে গল্প করছে, আফরিন আর ওর মা প্রথমেই সবাইকে পেস্ট্রি, মিষ্টি, সফট ড্রিংক্স দিয়ে আপ্যায়ন করলো, গল্পের ফাঁকে ফাঁকে ওরা কিচেনে গিয়ে ডিনারের আয়োজন করতে লাগল।
কিছু সময় পর টেবিলে খাবার দিয়ে আফরিন সবাইকে আমন্ত্রণ জানালো ডিনারে জয়েন করার জন্য।
আপা আজ সব রান্না আফরিন করেছে, আমাকে একদম ধরতেই দেয়নি।
তাই, এতো দেখি আলিশান খাবার দাবার, এতো কষ্ট করতে গেলে কেন আফরিন, অনিকের মা বললেন।
না আন্টি তেমন কিছুই তো না, আসুন বসুন, আনকেল আপনারাও বসে পড়ুন।
বিশাল ডাইনিং টেবিলে বিভিন্ন ধরণের ভর্তা, গরু, খাসি, মাছ মুরগী সহ বিভিন্ন রান্নার আয়োজন করেছে আফরিনরা।
অনিক আপনাদের কি রেড ওয়াইন চলবে, আফরিনের মা জিজ্ঞেস করলেন।
অনিকের বাবা বলে উঠলেন, আলবৎ চলবে, কি সুলতান ভাই চলবে তো?
তা চলবে কিন্তু মাত্র একবার, ডাক্তারের নিষেধ আছে রাশেদ ভাই।
বাবা আপনি না, ডাক্তারের নিষেধ আছে, ছায়া বলে উঠলো।
থাক মা, এক গ্লাসই খাবে তোমার বাবা।
ছায়া মুচকি হাসলো।
আফরিন ছাড়া বাকি মেয়েরা সফট ড্রিংকস নিলো, সবাই খাওয়াতে মনোযোগ দিয়ে এটা ওটা খাচ্ছে।
কি ব্যাপার মি. অনিক, আপনি খাচ্ছেন না, টেনশনে আছেন মনে হচ্ছে, আফরিনের মা জিজ্ঞেস করলেন।
না না আন্টি খাচ্ছি তো, আপনি আমাকে মিস্টার না বলে শুধু অনিক বললে খুশি হবো, সাথে আপনি করে না বললে আরও খুশি হবো।
বাহ এতো দেখছি খাঁটি বাঙ্গালী ছেলে, খুব ভালো লাগলো।
কি বলেন আপা, আমি তো জানতাম বিদেশে থেকে আমার ছেলে সাহেব হয়ে গেছে।
কি যে বলোনা মা, অনিক মিষ্টি হাসলো।
ছায়া তুমি স্যামনটা ট্রাই করো, খুব ভালো মাছ, আফরিন এক পিছ মাছ তুলে দিলো ছায়ার পাতে।
তুমি দেখছি বেশ ভালো রান্না করো, অনেকদিন পর ভর্তা খেয়ে ভালো লাগলো।
ভর্তা আমি নই, মা রান্না করেছে।
তাই, আন্টি আপনাকে ধন্যবাদ না দিলে অসম্মান করা হবে, খুব ভালো হয়েছে সব ভর্তা গুলো।
তোমার ভালো লেগেছে শুনে আমারও ভালো লেগেছে, আফরিনের মা মিষ্টি হেসে বললেন।
বাবা মাছটি খেয়ে দেখেন খুব ভালো হয়েছে, ছায়া রওশনের আব্বাকে বললেন।
খাওয়াদাওয়া শেষে সবাই ড্রয়িংরুমে বসলে আফরিন সবাইকে ডেজার্ট সার্ভ করে নিজেও একটা নিয়ে সোফায় বসে পড়লো।
আফরিন খাবার গুলো বেশ হয়েছে, অনিকের বাবা বললেন।
হাঁ আফরিন, খুব ভালো রান্না করো তুমি, কে শিখিয়েছে, মা, অনিকের মার প্রশ্ন।
হাঁ আন্টি মা ছাড়া আমার কেই বা আছে শিখানোর।
বেশ বেশ।
অনিক ছায়ার পাশেই বসেছে, টুকটাক অনিকের সাথে কথা বলছে দেখে আফরিনের মা জিজ্ঞেস করলেন, কি ছায়া তুমি তো খেলেই না।
আন্টি আমি তো এমনিতেই কম খাই, আজ একটু বেশিই হয়ে গেলো, খুব ভালো রান্না করেছে আমার বন্ধুটি।
আন্টি আপনারা কবে আসবেন বলুন, অনিক জিজ্ঞেস করলো।
এখন না অনিক , আসলে ঘরে আসছে মেহমান, ওদের নিয়ে আমি যাবো বেড়াতে বিভিন্ন জায়গায়, অন্য কোন সময় আসবো।
ওকে আন্টি, আজ তাহলে আমরা উঠি।
কিছুক্ষণ পর অনিকরা বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো আফরিনদের বাসা থেকে, আধা ঘন্টার ভিতরে পোঁছে গেলো বাসায়, অনিক নিজ রুমে ফিরে ড্রেস চেইঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে টিভি অন করে খবর দেখছে, ছায়াও এসে যোগ দিলো ওর সাথে, অনিক খেয়াল করলো ছায়া ওর ওড়না খুটে চলেছে।
কি কিছু বলবে?
অনিক আসলে বলছিলাম কি, আন্টিরা আছেন এখন, বাবাও সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
হুম ভালো তো।
আসলে আমি এই দেশে এসেছিলাম পড়তে নয়।
আমি তা বুঝতে পেরেছিলাম।
ছায়া অবাক হয়ে অনিকের দিকে তাকালো, এরপর চোখ নামিয়ে নিয়ে বললো, আসলে চাইনি তোমার টেনশন বাড়াতে, সত্যি বলছি আমি চাইনি তুমি বাবার সাথে সাথে আমারও টেনশন নাও।
অনিক এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো ছায়ার দিকে।
ছায়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার বলতে শুরু করলো, আসলে আমার ইউটেরাস টিউমার হয়েছিলো, অপারেশনের পর টেস্টে দেখা যায় ক্যানসার ফার্স্ট স্টেইজ।
অনিক একটা ধাক্কা খেলো, কি কি বললে, অনিক তোতলালো।
অনিক শুনোনা, তখনই বাবা দেরি না করে আমাকে এইখানে নিয়ে আসেন উন্নত চিকিৎসার জন্য, এরপর আমি গত দেড় বছর ধরে এইখানে চিকিৎসা নিচ্ছিলাম, বলেই অনিকের দিকে তাকালো ছায়া, দেখলো অনিকের চোখ ছলছল করছে।
ছায়া আবার শুরু করলো, গতদিন আমার ফাইনাল রিপোর্ট আসলো।
অনিক উদ্বীগ্ন হয়ে বললো, কি আছে রিপোর্টে?
আমি এখন একদম ক্যান্সার মুক্ত।
অনিক বড় একটা নিশ্বাস ছাড়লো।
আসলে বলতে চাইছিলাম আমরা দুজনেই এখন সুস্থ, তাই দেশে ফিরে যেতে চাইছিলাম।
অনিক ঘোর কাটিয়ে বললো, আমি আসলেই দুঃখিত হলাম তুমি আমাকে জানাওনি বলে, যাক সবকিছু যখন ভালোই ভালোই হলো তাহলে আর চিন্তা করে লাভ কি, কিন্তু এর সাথে বাড়ী ফিরার কি আছে?
আসলে আমার ভালো লাগছে না এইভাবে থাকতে, সব তুমিই করছো, আমাদের দেখভাল করছো, বাবার চিকিৎসাটাও তুমি করলে।
তাতে কি হয়েছে, আনকেল শুধু রওশনের বাবা নন, আমারও উনি কিছু হোন।
না মানে আমি তোমাকে হার্ট করতে চাইনি, জানি বাবাও তোমাকে নিজের ছেলের মতোই দেখেন, এরপরেও আমরা এখন ফিরে যেতে চাইছি, এখন তুমি অনুমতি দিলে আমরা ফিরে যাবো, আসি আন্টি নিশ্চয় অপেক্ষা করে আছেন আমার জন্য, বলেই ছায়া উঠে চলে গেলো।
অনিক কিছুক্ষণ দম ধরে বসে রইলো।
………. চলবে।
ছবিঃ গুগল।
৩২টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
বেশ লেখেছেন ইঞ্জা দা
অনেক শুভেচ্ছা জানাই————
ইঞ্জা
অফুরন্ত ধন্যবাদ ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
একদিকে মাফিয়া, অন্য দিকে ক্যানসার থেকে মুক্তি!
দেখি কত জল কোথায় গড়ায়!
ইঞ্জা
ঝামেলাটা বেশিই বাঁধিয়ে ফেলেছি মনে হচ্ছে, ভয় লাগছে যদি জট বা খুলে?
দোয়া রাখবেন ভাইজান।
ছাইরাছ হেলাল
ব্যাপার না, ধীরে এগুবেন।
ইঞ্জা
এখন যা হবে তা দ্রুত হবে ভাইজান, গল্পের শুরু থেকেই বেশ ধীরে চলছিলো।
ফয়জুল মহী
মনোমুগ্ধকর লিখনশৈলি ।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অফুরান ভাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
কিছু ই বোঝা যাচ্ছে না এখনো। দেখি এক মুঠো ভালোবাসায় কি আছে আমাদের জন্য। ভালো থাকুন শুভ কামনা রইলো
ইঞ্জা
না বুঝার মতো কিছুই লিখছিনা আপু, সামনে আরও ক্লিয়ার হয়ে যাবে। 😁
সুরাইয়া নার্গিস
অনেক ভালো লিখছেন ভাইয়া,
শুভ কামনা রইল
ইঞ্জা
অবিরাম ধন্যবাদ আপু। 😊
আরজু মুক্তা
মাফিয়াচক্র।।
ভালোই এগুচ্ছে গল্প।
ইঞ্জা
মাফিয়া নয় মাফিয়ার বাপ ওরা, খুব ডেঞ্জারাস আপু। 😕
সুপায়ন বড়ুয়া
এক মুটো ভালবাসা মিষ্টি
না জ্বালা বুঝা বড় দায়
তবুতো লাগছে ভাল।
ইঞ্জা
মুঠো ভর্তি ভালোবাসারও মূল্য আছে দাদা,ভতাতে মিষ্টি জ্বালের উপস্থিতি না থাকলে চলবেনা ভেবেই সব মিক্সড করছি, ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানবেন।
সুপায়ন বড়ুয়া
মিষ্টি ঝালের চট্টলার মরিচ লাগবে।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
হাটাজারির মরিচ দাদা?
তৌহিদ
ছায়া তাহলে অসুস্থ ছিলো!! যাক বাবা লেখক তবু কিছুটা জট খুললেন।
ভালো লাগছে পড়তে ভাই। ভালো থাকবেন সবসময়।
ইঞ্জা
এখন সব জট একে একে খুলতে শুরু করবে ভাই, ছায়া যে অসুস্থ তা আপনার মতো মানুষের আগের বুঝার কথা, বেশ কিছু সিনটম দিয়েছিলাম।
ধন্যবাদ ও ভালোবাসা জানবেন।
জিসান শা ইকরাম
অনিক যে কার হবে তাই বুঝা যাচ্ছেনা,
তবে অনিক ছায়াকে পেলেই খুশি হবে জীবনে,
একসময়ের আকাংখিত জন ছিল ছায়া, এখনো আছে।
ভবিষ্যতে দেখব কি হয়,
পর্ব ভাল লেগেছে ভাইজান।
ইঞ্জা
ভাইজান আজ নতুন লেখা দিলাম, অনেক কিছু খোলাসা করেছি আজ।
ধন্যবাদ।
সাবিনা ইয়াসমিন
অনিক ছাঁয়া এবং ছাঁয়ার ফ্যামিলির জন্যে যা কিছু করে যাচ্ছে তা অনিকের অসাধারণ মনের পরিচয় দিচ্ছে। পাশাপাশি ছাঁয়ার আত্মসম্মান বোধ অত্যন্ত প্রবল ভাবেই তুলে ধরেছেন। এটাই হওয়া উচিত। প্রেম ভালোবাসা জীবনে আসবে / যাবে, কিন্তু নিজের আত্মসম্মান ছেড়ে দিলে মানুষ আর কারো ভালবাসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না। গল্পের ধারা ধিরে ধিরে আরও চৌকস হচ্ছে ভাইজান। যদিও আমি এটাকে এখন আর গল্প বলতে রাজি নই। আমার কাছে এটা উপন্যাস 🙂
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম,
শুভ কামনা 🌹🌹
ইঞ্জা
আন্তরিক ধন্যবাদ অসাধারণ বিশ্লেষণের জন্য, এমন মন্তব্য সত্যি সম্মানের আর আপনার প্রতিটি কথার সাথে সম্পূর্ণ একমত আপু, আপনি গল্পটির বেশ গভীরে গিয়েছেন বুঝতে পারছি, আবারও ধন্যবাদ আপু।
কামাল উদ্দিন
২৬তম পর্বে এসে কিভাবে শুরু করি! কিংবা শুরু করলেই কতোটা বুজতে সক্ষম হবো সেটা নিয়ে ভাবছি ইঞ্জিনিয়ার ভাই।
ইঞ্জা
কেন ভাই, গল্প পড়ার ইচ্ছা থাকলে আমার ব্লগ পেইজে গিয়ে পড়ে ফেলুন, কথা দিচ্ছি ঠকবেন না। 😁
কামাল উদ্দিন
ঠিক আছে, এক মুঠো ভালোবাসাই যেহেতু এতো, কোন এক অবসরে শুরু করেই দেবো 😀
ইঞ্জা
ভালোবাসা জানবেন 😍
মোঃ মজিবর রহমান
দারুন এগুছে। খাওয়া হচ্ছে আবার যাবেও। ঘটনা মোড় নেওয়ার অপেক্ষায় আছে দেখছি।
শুভকামনা সবার জন্য।
ইঞ্জা
সবকিছুর মিক্স চলছে ভাই, যেমন মিক্সড ফ্রুট টাইপের, আর কিছুই নয়, চলুক জীবনটা এভাবেই নাহয়। 😊
মোঃ মজিবর রহমান
এভাবেই আসলেই মন্দ নয়। ভাল আল্গল
হালিম নজরুল
অনিক, ছাঁয়া, সুলতান, রাশেদদের গল্প ভাল লাগছে।