
“সোনাদিয়া” কক্সবাজার জেলার মহেশখালি উপজেলার একটি সুন্দর দ্বীপ। এই দ্বীপটির আয়তন প্রায় ৭ বর্গ কিমি.। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিমি উত্তর-পশ্চিমে এবং মহেশখালি দ্বীপের দক্ষিনে সোনাদিয়া দ্বীপটি অবস্থিত। একটি খাল দ্বারা এটি মহেশখালি দ্বীপ থেকে বিছিন্ন হয়েছে। তিন দিকে সমুদ্র সৈকত, সাগর লতায় ঢাকা বালিয়াড়ি, কেয়া- নিশিন্দার ঝোপ, ছোট-বড় খাল বিশিষ্ট প্যারাবন এবং বিচিত্র প্রজাতির জলাচর পাখি দ্বীপটিকে করেছে অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। এটি জীববৈচিত্রের দ্বীপ নামেও পরিচিতি এবং এ দ্বীপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পিপাসুদের জন্য অন্যতম পর্যটন স্থান। তবে সরকার ইদানিং সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর সহ বড় বড় প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে, যা এখানকার জীব বৈচিত্রের জন্য হুমকী স্বরূপ।
সোনাদিয়া দ্বীপে পর্যটকদের থাকার জন্য কোনো আবাসিক হোটেল নেই। খাওয়ারও তেমন কোনো নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় লোকজনকে টাকা দিলে তারা খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। আর সোনাদিয়া দ্বীপে রাত্রি যাপনের ক্ষেত্রেও ভরসা সেই স্থানীয় বাসিন্দারাই। তবে তাবু করেও ওখানে থাকা যায়, সেক্ষেত্রে স্থানীয়দের পাহাড়ার ব্যবস্থাটা অবশ্যই বাঞ্চনীয়।
সোনাদিয়া দ্বীপের মানব বসতির ইতিহাস মাত্র ১০০-১২৫ বছরের। দ্বীপটি ২টি পাড়ায় বিভক্ত। পূর্ব ও পশ্চিম পাড়া। দ্বীপের মোট জনবসতি প্রায় ২০০০ জন। পূর্ব পাড়ায় তুলনামূলকভাবে জনবসতি বেশী। মাছ ধরা এবং মাছ শুকানো, চিংড়ি ও মাছের পোনা আহরন দ্বীপের মানুষের প্রধান পেশা। কিছু মানুষ ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও কাঠের সাধারন নৌকা এবং উহা চালানোর সহকারী হিসাবে কাজ করেও জীবিকা নির্বাহ করে। চারিদিকে নোনা পানি বেষ্টিত হওয়ায় এই দ্বীপে তেমন কোন খাদ্য শষ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। দৈনন্দিন প্রয়োজনাদি জিনিস পত্র সব মহেশখালি থেকে ক্রয় করে আনতে হয়।
এই দ্বীপে ২টি মসজিদ, ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি সাইক্লোন সেন্টার, আনুমানিক ১২টি গভীর নলকূপ রয়েছে।
(২) জঙ্গলের ভেতর থেকে শিশুরা মাথায় করে জ্বালানী নিয়া আসছে।
(৩) একটা ঘুঘু পাখি বসে আছে যেন ক্যামেরায় পোজ দেওয়ার জন্যই।
(৪/৫) ছোট ছোট জাল নিয়ে অল্প পানিতে চিংড়ি পোনা আহরণ করছে শিশুরা।
(৬/৭) কিছু ঘরের সামনের ডিজাইন এমনই রাজপ্রাসাদ ষ্টাইল।
(৮) একটা সুইচোরা পাখি।
(৯) নাম না জানা এই পাখিটা জলাভুমিতে খাবার খুঁজছিল।
(১০) তবে পরিকল্পিত পরিবারের সংখ্যা ওখানে নেই বললেই চলে।
(১১/১২) ঝাউ বনের ভেতরের এই মিষ্টি পানির আধারগুলো দেখতে কিন্তু বেশ!
(১৩) একমাত্র সাইক্লোন সেন্টারটি পূর্ব পাড়ায় অবস্থিত, পশ্চিম পাড়া হইতে যার দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার।
(১৪) সোনাদিয়া সুন্দরী……..
(১৫) সোনাদিয়ার শিশু।
(১৬) কাকড়াটা পালাতে না পেরে রাগে দাঁত কিরমির করে ক্যামেরায় পোজ দিল।
(১৭) সাগরলতায় বেষ্টিত এই বালিয়ারির ঢিবিগুলো দেখতে খুবই অসাধারণ ছিল।
(১৮) বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটরই ভরসা।
(১৯) দ্বিতীয় রাতের ভোজটা ভালো হবে মনে হচ্ছে।
(২০) ভাবছেন গ্লাসের উপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলছি? মোটেও না, এটাই সেই সোনাদিয়া বীচ।
২৮টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
সোনাদিয়া নামটা বেশ সুন্দর,
এত বড় লাল কাকড়া! এই প্রথম দেখলাম 🙂
ভ্রমন+ ছবি ব্লগ ভালো লেগেছে।
কত সমৃদ্ধ আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ, অথচ একে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হলাম আমরা।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ হেলাল ভাই, ওখানকার প্রকৃতি সত্যিই অসাধারণ ছিল। কিন্তু প্রখর রোদে ঘুরাফেরা করায় শরীরের এক প্রস্থ চামড়া পুড়িয়ে দিয়েছিল।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসাধারণ হয়েছে। ছবিগুলো চমৎকার । ধন্য আপনার ভ্রমণ। কাঁকড়া আর লাস্টের ছবিটা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। সত্যিই এগুলো যদি কাজে লাগানো যেতো আমাদের পর্যটন শিল্প অন্য মাত্রায় পৌঁছাতো। ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো
কামাল উদ্দিন
ঠিক বলেছেন আপু, পর্যটনে আমাদের নজর খুবই কম…….শুভ কামনা জানবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
চারিদিকে নোনা পানি বেষ্টিত হওয়ায় এই দ্বীপে তেমন কোন খাদ্য শষ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। দৈনন্দিন প্রয়োজনাদি জিনিস পত্র সব মহেশখালি থেকে ক্রয় করে আনতে হয়।********* দ্বীপের সৌন্দর্য যেমন অঢেল, তেমনি এখানে বসবাসকারী ২০০০ মানুষের করুন অবস্থার ব্যাপারটিও উপলব্ধি করা গেলো। বোঝাই যাচ্ছে প্রকৃতি এখানে পরিপূর্ণ সদয় নন।
আমাদের দেশ পর্যটন শিল্পে এখনো খুব উন্নতি করতে পারেনি, এটা দুঃখজনক। তবে এতে কিন্তু আরেকটি লাভ হয়েছে। দুষ্প্রাপ্য লাল কাকড়া গুলো নির্ভয়ে কত বড় আর স্বাস্থবান হতে পেরেছে তাতো আপনার ছবিতেই দেখা যাচ্ছে 🙂
বরাবরের মতো এটিও চমৎকার পোস্ট,
শুভ কামনা রইলো 🌹🌹
কামাল উদ্দিন
ঠিক বলেছেন আপু, এই দ্বীপে এমন সব কাকড়া কচ্চপ ছাড়াও প্রায় বিলুপ্ত হওয়া পাখিদের আনাগোনা রয়েছে। যদিও মানুষদের জন্য দ্বীপটা কঠিনই বটে…….শুভ কামনা সব সময়।
ফয়জুল মহী
সুন্দর উপস্থাপন । বেশ ভালো লাগলো ।
কামাল উদ্দিন
হুমম
সুপায়ন বড়ুয়া
লোনা জলে মিষ্টি পানি
ভাবতেই লাগে মজা।
ঘুঘু পাখির সাস্থ্য ভাল
মুরগীর মাংসের ভাজা।
সুন্দর ছবিগুলো পিছু টানে মোরে।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
আপনার ছান্দিক মন্তব্যগুলো সব সময়ই আমি উপভোগ করি দাদা, হিংসে হয় ছন্দে ভাগ বসাতে পারি না বলে……শুভ কামনা জানবেন।
ছাইরাছ হেলাল
১৫ নম্বরের ছবিটি সত্যি সত্যি সুন্দর।
এ দ্বীপের নামটি অনেক সুন্দর।
কামাল উদ্দিন
শিশুরা সব সময়ই সুন্দর হয়, সোনাদিয়াও তার ব্যতিক্রম নয় বড় ভাই, ভালো থাকবেন।
আরজু মুক্তা
লাল কাঁকড়া এখানকার আকর্ষণীয়।
কামাল উদ্দিন
লাল কাকড়াগুলো সব সময়ই অতি চমৎকার, শুভেচ্চা জানবেন আপু।
নিতাই বাবু
একদিন মহেশখালী দ্বীপ নিয়ে লিখবেন। কারণ, আমি বেশ কিছুদিন মহেশখালী ছিলাম, তাই। তবে আর্থিক সমস্যার কারণে সেসমস্ত কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া যাওয়া হয়নি। আমি যে-সময় মহেশখালী গিয়েছিলাম, সে-সময় কক্সবাজার থেকে মহেশখালী ট্রলারে জনপ্রতি ভাড়া ছিল মাত্র ২টাকা। আর চিটাগং থেকে বাসে ভাড়া ছিল জনপ্রতি ১০ টাকা। ঢাকা কমলাপুর থেকে ট্রেনে চিটাগাঙের জনপ্রতি ভাড়া ছিল মাত্র ২০টাকা। বুঝুন এবার ব্যাপার! আমি মহেশখালী দ্বীপে জাকেরিয়া সল্টে ২৫ টাকা দৈনিক মজুরিতে কাজ করতাম। কিন্তু গিয়েছিলাম রাস্তা নির্মাণের কাজে। সেখানে প্রচুর বৃষ্টির কারণে আর রাস্তার কাজ করতে পারিনি। শেষতক জাকেরিয়া সল্টেই রিজিক মিললো।
পরিশেষে আপনার ছবি ব্লগে সোনাদিয়া দ্বীপের ছবিগুলো দেখে সেসময়কার কথা মনে পড়ে গেল।
ভালো থাকবেন শ্রদ্ধেয় কামাল দাদা।
কামাল উদ্দিন
মহেশখালী এক দিন খুবই অল্প সময়ের জন্য যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেটা নিয়ে কোন একদিন পোষ্ট দিব।
নিতাই বাবু
মহেশখালী বাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে সাগর ঘেঁষা পাহাড়ের চূড়ায় আদিনাথ মন্দির অবস্থিত। সেই মন্দিরে আমি নিয়মিত আসাযাওয়া করতাম। এখন সেই মন্দির আছে কি-না নেই, তা জানার জন্যই বলছি, দাদা।
কামাল উদ্দিন
আদিনাথে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো আার দাদা।
তৌহিদ
সোনাদিয়ার সিক্যুয়েল ছবি+গল্প ব্লগ ভালো লাগছে ভাই। এত্তবড় কাঁকড়া! এই প্রথম দেখলাম। তাও আবার লাল রঙ। আচ্ছা সাদাটা কি তার চোখ!!
সব ছবিই সুন্দর হয়েছে। ভালো থাকবেন ভাই।
কামাল উদ্দিন
আমার বিশ্বাস রাডার সাদা দুইটাই তার চোখ, রাডারের সাদার ভেতরে কেমন যেন ছোট্ট কালো একটা বিন্দু মতো রয়েছে।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
আপনার পোস্টগুলো এত সুন্দর যে, এখানে পড়ে আমি গল্প লেখার উপাদান পেয়ে যাই। আর আজ এসে পেলাম গ্রাফিক্সের ল্যান্ডস্কেপ ইলাস্ট্রেশনের উপাদান।
অসংখ্য ধন্যবাদ। নিয়মিত লিখে চলুন আর আমাদেরকে সাথে নিয়ে ভ্রমণ গুলো হোক।
কামাল উদ্দিন
ওহ্ তাহলে তো আপু সত্যিই আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতে পারি
পর্তুলিকা
প্রিয় কবি, আপনার পোস্টে ঢুকলেই আমি ছবির রাজ্যে হারিয়ে যাই। এত সুন্দর ছবি কোন ক্যামেরায় তোলেন? ১৯ নাম্বার ছবিটা কি ঐ মোটাসোটা কাকড়ার?
কামাল উদ্দিন
কাকড়াদের বারবিকিউ করার ছবি পাবেন শেষ পোষ্টে আপু, ছবির রাজ্যে সব সময়ই আমিও হারাতে চাই…..বেশ কয়েক দিন পর দেখলাম আপনাকে, কেমন আছেন?
পর্তুলিকা
ভাল আছি। আপনাদের মিস করছিলাম। দেখছেনইতো। চলে এসেছি। ☺☺
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, শুভ কামনা সব সময়।
সঞ্জয় মালাকার
সোনাদিয়া নামটা বেশ সুন্দর,দাদা ছবি গুলো অসাধারণ , । ধন্য আপনার ভ্রমণ। শুভ কামনা ভালো থাকুন সবসময় //
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ দাদা, আপনি ও ভালো থাকুন সব সময়।