
কয়দিন পর ঈদ। নয়নার বর নয়নাকে নিয়ে শপিং এ গেলো। শাড়ি কিনবে নয়নার জন্য। শোরুমে ঢুকে নয়না কে বললো একটা শাড়ি পছন্দ করতে। নয়নার পছন্দের রঙ কালো। নয়নার প্রথম এবং একমাত্র পছন্দ কালো রঙ। নয়না নিজেও জানে না এতো রঙ থাকতে কালোর প্রতি এতো দুর্বলতা কেনো? কালো রঙের প্রতি এতোটাই দুর্বল যে নয়না সবসময় বলতো যদি সে কখনো প্রেম করে তবে কালো ছেলের সাথেই করবে। বিধি বাম নয়নার বিয়ে হলো একটা ফর্সা ছেলের সাথে। শুধু ফর্সা ছেলের বললে ভুল হবে ফর্সা পরিবারের সাথে। যা হোক এবার আসল কথায় আসি।
নয়না অনেক ঘুরে ঘুরে একটা কালো শাড়ি পছন্দ করলো। কালো উপর গোল্ডেন চুমকির কাজ করা জর্জেট শাড়ি। শাড়িটির দাম ছিলো মাত্র এগারো শত টাকা। নয়নার বর শাড়িটি ওকে কিনে দিলো। ইশ্! পছন্দের শাড়ি পেয়ে নয়না কতো খুশি হলো তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। অনেক খুশি হয়ে নয়না শাড়ি নিয়ে বাড়ি এলো।
কালো শাড়ি দেখে নয়নার শাশুড়ির অগ্নিমূর্তি ধারণ করলো। এবার আর আড়ালে আবডালে নয় প্রকাশ্যে অকট্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করলো। সেদিনের গালি দেওয়া একটা কথাও ভুলতে পারেনি নয়না। (সবটা মনে থাকলেও এই লেখায় প্রকাশ করতে রুচিতে বাধছে) অনেক বকাঝকার পর নয়নার বরকে বললো এখনই শাড়ি বদলে আনতে। মা বলতে অজ্ঞান নয়নার বর একবারও বললো না, থাক মা ও যখন পছন্দ করে নিয়েছে পরুক। মায়ের বাধ্য ছেলে দ্রুত বেড়িয়ে পরলো শাড়ি চেঞ্জ করতে। কালো শাড়ি বদলে একটা মিষ্টি কালারের শাড়ি এনে দিলো। নয়না একটা কথাও বলতে পারেনি সেদিন। শুধু গোপনে অঝরে অশ্রু বিসর্জন দিলো। নয়নার প্রতি সবাই বিরূপ আচরণ করতে শুরু করলো। যেনো নয়না ও বাড়িতে অযাচিত আগাছা। কোনো দরকার নেই ওখানে তার তবুও রয়ে গেছে। শাশুড়ির দু’চোখ ভরা ঘৃণা, বরের অবজ্ঞা অবহেলা, শ্বশুরের নিরব নিস্তব্ধতা সব মিলিয়ে ছোট্ট নয়নার মানসিক অবস্থা কোথায় যেতে পারে তা বুঝতে কারো অসুবিধে হবে না নিশ্চয়ই?
হালকা পাতলা দেহ নয়না আরো ভেঙ্গে যেতে লাগলো। নয়না কেমন ভয়ে ভয়ে বাঁচতে শুরু করলো। অনেক তিক্ততার মাঝেও নয়না পড়াশোনা ছাড়লো না বরং আরো জেদি হয়ে উঠলো। যদি কিছু ছাড়তেই হয় তবে সে বরকে ছেড়ে দেবে সংসার ছেড়ে দেবে তবুও লেখা পড়া নয়।
দেড় বছর পার হলো এর মধ্যে। নয়নার দেবকে বিয়ে দেবে। সারাপাড়া বলে বেড়াতে লাগলো। বড় বেটার বউ ভালো না, ছোট বেটার বউ দেখে শুনে ভালো দেখে নিয়ে আসবে। বাড়িতেও যখন তখন বলতে শুরু করলো নয়নার সামনে। শুনতে শুনতে নয়না একদিন বললো। ঠিকই বলেছেন বড় ছেলের বউ ভালো হয়নি।ছোট ছেলের বউ দেখে শুনে নিয়ে আসেন। উনার বলা কথা গুলো বলেই প্রচণ্ড বিপদে পড়লো নয়না। যা যা মনে ছিলো তা তা মুখে এনে ধুয়ে দিলো নয়না কে। সত্যি সত্যিই সে তা ছোট ছেলের জন্য তুলোর মত ধবধবে ফর্সা মেয়ে পেয়ে গেলেন। তারপর শুরু হলো নয়নার জীবনে নতুন দুর্যোগ…..
২২টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
একের পর আর এক দুর্যোগ ঘনিয়ে আসছে বলে মনে হচ্ছে।
সুরাইয়া পারভীন
জ্বী একটার পর একটা দুর্ঘটনা ঘটেছেই চলেছে নয়নার জীবনে।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সবসময়
সুপায়ন বড়ুয়া
৬ষ্ট পর্ব থেকে নয়নার
দু:খের নতুন পর্ব শুরু হবে
মনে হচ্ছে। জমবে ভালো
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মেয়েদের জীবন এমন কেন ? কালো, বেটে হলেতো আরো অভিশাপ নেমে আসে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটা গল্প পাচ্ছি । শুভ কামনা রইলো
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দিদি
ভালো থাকবেন সবসময়
আরজু মুক্তা
এমন করে না লিখলে হতোনা?
শুধু নারীদের অপমান, গন্জনা!!!
সুরাইয়া পারভীন
নারীর শত্রুই নারীই
কেবল শুরু এখনো অনেক কিছু বাকী রয়েছে
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সবসময়
সাবিনা ইয়াসমিন
বেচারি নয়না! তার দুর্যোগের কি শেষ হবে না!!
নেক্সট পর্বের অপেক্ষায় রইলাম,
শুভ কামনা 🌹🌹
সুরাইয়া পারভীন
না আপু কারো কারো জীবনে দুর্যোগের শুরু ই থাকে কখনো শেষ হয় না।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
ভালো থাকবেন সবসময় 💓
সঞ্জয় মালাকার
প্রতি মুহূর্ত নয়নার দুর্যোগের সামনে, মনে হয় নয়না এ দুর্যোগ শেষ হবে না।
পরে পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দিদিভাই।
শুভ কামনা🌹🌹
সুরাইয়া পারভীন
এই গল্পটা অসমাপ্ত রাখবো না
একা শেষ করবো দাদা
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সবসময়
কামাল উদ্দিন
আমাদের গ্রাম বাংলায় বউ শাশুড়ির যুদ্ধটা প্রায় অবধারিত। কিন্তু বউ যদি বরকেও সাথে না পায় তাহলে তার মতো অসহায় আর কেউ হতে পারে না। নয়নার ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে রইলাম আমরা………শুভ সকাল।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সবসময়
কামাল উদ্দিন
আপনিও ভালো থাকুন সব সময় আপু।
নিতাই বাবু
নয়নার জন্য দুঃখ হচ্ছে! মানে কান্নাই হবে নয়নার জীবনসঙ্গী!
সুরাইয়া পারভীন
ঠিক বলেছেন দাদা
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সবসময়
ইঞ্জা
অনেক গুলো পর্ব মিস করলাম আপু, একটু সময় নিয়ে সব নিশ্চয় পড়ে ফেলবো।
সুরাইয়া পারভীন
ঠিক আছে ভাইয়া
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সবসময়
ইঞ্জা
দোয়া রাখবেন আপু।
ফয়জুল মহী
বেশ ,মন ছুঁয়ে গেল লেখা।😍😍
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সবসময়
ইসিয়াক
ভালো লাগছে নয়নার গল্প।