
আমাদের পাড়ায় প্রথম আমাদের ঘরে টিভি এসেছিলো। ঐ টিভিটা সাদাকালো ছিলো আর ব্যাটারি দিয়ে চালাতে হতো। কারণ তখনও আমাদের পাড়ায় বিদ্যুৎ ছিলো না।
আমাদের টিভিতে দুটো চ্যানেল ছিলো। একটা বিটিভি আর একটা কলিকাতা বাংলা। আমার মা খুব সৌখিন আর বিনোদন প্রিয় মানুষ। আমি তখন ১০/১২ বছরের কিশোরী। টিভির অনুষ্ঠান নিয়ে আমার মাথা ব্যথা ছিলো না। তবে শুক্রবার যখন সবাই আসতো, তখন সবার সাথে আমি দেখতাম । দেখতাম বলতে ঐ আর কি আমাদের টিভি আছে বলে একটা ভাব দেখাতাম। ছোট মানুষ কিনা? সে যা হোক।
একদিন বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে দেখি মা একটা নাটক দেখছেন। কলকাতা চ্যানেলে। নাটকের নায়িকা যে তাকে দেখেই আমার চোখ আটকে গেলো। ওহ মা কি সুন্দর দেখতে! বিটিভির নায়িকাদের মতো না। অদ্ভুত সুন্দর। মেয়েটির পরনেও ছিলো দারুণ সুন্দর ড্রেস। রাতের সিন চলছিলো। মেয়েটি বাঁধা চুল গুলো খুলে চিরুনি করে শুয়ে পড়লো। অদ্ভুত সুন্দর দেখতে। সবচেয়ে অদ্ভুত লাগেছিলো যা তা হলো মেয়েটা কথা বলছে তবে মুখ নড়ছে না। আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম মুখ বন্ধ অথচ কথা বলছে কি করে? মা বললেন খেয়াল দেখছে। ঐ কথা গুলো আগের পর্বে হয়ে গেছে। তারপর যতোটা সম্ভব আমাকে বোঝার চেষ্টা করে। সেদিন কতোটা বুঝেছিলাম জানি না। এখন কিন্তু বুঝি।
আস্তে আস্তে মায়ের থেকে সব জেনে নিলাম নাটকটা সম্পর্কে। নাটকের নাম ছিলো খুব সম্ভবত স্রোত।
গল্পটা ছিলো এ রকম। মেয়েটি অনেক ধনী। অনেক অর্থ সম্পদ টাকা পয়সা গাড়ী বাড়ি ছিলো। কিন্তু সুখ ছিল না (যদিও সুখ বলতে তখন হাসি মাখা মুখ বুঝতাম) যেহেতু তার মুখে হাসি ছিলো না তাই ধরে নিয়েছিলাম সে অসুখী। মেয়েটির কেউ ছিলো না। প্রচণ্ড একা ছিলো। ভালো লেগে গেলো। নাটকটা দেখতে শুরু করলাম। আস্তে আস্তে আমি নিজেকে ঐ মেয়েটির মধ্যে দেখতে শুরু করলাম। আমি সেই থেকেই মনে মনে ঠিক করেছিলাম। আমারও ঐ নায়িকার মতো অনেক অর্থ সম্পদ টাকা পয়সা থাকবে কিন্তু কেউ থাকবে না, সুখ থাকবে না। একা একা থাকবো আমি।
অল্প বয়সের ভালোলাগাটুকু এতোটা মস্তিষ্কে গেঁথে গেছে যে আর কিছুতেই সেই ভাবনা থেকে বের হতে পারিনি। তবে মাঝে মাঝে কারো সংস্পর্শ পেয়ে সেই ভাবনা সুপ্ত থাকলেও পরমুহূর্তে আবার জাঁকিয়ে বসে। আবারও ইচ্ছে করে ঐ নায়িকার মতো শূণ্যতার সুখের ভুগতে। একা জীবন যাপন করতে
সবার সাথে থেকে একা থাকার চেয়ে একদম একা নিজের মতো থাকায় ভালো।
আমি খুব চাই আমার অল্প বয়সের ভালোলাগায় হারিয়ে যেতে। ঐ জীবনটাতে ফিরতে। একাকীত্বটাকে উপভোগ করতে। কিন্তু এখনো তা সম্ভব করে উঠতে পারিনি। আমার পিছুটান আমার সমাজ হয়তো কখনোই সেই সুখটুকু উপভোগ করতে দেবে না। আমি চাইলে সব ছেড়ে একা বাঁচতে পারবো না। হয়তো এখন পারছি না কিন্তু এই অসম্ভব কে একদিন ঠিকই সম্ভবে পরিণত করবো। করবোই ইনশাআল্লাহ।
২৩টি মন্তব্য
তৌহিদ
চাইলেই কি আর কিশোরী বয়সে ফিরে যাওয়া যায়? কি সুন্দর ছিল বাবা-মায়ের সাথে কাটানো সময়গুলো। নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছের দাম ছিল, কিন্তু এখন সংসার জীবনের ঘানি টানতে আর অন্যদের প্রাধান্য দিতেই জীবন পার। তবে এর মধ্যেও অন্যরকম সুখ আছে।
একান্ত অনুভূতি ভালো লেগেছে আপু।
সুরাইয়া পারভীন
হ্যাঁ ভাইয়া ঠিকই বলেছেন।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সবসময়
সুপায়ন বড়ুয়া
“এই অসম্ভব কে একদিন ঠিকই সম্ভবে পরিণত করবো। করবোই ইনশাআল্লাহ।“
আপনার আশা পূর্ণ হোক
এই কামনা করি।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
আমীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদা
ভালো থাকবেন সবসময়
ইকবাল কবীর
একা থাকার অভ্যাস আমার নিজেরও, বলতে পারেন সেই ছোটবেলা থেকেই একা থাকা পছন্দ করি যে কারনে অনেকেই আমাকে অহংকারী মনে করে। যদিও আমি অহংকারি না। প্রতিটা মানু্ষেরই তার নিজের মত বাচা উচিত কেননা ছোট জীবনে বাচবো আর কদিন!! তাই যেকদিন বাঁঁচবো নিজের স্বাধীনমতই বাচতে চাই। যাইহোক আপনার মনের আশা পূর্ণ হোক।
সুরাইয়া পারভীন
মানুষ নিজের মতো করে আপনাকে বিচার করবে এটাই স্বাভাবিক ভাইয়া। বাদ দিন না যে যা বলে বলুক কি এসে যায় তাতে।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সবসময়
সুপর্ণা ফাল্গুনী
কৈশোরের ভালোলাগা, কষ্টের অনুভূতি গুলো অন্যরকম। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সবকিছু ই বদলে যায় পারিপার্শ্বিকতার দরুন। ভালো লেগেছে। শুভ কামনা রইলো
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দিদি
ভালো থাকবেন সবসময়
নৃ মাসুদ রানা
শূন্যতা….
সুরাইয়া পারভীন
জ্বী,,, শূণ্যতা
ধন্যবাদ অশেষ
কামাল উদ্দিন
দারুণ প্রত্যয় নিয়েই তো বললেন ফিরে যাবেন সেই কিশোরী বেলার নাটকের চরিত্রে। কিন্তু বাস্তবতা হলো ড়কাকিত্ব উপভোগ্য নয়। তবে খুব অল্প সময়ের জন্য হলে ঠিক আছে……..মনোকামনা পূর্ণ হোক আপনার।
কামাল উদ্দিন
ড়কাকিত্ব = একাকিত্ব
সুরাইয়া পারভীন
বুঝেছি তো। ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
সুরাইয়া পারভীন
জানি যাওয়া সম্ভব নয়
আবার হতেও পারে। জানি না একাকীত্ব জীবন কেমন? তবুও চাই উপভোগ করতে।
ধন্যবাদ ভাইয়া
কামাল উদ্দিন
মাঝে মধ্যে পুরোনো দিনের কিছু গান একাকী শুনতে বেশ ভালো লাগে।
ছাইরাছ হেলাল
আশাই জীবন!
তবে শুনেছি মানুষ মন দিয়ে চাইলে নাকি চাওয়া, পাওয়া হয়।
হোক তেমন কোন পাওয়া।
সুরাইয়া পারভীন
আমীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সবসময়
জিসান শা ইকরাম
সম্পুর্ন একা থাকার একটা আনন্দ আছে, একান্ত নিজের মত থাকা যায়, নিয়মের তাগিদ নেই, সুধু নিজকে উপলব্দি করা।
ইচ্ছে পুরন হোক ছোট আপু।
সুরাইয়া পারভীন
আমীন আমীন আমীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সবসময়
পর্তুলিকা
ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।
সুরাইয়া পারভীন
জ্বী একদম সঠিক বলেছেন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সবসময়
সঞ্জয় মালাকার
আশাই জীবন!
তবে শুনেছি মানুষ মন দিয়ে চাইলে নাকি চাওয়া, পাওয়া হয়।
দারুণ উপস্থাপন দিদি।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদা
ভালো থাকবেন সবসময়