
গ্রীস্মকালীন ছুটি। কক্সবাজার যাব । কিন্তু অনেক টাকা খরচ হয় বিধায় আমার কিশোর বয়সী কোন বন্ধুর পক্ষেই যাওয়া সম্ভব হলনা । অগত্যা একাই যাওয়া।
খুব সকালে রওয়ানা দেওয়ার পরও কক্সবাজার পৌছতে বেজে গেল রাত ১০ টা। যদিও গ্রীস্মকালীন রাত ১০ টা খুব একটা রাত নয়, তথাপি আমার মত সতের বছরের একটা কিশোরের জন্য এটা নিশি রাতের শামিল।
সুতরাং একটাই পরিকল্পনা ,হোটেল খুঁজে বের করা। আসলে কক্সবাজার হোটেল খুঁজতে হয় না হোটেলই পর্যটক খুঁজে নেয়। খুব কাছেই একটা থাকার ঠিকানা খুঁজে পেলাম। আমার জীবনের প্রথম বাহিরে রাত কাটানোর সেই নীড়ের নাম আরমান বোর্ডিং। ঢুকে গেলাম ভিতরে। রুম ভাড়া ৫০ টাকা। যদিও পেটে ক্ষুধা ছিল, দূরে কোথাও গিয়ে খাবার সাহস না পেয়ে বোর্ডিং সংলগ্ন চা স্টলের হালকা খাবারেই ক্ষুধা নিবারনের চেষ্টা।
অতপর ; ঘুমানোর পালা। শোবার আয়োজনে মশারী দেখে ভাবলাম, মশারী টানালে বাতাশ লাগবে না, তাই মশারী না টানিয়ে ফ্যান ছেড়ে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু একি! ফ্যানতো নয় যেন রুমের ভিতর ট্রেন চলছে গর-র গর-র শব্দে, তাও যদি বাতাশ লাগত। ওদিকে আবার মশক বাহিনী কিভাবে যেন আমার আগমন বার্তা টের পেয়ে গেছে। সুতরাং আর দেরী না করে আমাকে অভ্যর্থনা জানাতে দল-বল নিয়া হাজির। নিরুপায় আমি মশারী টানাতে বাধ্য হলাম । তাপর মশারীতে যেই না ঢুকা অমনি সে কি দুর্গন্দ ! মনে হয় সেই ১৯৫৩ সালের পর এটাতে পানি আর সাবানের স্পর্শ লাগেনি। কি আর করা, সাথে নেওয়া গামছা দিয়ে নাক-মুখ বেধে এই গরমে ঘুমানোর অপচেষ্ঠা।
কিন্তু আমার জন্য যে আরো চমক অপেক্ষা করছিল, কিছুক্ষন পরই সেটা টের পেলাম। বিছানার নিচ থেকে দলে দলে বের হয়ে আসতে লাগল ছাড় পোকারা। তারা ও মশাদের থেকে কম অতিথি পরায়ন না, এটা বুঝতে আমার খুব একটা সময় লাগল না । তাই আবারো উঠতে হল। বিছানা ঝেড়ে আবার শয়ন করলাম , কিন্তু না আধা ঘন্টার বেশী তাদের ঠেকিয়ে রাখা গেল না।
সুতরাং আধাঘন্টা পর পর বিছানা ঝাড়া, কখনো বা মশারী খুলে ফ্যান নামক রেল গাড়ীর শব্দ শুনে গরম তাড়ানোর চেষ্ঠা (আসলে অপচেষ্ঠা), আর মশারী ও বিছানার
দূর্গন্ধ থেকে বাচাঁর জন্য নাক মুখ বাধা। এভাবেই ভোর হওয়ার প্রহর গুনছিলাম । অতপর দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হয় মসজিদে মুয়াজ্জিনের আযানের মাধ্যমে।
আমি বেড়িয়ে পড়লাম বোর্ডিং নামক নরক থেকে। বের হওয়ার মুহুর্তে ম্যানেজারের
” রাতে ভাল ঘুম হয়েছে তো ?” এর জবাবে ইচ্ছে হচ্ছিল বলে দেই এই কৌতুক টি।
আপনাদের বোর্ডিং এর ব্যবস্থা খুব চমৎকার ! মশারা যখন আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন যদি ছাড় পোকারা নিচ থেকে টেনে ধরে না রাখত সকালে উঠে আমাকে অন্য কোথাও পেতেন।
২১টি মন্তব্য
শাহরিন
আসলেই প্রথম ভ্রমণের কথা ভোলা যায় না। আর আপনার অভিজ্ঞতা তো মাশাল্লাহ। পরে কোথায় উঠেছিলেন ভাই।
কামাল উদ্দিন
পরেরটা তো আবার অন্য গল্প ভাই, শুভ সকাল।
সুরাইয়া পারভিন
সম্প্রতি আমাদের বাইরে গিয়ে এমন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে।ছাড় পোকার ভয়ে দারুণ জেগে জেগে কেটে গেছে রাত। আপনার পোস্ট পড়ে সেদিনের কথা মনে করে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরছে
কামাল উদ্দিন
ঐ কষ্টটা সেদিন না করলে আজ আর এই গল্পটা হওয়ার সুযোগও ছিলো না আপু, আপনার গল্পটাও হয়তো এক সময় জেনে যাবো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
কৌতুক টি একদম খাপে খাপ আর না ঘুমাতে পারার যন্ত্রণা ভ্রমণ টাকে একদম ই ধূলিসাৎ করে দিলো।
কামাল উদ্দিন
ধূলিসাৎ বলছেন কেন আপু? বলুন এ্যডভেঞ্চার 😀
নুর হোসেন
পরবর্তী সময় বোডিং ফডিংয়ে আর ঢোকেননি সম্ভবত?
ছারপোঁকা আপনাকে ধরে রেখেছিলো বলেই আজ আপনি লিখতে পারছেন….
হাহাহাহা….
কামাল উদ্দিন
বোর্ডিংএ জীবনে আরো কয়েকবার থাকেছি, প্রতিবারই হয়েছে নানা রকম অভিজ্ঞতা। শুভেচ্ছা জানবেন ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
এই তো বেশ গড়গড়িয়ে লিখে ফেললেন,
এভাবে কিন্তু লেখা চাই, মনে থাকে যেন।
হা হা ।
কামাল উদ্দিন
সামনে টর্নেডোর গতিতে আসবো বড় ভাই:D
নৃ মাসুদ রানা
দারুণ
কামাল উদ্দিন
শুভেচ্ছা
এস.জেড বাবু
গল্পটা চমৎকার
এমন লিখকের যে অভিজ্ঞতাও দরকার
হাহাহা
মজার ছিলো শেেষ দুই লাইন
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ বাবু ভাই, ভালো থাকুন, সব সময়।
মাহবুবুল আলম
বড়ই তিক্ত অভিজ্ঞতা!
কামাল উদ্দিন
হুমম, অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ করা মাত্র শুরু 😀
রেজওয়ান
জ্বালাময়ী ভ্রমণ ছিলো বুঝাই যাচ্ছে!😬এরপর সকালে অন্য হোটেলে উঠেছিলেন নাকি বাসার উদ্দেশ্যে সোজা বাস ধরেছিলেন ভাই?
কামাল উদ্দিন
বলেন কি! জীবনের প্রথম কক্সবাজার যাওয়া, লবন পানি না খেয়ে কেউ কি কখনো ফিরতে শুনেছেন?
নিতাই বাবু
দারুণ একটা হোটেল জীবনী শোনালেন দাদা। ছারপোকাদের কাহিনীও শোনালে। সাথে শোনালেন বীর মশকবাহিনীদের গল্প। চমৎকার হয়েছে!
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ দাদা, বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে কিছুটা লেখার চেষ্টা চলে আর। ভালো থাকু, সব সম।
জিসান শা ইকরাম
এইটা কি কোনো বোডিং? আমি তো ভেবেছি পরিত্যাক্ত কোনো বাড়ি।
প্রথম বাইরে রাত কাটান তো যথেষ্ট স্মৃতিময় হয়েছে 🙂