
ভোলাচাঁদের সাথে নন্দিনীর প্রেম জন্ম-জন্মান্তরের। এক জনমে ভোলাচাঁদের প্রেমের পাল্লা ভারি, তো পরের জনমে নন্দিনীর। এই জনমে আবার তারা দুজন দুজনার হয়ে জন্মেছে। প্রতি জনমের মতো এবারেও তাদের মিলিয়ে দিয়েছে তাদের অদৃশ্য শুভাকাঙ্ক্ষী। প্রেমে অনুরাগ থাকবে, অভিমান থাকবে, আর খুনসুটি থাকবে না তা-কি হয়!! কেমন যাচ্ছে তাদের বিংশ শতাব্দীর প্রেম?
নন্দিনী কিছুদিন ধরে ভোলাচাঁদকে খুব মিস করছিলো। ঝগড়া করার জন্যে। কারন সপ্তাহে তিনবার ঝগড়া না হলে নন্দিনীর মন খারাপ থাকে। আর এটা ভোলাচাঁদ বুঝতে পেরেই কিছুটা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্ত কপালের লিখন না যায় খন্ডন, এই ফর্মুলা মতে হঠাৎ এক সন্ধ্যায় ভোলাচাঁদের সাথে নন্দিনীর দেখা হলো। হাই-হ্যালোর কোনো তোয়াক্কা না করেই সে খাবারের দোকান খুঁজতে শুরু করলো প্রথমেই। অতঃপর পাশে থাকা বৃহৎ শপিং কমপ্লেক্সে পাওয়া গেলো খাবার দোকানের সন্ধান।
ভোলাচাঁদ বিকেলবেলায় ভরপেট ভাত খেয়ে বেরিয়েছে, তার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ তেমন নেই। কিন্তু সে নন্দিনীকে রাগাতে চাচ্ছে না। হাসিমুখে নন্দিনীর পিছু পিছু মলে প্রবেশ করলো।
কথা শুরু করলো ভোলাচাঁদ : নন্দিনী এখনতো সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এসো দুজনে বসে ফুচকা চটপটি খাই।
= কি! এই কাল-সন্ধ্যায় তেল-টক খাবো? সন্ধ্যা হয়েছে বলে ভালো-মন্দ খাবো না? নাকি তোমার কাছে টাকা কম? মুদ্রা সংকট হলে বলতে পারো, বিল নাহয় আমিই দিবো।
– ছিঃ ছিঃ কি যে বলো! অনেক টাকা আছে। এতেও যদি না হয়, হাওলাৎ করবো, দরকার হলে কিডনি বেঁচে দিবো এখনই। তবুও যা খেতে চাও তাই-ই খাওয়াবো।
= থাক বুঝেছি তোমার প্রেম। চলো টপ ফ্লোরে যাই। সেখানে ইন্ডিয়ান খাবার ভালো পাওয়া যায়। তুমিও এক মগ কফি খেতে পারবে।
অনেক্ষণ হয়ে গেলো, কিন্তু কি নিয়ে ঝগড়া করবে সে বুঝতে পারছে না। ঐদিকে ভোলাচাঁদের মুখে মিটিমিটি হাসি লেগেই আছে। লিফটের দরজার সামনে দুজন অপেক্ষা করছে। এমন সময় নন্দিনীর চোখ আটকে গেলো একটা ডিস্কাউন্ট বোর্ডে! মনে মনে সে খুবই খুশি, ইয়েস! এইতো ঝগড়া করার সাবজেক্ট!!
– তুমি আমার সাথে এমন করতে পারলে ভোলা? আমার নাকফুল তুমি এত অল্প দামে কিনেছো? তাও আবার ডিস্কাউন্টে!
= অল্প দাম কই পেলে? ঐ দোকানে তোমারটাই সবচেয়ে দামী ছিলো সোনা 🙁
– থামো, এ্ক নাকফুল কি কিম্মত তুম ক্যায়া জানো ভোলানাথ ?
= আমি জানবো না? মানি রিসিট এখনো আমার পকেটেই আছে। যদি চাও দেখে নিতে পারো।
নন্দিনী মনে মনে,,, আরেএএএএ তাইতো!
– ধুর বোকা, আমিতো দুষ্টুমি করেছি। আমার দুষ্টুমি করার স্বভাব এত শিগগিরই ভুলে গেলে? তুমি এত সিরিয়াস নেও কেন!
= তুমিই আমার আরেক নাম ভোলানাথ রেখেছো, এটা বারবার ভুলে যাও কেন প্রিয়ে?
– ভোলাচাঁদ/ ভোলানাথ যাইহোক নামে কি আসে যায়? ভালোবাসি, যেখানেই থাকো যতদূরে থাকো,মনে রেখো।
***********************************
অসীমের মাঝেও অসীম তুমি
নিষিক্ত প্রেমের সুপ্ত বিন্দু,
মায়া নয়, ছায়া নয়, অনিমেষ কায়ায়
সমুদ্রে ওড়া গাঙচিল? তাও নয়..
মুছে ফেলা স্বরলিপি, অবাধ্য কবিতায় নেই তুমি।
তুমি থাকো
ভোরের সূর্যের প্রথম আলোয়,
গনগনে দুপুরের তপ্ত রোদ্দুরে পাওয়া
সবুজের সজীব ছায়ায়,
বিকেলের নীল আকাশে মেঘের খেয়ায়, অথবা পশ্চিম আকাশে জ্বলজ্বলে সোনেলায়.
প্রাননাথ,
শ্রাবণের ধারায় গড়েছি জনম
তুমি অনন্তকালের আরাধ্য,
স্বর্গ-স্বপ্ন সবই তোমার
আমি তোমাতেই পূর্ণ….
৩১টি মন্তব্য
কামাল উদ্দিন
নন্দিনী কিছুদিন ধরে ভোলাচাঁদকে খুব মিস করছিলো। ঝগড়া করার জন্যে। কারন সপ্তাহে তিনবার ঝগড়া না হলে নন্দিনীর মন খারাপ থাকে।
………হাঃ হাঃ হাঃ মন ভালো করার দারুণ রেসিপি 😀
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রেমিক যদি ভোলাচাঁদ মার্কা হয়, তবে নন্দিনীদের ঝগড়াটে না হয়ে উপায় নেই। 😀😀
প্রথম কমেন্টের জন্যে অনেক ধন্যবাদ কামাল ভাই।
শুভ কামনা 🌹🌹
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যও শুভ কামনা, সব সময়।
নুর হোসেন
প্রেমিক প্রেমিকা ঝগড়া স্কিপ করার চেষ্টা করে সব সময়,
আজব এক চরিত্র তারা ঝগড়া পছন্দ করে!!
ভিন্নরুপে সাঁজিয়েছেন ভাল লাগলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
মাঝে মাঝে ভিন্ন স্বাদ মন্দ লাগে না, তাই না? ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। দেখি আগামীতে আরও কিছু যোগ করা যায় কিনা।
ধন্যবাদ, শুভ কামনা 🌹🌹
তৌহিদ
নন্দিনীর এটা ঝগড়া করার ফন্দি নয়, ভোলানাথকে সে যে ভালোবাসে এটা তারই প্রকাশ। আর ছেলেরাও কম নয় কিন্তু! দু’পয়সা বাঁচাতে তাদেরকেও অনেক ফন্দিফিকির করতে হয় 😃😃
রোমান্টিক কবিতা ভালো লেগেছে আপু। ভাগ্যিস অকবিতা নাম দেননি ☺
সাবিনা ইয়াসমিন
হাহাহা, ছেলেদের দু পয়সা বাঁচাতে কত রকম ফন্দিফিকির করতে হয়, তা নন্দিনীরাও কম বোঝে না। তাইতো চাঞ্চ পেলেই ঝাড়ি দেয়ার সুযোগ মিস করে না।
সুন্দর কমেন্ট পড়ে মন ভালো হয়ে গেছে তৌহিদ ভাই।
শুভ কামনা নিরন্তর 🌹🌹
মোহাম্মদ দিদার
নন্দিনী কিছুদিন ধরে ভোলাচাঁদকে খুব মিস করছিলো। ঝগড়া করার জন্যে!!
আসলেই কি ঝগরা?? নাকি ভালোবাসার নতুন উপায়!! আসলেই ঝগরা করে ভালোবাসার উপায়টা আমার বেশ, বেশ ভালো লাগে।।।
বেশ ভালো লেগেছে আপনার লেখাটা।।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভালোবাসার নিত্ত-নূতন উপায় এগুলো। সব সময় মিষ্টি মিষ্টি কথা বললে সম্পর্কে এক ঘেয়েমি চলে আসতে পারে ভেবেই, হয়তো তারা এমন করে৷
অনেক ধন্যবাদ দিদার ভাই। আপনাদের ভালো লাগা আমার লেখায় সার্থকতা এনে দেয়।
শুভ কামনা 🌹🌹
প্রদীপ চক্রবর্তী
নন্দনীর ঝগড়াঝাঁটি তা ভোলানাথের প্রতি ভালোবাসার এক পথ্য।
গল্পে এক অনন্য উপস্থাপন প্রকাশ পেয়েছে।
বেশ ভালো লাগলো দিদি।
সাবিনা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ প্রদীপ।
শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা নিও। 🌹🌹
ছাইরাছ হেলাল
অবাধ্য অবোধ্য কবিতা-কল্পনায়
কত কিছুই ভাবায়, ভাবা যায়;
স্বর্গ মর্ত পাতাল কিছুই বাদ না যায়
শুধু আরাধ্য ভালোবাসা অধরায় থেকে যায়।
খুব কঠিন লেখা!
সাবিনা ইয়াসমিন
এর চাইতে সহজ লেখা ক্যামনে লেখে মহারাজ? একটু শিখিয়ে দিন, ট্রাই করে দেখি কতদূর পারি।
মোঃ মজিবর রহমান
মন্তব্য করতে পারলাম না। মন লিখতে সাই দেইনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
কেন? মন সাই না দেয়ার কারণ কি? গল্প ভালো হয়নি?
মোঃ মজিবর রহমান
না তা নই। সময় সময় মন্টা কি চাই তা নিজেই জানিনা। প্রেম কি কোন শতাব্দী নিয়ে চলে, প্রেম মনের গহীনে আসে, আবার স্থির থাকে সেটা স্থায়ী ভালবাসা। হাইরে ঘুন্সুটি অবশেষ কিডনি বিক্রি করবে তবুও ঝগড়া করবেনা। আর অপরজন করবেই!!!! হাইরে কপাল নন্দিনী খাবে ইন্ডিয়ান আর ভোলাচান্দের ভাগ্যে অনলি এক মগ কফি!!!
তাঁকে ঘিরেই জীবন আমার
তাঁকে ঘিরেই তাঁর সাথেই আমার সব মিতালী।
সৈকত দে
শুধু গল্প নয়।যেন অনেক কিছুর সুন্দর সংমিশ্রণ।
মাহবুবুল আলম
সাবিনা ইয়াসমিন ম্যাডাম!
এক দিকে ভোলাচাঁদকে মিস করবে অন্যদিকে ঝগড়া করার জন্য গরু খোঁজা খুজবে নন্দিনীর এটা কেমন ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ভাবনা বা আজরণ হয়ে গেল না!! আহা বেচারা ভোলাচাঁন!! কপালই একটা!!!
সাবিনা ইয়াসমিন
এটাতো নন্দিনীর ব্যাপার-স্যাপার! তার ভাবনা ডাবল / ট্রিপল স্ট্যান্ডার্ড হলেই কি?
ভোলাচাঁদের কপাল! একদিন ইঞ্চিটেপ দিয়ে মেপে দেখতে হবে 😀😀
সুরাইয়া পারভিন
চমৎকার গল্প ও কবিতা। ভালোবাসার চমৎকার বহিঃপ্রকাশ। নন্দিনীরা এমন ঝগড়ুটে না হলে চলে?
সাবিনা ইয়াসমিন
উহু, একদম চলে না। ভোলাচাঁদের সাথে ঝগড়ালু নন্দিনীই একদম পারফেক্ট ম্যাচিং 😀😀
শুভ কামনা সুরাইয়া 🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
ভোলাচাঁদ নায়কের নাম!
আগে একটি গল্প লিখলেন নীলচাঁদ না জানি কি চাঁদ ছিল নাম!
চাঁদ এ পাইছে মনে হয় আপনাকে 🙂
সপ্তাহে তিনদিন ঝগড়া না হলে নন্দিনীর ভালো লাগেনা ! নন্দিনী তাহলে নিশ্চিত যে পরের জন্মেও তারা সাথী হবে একে অপরের, তাই ঝগড়ার রিস্ক নিতে পারছে।
কি খাওয়া দাওয়া হলো তা তো বললেন না !
ঝরঝরে বর্ননার গল্পটি একটু বেশিই ভালো লাগলো।
কবিতায় নন্দিনীর চোখে ভোলাকে দেখলাম যেন বাস্তবেও।
গল্প এবং কবিতায় মুগ্ধ হওয়া পোস্ট প্রিয়তে না নেয়া অন্যায়।
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
নন্দিনী ভোলাচাঁদের ব্যাপারে ১০০% নিশ্চিত, তাই ঝগড়া যুদ্ধ সব করার রিস্ক নিতে পারে।
যতটুকু জানা গেছে নন্দিনী বেশি কিছু খায়নি। তিন পিস চিকেন ফ্রাই, এক বোল নুডলস, একটা হাফ লিটারের স্প্রাইট, হাফ লিটার ঠান্ডা পানি আর ভোলাচাঁদের কাছ থেকে অর্ধেক কফি নিয়ে খেয়েছিলো। এর বেশি কিছুই খেতে পারেনি বেচারী 😜😜
অনেক ধন্যবাদ,
শুভ কামনা 🌹🌹
রুমন আশরাফ
বাহ বেশ লাগলো লেখাটি। অন্যরকম স্বাদ।
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেক ধন্যবাদ রুমন ভাই।
শুভ কামনা 🌹🌹
এস.জেড বাবু
নামে কি আসে যায়? ভালোবাসি, যেখানেই থাকো যতদূরে থাকো,মনে রেখো।
ভিন্ন রকম মজার একটি গল্প পড়লাম। সম্পর্ক এমনি হওয়া ভালো- টক ঝাল
বেশ মুগ্ধতা
সাবিনা ইয়াসমিন
সেটাই, ভালোবাসি যেখানেই থাকো, যত দূরে থাকো মনে রেখো। নাম ভুলে গেলেও সমস্যা নেই, কিন্ত ভালোবাসা ভুলো না।
ধন্যবাদ ও শুভ কামনা জানবেন বাবু ভাই 🌹🌹
নৃ মাসুদ রানা
বিকেলের নীল আকাশে মেঘের খেয়ায়, অথবা পশ্চিম আকাশে জ্বলজ্বলে সোনেলায়.
সাবিনা ইয়াসমিন
সব খানেই সে থাকে, তাইতো ভালোবাসা অমরত্ব পেতে পারে।
ধন্যবাদ, শুভ কামনা অবিরত মাসুদ 🌹🌹
সঞ্জয় মালাকার
নামে কি আসে যায়? ভালোবাসি, যেখানেই থাকো যতদূরে থাকো,মনে রেখো।
নন্দনীর ঝগড়াঝাঁটি তা ভোলানাথের প্রতি ভালোবাসার এক পথ্য।
বেশ ভালো লাগলো দিদি, গল্প টি আনন্দ করে পড়লাম।
শুভ কামনা🌹🌿
সাবিনা ইয়াসমিন
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা দাদা। 🌹🌹