বেশ্যা.
শব্দটা দেখেই কেমন গা ঘিনঘিন করছে তাই না?
ঘৃণা আমারও হতো বাট এখন সেই ঘৃণাটা পরিনত হয়েছে কৌতুহলে।
কৌতুহলটা এ নিয়ে যে, বেশ্যা ” শব্দটির শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ সহ এর সঠিক প্রয়েগ স্থান কি তা সম্পর্কে জানা।
অজানা বিষয় নিয়ে কৌতুহল নেই এমন মণিষি খুব কম, বা নেই বললেই চলে। তবে আমার কৌতুহলি মনটা বেশ অন্যরকম। যখন কোনো বিষয় মাথায় আসে, সেই সম্পর্কে সঠিকটা জানার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত না ঘুমাতে, না খেতে, না কাজ করতে এক কথায় কিছুতেই অন্য কোনো বিষয়ে মনোনিবেশ করতে পারিনা।
সেদিন প্রথম যখন বিষয়টি মাথায় আসলো, তার পরের দু’তিনটা দিন রাত খুব কষ্টে কেটেছে। এ কষ্ট শারীরিক অসুস্থতা বা প্রিয় জনদের কাছ থেকে পাওয়া কষ্ট নয়, এটি নিতান্তই মনের অতৃপ্তির কষ্ট, মনকে পোষ না মানানোর কষ্ট।
আমায় যখন খুব পেয়ে বসলো, বেশ্যা বিষয়ক অতৃপ্তি। আমি তাহার সরণাপন্ন হলাম। আমার সকল প্রশ্নের সন্তুষ্টজনক উত্তর মিলে সেই মানুষটির। (তাহার নাম উল্লেখ্য অপ্রাসঙ্গিক) ছদ্ম নাম রহিম চাচা।
আমি জানতে চাইলাম: চাচা বেশ্যা মানে কি? শব্দটা কার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ?
দূর ব্যটা
বলেই আমার পিঠে ওনার ছোটো খাটো একটি হাতির সমান দেহের একটি অংশ (হাত) রেখে বললো।
তুই একটা আজব পোলা। কহোন কি বলোস কহোন কি করোস ঠিক পাইনা। রহস্য বালক বললেও ভূল হবে না খুব একটা।
রহস্য বালক কেনো??
যে ছেলেটা সকালের নাস্তা সেরে নেয় পাচ টাকার চায়ে চুমুক দিয়ে। সেই হার কিপটে আবার অভুক্ত ভিখারি কে খাওয়াতে পকেটে থাকা শেষ একশতো টাকার নোটটাও ভ্যনিস করে দেয়!
সে, পনেরো টাকা ভাড়া মিটিয়ে রিক্সাওয়ালা কে বিশ টাকা দিতে পারে। আবার এগোরো টাকা মিটিয়ে বারো টাকা দিয়ে একটাকা ফেরত নিতে মরিয়া হয়ে উঠে। কারণ হিসেবে রিক্সাওয়ালার কর্কষ ব্যবহার দায়ী!
ফোনের লাইনটা কেটে দেওয়ার মূহুর্ত টা বেশ গম্ভির হলেও, মিনিটেই সব চেন্জ! হাসতে হাসতে, গুনগুন গান করতে ব্যাস্ত হয়ে পরে!
তাকে রহস্য মানব না বলে উপায় কি??
কথাতো অনেক হলো, এবার আসি বেশ্যা প্রসঙ্গে।
ওনার জবাবটা ছিলো এমন:
শাব্দিক অর্থ ঃ
দেহ ব্যাবসায়ী
পারিভাষিকঃ
যেসব মেয়ে মানুষ টাকার বিনিময়ে নিজের দেহ অন্যকে ভোগ করার পূর্ণ অধিকার দেয় তাহাকে বেশ্যা বলে।
কি ভাবছেন??
আমি পূর্ণ তৃপ্ত তাহার জবাবে??
আমার কৌতুহলের অবসান ঘটিয়ে নাচতে নাচতে ফিরছি সেখান থেকে??
না!!
আমি মোটেও তৃপ্ত নই!! বরং জটলা পেকেছে আরো!
দৈনিকের মতো সেদিন সকালেও গেলাম চা পিয়াতে। আমার পাশে বেশ ভদ্র গরনের একজন বসে চা পিয়ালো,চা শেষ করে ব্যনসন ধরিয়ে হাটতে লাগলে।
চা দোকানি বললোঃ
মামু অহনো সাইত করিনি।
হুর মিয়া সাইত কি আবার? দিমুনি পরে । থাহো!
মামু দুই টাহা হইলেই দেন, সাইত টা অউক( হউক)।
বেশ্যার ছৌল কইছিনা পরে দিমু, পকর পকর চোদাস কেন??
বলেই স্থান ত্যাগ করলো।
দোকানি হাবলার মতো কতোক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজের কাজে মনদিলো।
আমার জানা মতে, দোকানির মা কখনো কোনো কালে কারো কাছে টাকার বিনিময় দেহ বিকাবে তো পরের কথা। সে নিজের মেয়েদের জামাইদের সাথেও অপ্রাসঙ্গিক বা অপ্রয়োজনীয় কথা বলেন না।
এখন
রহিম চাচার উত্তর যদি সঠিক হয় তাহলে দোকানীর মা বেশ্যা হলো কিভাবে?
মোদ্দাকথা কৌতুহল কমাতে গিয়ে আরো বাড়লো!!
যখন একেবারেই ঝাপটে ধরে আমাকে বিষন্নতা নামক অশরীরী দানব। নিজেকে একটু হালকা করার মানসেই। চলে যাই হক কলেজের পেছনে। পরিবেশটা বেশ রোমান্টিক৷ সামনে কলেজ পেছনে বিশাল ফাঁকা মাঠ। সেখানে জোড়া শালিকের আড্ডা খুব!
মাথা অবনত করে আমি দৃঢ় পায়ে হাটছি। ক্ষনে ক্ষনে অপ্রয়োজনে পকেটে থেকে ফোনটা হাতে নেই, লকটা খুলি, আবার পাওয়ার বাটনে চেপে পকেটে পুরি।
কাউকে ফোন করার মতোও নেই,কেউ ফেন করবে এমনও কেউ নেই।
তবুও এমন কেন করছি?
ভাবতেই মনে পরে সেই পুরোনে কথা। যাহার তিব্র ইচ্ছে আর অসীম ভালোবাসার ফলশ্রুতিতে আমার এ সুন্দর ধরনীতে আাসা হলো। তার মুখেই শুনেছি প্রথমবার।
“পাগলের সুখ মনে মনে
দিনের বেলায় তারা গুনে”
কথাটা মনে পরতেই, ঠোট বাঁকিয়ে মুচকি হেসে সামনে চলতে লাগলাম।
আমার সামেনে একজন ফোনে কথা বলছে। গার্লফ্রেন্ড হবে হয়তো!
এক সময় আমি তাহার খুব কাছেই চলে আসলাম।আমার কানে যা আসলো, তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। রীতিমতো স্তব্দ হলাম!
কথা গুলো এমন ছিলোঃ
শালী! তুইতো একটা বেশ্যা! তোর সাথে কথা বলাই চলেনা! বেশ্যা মাগী, ফোন রাখ!!
আমার অনুমান ঃ লোকটি যার সাথে কথা বলছিলো, সে নিশ্চই তার গর্লফ্রেন্ড! হয়তো এখানে আসার কথা ছিলো আসেনি তাই ঝেরে দিয়েছে।
এখন কথা হলো ঃ এই লোকটির গর্লফ্রেন্ড তো নিশ্চয়ই দেহ ব্যবসায়ী নয়! তাহলে রহিম চাচার কথাই যদি ঠিক হয় তাহলে এই গার্লফ্রেন্ড মেয়েটি বেশ্যা কিভাবে হলো??
আর এই মেয়েটি যদি বেশ্যা হয় , তাহলে রাহিম চাচার কথাটি তো দাহা মিথ্যা!!
কৌতুহল এখন তুঙ্গে।
বিপরীত পার্শের মানুষটির প্রতি বিরুপ মানষিকতার কারণেই আমাদের মন ঐ মানুষটির প্রতি বিকৃত ভাবে উপস্থাপিত হয়,তাকে হেয় করেই এমন ঘৃন্য শব্দ বের হয় মুখ থেকে। মূলতঃএ ঘৃণিত শব্দটি কারো জন্যই সঠিক নয়।
(ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন)
১৮টি মন্তব্য
নুর হোসেন
পতিতা পুতুল নয়, ক্ষুধার্ত পেটে দু’মুটো অন্ন যোগানের নস্ট প্রয়াস।
যারা অনিচ্ছা সত্ত্বেও দেহ ব্যবসা করছে তারা যৌনকর্মী পতিতা নয়,
পতিতা তারা যারা যৌনক্ষুধা মিটাতে প্রতিরাতে সঙ্গ বদল করে।
মোহাম্মদ দিদার
হ্যা, আপনার কথা সত্য।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিন্নতা আছে।
আর আমি বোঝাতে চেয়েছি, বেশ্যা শব্দটি কারো জন্যই পাওনা নয় বরাদ্দ নয়, নিদৃষ্ট ও নয়।
এটা কিছু বিকৃত মনা মানুষের মুখ নিসৃত শব্দ , যা অপরকে হেয় বা ছোট করার জন্য।
মন্তব্যের জন্য ভালোবাসা রইলো।।
সুরাইয়া পারভিন
দারুণ বলেছেন ভাইয়া
@নুর হোসেন
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসংখ্য ধন্যবাদ বিষয়টি উপস্থাপন করার জন্য
মোহাম্মদ দিদার
আন্তরিকতা জানবেন প্রিয়জন।
মোঃ মজিবর রহমান
বেশ্যা যদি স্ত্রী লিংক হই পু লিং কি?
কেউ ক্ষুধআ নিবারনের অন্য যীগায় সে বেশ্যা কি?
বেশ্যা সেই যে দৈহিক ক্ষুধা মিটানোর জন্য যায়।
তৌহিদ
লজ্জাজনক হলেও অনেকে নে জেনে বুঝেই এই শব্দটি উচ্চারণ করে গালি দেন যা মোটেও উচিত নয়। দেহভোগী মানুষের ক্ষুধা মেটানো অসহায় নারীরা যখন এই কর্ম করে তখনতো কেউ তার পাশে দাঁড়ায়না। তাদের দেখলে যাদের গা ঘিন ঘিন করে সমাজের উচু স্তরে বসবাসকারী মানুষই আবার অন্যকে গালি দেয় এই শব্দে। লজ্জাজনক কিন্তু!
সুন্দর করে লিখেছেন। বানানের দিকে লক্ষ্য রাখুন ভাই।
সঞ্জয় মালাকার
পতিতা পুতুল নয়, ক্ষুধার্ত পেটে দু’মুটো অন্ন যোগানের নস্ট প্রয়াস।
লজ্জাজনক হলেও অনেকে য়ে জেনে বুঝেই এই শব্দটি উচ্চারণ করে গালি দেন যা মোটেও উচিত নয়।
দেহভোগী মানব ক্ষুধা মেটানো, অসহায় নারীরা যখন এই কর্ম করে তখনতো কেউ তার পাশে দাঁড়ায়না। তাদের দেখলে রোমাঞ্চিত হয়।
আর যে মানুষ এ- শব্দ ব্যেবহার করে তাঁরাই আঁদার ঘরে সন্ধ্যে বেলা বন্ধী হয়।
চমৎকার লিখেছেন দাদা।
নিতাই বাবু
আমি বেশিকিছু বলতে চাই না! শুধু বলবো, এঁরা আমার মায়ের জাতি। এঁরাও আরও দশজন ভদ্র মহিলার মতো। আমাদের হিন্দু শাস্ত্রে এঁরা দেবিতুল্য।
মোহাম্মদ দিদার
একদমি সঠিক বলেছেন দাদা।
তভুও কিছু ভদ্রবেসি কথায় কথায় অকারনে তাদের লজ্জিত কলঙ্কিত করে।
এস.জেড বাবু
ভাল লিখেছেন।
গালি হিসেবে হলেও এই শব্দটা ব্যাবহার করা উচিত নয়।
মোহাম্মদ দিদার
আমি সেটাই বুঝাতে চেয়েছি।
শুভোকামনা রই।
মোহাম্মদ দিদার
শুভোকামনা রইলো
সাবিনা ইয়াসমিন
এটা একটা নিকৃষ্ট গালি ছাড়া অন্য কি হতে পারে? যদি শুধুমাত্র দেহ ব্যাবসায়ীনি দের এই নামে ডাকা হতো, তাহলে যারা এই পেশায় জড়িত নয় তাদেরও এই ডাকে কেন সম্বোধন করা হবে? আমার মতে যারা এই ভাষায় গালাগালি করে তারা বিকৃত রুচির অসভ্য মানুষ।
মোহাম্মদ দিদার
একদমি, সেই কথাটুকুই বুঝাতে চেয়েছি।সঠিক বুঝাতে পারলেই আমার লেখাটুকু সর্থক হবে।
মাহবুবুল আলম
যারা দিনের আলোতে বেশ্যাবৃত্তিকে ঘৃণা করে বক্তৃতায় মঞ্চ কাঁপায়, তারাই রাতের অন্ধকারে বেশ্যালয়ের অন্ধ গলি ঢুকে যেতে দ্বিধা করে না।
মোহাম্মদ দিদার
একদমি খাটি কথা বলেছেন।
কিছু তো দালালি করে।
“দিবালোকে পুণ্যবান,
আধারলোকে আতেল খাঁন”
সুরাইয়া পারভিন
এটা নিতান্তই নিকৃষ্ট শব্দ বৈ কিছু নয়।
কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই ব্যবহার করা হয় এ রকম অজস্র নিকৃষ্ট শব্দ