অনেকদিন পরে আবার এলাম আমার পুরোনো লেখার ধারাবাহিকতা নিয়ে। মাঝখানে বয়ে গেছে কয়েকটা মাস। পুরোনো ব্লগারদের মধ্যে অনেকেই নেই আজ আর।নতুনদের কাছে এ লেখা একেবারেই নতুন। তবুও বলবো পড়তে কারো খারাপ লাগবেনা আশা করি।
******************************
একটু একটু করে পাঠ্য বইয়ের থেকে বেশি আগ্রহ জন্মাচ্ছে গল্পের বইএর প্রতি। একটা না একটা চাইই চাই। পাতলা বই হলে একসাথে ৪/৫টা বই নিয়ে ঘন্টা কয়েকের মধ্যে শেষ।নাওয়া খাওয়া চুলোয়। আম্মা প্রায়ই হুমকি ধমকি দেন। বই পুড়িয়ে ফেলবেন।ভাত খেতে দেবেন না। ভাত খাওয়া নিয়ে চিন্তা ছিলো না আমার কখনো। একটা অকেজো ধমকি আম্মার। দাদী’র বাসায় এক ছুটে চলে গিয়ে কখন খেয়ে আসবো আম্মা টেরই পাবেন না!
সময়টা বদলে যেতে শুরু। একটু বড় হয়েছি তো তখন! গান শোনা হতো খুব। আব্বার ফিলিপস্ ব্র্যান্ডের রেডিওর কল্যানে অল ইন্ডিয়া রেডিও, মাঝে মাঝে রেডিও নেপালের চ্যানেলও আসতো কিছু সময়ের জন্য। আব্বা বাসায় না থাকলে রেডিও আমার দখলে। আব্বা শুনতেন সবসময় রবীন্দ্র সংগীত, আর রুনা লায়লার যত গান,পুরোনো হিন্দী ছবির গান যখন যে চ্যানেলে শোনা যেত। আব্বার নির্ধারিত সময়ে রেডিও তাঁর কাছে। একবার কিহলো!! ঢাকায় একটা ট্রেনিং ছিলো আব্বার সাংবাদিকতার ব্যাপারে। বেশ কিছু গিফটের সাথে এক ব্যাটারির একটা ছোট্ট রেডিও উপহার হিসেবে পেলেন।
ওটা দেখে মহা খুশি আমি: বড়টা আব্বার হলে, ছোটটা আমার ভেবে।
আমার বাতিক ছিলো বই পড়তে পড়তে গান শোনা। কানের কাছে রেডিও, হাতে বই। ক্যাসেট প্লেয়ার তখনো আসেনি বাসায়।
ক্যাসেটে গান শোনা হতো আমার দাদুর বাসায় যেয়ে ৭ নম্বর চাচার ক্যাসেট প্লেয়ারে। একদিন ফুপুদের বিছানায় শুয়ে শুয়ে বই পড়ছি আর বিছানার পাশে ক্যাসেটে প্রিয় গান শুনছি। আমার রাশভারী গুরু গম্ভীর দাদা’জান কখন নিঃশব্দে এসে প্লেয়ার অফ্ করে দিলেন। আচমকা চোখ তুলে তাকাতেই দাদু বলে উঠলেন আঙুল নেড়ে নেড়ে…”এক লগে দুই কাজ হয়না, হয় বই পড়া নয় গান শোনা”। আমার ভারী রাগ হলো। দাদু এমন করে ক্যান? বই রেখে সেই চলে এলাম দাদুর বাসা থেকে।কয়েকদিনে আর যাইনি। সাত নম্বর কাকা একদিন জিগ্যেস করলেন, “তুই যাওনা ক্যান বাসায়?”
ঘটনা খুলে বলাতে বললেন, “জানোই তো তোগো দাদু একটু ওইরকম! তাতে রাগ হওয়া লাগে?
কখন হেমন্ত আসে টের পাই বাতাস বদলে গেলে। হরেক রকম প্রজাপতি উড়তে দেখলে। একটা সময়ে খুব দৌড়াতাম প্রজাপতি আর ফড়িংএর পেছনে। তখন শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি কোথা হতে কোথা কোথা উড়ে বেড়ায় প্রজাপতি পাখনা!
বাড়ির আঙিনায় সামান্য কিছু গাছের ওপড়ে, মেহেদি ফুলের ওপরে ফড়িং আসে। দুই চোখ হেসে ওঠে চঞ্চল প্রজাপতি পাখনার মতো। বাসার সামনে হঠাৎ করে বেড়ে যায় কারো পায়ের জোড় জুতো ঘসটে ঘসটে অথবা বাই সাইকেলের উল্টোদিকে প্যাডেল চালনা। চুরিচুপি লক্ষ করা এসব।
আমার চাচার দল বেশ ভারী। প্রত্যেকটা চাচাই বেশ হাসি মশকরা করেন। আমার বন্ধরা কখনো বাসায় এলে আমারা বলতে গেলে একসাথেই মাঝে মাঝে আড্ডা দিতাম। আমার সব বান্ধবিদের আমার পুরো পরিবার খুব ভালো করে চিনতেন। এখনো যাদের সাথে যোগাযোগ আছে! পুরো পরিবারের সাথেই আছে।
আব্বা ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদ দাতা, জাতীয় বেতার এর সংবাদদাতা, স্কুল শিক্ষক, নানা মুখি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। মেজো চাচার ঘরে আসতো দৈনিক সংবাদ পত্রিকা। মাঝে মাঝেই চলে আসতেন আমার ৬ নম্বর চাচা। মেজো চাচার ঘরে। আম্মা এবং মেজো চাচির সাথে হাসি মজা করেন। কখনো চোখ ডুবিয়ে রাখেন খবরের কাগজের মধ্যে। এই চাচাটা তখন নতুন নতুন রেস্তোরা ব্যাবসা সহ ঠিকাদারি ব্যাবসায় জোড়ে সোড়ে নেমেছেন। চাচ্চুর অনেক বন্ধুবান্ধবদের সবাইকে মোটামুটি চিনি, জানি। সব চাচাদের অনেক বন্ধবান্ধবদেরই মোটামুটি চিনতাম জানতাম। যারা নিয়মিত বাসায় আসা যাওয়া করতেন। মেজো চাচার ড্রেসিং টেবিলটা যেন আমার ব্যাবহার বেশি হতো।
চুল বাঁধা,সাজুগুজু করা সব এখানেই আমার। আমাদের যৌথ পরিবার ছিলোনা। কিন্তু মনেও হতোনা আমরা যৌথ নই।আলাদা আলাদা ঘর, তবু এক গন্ডির মধ্যে।
বৃষ্টি থেমে গিয়ে শরত এসেও চলে যাই যাই করছে এখন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে একটু তারাতারিই। আমার চাচ্চুদের বেশ মজার মজার কাহিনী আছে উল্লেখ করতে পারলে ভালো হতো লেখা বেশ দীর্ঘ হয়ে যাবে বলে এ যাত্রা চেপে গেলাম। তদুপরি চাচ্চুর সাথে যোগাযোগটাও হচ্ছেনা ইদানীং, নইলে অনুমতি নেয়া যেত।
মেজো চাচার ড্রেসিং আয়নার সামনে চুলে চিরুনি চালাচ্ছি, ছয় নম্বর চাচ্চু(ইচ্ছে করেই এখানে নাম উল্লেখ করছিনা) খাটের কোনায় দাঁড়িয়ে খবরের কাগজে মুখ গুঁজে আছেন। আয়নায় আমি আমাকে দেখছি আর স্কুলের দিনের কার্যক্রম মনে করছি।……”লিপি, কবিতা লেকতে পারো? “হাত থেমে গেলো আমার। মাথা ঘুরিয়ে এদিক সেদিক তাকালাম, নিজের নাম শোনার পরেও…..আমাকেই তো বলছে নাকি? লিপি তো আর কারো নাম না! আমিই তো! আমাকে…. কাকা বলছে এ কথা? বিষ্ময়ে চোখ স্থির! মুখে কথা নেই। কাকু’র ভ্রুক্ষেপ নেই। বলে চলছেন…. “লিখিসতো! আমরা বন্ধুরা মিলে একটা ম্যাগাজিন মতো বের করবো! লেখা দিস।
কাকু এসব কি বলছে? আমি আর কবিতা? কেমন করে কবিতা লেখে? কবিতা কি? কাকু বুঝলো/ভাবলো কি করে আমি কবিতা লিখতে পারবো?……..
চলবে–
২০টি মন্তব্য
তৌহিদ
এই ধারাবাহিক লেখাটি অনেকদিন পরে নিয়ে এলেন। আমার পছন্দের লেখা এটি। নিত্য নৈমিত্তিক জীবনের বাস্তব গল্পগুলি যখন একজন লেখক তার লেখনীতে প্রকাশ করেন তখন সেটি পাঠকমনে এক অভূত অনুভূতির জন্ম দেয়। মনে হয় এ যেন আমাদেরই গল্প।
ভালো থাকবেন আপু।
বন্যা লিপি
এই লেখাটার ৪ পর্ব লেখার ২/৩ দিনের মধ্যেই সোনেলা ঝড়ের কবলে পড়েছিলো।তারপর এলোমেলো বেশকিছু ঝামেলা আমারো ছিলো। এ লেখাটাও ঠিকঠাক গুছিয়ে লিখতে পারিনি। যার ছাপ পুরো লেখা জুড়ে টের পাওয়া যায়। আশা করি পরের পর্বে কাটিয়ে উঠবো মানসিক বিচলিত টানাপেড়েন।
আপনার ভালোলাগার লেখায় স্থান দিয়েছেন এই পর্ব, জেনেই ভীষণ ভালো লাগছে ভাই।
অন্য পাঠকদের পড়ার সুবিধার্থে আগের পর্বগুলোর লিঙ্ক যুক্ত করা হলো।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ শুভেচ্ছা শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
মনে হয় যেন ডায়েরি পড়ছি,
আসলে এ লেখাগুলো সময়ের সাক্ষী হয়ে থাকবে।
লিখে রাখুন এগুলো, ভবিষ্যতের দলিল হিসাবে।
বন্যা লিপি
ভবিষ্যতের দলিল- বেশ বলেছেন। ভালো লাগাগুলো লিখে রাখার একটা খেরো পৃষ্ঠায় রেখে যাচ্ছি যা বলার ছিলো।যা আর অন্য কোথাও হয়তো লেখা হতোনা কখনো।
আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ।
নিতাই বাবু
লেখালেখি জীবনের প্রথম থেকেই শুরু করলেন মনে হয়! আপনার লেখালেখি জীবনের গল্পটা খুব মন দিয়েই পড়লাম, দিদি। অপেক্ষায় আছি আগামী পর্বের। শুভকামনা থাকলো।
বন্যা লিপি
দাদা, এটা পর্ব নম্বর ৫। আগের পর্বগুলোর লিঙ্ক দেয়া হয়েছে পড়ে দেখবেন।
হ্যাঁ, লেখালিখি জীবনের শুরুটা কিভাবে হয়েছিলো তাই এ লেখার মূল উদ্দেশ্য।
আপনার প্রতি শ্রদ্ধা রইলো। ভালো থাকবেন সবসময়।
সাবিনা ইয়াসমিন
কাকু বুঝতে পেরেছিলেন তার ভাতিজি বড় হয়ে মস্ত কবি হবে। তাই আগে-ভাগেই নিজের ক্রেডিট নিয়ে রেখেছে। 🙂
ধারাবাহিক লেখায় ক্রম নম্বর দিও বন্যা। তাহলে পাঠকের সিরিয়াল অনুযায়ী পড়তে সুবিধা হবে।
শুভ কামনা 🌹🌹
বন্যা লিপি
কাকু কি করে বুঝলো ভাতিঝি কবিতা লিখতে পারে বা পারবে? সেটা আজো ভাতিঝি বুঝতে পারেনা। মস্ত??? কত মস্ত?
আসলেই কি ভাতিঝি পারে কবিতা লেকতে?
ভুল হয়ে গেছে লেখায় ক্রম নম্বর দিতে। এবার দেখো নম্বর সহ লিঙ্কও দেয়া হয়েছে আগের পর্বগুলোর।
ভালবাসা তোমার জন্য❤❤
জিসান শা ইকরাম
অকৃত্রিম আনন্দের সেই সব দিন এখন সবই স্মৃতি। রেডিওই ছিল এক সময়ের আনন্দের উৎস। রেডিও শিলং বা আকাশবানীতে সারাদিনই গানের অনুষ্ঠান থাকত। ক্যাসেট প্লেয়ারও নেই আজকাল।
সোনালী স্মৃতি মনে করিয়ে দিলে। সব তো চেনা জানাই।
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
স্মৃতি কথা লেখা খুবই ভাল হচ্ছে।
বন্যা লিপি
ঠিকই বলেছেন, অকৃত্রিম আনন্দময় সেইসব দিন কালে কালে স্মৃতীর কুলুঙ্গী তে জমা পড়েছে। আপনাকে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা জানাই। পরের পর্ব নিয়ে হাজির হবো আবার শিঘ্রী।
কামাল উদ্দিন
কবিতা লেখাটা সহজ না, আমি অনেক চেষ্টা করেও সফল হতে পারিনি। চলুক ভালোলাগার সেই পুরনো দিনের কথকতা, মনটাকে করে তুলুক নষ্টালজিক।
বন্যা লিপি
তাইতো! কবিতা লেখা মোটেও সহজ না। আমি পারিইনা কিছু লিখতে! শুধু অনুভবের শব্দে লিখি অনুভূতিগুলো। শুভ কামনা আপনার জন্য।
কামাল উদ্দিন
এক সময় কিছু লিখেছিও, সময় পেলে সেই অখাদ্য কোন একদিন পরিবেশন করবো আপু
বন্যা লিপি
আমি কোনো লেখাকেই অখাদ্য উপাধি দিতে রাজি না ভাই, অনুভূতি থেকে যার জন্ম, সেতো নিজেরই সন্তানের মতো। সে যেমনই হোক।
অপেক্ষায় থাকলাম আপনার সৃষ্টি পড়ার জন্য।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
স্মৃতি রোমন্থন। ভালো লাগলো। চলুক।
আমরাও অপেক্ষায়।
বন্যা লিপি
আপনার জন্য শুভেচ্ছা ভালবাসা। 💚💚
এস.জেড বাবু
গান শুনতে শুনতে বই পড়া
এটা আমার চরম অভ্যাস/ বদঅভ্যাস যে যেমন চোখে দেখেন।
তবে আমি বই পড়ার সময় “দুনিয়ার যত কোলাহল থেকে মুক্ত থাকতে চাই” তাই প্রিয় কোন গানের সুরে নিজেকে আবদ্ধ রাখি এবং ঠান্ডা মাথায় বই পড়ি।
মসৃন বর্ণনা আর সহজ সুন্দর শব্দে সাজানো লিখাটা পড়তে নেশা লেগে গেল-
এখন যে পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকতে হবে-
দেখতে চাই সত্যিই কবিতা লিখতে পারে কি না।
যদি পারে, তবে কেমন করে কবে থেকে লিখতে পারে।
শুভকামনা রইল,
বন্যা লিপি
ঠিক বলেছেন, কি পড়া,কি লেখা সাউন্ডস্লিপ না হলে কোনোটাই সম্ভব না।এই পর্বের সাথেই আগের পর্বগুলোর লিঙ্ক জুড়ে দেয়া হয়েছে। নেশা লাগলো বলে কৃতার্থ হলেম। অতি শিঘ্রই পরের পর্ব নিয়ে হাজির হবো আবার।
বন্যা লিপি
এস জেড বাবু ভাই, আপনার প্রতি শুভ কামনা।
এস.জেড বাবু
পর্বগুলো পড়ে নিবো, ধন্যবাদ-
আর আপনার জন্য নিরন্তর শুভকামনা।