
প্রিয়তমা,
প্রিয়তমা বলেই ফেলি। কারণ আপন হিসেবে যতটা মন খুলে কথা বলতে পারবো- অন্য কোন কিছু দিয়ে শুরু করলে হয়তো ততটা বলা হবে না।
যাক, জানিনা আমাকে পাঠানো তোমার ছবিটা “ফটোশপ” ঘুরে এসেছে কি না। এমন দুধে আলতা রং আর তুলিতে আঁকা চোখ মানুষের হয় জানা ছিলো না। তোমার প্রেমে পড়তে সময় লাগলেও তোমার চোখের গল্পে আপ্লুত আপাতত।
যদি ছবির মানুষটার নব্বই শতাংশ আমি আমার দৃষ্টির সীমানায় পাই কখনো, তবে ভেবে নিবো আমার চতুর্থ প্রেমে পড়াটা সার্থক ছিলো।
হ্যাঁ, তুমি আমার চতুর্থ গল্প। আর এই চিঠি সে গল্পের সূচনা।
সরি – তুমি করেই বলে যাচ্ছি। সেই যে বললাম, আপন ভেবেই পিছনের তিনটি উপন্যাসের সারাংশ তোমায় বলবো।
প্রথম গল্পটা হাই স্কুল পাশ করেনি। জীবনে প্রথম ভালোবাসি লিখা চিরকুট যার গণিত বইয়ের তৃতীয় পৃষ্ঠায় গুঁজে দিয়েছিলাম, তাঁকে ফেলে অনাকাঙ্খিত ভাবে আমি কলেজের দুয়ারে অন্তরীণ হই।
ইচ্ছে হচ্ছিল, ফেল করার জন্য আবার আমার এস.এস.সি র খাতাগুলি রি-এক্সামিন করাই। সে সুযোগ ছিলো না বলে আমার শহরের কলেজ আর ওর গ্রামের স্কুলের দুরত্বটা মনের মধ্যেও এসে গিয়েছিলো।
এই কুলে আমি আর ঐ কুলে সে-
দ্বিতীয় গল্পের শুরুটা ভার্সিটিতে। ভর্তির দিনেই অফিস কক্ষ থেকে বেড়ুতে গিয়ে যে মেয়েটির সাথে এক্সিডেন্টলী ধাক্কা খাই, সেখানে সেই ধাক্কায় পথে আছড়ে না পড়লেও প্রেমে পড়েছিলাম কলমী লতার গড়নের মেয়েটার। চোখ মেরে মিস্টি করে হেসে হাই বলেছিলাম। সরি বলিনি।
এক সপ্তাহ পরে যে ক্লাশের বেঞ্চে আমি ছাত্র, সে ক্লাশের টিচার্স টেবিলে সেই চিকন গড়নের মেয়েটি মেডাম।
কলি হওয়ার আগে খুঁড়িতেই ঝড়ে পড়ে দ্বিতীয় স্বপ্ন।
পরের সাড়ে তিন বছরের প্রতিটি দেখায় আমার দৃষ্টি আমার সেন্ডেলের ছিড়াফাড়া খুঁজে দেখতো।
শেষ দেখায় ইউরূপে স্পন্সরের কাগজে ক্লাস টিচারের স্বাক্ষরটা নিতে গিয়ে সেই নিজের জুতার দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম- মিস ইউ মেডাম-
আমার বিমানের সাথেই উড়াল দিয়েছিলো সে মিস করার ইচ্ছে।
অতঃপর পাশ্চাত্যের নিয়ন আলোয় বাসন্তী সন্ধ্যায় কফি হাউসের টেবিলগুলিতে চোখ ধাঁধানো সব অপরূপ রূপের মাঝে ইচ্ছে হারিয়ে যায় রংয়ের অতলে। সম বয়সী থেকে নিচে নামতে নামতে অবশেষে পনের বছরের একজন পেয়েছিলাম সিঙ্গেল- অবশ্য ওর লাইনেও ওয়েটিং লিস্টের তিন নম্বরে আমি ছিলাম।
হয়ে যেতো প্রতি সেটারডে তে একবার দেখা। পনেরতম বার্থ-ডে তে প্রথম সেদিন ওর বাড়ির অতিথি হলাম।
বাস ভবনের দেয়াল জুড়ে যেসব ছবি শোভা পাচ্ছিলো তা দেখে আঁতকে উঠে কলিজা। পশ্চিমের সেই অনবদ্য সুন্দরী মেয়েটা ইহুদী ছিলো-
সেদিন চিৎকার করিয়া কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনাই চিৎকার।
সেদিন সত্যি কস্ট পাই-
মনে হতে থাকে পিছনের দু’দুটি গল্প।
খুব মিস করি চৌদ্দ হাজার মাইল দুরে আমার প্রিয়তম “মা” কে।
কল ধরেই তিনি বলেছিলেন বাবা তোকে কল করতাম আমিই। কেমন আছিস বাবু ?
কেমন আছি সে কথা বলতে যাবো এমনিতেই ছোট বোনটা মায়ের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে চিৎকার করে বলে,
ভাইয়ারে …. তোর জন্য বৌ দেখতে গিয়েছিলাম-
কি যে সুন্দর-
তোর মেসেঞ্জারে দিচ্ছি – দেখে নিস-
আর শোন- আমার কিন্তু এই শত্রু ভাবিটা চাই-ই-চাই ।
শত্রু হলে কেমনে হবে ? সময়ের অভাবে জানা হয় নাই।
সেদিন মায়ের সাথে আর আমার হেরে যাওয়ার তৃতীয় গল্পটা বলা হয়নি।
কল রেখে ইমুতে তোমায় দেখি-
ভালো লেগে যায়- কাজল টানা চোখ-
ভালো লেগে যায় আমার সংস্কৃতির ঢং –
তারচে বেশি ভয় লাগে- ভালো লাগার ভয়।
আচ্ছা !
কতদিন থাকবে গো তুমি ?
তুমি কি আমার মায়ের কাছে বলা চতুর্থ গল্পের পাখি হবে ?
অপেক্ষায় থাকবে যতদিন ফিরতি ফ্লাইট না ধরি !?
ইতি
তোমার সম্ভাব্য হবু
২০টি মন্তব্য
কামাল উদ্দিন
“অবশ্য ওর লাইনেও ওয়েটিং লিস্টের তিন নম্বরে আমি ছিলাম”
পুরো গল্পের এখানটাতেই আমি সব থেকে বেশী ভাইটামিন পেয়েছি, সেন্ডেলের ছিড়াফাড়া খোজাটাও কম যায় না…………চমৎকার লেখনির জন্য স্যালুট।
এস.জেড বাবু
জ্বী ভাই-
অনেক ধন্যবাদ এবং শুভকামনা রইলো
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যও রইল অনেক অনেক শুভকামনা
ছাইরাছ হেলাল
চিঠির গল্পের এই ফ্লাইট জীবনেও ধরা হবে না।
পাক্কা চিঠি লিখিয়ে কে পেলাম।
যে রাঁধে, সে শুধুই রাঁধে না, অন্য কাজ-কাম ও করে বুঝতে পারি।
এস.জেড বাবু
হায় আল্লাহ
কয় কি ?
একটা ফ্লাইট তো লাগবেই লাগবে
নয়তো ওয়েটিং লিষ্টের একটা বিহিত হওয়া লাগবে
ধন্যবাদ ভাই
তৌহিদ
বারেব্বাহ! দারুণ আবেগী আহবানের চিঠি পড়লাম। তবে তিন নাম্বারের পরেরজনের আগমন স্বার্থক হোক এটাই কাম্য।
ফ্লাইট কিছুতেই মিস করা যাবেনা কিন্তু!! ☺
এস.জেড বাবু
দেখা যাক সময় মত টিকিট মিলে কি না।
এরপর চতুর্থ পর্বের উপসংহার দেখতে হবে।
শুভেচ্ছা ভাইজান
জিসান শা ইকরাম
প্রথম থেকে তৃতীয়া তো দেখছি করুন ইতিহাস,
আহারে মন, প্রেমিকার দেখা পেলেও প্রেমের দেখা হলো না।
চতুর্থতে এসে থামুক সব 🙂
ভাল লেগেছে চিঠি,
শুভ কামনা।
এস.জেড বাবু
সবই করুন ভাইজান
কেউ থেমে থাকে না
ওই যে
নগদ যা পাও হাত পেতে নাও
বাকির খাতায় শূণ্য থাক
শুভেচ্ছা ভাই
সুরাইয়া পারভিন
আরে বাপরে।
হা হা হা হা
করুণ হলেও দারুণ লেগেছে।
চতুর্থীতে এসে থেমে প্রেমের পর্ব থেকে যাক।
শুভ কামনা রইলো ভাইয়া
এস.জেড বাবু
যদি ল্যান্ডিং এর আগ পর্যন্ত কেউ থেমে থাকে
হাহাহা
ধন্যবাদ আপু
রেজিনা আহমেদ
সুন্দর লেখনি,, ভালোবাসা ও শুভকামনা রইল
এস.জেড বাবু
অনেক ধন্যবাদ আপু
আপনাকে সোনেলায় পেয়ে ভাল লাগছে।
ভিন্ন ধারার গল্প পড়তে পাবো আশা করছি।
ভাল থাকবেন।
রেজিনা আহমেদ
আমারোও ভীষণ ভালো লাগছে,,নুতন করে লেখার উৎসাহ পেয়েছি, যেটা কর্মব্যস্ততায় প্রায় হারিয়েই গেছিলো
সাবিনা ইয়াসমিন
একবার না পারিলে দেখো শতবার, ভাগ্যিস চিঠি লেখককে শতবার ট্রাই করতে হয়নি, মনে হচ্ছে ৪র্থ বারেরটাই ফাইনাল হবে। তিনবারের তিনটা আসলে প্রেম ছিলো না, ওগুলো ফাঁরা ( বিপদ) গেছে। এবার মা, বোন পছন্দ করেছে তাই ব্যার্থ হওয়ার চাঞ্চ কম।
প্রিয়তমা কি রিপ্লাই দিলো আমাদের দেখাবেন বাবু ভাই। এক সাইডের চিঠি পড়ে কি মন ভরে! 😜
শুভ কামনা 🌹🌹
এস.জেড বাবু
আগে জানলে তাবিজ লইতাম-
তিন তিনডা ফাড়া চাট্টিখানি কথা
অপেক্ষায় আছি- রিপ্লাই পেলে জনসম্মুখে ওপেন কইরা দিমুনে-
যাই বলেন- চার নম্বরের স্বাক্ষি তো পুরা জাতি।
শুভেচ্ছা আপু
সঞ্জয় মালাকার
বাবু ভাই মন করুণ হলেও দারুণ লেগেছে।
চতুর্থীতে এসে থেমে প্রেমের পর্ব থেকে যাক।
শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
এস.জেড বাবু
এত দুরে প্রপোজ টিকে ?
দেখা যাক যদি টিকে তো চতুর্থ তে থেমে যাবে গল্প- পড়ে বিয়ের গেইটের কাহিনি শোনাবো-
ধন্যবাদ ভাই
শাহরিন
আহারে এই চিঠি পড়ে হবু বরকে বাতিল বর না বানালেই আমরা খুশি। অনেক সুন্দর চিঠি।
এস.জেড বাবু
দোয়া কইরেন ওর লাইগ্গা-
না জানি পাঁচ নম্বরে কি অপেক্ষা করতাছে-
অনেক শুভেচ্ছা রইলো আপু
শুভ সকাল