একটা সময় আমি পরীক্ষা দিতাম, শিক্ষকরা গার্ড দিতেন, এখন আমি গার্ড দেই, ছাত্ররা পরীক্ষা দেয়। আমি তাদের খাতা সই করি, নীরবে পরীক্ষা দিতে বলি। সবার দিকে নজর রাখি যেন হলে কোন বিশৃঙ্খলা না ঘটে। তারা হলের দরজায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে, “ম্যাডাম আসি?…ম্যাডাম আসবো?” এসবই একসময় আমি করেছি,আমরা করেছি…
আমার কাছে মনে হয় জীবনটা একটা বৃত্তের মত। সবকিছুই ঘুরেফিরে আসে, ফের ঘুরতে থাকে। আজ আপনার পৌষ মাস তো অপেক্ষায় আছে মাঘ মাস। আজ মেঘ তো কাল রোদ্দুর, ঝলমলে আকাশ। আলো ছায়ার এই খেলায় কখন যে জীবন ফুরিয়ে যায়, টেরই পাই না।
ছোট্ট এই জীবনে কত কথা, কত ব্যাথা, কত গল্প আর হাসি কান্না! আমার মনে হয় প্রতিটা মানুষের জীবন একেকটা জীবন্ত উপন্যাস। এই উপন্যাসের ভবিষ্যত মানুষটি নিজেও জানে না। গল্পের চরিত্ররা জানে না, কী হতে চলেছে। জানেন শুধু লেখক, তিনি নিরলসভাবে লিখে যান আপন খেয়ালে।
একটা জীবনে অনেক কিছু পাওয়া হলেও একটা না পাওয়া আপনাকে আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়। কিন্তু ঐ একটা জিনিস আমাদের অধরাই থাকে। প্রতিনিয়ত ঐ সুখটা ছাড়াই আমরা সুখে আছি এমন অভিনয় করে যেতে হয়। ভেতরের দীর্ঘশ্বাস নিজেকেও জানতে দেয়া হয় না, জেনে চুপ থাকে কেবল ভেতরেরও ভেতরে খুব গভীরে আরেকটা সত্তা। সেই সত্তারও একটা ধারন ক্ষমতা আছে। যখন তা আর নিতে পারেনা , তখন বাড়তিটুকু পাঠিয়ে দেয় “আশা” নামক আরেক সত্তার কাছে। আশা কেবল আশায় আশায় রাখে…মন নিজেও জানে এই আশা সত্যি হবার নয়। তবুও মানুষ বাঁচে, আশায় বুক বাঁধে…
জীবন সীমিত, কি হবে মানুষে মানুষে অন্তর্দ্বন্দ রেখে? উঁহু, আমি বলি ভিন্ন কথা! জীবন সীমিত। তাই যা কিছু তোমায় আঘাত করে তা কেটে বাদ দাও আর আনন্দে বাঁচো। কার জন্যে করবে বিলাপ? কে তোমায় শোনাবে আশার বানী? নিজের সুখী হবার মন্ত্র অন্যের হাতে নেই, আছে নিজের ভেতরে, একান্তে, গহীনে, খুব গভীরে …
গ্রহনে চাঁদ, সূয্যি ঢাকা পরলেও আবার গ্রহণ শেষ হলে আগের মতই দীপ্তি ছড়ায়। গ্রহণ যেমন সূর্য বা চাঁদের আলো নেভাতে পারে না, তেমনি হাতে গুনা কতিপয় লোকে সত্যিকার অর্থে কারো ক্ষতি করতে পারে না। বরং তারা ক্ষতি করতে গিয়ে আরও উপকার করে বসে নিজের অজান্তে!
২৬টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভিন
জীবন সীমিত। তাই যা কিছু তোমায় আঘাত করে তা কেটে বাদ দাও আর আনন্দে বাঁচো। কার জন্যে করবে বিলাপ? কে তোমায় শোনাবে আশার বানী? নিজের সুখী হবার মন্ত্র অন্যের হাতে নেই, আছে নিজের ভেতরে, একান্তে, গহীনে, খুব গভীরে …একদম মনের
কথা লিখেছেন আপু।
গ্রহনে চাঁদ, সূয্যি ঢাকা পরলেও আবার গ্রহণ শেষ হলে আগের মতই দীপ্তি ছড়ায়। গ্রহণ যেমন সূর্য বা চাঁদের আলো নেভাতে পারে না, তেমনি হাতে গুনা কতিপয় লোকে সত্যিকার অর্থে কারো ক্ষতি করতে পারে না।
দুর্দান্ত উপস্থাপন
নীরা সাদীয়া
আপনাদের ভালো লাগাই আমার স্বার্থকতা । অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো। ভালো থাকবেন সবসময়।
জিসান শা ইকরাম
তুমি শিক্ষক হয়ে তোমার ভাবনা চিন্তা অনেক পরিপক্ক হয়েছে। এতদিন যে নীরা সাদীয়া কে জানতাম, এই লেখা আমার জানাকে পালটে দিয়েছে।
প্রতিটি কথা যেন একটি সত্যি জীবন দর্শন। জীবনটা আসলেই একটি বৃত্ত।
যা কিছু আঘাত করে আমাকে তা কেটে বাদ দেই আমি।
তুমি তো জানো যে হাতে গোনা কতিপয় লোক আমায় ক্ষতি করতে গিয়ে আমার আসলে উপকারই করে গিয়েছে।
তোমার সেরা লেখার মধ্যে এই লেখাটি স্থান করে নিয়েছে।
নিয়মিত লেখো।
শুভ কামনা।
নীরা সাদীয়া
তাই নাকি? শিক্ষক হয়েছি ৩ মাসের মত হলো। তবে এটাই আমার কাঙ্খিত পেশা ছিলো।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে প্রীত হলাম ।
আপনাদের ভালো লাগাই আমার স্বার্থকতা । অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো। ভালো থাকবেন সবসময়।
কামাল উদ্দিন
“নিজের সুখী হবার মন্ত্র অন্যের হাতে নেই, আছে নিজের ভেতরে, একান্তে, গহীনে, খুব গভীরে”
এটা আমি খুব মানি, সুখ দুখ নিজের অন্তরে, ইচ্ছে থাকলেই সুখে কিংবা দুঃখে থাকা যায়, অবশ্য ব্যতিক্রমও আছ……….শুভ কামনা সব সময়।
নীরা সাদীয়া
একদম তাই। সুখটা আপেক্ষিক।
আপনাদের ভালো লাগাই আমার স্বার্থকতা । অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো। ভালো থাকবেন সবসময়।
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যও রইল অনেক অনেক শুভ কামনা।
তৌহিদ
লেখাটি আপনার ওয়ালেই পড়েছিলাম ফেসবুকে। আবর্তমান সময়ে অনেক কিছুই ঘটে যেসব আপাতদৃষ্টিতে পীড়াদায়ক হলেও একসময় সে ব্যথা ভুলে যাওয়াই শ্রেয়। সার্কেল অফ লাইফ কিন্তু সবার জন্যেই প্রযোজ্য।
ভালো লিখেছেন।
নীরা সাদীয়া
ভুলে যাওয়া কি এতই সোজা?৷ তবুও ভুলে থাকতে হয়।
আপনাদের ভালো লাগাই আমার স্বার্থকতা । অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো। ভালো থাকবেন সবসময়।
মোঃ মজিবর রহমান
দারুন উপলদ্ধি। দারুন প্রকাশ। এটাই হইত মানুষের বাস্তব। হ্যা নিজের হাতেই সব। নিজের মতই করা উচুত।
নীরা সাদীয়া
নিজের হাতেই সব…
আপনাদের ভালো লাগাই আমার স্বার্থকতা । অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো। ভালো থাকবেন সবসময়।
মোঃ মজিবর রহমান
ভাল থাকুন
আকবর হোসেন রবিন
সময় খুব কম। এই কম সময়ে কষ্ট পেয়ে নষ্ট করার মতো সময় কই!
আপনার অনুভূতি সুন্দর।
নীরা সাদীয়া
সত্যি বলেছেন। এত সময় কই?
আপনাদের ভালো লাগাই আমার স্বার্থকতা । অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো। ভালো থাকবেন সবসময়।
সাবিনা ইয়াসমিন
” ছোট্ট এই জীবনে কত কথা, কত ব্যাথা, কত গল্প আর হাসি কান্না! আমার মনে হয় প্রতিটা মানুষের জীবন একেকটা জীবন্ত উপন্যাস। এই উপন্যাসের ভবিষ্যত মানুষটি নিজেও জানে না। গল্পের চরিত্ররা জানে না, কী হতে চলেছে। জানেন শুধু লেখক, তিনি নিরলসভাবে লিখে যান আপন খেয়ালে।”
চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করলে বাস্তবতাটা। এই কথাগুলো আমরা সবাই কম বেশি কোন না কোন সময় ভাবি, বুঝি। তারপরেও ভুলে যাই জীবন উপন্যাস যিনি আগে থেকেই লিখে রাখেন, সেই লেখককে। নিজেই বানাতে চাই নিজ গল্প। কেউ কেউ আবার নিজেরটা বাদ দিয়ে অন্যদেরটাও ইচ্ছেমত লিখতে চায়। সত্য-মিথ্যার বানোয়াট গল্পে অন্যের জীবন জর্জরিত করতেও তাদের বাধেনা। কিন্তু দিন শেষে সত্যি গল্পটি সবাই পড়তে পায়, যেমন করে অন্ধকার রাত্রি ফুরিয়ে যায় দিনের আলোয়।
লেখাটি ভিষন ভালো লেগেছে নীরা,
আরো ভালো লেগেছে তুমি এখন মানুষ গড়ার কারিগর হয়েছো জেনে।
খুব ভালো থাকো, শুভ কামনা অবিরত ❤❤
নীরা সাদীয়া
গল্পের ভবিষ্যৎ জানি না বলেই নিজের মত করে বানাতে চাই।
আপনাদের ভালো লাগাই আমার স্বার্থকতা । অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো। ভালো থাকবেন সবসময়।
নীরা সাদীয়া
একটা কলেজে আছি, গাধা পিটিয়ে মানুষ বানানোর চেষ্টা চলছে। দোয়া রাখবেন এই বোনটার জন্য।
সঞ্জয় মালাকার
দিদি সুনচ উপলব্ধি,
জীবন সীমিত, কি হবে মানুষে মানুষে অন্তর্দ্বন্দ রেখে? উঁহু, আমি বলি ভিন্ন কথা! জীবন সীমিত। তাই যা কিছু তোমায় আঘাত করে তা কেটে বাদ দাও আর আনন্দে বাঁচো। কার জন্যে করবে বিলাপ? কে তোমায় শোনাবে আশার বানী? নিজের সুখী হবার মন্ত্র অন্যের হাতে নেই, আছে নিজের ভেতরে, একান্তে, গহীনে, খুব গভীরে …
গ্রহনে চাঁদ, সূয্যি ঢাকা পরলেও আবার গ্রহণ শেষ হলে আগের মতই দীপ্তি ছড়ায়। গ্রহণ যেমন সূর্য বা চাঁদের আলো নেভাতে পারে না, তেমনি হাতে গুনা কতিপয় লোকে সত্যিকার অর্থে কারো ক্ষতি করতে পারে না। বরং তারা ক্ষতি করতে গিয়ে আরও উপকার করে বসে নিজের অজান্তে!
।কি দারচ উপস্থাপন।
সঞ্জয় মালাকার
দিদি সুন্দর উপলব্ধি।
নীরা সাদীয়া
আপনাদের ভালো লাগাই আমার স্বার্থকতা । অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো। ভালো থাকবেন সবসময়।
সঞ্জয় মালাকার
শুভেচ্ছা নিবেন।
এস.জেড বাবু
আমার কাছে মনে হয় জীবনটা একটা বৃত্তের মত। সবকিছুই ঘুরেফিরে আসে, ফের ঘুরতে থাকে। আজ আপনার পৌষ মাস তো অপেক্ষায় আছে মাঘ মাস। আজ মেঘ তো কাল রোদ্দুর, ঝলমলে আকাশ। আলো ছায়ার এই খেলায় কখন যে জীবন ফুরিয়ে যায়, টেরই পাই না।
সহজ সুন্দর ভাষায় এই অংশটা বেশ লেগেছে। এটাই চরম সত্যি।
শুভেচ্ছা আপনাকে।
আর হ্যাঁ- কেউ কেউ ক্ষতি করতে যেয়ে, অজান্তে উপকার করে-
একমত হলাম। ভাল লেগেছে।
নীরা সাদীয়া
একমত হেয়েছেন জেনে প্রীত হলাম।
আপনাদের ভালো লাগাই আমার স্বার্থকতা । অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো। ভালো থাকবেন সবসময়।
এস.জেড বাবু
চমৎকার লিখেছেন- জীবন নিয়ে সূত্র আর তথ্য আমি মনে রাখি- চেষ্টা করি।
আপনার লিখায় তেমন কিছু আছে।
দোয়া ও শুভ কামনা নিরন্তর
ছাইরাছ হেলাল
অনেক অনেক পরিপক্ক ভাবনা, বৃত্ত-ই জীবন, জীবন-ই বৃত্ত।
আর আপনার এই আশাবাদিতা ছড়িয়ে যাক পথের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত অব্দি, তা কামনা করছি।
সবার জীবনে সবার মনে।
লেখাটির জন্য বিশেষ বিশেষ ধন্যবাদ।
নীরা সাদীয়া
আপনাদের ভালো লাগাই আমার স্বার্থকতা । অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো। ভালো থাকবেন সবসময়।