
সিমান্তের ওপাড়ে সুউচ্চ মেঘালয়ের পাহাড়। সেই পাহাড় থেকে উৎপত্তি ছোট্ট নদী যাদুকাটা। যাদুকাটা নদীর নামটার মধ্যেই রয়েছে একটা রোমাঞ্চ ভাব। আর এই নামের পেছনে রয়েছে একটা মর্মান্তিক মিথ। এক পাশে লাউরের গড়, তারপর ধুঁধুঁ বালুচর। আর বালুচরের পরের যাদুকাটা নদী পেরুলেই বারিক টিলা, ওখান থেকে আরো কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলে পড়বে টেকের ঘাট, যার নতুন নাম নিলাদ্রি। মূলত টেকের ঘাট বা নিলাদ্রি থেকেই টাঙ্গুয়ার হাওড়ের শুরু বলা যেতে পারে। এই রুটে অনেক বার গিয়েছি যাদুকাটা, টাঙ্গুয়ার রূপ দেখতে। কিন্তু যাদুকাটা নদীর বালিয়াড়ির পাড়েই দাঁড়িয়ে আছে বিশাল এক আগুনে সৌন্দর্য্য তার খবর জানাজানি হলো মাত্র বছর তিনেক ধরে।
গত বছর যখন যাবো যাবো করছিলাম তখনই ঝড় বৃষ্টি হলো, বৃষ্টির পর আমাদের ভ্রমণ বাংলাদেশের কয়েকজন ওখানে গিয়ে যখন দুখঃ গাথা নিয়ে ফেরৎ এলো তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম পরের বার যাবো। তাই এবার ২৩ ফেব্রুয়ারী ঢুকে গেলাম আমার কাঙখিত শিমুল বনে। তবে আমার মনে হয়েছে ওখানের ষোল আনা রূপ দেখতে হলে আরো ৮/১০ দিন আগে গেলেই ভালো হতো। তবু যেটুকু পেলাম তার থেকে কিছুটা আজকের পোষ্টে শেয়ার করলাম।
(২) সুনামগঞ্জের সুরমার উপর নির্মিত নতুন ব্রীজ পার হয়ে ভাড়ার মোটর সাইকেল নিয়ে এমন রাস্তায় ছুটে যেটে যেতে হয় লাউড়ের গড়। যাওয়ার পথে রাস্তার দুই পাশে তরমুজ সহ অন্যান্য শস্য ক্ষেত দেখে মনটা ভরে ভালো হয়ে যাবে নিঃসন্দেহে।
(৩) লাউড়ের গড় থেকে বিশাল বালিয়াড়ি পার হয়ে বাইক নিয়ে নৌকা দিয়ে পার হতে হবে চমৎকার এই যাদুকাটা নদী।
(৪) যাদুকাটা পাড় হয়ে এমন মেটো পথ ধরে এগিয়ে যেতে হবে ২ থেকে আড়াই কিলোমিটারের মতো। এ পথে হেটে যাওয়ার মজাটাই সব থেকে বেশী। কিংবা যাদুকাটার বালিয়াড়ি ধরেও হেটে যাওয়া যায় এই শিমুল বনে।
(৫) এই তো পৌছে গেলাম শিমুল বনে।
(৬) এই শিমুল ফুলদের সাথে দেখা করার দুই বছরের অপেক্ষা ঘুচল আমার, আমি তৃপ্ত।
(৭/৮) শিশুরা জ্বালানি কিংবা ছাগলের খাবার হিসাবে ব্যবহার করার জন্য কুড়িয়ে নিচ্ছে শিমুল ফুল।
(৯) ওদের আকর্ষণে ভোমরাও ইতিউতি ছুটে আসছে দেখলাম।
(১০) আপন মনে শিমুল বনে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটা ফিঙে পাখি।
(১১) ঝড়ে পড়া ফুল খাওয়ার লোভে ছুটে এসেছে বেড়ার পাল।
(১২) নিজেরাও কুড়ালাম কিছু ফুল।
(১৩) ঝুড়ি ভর্তি ফুল নিয়ে যাচ্ছে কেউ কেউ।
(১৪) মোহন চুড়া পাখিটা খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে বাগানের মাটিতে।
(১৫/১৬) শিমুল বনের রানীকে আমাদের খুব মনে ধরেছে।
(১৭/১৮) ফেরার তাড়া না থাকলে এখান থেকে কি সহজে কেউ বের হতে চায়?
(১৯) কাজল পাখিটা কিছুতেই ক্যামেরায় ধরা দিতে চাইছিল না, ওর পিছনে আমাকে বেশ কিছুটা সময় ছুটতে হয়েছিল।
(২০) সব শেষে আমার এই ছবিটা দেওয়ার উদ্দেেশ্য এই নয় যে, আমি প্রমাণ করতে চেয়েছি আমিও শিমুল বনে গিয়েছি। আসলে আমার সান গ্লাসটা শিমুল বনে হারিয়ে এসেছি, যদি কোন স্বহৃদয় ব্যক্ত………..
২২টি মন্তব্য
হালিম নজরুল
চমৎকার বর্ণনা আর ছবি দেখে এখনই চলে যাবার লোভ হচ্ছে।
কামাল উদ্দিন
ভ্রমণ পিপাসু মন যাদের তারা ছুটে যেতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক, আমারও ইচ্ছে করে বারে বারে ছুটে যাই এই সোয়ন্দর্য্য পাণে……শুভ কামনা জানবেন ভাই।
এস.জেড বাবু
যাদুকাটা নদী – আমি আজই পরিচিত হলাম।
আর আপনার চমৎকার সব ছবি আর প্রানবন্ত বর্ণনা দেখে মনে হচ্ছে সত্যিই-
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে বাহিরে দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশির বিন্দু
চমৎকার ভ্রমন কাহিনি।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ বাবু ভাই, যাদুকাটা নদী নিয়ে পরে কোন এক সময় পোষ্ট দেওয়ার ইচ্ছে আছে।
এস.জেড বাবু
অবশ্যই
সময় করে পোষ্ট দিলে আরও কিছু জানা হয়ে যাবে।
ছবিগুলি বেশ চমৎকার ছিলো- শেষেরটা মাশাআল্লাহ।
সুরাইয়া পারভিন
চমৎকার ছবি আর ভ্রমণ কাহিনী পড়তে পড়ত মন হারিয়ে যায়। খুব ইচ্ছে করছে এক ছুটে যাই
কামাল উদ্দিন
এই সামনে আসছে ফাগুনের আগুন রাঙা দিন, ছুটে যেতে পারেন আগামী ফেব্রুয়ারীর ১০ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে……… শুভ কামনা জানবেন আপু।
তবে এই শিমুল বন কিন্তু বর্ষায় হয় অন্য রকম সবুজ, ওটা নিয়েও পোষ্ট দেওয়ার ইচ্ছে আছে আমার।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
ভাবছি আপনার সান গ্লাসটা খুঁজতে না হয় আমিই যাবো।
ছবি ও বর্ণনা অসাধারণ হয়েছে।
সিলেট থেকে গিয়ে দিনে দিনে চলে আসা যায়?
কামাল উদ্দিন
যাওয়া সম্ভব, রাতের বাসে সুনামগঞ্জে চলে যাবেন, সারাদিন ওদিকটায় ঘুরে আবার রাতের বাসে ফেরৎ আসা তো যায়ই…….ধন্যবাদ ভাই, ভালো থাকুন, সব সময়।
সঞ্জয় মালাকার
দাদা
ছবি ও বর্ণনা অসাধারণ হয়েছে। আর ভ্রমণ কাহিনী পড়তে পড়তে হারিয়েছি নিজেকে।
কামাল উদ্দিন
এমন প্রকৃতির সৌন্দর্য্যে হারাতে কার না ইচ্ছে হয় দাদা।
সঞ্জয় মালাকার
হুম ঠিক বলেছেন দাদা, ধন্যবাদ আপনাকে, শুভেচ্ছা জানাবে।
ছাইরাছ হেলাল
দারুন সব ছবি, এই শিমুল বনের কত যে ছবি দেখেছি,
তবুও দেখি আর দেখি।
কামাল উদ্দিন
সৌন্দর্য্য কখনো পুরোনো হয়না, আর প্রকৃতি প্রেমিকরা এর প্রেমে পরবে এটাই তো স্বাভাবিক হেলাল ভাই।
তৌহিদ
সানগ্লাসের জন্য হাড়ানো বিজ্ঞপ্তি দেব নাকি বলেন? ছবিগুলি কিন্তু জোস!!
এখানে যাবার ইচ্ছে বহুদিনের। আপনার লেখা পড়ে অনেক কিছু দেখা হলো ভাই। ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য।
কামাল উদ্দিন
সান গ্লাসটা হারিয়ে বড় কষ্টে আছি ভাই, যদি একটা বিজ্ঞপ্তি দিতেন কম খারাপ হতো না তৌহিদ ভাই 😀
তৌহিদ
কি বলেন!! কম খারাপ!! 😜😜
কামাল উদ্দিন
হে হে হে, এই তো বুঝতে পারছেন ভাই 😉
জিসান শা ইকরাম
শিমুল বনের ছবি দেখে প্রাণ জুড়িয়ে গেলো।
ভালো হয়েছে ছবিব্লগ।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ভাইজান। (কানে কানে একটা কথা বলিআমি তো লেখার বেলায় ঠন ঠন, তাইতো ছবি দিয়েই ব্লগিংটা সেরে নেই ইকরাম ভাই।)
ব্লগ সঞ্চালক
প্রিয় ব্লগার,
সোনেলার সাথে আছেন বলে সোনেলা ব্লগ টীম এর পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ।
আপনার লেখা সোনেলার লেখার ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করবে।
শুভ ব্লগিং।
কামাল উদ্দিন
কর্তৃপক্ষের শুভেচ্ছা জানানোটা অবশ্যই আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাবে, ছবি দিতে পারবো জেনে তো উৎসাহই হারিয়ে ফেলেছিলাম……….সোনেলায় আছি, সব সময় থাকবো, কথা দিলাম।