█ ▓ এনাম স্যার বড় ভাল লোক ছিলেন ▓ █
▣▣▣
সে সময়ের কথা বলছি যখন মাধ্যমিক লেবেলে পড়তাম। গণিতের স্যারকে দেয়া কোর্সফি থেকে ডিমপরোটার টাকাটা আস্তে করে বের করে নিতাম।
কলেজে ইন্টার লেবেলে মফস্বলের সরকারী কলেজে পড়তাম। বিজ্ঞান বিষয়ের ছাত্র হওয়ার কল্যানে প্রাইভেট বা কোচিং করতেই হতো।
আমরা গ্রুপ করে করে স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তাম। পড়ার জন্য স্যারের বাসায় যেতে হত। এক একটি সাবজেক্ট এর উপর কন্টাক্ট করা থাকতো।
অর্থাৎ এক সাবজেক্ট এর প্রথম বর্ষের সম্পূর্ন সিলেবাস শেষ করা জন প্রতি এতো টাকা এভাবে।
এক গ্রুপে ৫/৬ জন করে পড়তাম।
আমাদের কলেজে ম্যাথের স্যার ছিলেন এনাম স্যার। সাদা সিদা মানুষ। খুবই ভাল, অমায়িক এবং সদা হাস্যময় চেহারা নিয়ে থাকতেন। অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় অংক বুঝাতেন, না বুঝলে বার বার বুঝাতেন।
আমাদের গ্রুপটা খুবই দুষ্টু ছাত্রদের নিয়ে গঠিত ছিল। বর্তমানে এক এক জন্য এক এক দিকে কর্মরত। কলিম উল্লাহ এবং খসরো বর্তমানে সৌদি প্রবাসী। মুহসিন সোনালী ব্যাংকে কর্মরত। হারুন বর্তমানে শিক্ষক। এস এ বাহাদুর এডভোকেট, জজ কোর্টে প্রেকটিস করেন। আমি নাখান্দা একজন অখ্যাত ব্লগার, সমাজসেবক এবং ছোটখাটো ব্যবসায়ী।
আমাদের মজাটা ছিল কোর্সের শেষের দিন।
অর্থাৎ সাবজেক্ট শেষে স্যারকে যেদিন কোর্সফি দেব সেদিন আমাদের অনেক আনন্দ। যেন ঈদের দিন।
কোর্স শেষের দুয়েকদিন আগে থেকেই যেন সাজ সাজ রব আমাদের মনের মধ্যে ঢংকা বাজাতো। স্যারের টাকা মেরে আমরা যেন হিমালয় জয় করব! কারণ ঐ দিন ডিম পরোটা খাওয়া হবে, সাথে চা।
স্যারকে দেয়া গ্রুপ কোর্সের টাকা সব মিলে ২৪০০/২৫০০ এরকম হত।
আমরা সব টাকা প্রথমে একজনে নিতাম। তারপর ছয় জনের ডিম পরোটা এবং চায়ের জন্য কত টাকা লাগবে তা বড় বড় শব্দ করে স্যারের সামনে বসে হিসাব করতাম। অর্থাৎ স্যার শোনে মত করে হিসাব করতাম।
এই যেমন- স্যার শোনে মত করে বলতাম,
ছয়জনের ছয়টি ডিম পরোটা ৬০ টাকা,
আর ছয়টি চা ২ টাকা করে ১২ টাকা, মোট ৭২ টাকা।
স্যারকে হালকা করে বলতাম, স্যার পুরো টাকাটা নিইনি, ৭০ টাকা নিয়েছি। আফসোস করে বলতাম, ইস! দেখছি ২ টাকা পকেট থেকে ভর্তুকি যাবে!
স্যার শুধু হাসতেন আর বলতেন তোমরা বেশী দুষ্টু। স্যার কোনদিন টাকার দিকে চাইতেন না। না দেখেই পকেটে রেখে দিতেন।
অনেক সময় পরদিন এসে বলতাম। স্যার সব বুঝতেন। মাঝে মাঝে স্যার নিজেই আমাদের নাস্তা এনে খাওয়াতেন।
অনেক ভাল ছিলেন আমাদের এনাম স্যার।
ভাল ছিলেন মানে এখন বেঁচে নেই তা নয়। তিনি এখনও দিব্যি আছেন।
মফস্বল থেকে এসে চট্টগ্রাম কলেজে বেশ কয়েক বছর ছিলেন। এখন কোন কলেজে আছেন জানিনা তবে স্যারের বাসা চট্টগ্রাম কলেজের আশেপাশেই আছে যতদুর জানি। খুব সম্ভব বর্তমানে রিটায়ার্ড।
স্যারের বাড়ি হচ্ছে কক্সবাজার জেলার চকরিয়ায় যেখানে ঐতিহাসিক ঘৌড়দৌড় হয়। এলাকার নাম কাকারা।
আমরা যখন পড়তাম তখনও স্যার বিয়ে করেননি। স্যার একটু ভারী বয়সে বিয়ে করেছিলেন।
চকবাজার এলাকায় থাকার সুবাধে স্যারের সাথে আমার মাঝে মাঝেই দেখা হয়। দেখা হলেই হাসিমুখে কৌশলাদী জিঙ্গেস করেন।
এনাম স্যার হচ্ছেন একজন সত্যি কারের মাটির মানুষ। আদর্শ শিক্ষক।
ছাত্র জীবনের সেই দিনগুলো আজো আমায় মাঝে সাঝে আনমনা করে দেয়। আমি হারিয়ে যাই অতীতের স্মৃতির কোন এক পুরনো গলিতে….।
……………..
১৫টি মন্তব্য
সঞ্জয় মালাকার
আদর্শ শিক্ষক।
সত্যি দাদা স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা অতুলনীয়,
পড়তে পড়তে আমি নিজেই হারিয়ে গেলাম –
অতীতের স্মৃতির কোন এক পুরনো গলিতে।
স্যারের প্রতী রইলো অজস্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর ও উৎসাহমুলক মন্তব্যের জন্য।
শুভকামনা অহর্নিশ।
সঞ্জয় মালাকার
শুভেচ্ছা দাদা অফুরন্ত।
এস.জেড বাবু
সকাল থেকে জার্নি করছি। থেমে থেমে এফ বি আর সোনেলায় সময় যাচ্ছে। আপনার গল্পে আজকের দিনটা দারুন কেটে যাবে।
চলমান সেঞ্চুরীতে এমন শিক্ষক আর হবে কি না সন্দেহ।
শ্রদ্ধা জেগে উঠলো এনাম স্যারের জন্য, তিনি দীর্ঘজীবন লাভ করুন। আপনার বন্ধুদের জন্য শুভকামনা।
আপনার জন্য শুভেচ্ছা।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
অনেক সুন্দর উৎসাহমুলক মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
আপনার জন্য শুভ কামনা সবসময়। ভালো থাকবেন।
এত জার্নি করে কোথায় যাচ্ছেন?
এস.জেড বাবু
সরাসরি এয়ারপোর্ট- এবং এখন ফিরছি
একজন বন্ধু চলে যাচ্ছেন, বিদায় দিয়ে এলাম।
ধন্যবাদ বাহার ভাই
সুরাইয়া পারভিন
স্মৃতি মুছে ফেলা যায় না কখনো।আর এমন চমৎকার স্মৃতি তো নয়ই
যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক স্যার
চাটিগাঁ থেকে বাহার
স্যার ভাল থাকুক আমিও সেটাই কামনা করি।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
এমন স্যার এখন বিরলপ্রজ।
আপনি তো বেশ দুষ্ট দুষ্ট ভাবে কাটিয়েছেন সে বেলা।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
আসলে আমার বন্ধুরা দুষ্ট ছিল। দলে একজন ভাল থাকে না? আমি তাই ছিলাম। তবে নিজে না করলেও তাদের হাঁলকা দুষ্টুমিগুলোকে সমর্থন করতাম।
আমি ছিলাম গম্ভীর রাশভারী টাইপের। কাতুকুতু দিলে হাসতাম না।
হালিম নজরুল
“কোর্স শেষের দুয়েকদিন আগে থেকেই যেন সাজ সাজ রব আমাদের মনের মধ্যে ঢংকা বাজাতো। স্যারের টাকা মেরে আমরা যেন হিমালয় জয় করব! কারণ ঐ দিন ডিম পরোটা খাওয়া হবে, সাথে চা।”
————কিছু স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন,যাতে একটু লজ্জায় লাল হলাম।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
হা হা হা,
আপনার লজ্জায় লাল হওয়ার কথা শোনে আমিও হাসলাম।
লিখে ফেলুন!
তৌহিদ
এমন স্যার পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। স্যার ভালো থাকুন এটাই কাম্য। আর হ্যা, এরকম দুষ্টামি আমরাও করতাম মাঝেমধ্যে তবে পিটুনিও খেতে হয়েছে কিন্তু☺
জিসান শা ইকরাম
এমন স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই হয়।
কতটা শ্নেহ করলে উনি এসব মেনে নিতেন তা ভাবতেই আনন্দে মন পরিপুর্ন হয়ে যাচ্ছে।
স্কুল কলেজ জীবনের অনেক কথা মনে পরে গেলো আপনার পোষ্ট পড়ে।
কামাল উদ্দিন
স্যারের বিষয়ে রম্য লিখেছেন ঠিকই, কিন্তু শেষ দিকে মনটা কেমন যেন ভড়াক্রান্ত হয়ে গেল। আমারও এমনই একজন প্রিয় স্যার ছিলেন, যিনি সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যান।