বাবার পাঠানো ইফতারি নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে গালমন্দ, নববধূর আত্মহত্যা!
https://www.ppbd.news/whole-country/106330
ঘটনাটি সিলেটের জৈন্তাপুরে ঘটেছে।
‘প্রথা’ নামের জগদ্দল পাথরের নিচে আর কতো বলি হবে এদেশের নারীরা?
সামাজিক রীতিনীতির নামে চাপানো এসব নিয়মের বেড়াজাল ভাঙতে আর কতোকাল লাগবে?
এই মেয়েটা অল্পবয়সী বলেই হয়তো মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতার কারণে সহ্য করতে পারেনি শ্বশুরবাড়ির গালমন্দ। আর অল্পবয়সী-ই বা বলছি কেনো? এদেশে নারী মাত্রই তো মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতা তাকে আজন্ম গ্রাস করে রাখে। আরোপিত শৃঙ্খলে বাঁধা জীবনের পথে হাঁটতে গিয়ে সদা সতর্কাবস্থা তার মধ্যে এক ধরণের ভয়ের জন্ম দেয়। সময়ের পরিক্রমায় শিক্ষা এবং সচেতনতাবোধ থেকে কেউ কেউ এই ট্রমা কাটিয়ে উঠলেও বেশিরভাগই পারে না।
এরপর আছে ‘প্রথা’ নামের সামাজিক বিধিব্যবস্থা! আরোপিত এই বিধিব্যবস্থাও কেবল নারীর জন্যই। একতরফাভাবে নারীর উপর আরোপিত প্রথাগুলো বিশ্লেষণ করলেই বুঝা যায় নারীকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখার, দমিয়ে রাখার, মানসিকভাবে দুর্বল করে রাখার জন্যই যতো আয়োজন। নিয়মের বেড়াজাল ডিঙিয়ে খুব কম নারীই আছে এসব অপকৌশলকে পাশ কাটিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।
অনেক শিক্ষিত পরিবার আছে যারা গর্বের সাথে এই প্রথাগুলোকে আঁকড়ে থাকেন। কেউ ট্র্যাডিশন হিসেবে, কেউ ফ্যাশন হিসেবে, কেউ আবার অহঙ্কার হিসেবে, কেউবা অধিকার মনে করে আরোপিত এই প্রথাগুলোকে আঁকড়ে থাকেন। আর বলি হয় প্রথার বেড়াজালে বাকরুদ্ধ হয়ে যাওয়া নারীগুলো। মুক্তি পেতে তাই কেউকেউ নিজেকেই শেষ করে দেয়।
এই মেয়েটা যদি একটু সচেতন হতো, একটু বুঝার মনস্তাত্ত্বিক ক্ষমতা অর্জন করতে পারতো তবে হয়তো সে নিজেই বুঝতে পারতো, এটি প্রথা হলেও তা আতিথেয়তার সামাজিক সৌন্দর্যকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠা একটি নিয়ম। এর ব্যত্যয় ঘটালে খুব একটা কিছু আসবে যাবে না। এই বোধটা তার মধ্যে জাগ্রত হলেই সে স্থির থেকে সরব না হলেও নীরব প্রতিবাদটি করতে পারতো।
যে প্রথাটি আতিথেয়তার সৌন্দর্যকে আড়াল করে মনস্তাত্ত্বিক হেনস্থার কারণ হয়ে দাঁড়ায় সে প্রথা পালন না করে বন্ধ করে দেয়ার মতো মনস্তাত্ত্বিক শক্তি আজও এদেশের নারীরা অর্জন করতে পারলো না।
আবার যারা এমনটা পারে সমাজ তাদের দিকে বাঁকা আঙুল তুলে। তুলুক, তাতে কী? আগে তো জীবন, তারপর সমাজ। জানা কথাই তো, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নিজ সুবিধামতো নারী অধিকারের সীমানা নির্ধারণকারী। সে সমাজ, যে সমাজে সমস্ত সুখের আয়োজন একতরফাভাবে পুরুষ পক্ষীয়। আর সমস্ত নিয়েমের বেষ্টনীতে একতরফা নারীই ভুক্তভোগী। (কারো দ্বিমত থাকলে বলতে পারেন) আবার কিছু প্রথা এমনভাবে বেঁধে দেয়া হয়েছে, যেখানে দুই পক্ষে নারীই নারীর মুখোমুখি। একপক্ষে ভিকটিম নিজেই একজন নারী, আরেকপক্ষে শক্তিশালী পুরুষপক্ষীয় নারী। ব্যস! এবার সমস্বরে বলতে থাকুন, ‘নারীই তো নারীর শত্রু’।
যাহোক, ‘প্রথা’ নামের ফালতু বাধ্যবাধকতাকে ‘না’ বলার শক্তি অর্জনের ক্ষমতা কবে এদেশের মেয়েরা ধারণ করতে পারবে কে জানে? শিক্ষার হার বাড়ার পরও যদি মনস্তাত্ত্বিক শক্তি অর্জিত না হয় তবে এর সমাধান কী?
শেকলে আবদ্ধ নারীকে প্রতি মুহূর্তেই শেকল ভাঙার লড়াই করতে হবে। তা বলে মরতে হবে কেনো?
এই যে বিয়ের মাত্র চারমাসের মাথাতেই মেয়েটি মনস্তাত্ত্বিক অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে জীবন থেকে মুক্তি নিতে বাধ্য হলো, কতোটা নাভিশ্বাস উঠেছিলো তার ভাবতে পারেন? এভাবে ৮৫% মেয়েকেই বিয়ের পর প্রথাগত প্যাঁচে পড়ে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়, যেখানে তার হয়তো সরাসরি কোন দায়ই নেই। এই যে নবাগত পরিস্থিতিতে মেয়েটাকে পুতুল (বাকহীন) রুপে কারণেঅকারণে যাচ্ছেতাইভাবে মনস্তাত্ত্বিক টর্চারে অর্ধমৃত করে রাখা হয়, ভেতরে রক্তক্ষরণে যে ক্ষত তার মনে তৈরি হয়, তার কাছে কী আদৌ আশা করা যায় যে আপনার দুর্বল সময়ে সে মলম নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে মালিশ করার জন্য? সম্ভব কি?
একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো, আপনি কী করবেন?
জানি, আজকে যে প্রথাটি নিয়ে লিখলাম, অনেক মেয়েরই এটি পড়ে ভেতরে লুকোনো ঘা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
৬টি মন্তব্য
শাহরিন
অনেক ভাল লাগলো পড়ে আপু। সব মেয়েকে আগে নিজেকে ভালবাসতে শিখতে হবে। ন্যায় অন্যায় কি সেটা আগে বুঝতে পারলে তবেই তো প্রতিবাদ করবে। কিন্তু আমার মেয়েদের সেটা শিখাই না।
শামীম চৌধুরী
ভালো লাগলো। নিজেকে ভালোবাসতে পারলেই অন্যকে ভালোবাসা যায়। আর এটাই চিরন্তন সত্য।
সাবিনা ইয়াসমিন
নারীই তো নারীর শ
সাবিনা ইয়াসমিন
নারীরা মাঝে এমন আচরণ করে তখন মনে হয় নারীরাই নারীদের শত্রু। আমরা নিজেরা যেদিন এই বাধা–প্রথা জয় করতে পারবো সেদিনই হয়তো মুক্ত হতে পারবো।
রুবা আপু, আপনার প্রোফাইল পিকচার এড করুন প্লিজ। প্রোপিক ছাড়া কেমন যেন দেখায়।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা ও ভালোবাসা ❤❤
মোঃ মজিবর রহমান
এই সব নিচু মনের পরিবারের জন্য অনেক সমস্যা আপু। এরা পুরুস্কার নিয়া ভাবে কিন্তু একটা উপহার পেলাম এটাই যথেষ্ট সেটা নয়। আমরাও আছি কে কত দামী পেল তা নিয়াক শুধুই সমালচনা আর একে অপরের উপর হিংসা করি।
রাফি আরাফাত
কেউ এমনি এমনি কাউকে কিছু বলেনা। ভালবাসা দাও ভালবাসা নাও। ভালো লাগছে । ধন্যবাদ