হায় মফিজ,কেমন আচিস?কি লিখছিস?গল্প না কবিতা?
-নারে দোস্ত!গল্পেরাতো সেই কবেই মিশে গেছে সাম্যহীনতার যাতার তলে আর কবিতা সেতো আকাশচারী কেবলি নীঁলাকাশে বাহারী রং খুজেঁ বেড়ায়।
-কিছু একটাতো এখন করিস,তাই না!
-হ’তুলিটা হাতে নিয়ে ব্লাক জমিনে ব্লাক রঙে কেবলি আকঁছি!বার বার আচঁরগুলো বড় অচেনা মনে হয়।
-তোর সব কথায় খালি হতাশা!এতো হতাশায় থাকিস কেন তুই?
-কি করব আমার জন্মটাই যে হয়েছিলো ১৯৭১ এ এক দূর্বিষময় হতাশার মাঝে,যুদ্ধের ময়দানে।
-তবুওতো মাঝে মাঝে এ সব মানুষের জীবনেও রসকষ বলে সামান্য কিছু হলেও থাকে।তোরতো কোন কালেই দেখলাম না।
-জীবনের মানি বুঝিস!অবশ্য তোর না বুঝার কথা।কারন তোর জন্মতো সোনার চাঁমচ মুখে নিয়া।তুই যদি আমার জায়গায় থাকতি তবে বুঝতে পারতি।যাগগে এ সব কথা,এখন বল,আমার এখানে এতো বছর পর কেন এলি?
-এসেছিলাম আমাদের টিভি চ্যানেলের জন্য একটি সাক্ষাৎকার ধারণ করতে।
-আমার সাক্ষাৎকার!
-হ,তুইতো বা তোরাতো এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ পপুলার বলা যায় সেলিব্রেটি।সাম্প্রতীক সময়ে যে সব টপ নিউজগুলো ভাইরাল হচ্ছে তাতো তোর তোদের মতন  ব্লগার,ইউটিউবার,ফেবুকার- টুইটারের বদলতেই হচ্ছে।
-তা যা কইছস আবাইল্লা(আবুল কাসেম আবুল)।সব ফালতু কথা!যা হচ্ছে তা সব পাপের ভারে হচ্ছে,বুঝলি।এই যে…..
-দাড়া দাড়া,ক্যামেরাটা একটু অন করে নিই,আর হ্যা-ক্যামেরা চালু হলে কিন্তু তুই আর আমাকে কিংবা আমি তোকে-তুই তোকারি শব্দ করে উচ্চারণ করতে পারব না,ঠিক আছে?।
-আইচ্ছা!
-এই যে পুরুষ শাষিত ঘূণে ধরা সমাজে নারীদের প্রতি একের পর এক ধর্ষণ,অত্যাচার-এ সম্পর্কে আপনার মতামত কি?সর্বোশেষ রাফি হত্যাকান্ডের আলোকে যদি কিছু বলতেন।
-দিলেন’তো কলিজায় আঘাত কইরা।এখন এ সম্পর্কে কিছু বললতে গেলে,হয় আমি কূপ খাবো নতুবা জেল খাটবো।
-মানে!একটু বুঝিয়ে বলবেন কি?
-রাফি হত্যা কান্ডের ঘটনাটি কিন্তু এক দিনে ঘটেনি অথবা শুধু যে তার সাথেই হয়েছে তা কিন্তু নয়।মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছিল ঠিকই কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ কখনো চলতে পারেনি এখনো পারছে না।পাকিস্থানের কিছু জারজকে দোসরদের এ দেশে রাজনিতী করার সুযোগ দেয় এ দেশের কিছু রাজনৈতীক কুলাংকার নেতা।সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছে একশ ভাগ পাকিপ্রেমিরা।তাদের প্লান পরিকল্পিত।লাল সালুর মতন কিছু কুলাংগার নিজ স্বার্থলোভী গজিয়ে উঠার চেষ্টা করলেও অবশেষে সফল হতে পারেনি তাই তাদের আরেকটি প্লান হল দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসা তৈরী করে সহজ সরল অভিভাবক লোকগুলোকে আল্লাহর উপর ভয় দেখিয়ে তাদের সন্তানদের বীনা বেতন ও ফ্রি খাওন দাওনের কথা বলে মাদ্রাসায় ভর্তি করায় অথচ খোজঁ নিয়ে দেখেন মাদ্রাসায় ভর্তিকৃত ছাত্র ছাত্রীর অভিভাবকদের নিকট হতে মাসিক এক প্রকার ভাল টাকাই তারা আদায় করে নিচ্ছে কিন্তু মাদ্রাসা বা এতিম খানা নামক লক্ষ কোটি অনুদানের টাকা যায় কোথায়..??অবশ্য দেশের সব মাদ্রাসা যে একই রকম চিত্র তা আমি বলব না,দেশে কিছু মাদ্রাসাতো আছে যেখান হতে প্রকৃত ঈমানদার হয়ে বের হয়ে আসছেন,সমাজে ভাল ভাল কাজের সাথে যুক্ত হচ্ছেন আবার কিছু হচ্ছেন আত্মঘাতী ইসলামের নামে জিহাদকারী জঙ্গি সন্ত্রাসী।যে ধর্মে স্পষ্ট লেখা আছে মানুষ হত্যা পাপ তাই তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে করে যাচ্ছে।

এ সম্পর্কে আমার এক দিনের এক ঘটনা বলি যদি অনুমতি দেন?আবুল সাহেব মাথা নেড়ে অনুমতি দিলেন।মফিজ বললেন-এক দিন বেশ কয়েক জন হুজুর টাইপের লোক তাদের মাদ্রাসার দানের টাকা তুলতে আমার অফিসে এলেন।তখন আপাতত বস না থাকায় আমি তাদের সাথে কিছু এ সম্পকিত বিষয়ে কিছু আলোচনা শুরু করলাম।এক জনকে বললাম-আচ্ছা হুজুর যত টুকু জানি এ মাদ্রাসাটা আপনিই প্রতিষ্ঠা করেছেন?তিনি খুব গর্বের সহিত বললেন-হ্যা আপনাদের দয়ায়,ওমুক ওমুক জেলায়ও আরো তিনটা মাদ্রাসা আমিই প্রতিষ্টিত করেছি।
-ভাল কথা!খুব ভাল কথা-তা হুজুর বলবেন কি আপনার জেলাটা কোথায়?তিনি বললেন ওমুক জেলায়।আমি বললাম-আপনি আপনার জেলা রেখে এ জেলা সহ আপনি যা বললেন অন্যান্য জেলায়ও এমন মাদ্রাসা তৈরী করেছেন।আমার কথা হল আপনার নিজ এলাকায় মাদ্রাসা করার সাথে জড়িত না থেকে এখানে এসে তা করার চিন্তাটা কেন করলেন?তিনি বললেন দেখুন মুসলমান হিসাবে এটা আমার দায়ীত্ব।আমি বললাম-তাহলে এখানে আরো যারা স্থানীয়রা আছেন তারা কি তাহলে অমুসলিম?তিনি অনেকটা রেগে গিয়ে বললেন,আরে আপনিতো দেখছি মসজিদ মাদ্রার বিপক্ষে কথা বলছেন!এ সব হওয়ার সুবাদে মৃত্যু কালে আপনার জানাযাতো পড়াবে পারবে,তাই না?!আমি বললাম-শুধু মাত্র আমার জানাযা পড়ার জন্য আপনাদের এ সব অন্যায় আমাকে মেনে নিতে হবে?তিনি বললেন-এ সব আল্লাহওয়াস্তে কাজকে আপনি এ ভাবে মনে করছেন কেন?আমি বললাম-মনে করতাম না যদি না আপনাদের এ অর্থ কালেক্টসনস পুরোটা না হউক অন্তত সেভেনটি/এইটটি পারসেন্স ঐ সব আল্লাহ ভক্ত এতিমদের মাঝে ব্যাবহার করা হত।ঐ সব এতিমদের নামে টাকা সংগ্রহ করতে আপনাদের মতন লেবাসধারী মোল্লারা জর্দা দিয়া পান চিবাইতে চিবাইতে নেশার ঘোরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এটা কি ঠিক?লোকটি ইতস্তঃ হয়ে তার মুখে লেগে থাকা পানের পিক রুমালে মুছলেন এবং মনে হল লোকটি খুব লজ্জায় পড়ে গিয়ে বললেন-কি যে কননা ভাই আপনি! আমার এমন সব প্রশ্নের উত্তর দিতে ঠিক যেন কিছুক্ষণ আমতা আমতা নামতা পড়তে লাগলেন।বুঝে নিলাম এ সব হল তাদের লাল সালুর আধুনিক রূপ।এরই মধ্যে আমার বস এসে যাওয়াতে আমি চুপ হয়ে গেলাম।বস আমাকে তাদের বিশ হাজার টাকার একটি চেক দিয়ে দিতে অর্ডার করলেন।
আবুলের চ্যানেলে এ সব বিষয়ে স্বাক্ষাকার দিতে গিয়ে রাগে আমার মাথা গরম হয়ে গেল।যদিও আবুল বার বার প্রসঙ্গ এড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছিল তবুও যেন আমি আমার আবেগকে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না-কথা যখন উঠেছে তখন কথা শেষ না করতে পারলে মন আমার শান্ত হয় না আর আমার কথা বলার মাঝে শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কারো কথা বলার সুযোগ আমি দেই না।এটা বলতে পারেন আমর বদ অভ্যাসের একটা।

আমি অনবরত বলে যাচ্ছি।
তা যাই হোক এ ভাবেই কিছু সহজ সরল লোকদের ছেলে মেয়েরা বন্দি হচ্ছেন বাস্তবতার সাথে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।কয়দিন আগেও যেখান থেকে পাশ করলে অফিসার পদতো পরের কথা সামান্য পিয়নের চাকুরীও পেত না আর দেশ ও দশের স্বার্থে মহাজ্ঞানী বা আবিষ্কারক হওয়াতো কল্পনাতীত তাহলে সেখানে কি শিখাচ্ছেন?সেখানে যা শিখাচ্ছেন তা হল-কেবলি আল্লাহর ভয়,বেহেস্তের লোভ নরকের আগুন,নবী ও রাসূলগণের বাণী-যা সৎ পথে চলার মানব জীবনের জন্য বেশ জরুরী এবং কোরানে হাফেজ।মুলতঃ এ শিক্ষায় শিক্ষার্থীর বাস্তব জীবনের কি লাভ হয় তা কিন্তু একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায়।সাধারণতঃ পূর্বে একজন মাদ্রাসার ছাত্র তার পড়া লেখার বিষয় ভিত্তিক অনুযায়ী বড় জোর কোন মসজিদে ইমামতি,কোন মাদ্রাসায় মাষ্টারী আর এখানে-সেখানে কেউ হেলিকপ্টারে,কেউ বা হেটে হেটে গিয়ে ওয়াজ নসিয়ত করতেন।
সাধারনতঃ আর কি কি শিক্ষা এ সব অনেক প্রতিষ্ঠানে হয় না বললেই চলে,-তা হল-যে মাটিতে তার জন্ম ও বসবাস সেই মাটি জন্মের ইতিহাস বলেন না তাদেরকে দেশপ্রেম শেখান না,লক্ষ জনতার রক্তে রঞ্জিত জাতীয় পতাকা ভাল করে তারা চিনেন না,জাতীয় সঙ্গীত গায় না এর মহত্বও কি তাও জানেন না,নিজ সংস্কৃতি পহেলা বৈশাখকে ভ্রান্ত ধারণায় ইসলাম বিরোধী করে তুলেন,জীবনের প্রয়োজনে কারিগরি শিক্ষার ধার ধারে না,মহাকাশের গ্রহ নক্ষত্র বৈজ্ঞানীক জ্ঞান আরহরণ করা তাদের জন্য যেন মহা পাপ।তবে হ্যা তাদের এ শিক্ষায় তাদের অভিভাবকরা পাবেন পরকালে বেহস্ত পাবার আশ্বাস আর মৃত্যুকালে তথা কথিত তার জানাজা পড়ার নিশ্চয়তা।

আমার হঠাৎ কেন যেন মনে হল আমি কথার লাইন ছেড়ে অন্য লাইনে চলে যাচ্ছি।যা বলছি বা বললে এ দেশে অনেকে আমাকে পাগল ভাববে!ভাববে আমি ইসলাম বিরোধী।আসলে কি তাই?যদি কেউ বা কোন গোষ্ঠি আমাদের শান্তি প্রিয় পবিত্র ইসলাম ধর্মটিকে কলংকিত করতে চায় তাকে নিয়ে ব্যাবসা করে ধান্দাবাজী আর কূপাকূপিতে ভাই ভাইকে হত্যা করতে চায় তাহলে সে সবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা কি ইসলাম বিরোধী?প্রতিটি ধর্মেই কিছু লোকতো আছেই যারা ধর্মীও গুরুদের কোন ধরনের সমালোচনা শুনতে নারাজ।তেমনি একটি সমসাময়িক উদাহরণ ফেনীর সোনাগাজী মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকান্ডের  ঘটনাগুলোতে।হত্যা কান্ডের মুল হোতা অধ্যাক্ষ বলতেও লজ্জা লাগে,তিনিই সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাহ।তার নিকট প্রতিষ্ঠানের সকল ছাত্র-ছাত্রী সন্তান তুল্য হবার কথা অথচ তিনি কি করলেন তা আজ আমাদের নিকট স্পষ্ট।সেই অমানুষটার পক্ষেও মানুষ নামের স্বার্থ লোভী অ-মানুষগুলো রাস্তায় নামে।এই অমানুষটার মুক্তির পক্ষে এবং রাফিকে পুড়িয়ে মারার পিছনে সহজ সরল নারীরাও শামিল হন।এবার ভাবুক সিরাজের মত মোল্লা লেবাসধারী তথাকথিত আল্লাহ ভক্ত লোকগুলো সমাজের সহজ সরল মানুষগুলোর মগজ কতটা সুক্ষ্ণ ভাবে ধোলাই করেছে।এরা দেশের শত্রু ইসলামের কলঙ্ক দশের আতংক।আমি পাপী হুইন্না মুসলমান,আমার অপরাধ হয়তো ক্ষমার যোগ্য কিন্তু তারাতো আল্লাহ ভক্ত হাদিস কোরানের বিধি নিষেধগুলো তাদের মুখস্ত তারা এমন জগণ্য অপরাধ করে কি করে?তাও আবার পুড়িয়ে মারে।

তবে যাই হোক মেয়েটি এ ঘূণে ধরা পুরুষ শাষিত সমাজের নারীদের একটি বার্তা দিয়ে গেল তা হল-বঙ্গ নারী নিজেকে আর ভেবো না অবলা,গর্জে উঠো যার যার অবস্থান থেকে,তাতে যদি মৃত্যুও হয়,তুমি বেচে থাকবে অত্যাচারিত নিপিড়ীত নারীদের জাগরিত হৃদয়ে।

ক্যামেরার লাইট হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেল।মফিজ অবাক হয়ে বললেন-কিরে দোস্ত আর ইন্টারভিউ নিবিনা?স্বাক্ষাতকার ধারণকারী দোস্ত বলল-নারে দোস্ত ইন্টারভিউ বন্ধ করিনি,একটু বিরতীতে যাবো-তুই যে ভাবে থলের বিড়ার বের করে বলেই যাচ্ছিস!তাতে আমার মনে হল একটু বিরতী দিয়ে আসা ভাল।
-ঠিক আছে দোস্ত….ঐ কইরে ময়নার বাপ-আমারে এক গ্লাস জল দে।

পরবর্তী সাক্ষাৎকার আসছে….???

৯৮৪জন ৮২৬জন

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ