দিনান্তের শেষে জানালার আলোটুকু এসে পায়ের কাছে লুটোপুটি আদুরে পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। জানালার গ্রীলে চড়ুইটা ইচ্ছে মতো কিচির মিচির করে আলাপ জুড়তে চাইছে যেন। ওপারে খোলা প্রান্তরে নামছে আঁধারের নিমন্ত্রন।স্মৃতী গুলো এলোমেলো হাওয়ায় এসে বড্ড নাড়া দিচ্ছে মন আকাশ।শরতের আকাশের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা পালকের মতো মনের নীল জুড়ে। কখন যেন গোত্তা খাওয়া রঙীন ঘুড়ি হয়ে যায়!!
সবুজ ঘাসের বুকে আছড়ে পরে সুতো কেটে।বিলি কেটে কেটে সাঁতার কাটে, বুকের ভেতরে শান্ত জলাধারের মাঝখানে।
চোখের শার্শিতে বছর জুড়ে কুয়াশা থাকে। থাকে – ঝাপসা হয়ে যাওয়া নামের গল্প।
ডাক পিয়নের ঠিকানা জানা নেই, জানা নেই….তাঁর অসুখ করেছে কিনা!! ঝোলার ভেতরে রাশি রাশি হলদে খাম নিয়ে, আর দেখিনা তাঁকে কোথাও!!
কোথাও দেখিনা তাঁকে। মাঝ দুপুরের রোদ্দুরে ছাতাহীন দুয়ারে দুয়ারে ঠিকানা মেলাতে।
একটা চিঠি’র মালিককে খুঁজে পাইনি। স্মৃতী’র খুব গোপন প্রকোষ্ঠে, বড় যত্নে রেখেছি তাঁরে গোপনে। রাখেনি সে কোনো ঠিকানা, কোথাও রাখেনি। হারালো সে কিচ্ছুটি না বলেই। ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুর মাথায় নিয়ে, খাঁকি জামা গায়ে ফি হপ্তাহ পৌঁছে দিতো — পিয়ন কাকা, তাঁর লেখা নীল খামে চিঠি।
তাঁর হাতের লেখা বড় ভালো ছিলো। কত কিযে লিখতো!!! কখনো হিন্দী’তে — আবার বাংলাটা বুঝিয়ে লেখা লম্বা চিঠি।
কখনো বলেনি সে……… ………….কখনো লেখেনি সে “ভালোবাসি “।
লেখেনি……. “তুমিই আমার চিঠি লেখা প্রথম মেয়ে বন্ধু! “চিঠি গুলো যেতো অন্য ঠিকানায়।সে ঠিকানাচ্যুত হলো, ঠিকানা না রেখেই ঠিকানা হারালো সবটুকু!!স্মৃতীরা আজো ডুঁকড়ে ফেরে।
ডাক পিয়ন দেখিনা আর কোথাও।
কাকে শুধাই? কার কাছে পাই তাঁর ঠিকানা? আজো কি তাঁর মনে পরে এই আমায়? কাঁচা হাতে লিখতাম ভুলে ভরা কত চিঠি তাঁকে!!
সে দেখতে চেয়েছিলো…….. এই আমি দেখতে কেমন? তাঁর যে দেখাই হলোনা এই আমায়!!!
আজ বুঝি তাঁর অনেক বেড়েছে বয়স তাঁর? আমিও যে আর কিশোরীটি নেই!!!
চুলে এখন পাক ধরেছে, বলিরেখায় স্পষ্ট হয়ে আছে আয়নাটা। চোখের আঙিনায় কাঁচের দেয়াল। খালি চোখে রংটাও বুঝিনা ভালো, গোধূলী ঘনায়ে এলে!!
দুনিয়াটা নাকি গোল?
খুব কি বেশি বড়?
শেষ বিদায়ের ঘন্টা যে বেজে এলো!! তাঁর ঠিকানা কি আর হবে পাওয়া? কি নাম যেন ছিলো তাঁর? বুঝি বয়সটা ভালোই বেড়েছে!!
থাকুক তবে সে গোপন হৃদ প্রকোষ্ঠে। বৃষ্টির আশায় যেমন চেয়ে থাকে চাতক!!
খুঁজে ফিরি আজো ——- আসে যদি কোনো ডাক পিয়ন!!!!!!!!
২২টি মন্তব্য
তৌহিদ
বন্যা আপু আমিও একখানা চিঠি লিখে পোস্ট করেছিলাম একবার, তবে প্রাপকের ঠিকানা দেইনি। ডাকপিয়ন এসে বলে প্রাপক কই? উত্তরে বলেছিলাম -কেন আকাশ।
ডাকপিয়ন মুচকি হেসে বলেছিলো -ও তোমার বান্ধবীর নাম বুঝি আকাশ??😃😃
সে নাকি আজও চিঠিখানি হাতে নিয়ে আকাশের ঠিকানা খুঁজে বেড়ায়। বুঝেন অবস্থা!
ভালোলেগেছে লেখাখানি।
বন্যা লিপি
কাঁচের বোতলে ছিপি আটকে মহা সমুদ্রে ছুঁড়ে দিলেও তো পিয়ন কাকা’র এত কষ্ট আজো করতে হতোনা। কি যে ছাই আকাশের ঠিকানায় লিখলেন চিঠি পত্তর!! তবে জানতে বড় ইচ্ছে করে কখনোই কি পাননি ঠিকানা।
অনেক কৃতজ্ঞতা।
তৌহিদ
ভুল ঠিকানায় চিঠি গিয়েছিল, তবে আসল মানুষই পেয়েছে।
সাবিনা ইয়াসমিন
ঠিকনা বিহীন চিঠিও পেতে তাহলে ! নামটা আসলেই ভুলেছো ? না আমাদের জানাতে চাইছো না ?
পৃথিবীটা শুধু গোলই না ছোটোও হয়েগেছে বহু আগে। তার নাম লিখে সার্চ দাও, ফেবু, উইকিপেডিয়া,গুগল,আরো কত কত মিডিয়া আছে ! এমন কি টিকটকের হেল্প নিতে পারো।
তবে প্রশ্ন হলো, তুমি কি চিঠি লেখককে খুজছো না চিঠির বিলিওয়ালা ডাক পিয়নকে ? বেশি লজ্জা না পেলে বলে দাও, আমরাও তাহলে তাকে খুঁজে পেতে সাহায্য করবো। 😂
লেখা ভালো হয়েছে বন্যা। ভালো থেকো, শুভ কামনা- ভালোবাসা নিও। ❤❤
বন্যা লিপি
হারিয়ে যাবার ঠিকানা কে কবে রেখেছে বলোতো? আসলেই তো ৩৩/৩৪ বছর পরে কি আর মধ্যবয়সী মনে কোনো নাম মনে থাকে? মনে পরলে সবার আগে তোমাকেই জানাবো। সমস্ত মিডিয়া তোলপার করে খুঁজবো তুমি/আমি দুজন মিলে। জানতেই হবে কেন, রাখলোনা ঠিকানা? হতেও তো পারতো গল্পের শিরোনাম অন্য কোনো রকম!! তোমার রোমান্টিক লেখা নিয়ে হাজির হবো এরপরে। ভালোবাসা তোমার প্রতি ♥♥
সাবিনা ইয়াসমিন
এই মুহুর্তে রোমান্টিক লেখাই পড়তে মন চাইছে, সহসাই মনটা কেন যেনো আন রোমান্টিক মুডে চলে গেলো।
বন্ধু হলে এমনই হতে হয় বন্যা, কিছু বলিনি কিছু চাইনি তবু্ও তুমি ঠিক ঠিক আমার মনের ইচ্ছেটা ধরতে পেরেছো।
ভালোবাসায় থাকো, শুভ কামনা ❤❤
বন্যা লিপি
সে না হয় বুঝলাম, দিলাম রোমান্টিক কিছু, তুমি আবার বেশি রকম রোমান্টিক হয়ে পরবেনা তো? তোমায় নিয়ে বড় ভয়ে থাকি আমি।
সাবিনা ইয়াসমিন
বেশি রোমান্টিক হলে ক্ষতি কি ! তোমার ভয়ের কিছু নেই। রোমান্টিক হয়ে গেলে হয়তো বড়জোর একটা অ-কবিতা লিখে ফেলবো। অভয় নিয়ে পড়ে ফেলো 😂
প্রহেলিকা
কবিতার সাথে সাথে গদ্যেও হাত খুব পাকা আপনার। ভালো লাগলো। সুখপাঠ্য, পড়তে গিয়ে হোচট খাইনি। আরও পড়তে চাই। শুভকামনা রইলো!
বন্যা লিপি
কোনো কোনো স্বল্প বাক্যই বলে দ্যায়, বিস্তর ভাবের ব্যাঞ্জনা। স্বল্প শব্দের স্বিকৃতীটুকু ভীষন অনুপ্রানিত করলো আমায়। নিরন্তর শুভেচ্ছা শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
স্মৃতিচারণ সুন্দর ভাবেই লেখায় ফুটে উঠেছে।
বন্যা লিপি
আপ্লুত হলাম, হলাম অনুপ্রানিত। অশেষ শুভ কামনা, শুভেচ্ছা।
মাহমুদ আল মেহেদী
স্মৃতিগুলো সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়াইতো স্মৃতিচারন। খুব সুন্দরভাবেই মনে করিয়েছেন সবাইকে আশা করি।
বন্যা লিপি
আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা, শুভেচ্ছা, শুভকামনা।
শুন্য শুন্যালয়
খুব সুন্দর। এই লেখা নিয়ে এতোদিন কোথায় ছিলেন?
ডাকপিয়নের পেছন পেছন না ঘুরে ব্লগে লিখলেও এদ্দিনে কেউ না কেউ প্রেমপত্র একটা ঠিকই দিয়ে দিতো।
বন্যা লিপি
চলেই তো এলাম ব্লগে। কারো কাছ থেকে প্রেম পত্রের পাওয়ার আশা নয়,প্রশ্রয়টুকু বড় কাম্য। আপনাদের ভালো লাগাটুকুই সাহস বাড়াবে আমার লেখনী’তে।
অশেষ কৃতজ্ঞতা, শুভেচ্ছা, শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
ডাক পিওন আর আসবে না ফিরে,
ফিরে না আসুক এমনটাই কাম্য,
ফিরে আসলে এমন স্মৃতি চারণ মুলক লেখা আমরা পড়তে পারতাম না।
লেখা ভালো হয়েছে।
বন্যা লিপি
তাও ঠিক।যা হয় মঙ্গলের জন্যই করের মহান সৃষ্টিকর্তা। অসংখ্য কৃতজ্ঞতা,শুভ কামনা।
অলিভার
অসাধারণ!
কি হৃদয় স্পর্শ করা আকুতি! কি হাহাকার ডাকপিওনের ঠিকানার জন্যে!
ফিরে আসুক ডাকপিওন, পৌছে দিক অপ্রকাশিত চিঠিটি তার গন্তব্যে, খুঁজে নিয়ে আসুক হারানো কৈশোর স্মৃতি, খুঁজে পাক আত্মার আপন আত্নীয়।
হৃদয় স্পর্শী লেখা। দারুণ ভালো লেগেছে 🏵🏵
বন্যা লিপি
খুবই আপ্লুত হলাম। অনুপ্রানিত হলাম ভীষণ ভাবে।অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা রইলো।
ব্লগার সজীব
খুঁজে পেলে ভালোই হতো, তবে খুঁজে পেতে পাওয়া যায় কেবল সোনালী স্মৃতি। লেখা ভালো হয়েছে।
বন্যা লিপি
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।সাথে চাই সবসময়।শুভ কামনা শুভেচ্ছান্তে।