আক্কেল আলী সকাল হইতে লোকজনকে বলিতে লাগিল ” মসজিদের হুজুর আমারে বলছ ” তুমি আর মসজিদে নামাজ পড়তে আসবা না। ”
এত্ত বড় কথা? মসজিদের ইমাম হইয়া একজনকে মসজিদে নামাজ পড়িতে আসিতে নিষেধ করে?!
খুব অল্প সময়ে আক্কেল আলীর এই কথা দুই তিন গ্রামের মানুষের মুখে মুখে। যাহারা আক্কেল আলীকে চিনিত না, তাহারাও আক্কেল আলীকে চিনিয়া ফেলিল। আক্কেল আলী পুরাই হিট। তখন ফেইসবুক ছিল না, থাকিলে দেশব্যাপীই আক্কেল আলী হিটে হিটায়িত হইয়া যাইত।
ঘন্টা দুইয়ের মধ্যে কয়েক শত জনতা হিন্দু, নাছারাদের এজেন্ট ইমাম সাহেবরে মসজিদ হইতে টানা হেচরা করিয়া বাহির করিল। টানাটানিতে ইমাম সাহেবের করুন অবস্থার কথা আর না বলি। কিল ঘুষি লাথির যথেষ্ঠ ব্যবহার হইয়াছিল। ইমাম সাহেবের কথা কেউ শুনিবার প্রয়োজনই মনে করিল না।
অবশেষে ইমাম সাহেব হিন্দু, ইহুদি, নাছারাদের এজেন্ট এর অপবাদ মাথায় নিয়া গ্রাম ত্যাগ করিল।
আসল ঘটনা অন্য রকম। ঐদিন ভোররাতে আক্কেল আলী স্ত্রীর সহিত সহবাস করিয়া ফজরের ওয়াক্ত শেষ হয় হয় অবস্থায় গোছল না করিয়াই মসজিদে গেল নামাজ পড়িতে। নামাজ শেষে নামাজিরা চলিয়া গেলে আক্কেল আলী ইমাম সাহেবকে বলে যে সে আজ সহবাস করিয়া গোছল না করিয়া নামাজ পড়িতে আসিয়াছে। এতে কতখানি গুনাহ হইয়াছে? ইমাম সাহেব শুনিয়া খুব রাখ করিয়া উত্তেজিত হইয়া আক্কেল আলীকে বলিলেন” সহবাস করিয়া গোছল না করিয়া তুমি আর মসজিদে নামাজ পড়িতে আসিবা না।” হুজুরের উত্তেজনার পরিমানটা একটু বেশীই ছিল। আক্কেল আলী হুজুরকে দেখিয়া নেয়ার বুদ্ধি আটিল। সে হুজুরের – সহবাস করিয়া গোছল না করিয়া – অংশটুকু বাদ দিয়া সবাইকে বলিল – তুমি আর মসজিদে নামাজ পড়িতে আসবা না।
ঐদিন হইতে আক্কেল আলী কয়েকগ্রামের লোকদের বেয়াক্কেল বানাইয়া হিটে হিটায়িত হইয়া সমাজের গন্যমান্য হিসেবে বসবাস করিতে লাগিল।
ফেইসবুকের কল্যানে আক্কেল আলীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাইয়াছে, বেয়াক্কেলদের সংখ্যাও ,
১০টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
হুম! তিলকে তাল বানানো গল্প। আসলেই বর্তমানে এটায় ঘটছে। বেশি। কারো না কারো অংশ বাদ দিয়া জিরো হিরো বানানো হচ্ছে। ভালো লাগলো।
জিসান শা ইকরাম
সাম্প্রতিক এটি হয়েছে অর্থমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে, কিছু অংশ বাদ দিয়ে হিট কামানোর জন্য তা প্রচার করা হচ্ছে।
আমরাও বে- আক্কেলের মত তা বিশ্বাস করে শেয়ার করছি অন্যদের।
মোঃ মজিবর রহমান
হুজুগে চলি এরকম প্রমাণ হাজারো আছে আমাদের।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা মজিবর ভাই।
মৌনতা রিতু
হুজুগে বাঙ্গালি বলে একটা কথা আছে, এটা চির সত্য। মানুষ মুখের কথা এডিট করতে ওস্তাদ। মানুষের আবেগ নিয়ে খেলাও সহজ। যেমন, মাদকের জন্য কতো মানুষের জীবন একেবারে তছনছ হচ্ছে। একদিকে সচেতন মানুষেরা বলবে কমান, দুই একটা ক্রসে দিলেই তো হয় অথচ, যারা মাদক নিয়ে কারবার করে
তাদের মারলেও হুজুগে জনগন লাফিয়ে পড়ে আবেগে। কেউ তো কাইন্দা ফালায়
জিসান শা ইকরাম
আমরা মাদক নির্মুল চাই, যে কোন ভাবে হোক। যাকে মেরে ফেলার জন্য সমালোচনার ঝড় তৈরী করেছে মিডিয়া, সেই একই মিডিয়া পূর্বে তাঁকে মাদক সম্রাট বানিয়েছিল। যে কারো মৃত্যুতেই তার সন্তানরা এমন আহাজারি করে। প্রতিদিন হাজার হাজার সন্তান মাদক সেবনে শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাঁদের পরিবারের আহাজারী যদি আমরা শুনতে পেতাম, তবে সবাই আবার মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানকে সমর্থন করতো।
তৌহিদ ইসলাম
সবসময় হুজুগে কান দেয়া কিছু লোকের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। কেউ কিছু বললে তার আগা মাথা ভেবে কথা বলা উচিত আমাদের। না হলে তিল থেকে তাল হয়ে যায়।
জিসান শা ইকরাম
এমনটাই হচ্ছে আজকাল।
হুজুগে বাংগালী – এটি প্রমান করতে হবে না?
নীলাঞ্জনা নীলা
“রেখেছো বাঙ্গালী করে মানুষ করোনি”—কথাটা মিথ্যে ছিলোনা। আজকের দিনে বললে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ফাঁসীর দাবীতে আন্দোলন চলতো নানা।
জিসান শা ইকরাম
কথাটি কখনো আমরা মিথ্যে প্রমানিত করতে পারব বলে মনে হয়না।