ফেব্রুয়ারির শুরুতে চ্যানেল আই’তে জান্নাতুল বাকেয়া কেকার একটা রিপোর্ট দেখেছিলাম বাংলাদেশে ইংরেজি শব্দের অহেতুক ব্যবহার নিয়ে। সেখানেই কেকা তুলে ধরেছিলেন, শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডগুলোতে ইংরেজি শব্দের ব্যবহার।
আমাদের শব্দভাণ্ডারে প্রয়োজনীয় বাংলা শব্দ থাকা সত্ত্বেও এমন ইংরেজিপ্রীতি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ এর অহঙ্কার অর্জনকারী বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দৃষ্টিকটুই বটে।
এছাড়াও আজকাল বাংলাদেশী বাঙালীর ইংরেজি প্রীতিও মারাত্মকরুপ ধারণ করেছে।
প্রায়ই দেখা যায় তারা নিজেকে স্মার্ট প্রকাশ করতে গিয়ে কথায় কথায় ইংরেজি শব্দের মিশেল দিয়ে কথাবার্তা বলছেন! কেউ কেউ আবার ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা বলছেন!
বর্তমান সময়ে এ ব্যাপারগুলো একরকম ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এ যে ভাষার জন্য যুদ্ধ করা বাঙালী জাতির ক্ষেত্রে কতোটা দৈনতা প্রকাশ পাচ্ছে সে বোধটুকুও যেনো তাদের নষ্ট হয়ে গেছে!
‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’কে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে গেলে নিজেদের মাতৃভাষার যথার্থ মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে আমাদের এই অর্জন কাগুজেঅর্জন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে। পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র আমরাই আমাদের মায়ের ভাষা রক্ষার জন্য রক্ত দিয়েছি, যুদ্ধ করে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করেছি। এই গৌরব এবং অহঙ্কারকে সামনে রেখেই ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ এর স্বীকৃতি আদায়। অথচ এই আমরাই এর মর্যাদাকে চেতন/অবচেতন মনে অবহেলা করছি। কেনো আমরা নিজেদের তুচ্ছজ্ঞান করে অন্য থেকে পাওয়া কিছু নিয়ে গর্ববোধ করি?
কবে আমাদের স্বকীয়তাবোধ জাগ্রত হবে?
অথচ আমাদের মতো গৌরবোজ্জ্বল অহঙ্কার না থাকলেও পৃথিবীর অনেক দেশই শুধুমাত্র তাদের নিজেদের মর্যাদাবোধ থেকে মাতৃভাষাকে সম্মান করে নিজেদের সকল প্রকার কর্মকাণ্ডই মাতৃভাষাতে করে থাকে। এটা স্বকীয়তাবোধ, মর্যাদাবোধের ব্যাপার।
এই মর্যাদাবোধের ব্যাপারে আমরা কবে সচেতন হবো?
কিছুদিন আগে পত্রিকা মারফত জেনেছি, তারানা হালিম তথ্য মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়েই বেতারের (রেডিও) ধারা বিবরণকারীদের ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা বলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
রাষ্ট্র রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম চালাক। কিন্তু ব্যক্তিজীবনে আমরা সচেতন হই। আমরা সচেতন না থাকলে প্রজন্ম আস্তে আস্তে শেকড়হীন হয়ে পড়বে। আমাদের সন্তানরা যাতে নিজেদের গৌরবকে ধারণ করতে পারে সে দায়িত্ব আমাদেরই। তাদের বোধকে জাগ্রত করে নিজেকে জানার সুযোগ করে দিতে হবে। নিজেকে না জানলে যে একসময় শেকড়হীন স্বর্ণলতাতেই পরিণত হবে। পরজীবী হয়ে বেঁচে থাকার মধ্যে সুখ নেই, তাতে নিজেদেরই অমর্যাদা হয়।
৩টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
সব ক্ষেত্রে সরকারী ভাষা বাংলা প্রচলন করাও গুরুত্বপূর্ণ বহন করে। চালকরা যখন যাত্রীর ন্যায় ব্যাবহার করে তখন কষ্ট লাগে। যেমন ওবায়দুর কাদের সাহেব বললেন জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা বাংলা করার আবেদন করবেন। তিনি দেশেই পরিপূর্ণভাবে বাংলা করা ব্যাবস্থা করতে পারছেন জাতিসংঘের কিভাবে তাদের্ আবেদন যথার্থভাবে গ্রহন করবেন!
যাইহোক বাংলা বাংলার গরব নিয়ে থাকুক এই কামনা করি।
মোঃ মজিবর রহমান
দুঃখিত তিনি দেশেই পরিপূর্ণভাবে বাংলা করা ব্যাবস্থা করতে পারছেন না জাতিসংঘের কিভাবে তাদের্ আবেদন যথার্থভাবে গ্রহন করবেন!
না শব্দটি হবে।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সহমত।যুক্তিযুক্ত লেখা। -{@