এদিকে লর্ড মাউন্টব্যাটেন চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়েছিলেন কলকাতা নিয়ে কি করবেন? ‘মিশন উইথ মাউন্টব্যাটেন’ বইটা পড়লে সেটা দেখা যাবে। ইংরেজ তখনও ঠিক করে নাই কলকাতা পাকিস্তানে আসবে না হিন্দুস্তানে থাকবে। আর যদি কোন উপায় না থাকে তবে একে ‘ফ্রি শহর’ করা যায় কি না? কারণ, কলকাতার হিন্দু-মুসলমান লড়বার জন্য প্রস্তুত। যে কোন সময় দাঙ্গাহাঙ্গামা ভীষন রুপ নিতে পারে। কলকাতা হিন্দুস্তানে পড়লেও শিয়ালদহ স্টেশন পর্যন্ত পাকিস্তানে আসার সম্ভাবনা ছিল। হিন্দুরা কলকাতা পাবার জন্য আরও অনেক কিছু ছেড়ে দিতে বাধ্য হত।
এই বইতে আরও আছে, একজন ইংরেজ গভর্নর হয়ে ঢাকা আসতে রাজি হচ্ছিল না, কারণ ঢাকায় খুব গরম আবহাওয়া। তার উত্তরে মাউন্টব্যাটেন যে চিঠি দিয়েছিলেন তাতে লেখা ছিল, ‘পূর্ব পাকিস্তানে দুনিয়ার অন্যতম পাহাড়ি শহর, থাকার কোন কষ্ট হবে না।’ অর্থাৎ দার্জিলিংও আমরা পাব। তাও নাজিমুদ্দিন সাহেবের এই ঘোষণায় শেষ হয়ে গেল। যখন গোলমালের কোনো সম্ভাবনা থাকল না, মাউন্টব্যাটেন সুযোগ পেয়ে যশোর জেলায় সংখ্যাগুরু মুসলমান অধ্যুষিত বনগাঁ জংশন কেটে দিলেন। নদীয়ায় মুসলমান বেশি, তবু কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট জংশন ওদের দিয়ে দিলেন। মুর্শিদাবাদে মুসলমান বেশি কিন্তু সমস্ত জেলাই দিয়ে দিলেন। মালদহ জেলায় মুসলমান ও হিন্দু সমান সমান তার আধা অংশ কেটে দিলেন, দিনাজপুরে মুসলমান বেশি, বালুঘাট মহকুমা কেটে দিলেন যাতে জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং হিন্দুস্তানে যায় এবং আসামের সাথে হিন্দুস্তানের সরাসরি যোগাযোগ হয়। উপরোক্ত জায়গাগুলি কিছুতেই পাকিস্তানে না এসে পারত না। এদিকে সিলেটে গণভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ করিমগঞ্জ মহকুমা ভারতবর্ষকে দিয়েছিল। আমরা আশা করেছিলাম, আসামের কাছাড় জেলা ও সিলেট জেলা পাকিস্তানের ভাগে না দিয়ে পারবে না। আমার বেশি দুঃখ হয়েছিল করিমগঞ্জ নিয়ে। কারণ, করিমগঞ্জে আমি কাজ করেছিলাম গণভোটের সময়। নেতারা যদি নেতৃত্ব দিতে ভুল করে, জনগণকে তার খেসারত দিতে হয়। যে কলকাতা পূর্ব বাংলার টাকায় গড়ে উঠেছিল সেই কলকাতা আমরা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিলাম। কেন্দ্রীয় লীগের কিছু কিছু লোক কলকাতা ভারতে চলে যাক এটা চেয়েছিল বলে আমার মনে হয়। অথবা পূর্বেই গোপনে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। সোহরাওয়ার্দী নেতা হলে তাদের অসুবিধা হত তাই তারা পিছনের দরজা দিয়ে কাজ হাসিল করতে চাইল। কলকাতা পাকিস্তানে থাকলে পাকিস্তানের রাজধানী কলকাতায় করতে বাধ্য হত, কারণ পূর্ব বাংলার লোকেরা দাবি করত পাকিস্তানের জনসংখ্যায়ও তারা বেশি আর শহর হিসাবে তদানীন্তন ভারতবর্ষের শ্রেষ্ট শহর কলকাতা। ইংরেজের শাসনের প্রথমদিকে কলকাতা একবার সারা ভারতবর্ষের রাজধানীও ছিল।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং-৭৮ ও ৭৯)
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী (পর্ব-৬৫)
৮টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
কতো জঘণ্য রাজনীতি! আজ যদি পশ্চিমবঙ্গ আমাদের থাকতো। কি চক্রান্ত করে ভাগ করেছে ভারতীয় উপমহাদেশকে।
রুবা’পু তুমি সপ্তাহে এই শনিবার ছাড়া আর কি আসতে পারোনা? ব্যস্ততা কি খুব বেশি?
ভালো থেকো।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
শরম দিও না গো নীলাদি। সবই একটা নেশার ব্যাপার। হয়তো একসময় আবার নেশা চাপবে। এই দেখো না, লেখাপড়ায়ও নেশা বসাতে পারছি না। শনিবার তো আমাকে ঘাড় ধরে নিয়ে আসে। :p
নীলাঞ্জনা নীলা
আসলে আমার তো আর কাজের তাড়া নেই। শুধু ডাক্তার আর হাসপাতাল। তাই বেশি বেশি পড়ি।
ভালো থেকো।
মোঃ মজিবর রহমান
নেতারা যদি নেতৃত্ব দিতে ভুল করে, জনগণকে তার খেসারত দিতে হয়।
সত্য উপলধ্বী।
(y)
মারজানা ফেরদৌস রুবা
তেমন নেতা বলেই এমন উপলব্ধি ধারণ করতে পেরেছিলেন।
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যা, আপু।
নীহারিকা
নিচে নিচে কত ষড়যন্ত্র চলেছে জানতামই না।
পড়ে ভালো লাগছে আপা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
পড়ছি আর জানছি। আর তখনকার সময়ে রাজনীতির ধরণটা উপলব্ধি করছি।