হঠাৎ একদিন খেয়াল করি আমি (অন্য কেউ কিনা জানিনা) বর্তমান আমি দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছি। অতীত যা ছিল সব আমার গতজন্ম। বর্তমান আমি আমার পুনর্জন্ম। গতজন্মের আমিকে কল্পনা করলে দেখা যাচ্ছে লাজুক, বিনম্র, মনোযোগী আমাকে। একগাদা বই ভরতি স্কুলব্যাগ। শাদা ইউনিফর্মের বুকপকেট ভিজে যাচ্ছে বলপয়েন্টের কালিতে, অথচ মন পড়ে আছে তোমার আয়নায়। তখন ইচ্ছে হয়েছিল একদিন হঠাৎ বড় হয়ে যাই। অনেক বড়। সব চকলেট, সব ক্রেয়ন কিনে ফেলা যাবে অনায়াসে। তোমাকে পাওয়া যাবে। একদিন আশ্চর্য হলাম। আমি বড় হয়ে গেছি। তোমাকেও পেয়ে ফেললাম। সারাদিন একসাথে ঘোরাঘুরি। অদ্ভুত সব বায়না। পরীক্ষার হল অথবা ক্লাসরুম থেকে তোমার ফোন পেয়ে পিছনের দরজা দিয়ে তোমার কাছে ছুটে যাচ্ছি। বৃষ্টিতে ভিজছি। ভিজে জ্বর বাধাচ্ছি। খিচুড়ি খাচ্ছি। ট্রেনে চড়ে হারিয়ে যাচ্ছি শহর থেকে। তোমাকে টানা কয়েকদিন না দেখলে মরে যাচ্ছি। অদ্ভুত সব কাগজ দিয়ে বানানো এটা ওটা উপহার পাচ্ছি। তখন মনে হয়েছিল আর যেন বড় না হই। সেই চাওয়াটা পূর্ণ হয়নি। আরো অনেক বড় হয়ে গেলাম। ততদিনে তোমাকে হারিয়ে ফেললাম। তারপর আমার পুনর্জন্ম। আমি ভুলে যাবার চেষ্টা করছি। তোমাকে না। আমাকে। আমাকে ভোলা সম্ভব। তোমাকে না। আমি আর আগের মত ট্রাফিকজ্যামে পড়ে মহাবিরক্ত হই না। হঠাৎ আগুনের ফ্লাটে দরজা বন্ধ করে নিষিদ্ধ ঘোরে চলে যাবার চেষ্টা করিনা…… বৃষ্টির মধ্যে ছাদে যাইনা…… কাড়াকাড়ি করে একটা সিগারেট পাচ জন মিলে খাইনা……সারারাত তাস খেলিনা…… কলেজগেটে দাঁড়িয়ে চালতা চাটনি খাইনা…… এখন আমি প্রায়ই স্বপ্ন দেখি মরে গেছি। জীবন আর মৃত্তুর মাঝখানে জেগে ওঠা তীরে সাময়িক বসবাস করে তোমার আর তোমাদের ঋন নিয়েই চলে যাচ্ছি। মাঝখানে শুধু এপিটাফ হয়ে আছে দুই জন্মের ব্যবধান।
৬টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
আনন্দের কোনো পাতা নেই আপনার রোজনামচার খাতায়?
তেলাপোকা রোমেন
আমার মনেই পড়েনা 🙂
নীহারিকা
২৪ ঘন্টার মধ্যে কি দুটো পোস্ট দেয়া হলো?
তেলাপোকা রোমেন
দুঃখিত 🙁
মৌনতা রিতু
বিষন্ন স্মৃতির খাতা। এ স্মৃতির পাতা না খোলাই ভাল। তবু খুলে যায়।
হঠাৎ যেমন বড় হই তেমনি হঠাৎই ছোট হতে ইচ্ছে করে।
তেলাপোকা রোমেন
তবুও ঝাপি খুলে বসি। বিষন্নতা আমার আটপৌরে প্রেমিকা 🙂