সরকারে যোগদান না করে একটু অসুবিধায় পড়েছিল মুসলিম লীগ। শেষ পর্যন্ত জনাব লর্ড ওয়েভেলের সাথে সাক্ষাত করেন এবং মুসলিম লীগ যাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগদান করতে পারে সেই সম্বন্ধে আলোচনা করেন। মি. জিন্নাহ তাকে অনুমতি দিয়েছিলেন আলোচনা চালাতে। শেষ পর্যন্ত জিন্নাহ-ওয়েভেল আলোচনা করে মুসলিম লীগ সরকারে যোগদান করতে রাজি হয়। অক্টোবর মাসের শেষের দিকে লিয়াকত আলী খান, আই আই চুন্দ্রিগড়, আবদুর রব নিশতার, রাজা গজনফর আলী খান এবং যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল মুসলিম লীগের তরফ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন ভারত সরকারে যোগদান করেন। মুসলিম লীগ যদি কেন্দ্রীয় সরকারে যোগদান না করত তবে কংগ্রেস কিছুতেই পাকিস্তান দাবি মানতে চাইত না।
১৯৪৭ সালের জুন মাসে ঘোষণা করা হল ভারতবর্ষ ভাগ হবে। কংগ্রেস ভারতবর্ষকে ভাগ করতে রাজি হয়েছে এই জন্য যে বাংলাদেশ ও পাঞ্জাব ভাগ হবে। আসামের সিলেট জেলা ছাড়া আর কিছুই পাকিস্তানে আসবে না। বাংলাদেশের কলকাতা আর তার আশেপাশের জেলাগুলিও ভারতবর্ষে থাকবে। মওলানা আকরাম খাঁ সাহেব ও মুসলিম লীগ নেতারা বাংলাদেশ ভাগ করার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করলেন। বর্ধমান ডিভিশন আমরা না-ও পেতে পারি। কলকাতা কেন পাব না? কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভা বাংলাদেশ ভাগ করতে হবে বলে জনমত সৃষ্টি করতে শুরু করল। আমরাও বাংলাদেশ ভাগ হতে দেব না, এর জন্য সভা করতে শুরু করলাম। আমরা কর্মীরা কি জানতাম যে, কেন্দ্রীয় কংগ্রেস ও কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগ মেনে নিয়েছে এই ভাগের ফর্মুলা? বাংলাদেশ যে ভাগ হবে বাংলাদেশের নেতারা তা জানতেন না। সমস্ত বাংলা ও আসাম পাকিস্তানে আসবে এটাই ছিল তাদের ধারণা। আজ দেখা যাচ্ছে, মাত্র আসামের এক জেলা—-তাও যদি গণভোটে জয়লাভ করতে পারি। আর বাংলাদেশে মুসলিম সংখ্যাগুরু জেলাগুলি কেটে হিন্দুস্তানে দেওয়া হবে। আমরা হতাশ হয়ে পড়লাম। কলকাতার কর্মীরা ও পশ্চিমবঙ্গের কর্মীরা এসে আমাদের বলত, তোমরা আমাদের ছেড়ে চলে যাবে, আমাদের কপালে কি হবে খোদাই জানে! সত্যই দুঃখ হতে লাগল ওদের জন্য। গোপনে গোপনে কলকাতার মুসলমানরা প্রস্তত ছিল, যা হয় হবে, কলকাতা ছাড়া হবে না। শহীদ সাহেবের পক্ষ থেকে বাংলা সরকারের অর্থমন্ত্রী জনাব মোহাম্মদ আলী ঘোষণা করেছিলেন, কলকাতা আমাদের রাজধানী থাকবে। দিল্লি বসে অনেক পূর্বেই যে কলকাতাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে একথা তো আমরা জানতামও না, আর বুঝতামও না।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং-৭২ ও ৭৩)
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী (পর্ব-৫৯)
১০টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
‘রাজকাহিনী’ সিনেমাটা দেখেছো রুবা’পু? বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়ে সিনেমাটির কথা মনে হলো।
যতো পড়ছি, ততোই যেনো গভীর থেকে গভীরে ডুবে যাচ্ছি।
লিখে চলো আপু। ভালো থেকো। -{@
মারজানা ফেরদৌস রুবা
না, দেখা হয়নি। আমার মুভি কমই দেখা হয়।
ধন্যবাদ তোমাকে।
নীলাঞ্জনা নীলা
যদি পারো দেখে নিও।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
(y)
মোঃ মজিবর রহমান
বাংলা ভাগ আসলেই কস্টের রুবা আপু। কিন্তু উপরের নির্দেশওকেরা নিচের কর্মীদের মনের কস্ট জেনেও জানতে চাইত না।
সঙ্গে আছি আপু।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
কতো যে কষ্টের! কালের পর কালজুড়ে এর রেশ বাঙালীরা বহন করে বেড়াচ্ছে। নেতা যদি কোন ভুল করেন তার খেসারত জাতিকে আজীবন দিতে হয়। আমরা তাদের সে ভুলের মাশুল আজও দিয়ে যাচ্ছি।
নীহারিকা
পড়ছি আর জানছি।
এত কষ্ট করে লেখার জন্য ধন্যবাদ আপা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ আপু।
ব্লগার সজীব
ঐ সময়ে ভারত ভাগ হয়ে তিনটি দেশ হলেই সবচেয়ে ভাল হতো। বাংলা, ভারত, পাকিস্তান। এটি অবশ্যই তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
বাংলা, ভারত, পাকিস্তান তিনটি দেশ হলেও হয়তো আজকের বাংলাদেশ নিয়ে এতো ঝামেলা হতো না। ব্যর্থতা তো বটেই আর এর খেসারত দিচ্ছি আমরা বাঙালীরা সাম্প্রদায়িকতার বেড়াজালে জড়িয়ে।