আমার রাফান, দেখি কয়েকদিন ধরে গান করতেছে, প্রথমে বুঝে ওঠতে পারিনি!! পরে খেয়াল করলে শুনি, গানের লাইনগুলি এমন-
– “কষ্টে নিশি কাটেলো…কষ্টে নিশি কাটে”…
আমি তো অবাক হয়ে গেলাম, হাসব নাকি কাঁদব কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না,বাচ্চাটা আমার এই গান গাচ্ছে..এই ধরনের গানতো আমি শুনি না!!
মনে মনে বললাম, তুমিতো ভালো করে বাংলায় কথাই বলতে পারো না, গান কেমনে শিখলা !!
কিছুটা রাগ করে, পুত্রের পিতার কাছে আমার জানতে চাওয়া-
– রাফান কি গাচ্ছে শুনেছ নাকি?
– সে বললো, কই জানি নাতো
আমি বুঝলাম, তিনি আমার প্রশ্নের উত্তর কি দিবেন, বার্সেলোনার খেলায় মগ্ন যে আছেন!!
আমারতো টেনশনের শেষ নাই, পরে ছেলেকে কাছে ডেকে জানতে চাইলাম –
-বাবা, গানটা কোথায় শুনছ?
-ছেলে বলে, মাম্মি টিভিতে!!
পরে, গানের উৎস খুজতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম-
ছোট পুত্রকে যখন আমি ঘুম পাড়াতে নিয়ে যাই, তখন রাফান টিভি দেখে, আর সকালবেলা বাংলাদেশের সব চ্যানেলে দেখি কেমন সব শিল্পিদের দিয়ে গান গাওয়ানো হয়!!
প্রতিটা চ্যানেলেই দেখি, সকালের গান, বিকালের গান হেনতেনো!!!
হয়তো, সেই রকম কোন চ্যানেলে কেউ গাওয়ার সময়, পুত্র আমার মনোযোগী শ্রোতার মতো গানের লাইনটুকু শিখে নিয়েছে!!!
আমি জানি, আমার ছেলেটা গান শুনতে ভালোবাসে,
ওকে যখন পিছনে বসিয়ে ড্রাইভ করে বড় ছেলেকে স্কুলে দিতে যাই, গাড়ির অডিওতে কখনো বেজে ওঠে হেমন্ত,শ্রীকান্ত কখনোবা ইন্দ্রাণী সেনের গান!!
মায়ের মতো, রবীন্দ্র সংগীতগুলোই বেশি শোনে আমার ছেলে!!
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গলায় …”তোমায় গান শোনাব” গানটি, ভীষন মনোযোগী শ্রোতার মতো সে শোনে!!
এরপর যদি ইন্দ্রাণী সেনের কোন গান বেজে ওঠে, তবে সে বলে ওঠবে – “মাম্মি গ্রান্ড পা সনগ দাও”….
আমি প্রথমে বুঝতে পারতাম না, জানতে চাইতাম-
– কি বলো, “বাবা গ্রান্ড-পা, সনগ কোনটা”?
পরে বুঝতে পারতাম সে হেমন্তের গানটাই শুনতে চাইছে বারবার!!!
ভাবলাম, বেশ নাম দিলো তো আমার ছেলে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে “গ্রান্ড-পা”…চাট্টিখানি কথা নয়..!!!
মাঝে মাঝে মনে হয়, এখানে কাছাকাছি যদি একটা বাংলা গানের স্কুল থাকতো, তবে আমি তাকে ভর্তি করিয়ে দিতাম৷ মায়ের মতো গান শিখতো আমার ছেলেটা!!
যদিও তার মা শিল্পী হয়ে ওঠেনি, তবুও শিল্পের আবেগটুকু আজো ধরে রেখেছে মনের ভিতর!!!
এরপর, কোন এক ক্লান্ত বিকেলে, হয়তো আমরা মা-ছেলে মিলে একসাথে গাইতাম…
“পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়…
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়”..!!
রিফাত নওরিন
আটলান্টা, যুক্তরাষ্ট্র
২২টি মন্তব্য
ইলিয়াস মাসুদ
খুব সচেতন হওয়া সত্তেও বিদেশে বিশেষ করে ইউরোপ আমিরিকা অষ্ট্রলিয়াতে বাচ্চাদের বাংলা শেখানো খুব সহজ না,যত দিন না স্কুলে যায় ততদিন খুব ভাল বাংলা বলে স্কুলে যাওয়া শুরু করলে বাচ্চারা কেমন যেন দূরের হয়ে আসে এই দূরুত্ব যে শুধু ভাষাতেই সীমাবদ্ধ থাকে তাই না।আমরা যতোই আধুনীক হই না কেন,আমরা আমাদের নিজেস্ব একটা সংস্কৃতি মাথার ভেতর ধারন করে রেখেছি সেখানে আর ওরা ভিন্ন সংস্কৃতি ধারন করছে,আর এই সময় ওদের মাথার ভেতর আমাদের সংস্কৃতি ঢুকিয়ে দেয়া খুব সহজ বিষয় না,বাবা মা দুইজনের-ই প্রচন্ড ইচ্চা থাকা সত্তেও সময়ের অভাবে হয়ে উঠেনা।
কিছু কিছু বাচ্চারাই খুব এক্সেপশনাল হয়,আপনার বাচ্চাটা তেমন, ওর জন্য দোয়া রইলো।
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া৷
ভালো থাকুন৷
মিষ্টি জিন
গ্রান্ড পা হেমন্ত মূখোপাধ্যায় বেশ মানিয়েছ্ কিন্তু নাম টা। ছেলে মার মতই গান পাগল ।
বিদেশে জন্ম গ্রহন করা সন্তানদের বাংলাদশি সংস্কৃতিতে মানুষ করে তোলা বেশ কঠিন।
রিফাত নওরিন
হা হা…সত্যিই আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই গ্রান্ড-পা শুনে… ভালো থাকুন আপু৷
শুভেচ্ছা জানবেন৷
আবু খায়ের আনিছ
গান যদি হয় ভাষার কাছে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যম তবে মন্দ হয় না, ভাষার কাছেই থাকুক। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
রিফাত নওরিন
ধন্যবাদ ভাইয়া৷
ভালো থাকুন৷
নিহারীকা জান্নাত
গ্রান্ডপা শুনে ভেবেছিলাম কবিগুরু, পরে দেখি অন্যজন।
কি যে মজা পেয়েছি কথাটায়।
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ আপু..!! একটু মোটা গলায় কেউ গান করুক অথবা কার্টুনের যেকোন চরিত্র, আওয়াজ শুনলেই সব আমার ছেলের কাছে গ্রান্ড-পা …!!
মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন
ব্লগে একজন শিল্পী পাওয়া গেল এবং ভবিষ্যৎ শিল্পীও রেডী হচ্ছে। 🙂
এখন শুধু শোনার বাকী।
রিফাত নওরিন
না ভাইয়া, শিল্পী নই আমি..যেমন শিখেছিলাম তেমন চর্চার অভাবে ভুলেও গেছি…সুরগুলো মনে রয়েছে আজো ৷
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্ত্যবের জন্য!!!
শুন্য শুন্যালয়
গ্রান্ডপা সং? 😀 দারুণ মজা পেলাম। বাচ্চাদের নিষ্পাপতা সত্যিই আনন্দ দেয়।
ফোক সং কিন্তু খারাপ নয় আপু, যদিও প্রেজেন্টেশনের উপর নির্ভর করে তা। বাচ্চাটা মায়ের মতোই শিল্পী মন নিয়ে বড় হয়ে উঠুক। অনেক আদর আর প্রার্থনা (3
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ আপু, এতো সুন্দর একটা মন্তব্যের জন্য!!
ভালো থাকুন!!
সৈয়দ আলী উল আমিন
খুব ভাল লাগলো। বাচ্চাদের বিদেশে দেশীয় ভাবে মানুষ করা কষ্ট। দোয়া রইলো।
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!!
ভালো থাকুন!!!
মৌনতা রিতু
আমার বড় ছেলেটা একটা খুদে পন্ডিত। সে সারাক্ষন বই নিয়েই ব্যাস্ত থাকে। ক্লাসের বই না, অন্য বই। সে গান অতোটা পছন্দ করে না। ছোট ছেলে গান পছন্দ করে বেশ। গত সপ্তাহে যখন ক্যাডেটে মৌখিক পরীক্ষায় সবার কাছে শুনলাম ভাইভায় গান শুনতে চাচ্ছে, আমি পড়লাম বিপদে। এখন কি করি! গান শেখানোর জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। কিছুতেই সে গান বলতে পারছে না। কোনোরকম ভাওয়াইয়া গান,” ও কি গাড়িয়াল ভাই” শিখাতে গিয়ে চোখ দিয়ে আমার পানি আসতে লাগলো। তবে বেঁচে গেলাম ওকে আর গান গাইতে বলে না। ছেলেকে দেখে হয়ত বুঝেই গেছে একে দিয়ে আর যাইহোক গান হবে না। তবে তার খুবই শখ আইনাস্টাইনের মতো একটা বেহালার। এবার ভাবছি কিনেই দিব।
তবে মজার কথা, এবার ঢাকা থেকে আসার সময় উদ্ভট কিছু গান আমরা শুনতে শুনতে এসছি। মনে হচ্ছিল মাথায় বাড়ি মারি।
তবে আপনার ছেলের গ্রান্ড পা কথাটা খুব ভাল লেগেছে।
রিফাত নওরিন
হা হা আপনার ছেলের কথাগুলো শুনে অনেক মজা পেলাম!! অনেক ধন্যবাদ আপু, আপনি খুব ভালো লিখেন শুভকামনা রইলো !!
ইঞ্জা
গ্রান্ড পা সং,বাহ মজা তো, সুন্দর লেখাটার জন্য শুভেচ্ছা।
রিফাত নওরিন
আন্তরিক ধন্যবাদ আপনাকে…ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন!!
ইঞ্জা
শুভকামনা
জিসান শা ইকরাম
নিজের কথা এমন মায়া দিয়ে সহজ ভাবে উপস্থাপন করা খুবই কঠিন,
আপনি তা বেশ সাফল্যের সাথেই করেছেন।
ভিন্ন পরিবেশ, জগৎ এর মাঝে থেকেও সন্তানকে বাংলা ধারণ করার আপনার আগ্রহ, ইচ্ছে দেখে ভাল লাগলো।
লেখুন নিয়মিত,
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, এতো সুন্দর মন্তব্যের জন্য!!
ভালো থাকুন !!
নীলাঞ্জনা নীলা
গ্রান্ডপা সঙ! দারুণ নাম দিয়েছে কিন্তু আপনার ছেলেটা।
আমি বলি আমার বুড়ো।
আমার ছেলে ডাকতো বুড়ো বাবা।
গান শোনাতে হবে কিন্তু।