শৈশব আমাদের সবার জীবনের সোনালী একটি অধ্যায়৷ জীবনের পরিমাপে যার স্থান সবার উপরে৷ সেই বাল্যকালের অনুভূতি, প্রথম অ-আ পড়া, মায়ের হাতে ভাত খাওয়া, ভাই-বোনদের সাথে দুষ্টুমিতে ভরা এক শৈশব….. বড়ই মধুরতম এক স্মৃতি হয়ে আছে এখনো আমার মনে৷
নিশ্চিন্তে সকালে ঘুম থেকে উঠে মায়ের হাতের তৈরী চা-রুটি খেয়ে স্কুলে যাওয়া, স্কুল থেকে এসে পড়া তৈরী করে খেলতে যাওয়া, আর সন্ধাবেলায় রূপকথার রাজকন্যার গল্প শুনে ঘুমাতে যাওয়া, অফুরন্ত আনন্দে মন ভাসানো দিনগুলি আমার৷
বিদেশ- বিভূয়ে জীবনটায়, আমার এখনকার দিনগুলি কাটে আমার বাচ্চাদের শৈশব দেখে, ভীষন ব্যাস্ততায় ভরা তাদের জীবন৷ প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা স্কুল করে ক্লান্ত আমার বাচ্চারা ঘুমিয়েই বিকালটা পার করে দেয়৷ তাদের জীবনের আকর্ষন সবকিছু সুপারহিরো, ডাইনোসর, শার্ক এইসব ঘিরে৷
এই বয়সেই যদি আমি বলি বাবারা একটা গল্প বলো তখন ঘুরে ফিরে তারা বলে ওঠে….মাম্মি এতবড়ো ডাইনোসর ছিল যথাক্রমে গল্প বলা ডাইনোসর থেকে শুরু হয়ে সুপারহিরোতে গিয়ে শেষ হয়৷
মনে পড়ে আমাদের ছোটবেলা কেটেছিলো ঠাকুরমার ঝুলি আর রূপকথার গল্প পড়ে৷ প্রতিটা গল্প পড়তে পড়তে মুখস্থ হয়ে যেতো, যখন নানুর বাড়ি যেতাম প্রতি রাতেই হতো গল্প বলার আসর৷ প্রধান বক্তা আমিই থাকতাম, এক ঝাঁক কাজিনদের নিয়ে চলতো আমাদের গল্প বলার আসর৷
খুব ছোটবেলা থেকে আমি প্রচুর বই পড়তাম.. গল্প-কবিতা, রূপকথা আর প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া আমার পুরোনো অভ্যাস৷ যখন আমি পড়তাম কাজলা দিদির কথা তখন আমি আবগে ভেসে যেতাম, যখন আমি পড়তাম গড়াই নদীর তীরে, তখন যেনো আমার মানসপটে ভেসে উঠত নদীর ধারের একখানা ঘর, বড় মায়ায় সাজানো সেই ঘর৷
আমার বাচ্চাদের দেখে ভাবি, তাদের সুপার হিরোময় জীবনে কখনো এই অনুভূতি আসবেনা, তারা কখনো বুঝতে পারবে না বাশঁবাগানের মাথার উপর চাদঁখানা দেখতে কতটা সুন্দর, যতো চেষ্টাই করি না কেনো আবেগ কি তারা আনতে পারবে, সময় যে বদলাচ্ছে ….
আমার শুধু মনে হয় এর চেয়ে ঢের ভালো ছিল আমাদের বৌ-ছি খেলার সবুজ মাঠ, গল্প বলার আসর, মুগ্ধতা নিয়ে প্রকৃতিকে ভালবাসা৷
হাজারো দামে যদি কেনা যেত, তবে আমি হয়তো আমার শৈশবে ফিরে যেতাম, আমি আবারো বাচতে চাইতাম সেই সময়ে, যেখানে হয়তো নিশ্চিন্তে আমি আবারো মাথা দুলিয়ে পড়তাম-
আমি হবো সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুমবাগে উঠব আমি ডাকি..
রিফাত নওরিন
আটলান্টা, যুক্তরাষ্ট্র
১৭টি মন্তব্য
ইকরাম মাহমুদ
এসময়ের শিশুদের কথা মনে করে মনটা খারাপ হয়ে গেল। নানি দাদির কাছে বানর-বাদশার গল্প শুনে কল্পনার রাজ্যে খুঁজে নিতাম নিজেকেও। এখনকার শিশুদের কল্পনায় বাস করার সুযোগও কি দেওয়া হয়। কাল্পনিক চিত্র এখন চোখের সামনে এনে দিয়েছে প্রযুক্তি। মাঠে ঘাটে সারাদুপুর দাবড়িয়ে বেড়ানোর সুযোগও কি দেওয়া হচ্ছে বা সে সুযোগ কি পাচ্ছে আজকের শিশুরা!! শিশুদের বানাচ্ছি আমরা আমাদের কল্পনার পুতুল।
শৈশব নিয়ে লিখব ভেবেছিলাম, আপনার লেখাতে নিজের শৈশবটাও খুঁজে পেলাম। মনে হলো যেনো শৈশবপুরে আছি।
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে৷
ভাল থাকুন৷
জিসান শা ইকরাম
স্বাগতম সোনেলার উটোনে -{@
এটি আপনার নিজস্ব ভুবন, এমন ভেবেই লেখুন এখানে।
আমাদের শৈশব আর এখনকার শৈশবের পার্থক্য অনেক। বলতে গেলে সম্পুর্নই উলটো।
আপনার লেখা পড়ে ফেলে আসা দিনগুলো মনে পরে গেলো।
নিয়মিত লেখুন, শুভকামনা।
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ৷ দূর থেকে সোনেলার লিখাগুলো পড়তাম, অনেক ভালো লাগত তাই নিজেই চলে এলাম৷
নীলাঞ্জনা নীলা
স্বাগত জানাচ্ছি আমাদের সোনেলা নীড়ে।
ভালো লিখেছেন। ঠাকুরমার ঝুলি আর এখনকার সুপারহিরোতে অনেক পার্থক্য। আমরা যেমন পারিনি সুপারহিরোতে অভ্যস্ত হতে, তেমনি এ প্রজন্মও পারেনি। প্রজন্ম ব্যবধান তো একেই বলে।
লিখুন আরোও।
রিফাত নওরিন
সত্যিই প্রজন্ম ব্যবধান আর কখনোই ঘুচবে না৷
আপনি অনেক ভালো লিখেন, ভালো থাকুন৷
নীলাঞ্জনা নীলা
ধন্যবাদ আপনাকে নওরিন।
আপনার লেখায় সহজতা আছে, যা আমার খুব পছন্দ।
ভালো থাকুন।
নিহারীকা জান্নাত
সেই ছোট্টবেলায় ফিরে গেলাম আপনার লেখা পড়ে। সেই ঠাকুমার ঝুলি, দাড়িয়াবান্ধা, এক্কা-দোক্কা খেলার দিনগুলোয়। সাথে সাথে মায়া হয় এযুগের বাচ্চাদের জন্য যাদের দিন কাটে ক্লাস, কোচিং, কম্পিউটার গেমস আর পার্কে ঘুরে।
সোনেলায় স্বাগতম ও অভিনন্দন প্রথম লেখার জন্য। -{@
রিফাত নওরিন
অনেক অনেক ধন্যবাদ, আশা করি পাশে পাবো আপনাদের সবাইকে৷
নিহারীকা জান্নাত
লিখুন।
পাশে আছি, পাশে থাকবো। 🙂
মিষ্টি জিন
সোনেলার উঠোনে স্বাগতম আপু। এই উঠোনে ও কিন্তু আমরা অনেক মজা করি,মাঝে মাঝে পা ছাডিয়ে বসে আড্ডা দেই, সামান্য ব্যাপারে হেসে কুটি কুটি হয়ে একজন আর জনের গায়ে এলিয়ে পড়ি । চুল টানাটানি থেকে কলার টানা টানি সবই চলে এখানে। সেই শৈশবে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করি।
আমরা শৈশবের যে আনন্দ করতাম আমাদের সন্তানরা তার কিছু পাচছে না। কষ্ট হঁয় ওদের জন্য।
রিফাত নওরিন
আপু আপনার কথায় স্বস্তি পেলাম অনেক৷ আশাকরি অনেক নতুন বন্ধু পাব ৷ 🙂 🙂 🙂
আবু খায়ের আনিছ
স্বাগতম সোনেলায়।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে পান্তা ভাত হোক আর যাইহোক খেয়ে একদান খেলা শেষ করে এসে পড়তে বসতাম এইটুকু মনে আছে।
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ৷ ভালো থাকুন ৷
শুন্য শুন্যালয়
আপু সুস্বাগতম আমাদের সোনেলায়। এই যে নিন গোলাপফুল -{@
আপু শৈশবের অনুভূতি গুলো অন্যরকম। আমাদের মনেহয় আফসোস করা উচিৎ নয়। ওরা ওদের মতো করে শৈশবের আনন্দ নিচ্ছে, যখন ওরা বড় হবে ওরাও ওদের শৈশব কে মিস করবে আমাদেরই মতো। সময়ের পার্থক্যে আনন্দের কিছুটা পার্থক্য থাকবেই।
আপনি তো বেশ লেখেন দেখছি। নিয়মিত পাবো তো আপু?
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে৷
যখন ওরা বড় হবে ওরাও ওদের শৈশব কে মিস করবে আমাদেরই মতো। সময়ের পার্থক্যে আনন্দের কিছুটা পার্থক্য থাকবেই।
কথাটা ভালো লাগলো খুব৷
মৌনতা রিতু
আমি আপনার আগমনে সু-স্বাগতম জানাতে পারিনি। আমার বড় ছেলেটার পরীক্ষা ছিল। ঢাকা যাওয়া আসা সব মিলায়ে বেশ ব্যাস্ত ছিলাম।
আমি প্রচন্ড দুষ্টু ছিলাম। ছুটি হইছে তো কে আর আমাকে আটকায়! সোজা চলে যেতাম নানা/ দাদা বাড়ি। আমার শৈশব এক সোনালী শৈশব। এ গাছ ও গাছ, ছোট ছোট ডোবায় পানি ছিঁচে মাছ ধরা, খেজুর পেড়ে পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখা,
আমিও আমার ছেলেদের শৈশব দেখে বিষন্নে ভুগি। ওদের জীবনটা চারদেয়ালের মাঝেই রয়ে গেলো। ডাইনোসার আর সুপারম্যানেই শেষ হলোওদের শৈশব
খুব সুন্দর স্মৃতিচারন। পড়তে গিয়ে মনে হলো আমারই কথা কেউ বলছে।