১. সোহা ও মিতা ভাল বন্ধু। সেই সুবাদে মিতার হবু বর জিসান এর সাথে সোহার সামান্য আলাপ পরিচয়। বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে। এসময় জিসান মজা নেবার আর কোন বিষয় খুঁজে পাচ্ছিলনা। তাই মিতাকে বলল, সোহা দেখতে খুব সুন্দরী। সোহা তাকে ম্যাসেজ পাঠায়,কথা বলে। অথচ সোহা এসব কিছুই জানেনা। বউকে হিংসে করিয়ে মজা নেবার জন্য আর নিজেকে হিরো বানানোর জন্য জিসানের বানানো এসব কথাই সোহা ও মিতার এতদিনের বন্ধুত্বে ফাটল ধরাল।
২. সারার কাজিন মিরাজ সারাকে বিয়ে করতে চায়। কারণ সারার বাবার অগাধ সম্পদ আছে। সেটা বুঝতে পেরে সারা বিয়েতে অমত করে।শেষে মিরাজ অন্য মেয়েকে বিয়ে করে। তারপর বৌকে বলে, “সারা আমার জন্য পাগল ছিল। কিন্তু আমি তাকে পাত্তা দেইনি।” এরপর থেকে তার বৌ আর সারাকে দেখতে পারেনা।
৩. মিনার স্বামী বাকপ্রতিবন্ধী ও গরীব। তারা জমির মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকে। জমির মিয়া মিনার রূপের আগুনে আর মিনা জমির মিয়ার টাকার প্রাসাদে হাবুডুবু খেয়ে উচ্ছন্নে যায়। তারপর একদিন এলাকার লোক শালিস বসায়। ফলাফল জমির মিয়ার সম্পদ আর মীনার উজ্জ্বল মুখ দুটোই পুড়ে।
৪. যারা ও লিটনের ১ বছরের সম্পর্ক। লিটন শুরু থেকে যারাকে ফ্ল্যাটে দাওয়াত করে। শেষে লিটনের ফ্ল্যাটে না যাওয়ার জন্য যারা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসে। তারপর লিটন সকলকে বলে বেড়ায়, “মেয়ে খালি ফ্ল্যাটে আসতে চাইত। তাই দিলাম সম্পর্ক ভেঙে।”
৫. পৃথা মা হতে চলেছে, বেবীর বাবা চিন্টু। প্রস্তাবটা চিন্টুর দিক থেকেই এসেছিল এবং অনেকটা জোরপূর্বক চিন্টু….. । অথচ সকলের কাছে এখন সে বলে বেড়ায় পৃথাই তাকে জোর করে এসব করিয়েছে। পৃথার গায়ে কত জোর ভেবেই পাচ্ছি না।
৬. রমিজ কত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে তা গৌরবের সাথে বলে বেড়ায়। অথচ নিজে বিয়ে করার জন্য কচি ভার্জিন সাদা চামড়া খুঁজছে। বাহ!
৭. মারিয়া তার আশেপাশের কোন জোড়াকে সুখী হতে দেখলেই তাদের মাঝে গন্ডগোল বাঁধাত। কত বান্ধবীর হবু বরকে পটিয়ে প্রেম করেছে, কতজনের সংসার ভেঙেছে,তার শেষ নেই। অথচ আজ সে নিজে ঠিকই ঢাকা ভার্সিটির লেকচারার এর সাথে প্রেম,তারপর বিয়ে করে বসে আছে। এদের কপাল সুপ্রসন্ন হয় কিনা……
৮. রাজা গোটা ছাত্রজীবনে যত মেয়ের পেছনে ঘুরেছে, প্রেম পত্র দিয়েছে, চুরি করে নম্বার জোগাড় করেছে, আজ সে তার বউকে সবকটা মেয়ের গল্প শোনায়, তবে উল্টো করে।বলে, “আরে অমুক সুন্দরী আমার পিছে ঘুরত। তমুক আমার নম্বার জোগাড় করে ফোন দিত। তমুক আমাকে না দেখলে গলাত ফাঁস নিত।কত মেয়ে আমারে পত্র লিখত। আমার সাথে প্রেম করতে চাইত।”
৯. কবির ঝুমাকে পছন্দ করে। তাই জোর করে নানা গিফট দেয়। ঝুমা প্রায়ই সেগুলো ফেরত পাঠিয়ে দেয়। কবির নানা কৌশলে আবার পাঠায়, ঝুমাকে বাধ্য করে সেসব নিতে। তারপরো ঝুমা পটে নাই। অতপর সে বলে বেড়ায়, ঝুমা তার কাছে নানা জিনিস চাইত, তাই সে না কিনে দিয়ে পারত না। বাহ!
১০. পাপড়ি ও রকিব সম্পর্ক তৈরি করে টাকা দেখেই। পাপড়ি ভাবে, তার সকল খরচ রকিব বহন করবে, রকিব ও ভাবে ঝুমাকে পটিয়ে ডেটিং ও মোবাইল খরচ দুটোই আদায় করা যাবে। তারপর যখন দেখে তারা সম মেরুর যাত্রী তখন একে অন্যকে বিকর্ষণ করতে শুরু করে।
এসব প্রতিটা ঘটনাই বাস্তব থেকে তুলে আনা হয়েছে। শুধু নাম পাল্টে পোস্ট করা হল,তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে। আসুন আমরা এসব চাপাবাজি স্বভাব ত্যাগ করি। শুভরাত।
২৩টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
সমাজে আমাদের চারপাশে এমম লোক আমরা দেখি। এত অল্প বয়েসে আপনি এসব নিয়ে ভাবেন! অবাক হলেও ভাল লেগেছে আপনার ভাবনার বিস্তৃতি দেখে।
ভাল পোষ্ট।
এই জিসানের সাথে আমার কোনোরুপ যোগাযোগ নেই। এইটা আমি না ভাইয়া 🙁
নীরা সাদীয়া
হাহাহাঃ আপনার নামটা ভেবে লিখিনি বন্ধু। শুভকামনা রইল।
জিসান শা ইকরাম
🙂
শুভ কামনা -{@
ছাইরাছ হেলাল
চাপাবাজি তো আসল সম্পদ! এটিকে এড়িয়ে যাওয়া খুব কঠিন।
যদিও বাস্তবতা আরও কঠিন,
আপনার লেখার গুনে ঘটনাগুলো আরও জ্যান্তব হয়ে উঠেছে,
ভাল লেখেন আপনি,
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ আপনাকে। শুভকামনা রইল।
মৌনতা রিতু
আসলে প্রিথাদের গায়ে কতো জোর!
মিরাজরা সমাজে প্রকটভাবে বিরাজ করে।
মেয়েরাই মেয়েদের সব থেকে বড় প্রতিদন্ধি। সব ক্ষেত্রেই এটা বিদ্যমান। মেয়েদের মধ্যে ইগো সব থেকে বেশী। এটা কেউ মানে কেউ মানে না। ঢংও এই মেয়েদের মধ্যে বেশী। এরা প্রভাবও খাঁটায় খুব। আর কিছু বেহুদ্দা বেসরম পুরুষদের উপর ভালোই প্রভাব খাটাতে পারে। ঐ যে কথায় আছে না, বৌ এর থেকে প্রেমিকার জোর বেশী। আর এসব প্রেমিকা যে কারোরই না এটা এরা কখনোই বোঝে না। এদের মাথায় কাঁঠাল ভাঙ্গে মারিয়াদের মতো মেয়েরা। আসলেই এদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন।
ভালো হয়েছে পোষ্ট। বাস্তব এই কথাগুলো।
নীরা সাদীয়া
মেয়েদেরকে মেয়েদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ আপু। শুভরাত।
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
চাপাবাজিতে আমরা মাস্টার। এসব কমবে না, বরং বাড়ছে দিন কে দিন
নীরা সাদীয়া
হুম। তাইতো চলছে। ধন্যবাদ। শুভরাত।
মোঃ মজিবর রহমান
হায়! চাপাবাজি শিখতে পারলাম না এটাই বড় আফসোস থেকে গেল।
ভাল।
নীরা সাদীয়া
তাই? শুভরাত।
মোঃ মজিবর রহমান
চাপাবাজি যদি না হয় অমঙ্গলের তবে জিবনে এই চাপাবাজির অতীব প্রয়োজন।
শুভসকাল।
নীরা সাদীয়া
একজনের চাপাবাজির জন্য যদি অন্যকাউকে বিপাকে পড়তে হয়, তবে সেটা অবশ্যই অমঙ্গলের। শুভরাত।
নীলাঞ্জনা নীলা
প্রায় প্রত্যেক মানুষের জীবনের সর্বক্ষেত্রে চাপাবাজি একটা শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে। সে ছেলে হোক আর মেয়েই হোক। তবে ছেলেদের ক্ষেত্রটার পরিধি একটু বেশী। মেয়েরা ইমোশন্যাল বেশী আর ধরা খায় তারাই আগে। সমাজের এমন কিছু সত্যিকাহন আপনি তুলে ধরেছেন আপনার লেখনীতে। ভালো লেগেছে।
আমি ক্ষুদ্রজ্ঞানের মানুষ। তাই জানতে চাই এমন তথ্যসমৃদ্ধ লেখাকে কি অণুগল্প বলা হয়?
ধন্যবাদ আপনাকে।
নীরা সাদীয়া
একদম ঠিক বলেছেন। আর অণুগল্প বলেছি যেহেতু খন্ড খন্ড গল্পগুলো ছোট গল্পের চেয়েও অনেক ছোট। ধন্যবাদ আপি। শুভরাত।
অপার্থিব
মানুষ বড় বিচিত্র প্রানী। সে তার নিজের ব্যর্থতা আড়াল করতে চায়, এই চাওয়া থেকেই নিজেকে হাইলাইট করে নানা রকম গল্প ফাঁদে। দৈনন্দিন নানা ঝামেলায় বিপর্যস্ত ব্যর্থ মানুষ রাতে বাসায় ফিরে অন্তত নিজের বউয়ের কাছে হিরো সাজতে চায়। মন্দ কী!!!
নীরা সাদীয়া
মন্দ হতনা যদি এসব চাপাবাজির কারণে মিতা কিংবা সারাকে ভিকটিম হতে না হত। যেখানে এ চাপাবাজি কারোর সম্মান নষ্ট করে,সম্পর্ক নষ্ট করে তা অবশ্যই নিন্দনীয়। তাই আমাদের উচিত চাপাবাজি ত্যাগ করে সত্যের পথে চলা। শুভরাত।
আবু খায়ের আনিছ
উদুর পিণ্ড বুধোর ঘাড়ে যাকে বলে।
চাপাবাজীর অনেকগুলো গল্প দিয়েছেন, যার প্রত্যেকটার আলাদা অর্থ আছে, তাই বিশ্লেষণ করা কঠিন। একই ধরনের গল্প দিলে হয়ত বিশ্লেষণ করা যেত। তবে যা লিখেছেন তার সবগুলোই বাস্তবত্যার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ। বেশ ভালো লিখেছেন।
নীরা সাদীয়া
একদম ঠিক বলেছেন। আমরা নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে সদা ব্যস্ত। শুভরাত।
ইঞ্জা
আমাদের বর্তমান সমাজের খুব কুৎচিত রুপটাই তুলে আনলেন আপু, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এই সব নষ্টদের দখলে চলে যাচ্ছে খুবই দ্রুত।
নীরা সাদীয়া
একদম ঠিক বলেছেন। শুভরাত।
ইঞ্জা
শুভ সন্ধ্যা