কি হয়েছে তোর, আমাকে বলবিনা?
না মা কিছুই হয়নি, হটাৎ মনটা যেন কেমন উদাস হয়ে রয়েছে।
আজ কি বাইরে কোথাও কিছু হয়েছে?
না তেমন কিছুই তো হয়নি।
তাহলে তুই চোখ বন্ধ করে ঘুমা, মাথায় হাত ভুলাতে ভুলাতে বললেন অভির মা, ঘুম হলে তোর মন ঠিক হয়ে যাবে।
না মা এখন ঘুমাবোনা, তুমি যাও ঘুমাও গিয়ে, আমি কিছুক্ষন গান শুনবো তারপর ঘুমাবো।
ঠিক তো, ঠিক মতো ঘুমাস কিন্তু।
ঠিক আছে মা ঘুমাবো, তুমি যাও শুয়ে পড়ো।
অভির মা উঠে নিজ রুমে চলে গেলেন আর অভি উঠে হোম থিয়েটারটা চালু করলো, গান বাজতে লাগলো
আমি চিরতরে দূরে চলে যাব,
তবু আমারে দেবনা ভুলিতে
আমি বাতাস হইয়া জড়াইব কেশে,
বেণী যাবে যবে খুলিতে
তবু আমারে দেবনা ভুলিতে….
দরজায় নকের শব্দ শুনে চোখ তুলে তাকালো, দেখলো অনামিকা, কিছু বলবে?
আসলাম তোমাকে দেখতে।
হুম বসো।
তোমার মন খারাপ বেবি?
না মন খারাপ হবে কেন?
এই কিছু খেলেনা, ডিনার টেবিল থেকে উঠে চলে এলে।
এমনিই খেতে ইচ্ছে করছিলোনা।
খুব সুন্দর গান শুনছো তো, আমারে দেবোনা ভুলিতে, কার গান?
নজরুলগীতি।
বেশ শ্রুতিমধুর।
হুম।
কফি খাবে বেবি?
নাহ খেতে ইচ্ছে করছেনা।
আমি একটু বসি তোমার সাথে, গান গুলি শুনি।
বসো।
সকালে ব্রেকফাস্ট করে অভি সুইমিংপুলের ওখানে এসে বসলে অভির মা এসে পাশে বসলেন।
তোর মন কেমন এখন?
ভালো মা, কেন কিছু বলবে?
দেখ তুই তো কথা শুনতে চাস না, এইবার কথা দিতে হবে আমাকে যে আমি যা বলবো সব শুনবি।
মা তোমার কথা কি আমি শুনিনা।
শুনিস কিন্তু সব না, প্রমিজ কর কথা রাখবি আমার।
মার দিকে তাকিয়ে থাকলো অভি।
কি কথা রাখবিনা, তাহলে আমি উঠে যায়।
মার হাত ধরে ফেললো অভি, আচ্ছা মা বলো, রাখবো।
কথা দিচ্ছিস তো?
হাঁ দিলাম এখন বলে ফেলো।
বাবা আমার বয়স হচ্ছে, আমার বড়োই শখ তোর বিয়ে হবে, বাচ্চা কাচ্চা হবে, আমার ঘরটা ভরপুর হবে।
মা তুমি তো জানো, আমি বিয়ে করবোনা এখন তবুও আবার?
আবার নয়, তোরও যথেষ্ট বয়স হয়েছে এখন বিয়ে না করলে বুড়ো হয়ে গেলে করবি আর তোর যদি কোনো পছন্দ থাকে তাহলে বলতে পারিস। অভি চুপ করে রইল।
অভি তোর কি অনামিকাকে পছন্দ, যদি পছন্দ হয় বলতে পারিস।
না না কি যে বলোনা মা।
তাহলে কি অন্য কেউ?
অভির চোখে অবণীর চেহেরা ফুটে উঠলো এরপর বড় একটা নিশ্বাস বেড়িয়ে এলো ভিতর থেকে, না মা আমার জীবনে এখন কেউ নেই থাকলে তোমাকেই আগে বলতাম।
ঠিক আছে, এইটা এখন আমার দায়িত্ব আর না করিসনা বাপ বলেই উনি উঠলেন, ভালো কথা আজ তো সব বন্ধ কি খাবি বল।
তোমার যা খুশী করো।
পাশেই ঘরের জানালার কাছে অনামিকা সব দাঁড়িয়ে শুনছিলো অনামিকা যা কেউ খেয়াল করেনি।
বাবা তুমি ডেকেছো, অবণী ড্রয়িংরুমে এসে জিজ্ঞেস করলো।
পাশে বোস মা, অবণী পাশে এসে বসলে ওর বাবা জিজ্ঞেস করলো, চাকরি তো ছেড়ে দিলি, এখন কি করবি চিন্তা করেছিস কিছু?
না বাবা তেমন কিছুনা, শুধু জানি আমি কানাডাতে স্যাটেল হয়ে যাবো আর চাকরি করলে ওখানেই করবো।
তোকে কখনো আমরা কোনো কিছুতে বাধা দেয়নি আর এখনো বাধা দিচ্ছিনা, একটা কথার জবাব দিবি?
কি বাবা?
তুই কি অভিকে পছন্দ করতি? অবণী চুপ করে রইলে উনি আবার বললেন তাহলে তুই চলে যাচ্ছিস কেন?
এমনিই বাবা।
তুই অভিকে কি কখনো কিছু বলেছিস।
না।
ভুল করছিস নাতো মা।
না বাবা, আমি কোনোই ভুল করছিনা, দৃঢ় ভাবে বললো অবণী।
পরশু তো তোর ফ্লাইট, তুই কি একবার ওর সাথে দেখা করে যাবি?
না বাবা, দরকার নেই আমি দেখা করেই এসেছি।
তুই ভালো বুঝিস মা, উনি উঠে চলে গেলেন নিজ রুমে আর অবণী চুপ করে বসে রইল, চোখ জোড়াতে তখন অঝোর ধারা।
অভির ফোন বেজে উঠলে অভি হাত বাড়িয়ে সেল ফোনটা তুলে নিয়ে রিসিভ করে হ্যালো বললো আর অপর প্রান্ত থেকে এক মেয়ের আওয়াজ, আমি কি অভি চৌধুরীর সাথে কথা বলছি?
জি অভি চৌধুরী বলছি, কে বলছেন?
স্যার আমি হক শিপিং থেকে আমাদের সিএমডি সাইদুল হক সাহেবের সেক্রেটারি বলছি, স্যার কথা বলবেন আপনার সাথে একটু হোল্ড করুন।
হ্যালো, অভি কেমন আছো?
সালামালেকুম আনকেল, জি ভালো আপনি কেমন আছেন?
জি ভালো, তোমার আম্মা কেমন আছেন, অনেকদিন দেখা হয়না।
জি আনকেল উনি ভালো আছেন।
আচ্ছা শুনো আমরা কাল আসছি ঢাকায়, রেডিসনে উঠবো ভাবছিলাম, তোমার সাথে দেখা হবে কি?
জি আনকেল আমি আছি আর আপনার সাথে কে আসবেন?
আমার মেয়ে মোনালিসা আসবে, তুমি তো জানোনা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে সিপিংয়ের উপর পড়াশুনা শেষ করে এসেছে আর এখন আমার কোম্পানিতে সিইও হিসাবে জয়েন করেছে।
খুব ভালো হয়েছে আনকেল কিন্তু আপনারা হোটেলে উঠবেন কেনো, আম্মা শুনলে রাগ করবেন, আপনাদের আপত্তি না থাকলে আমাদের বাসায় উঠতে পারেন।
না থাক বাবা তোমাদের কষ্ট দিয়ে লাভ নেই।
না না আনকেল আমাদের কষ্ট হবেনা, আপনারা কয়টায় আসবেন বলেন আমি পিক করে নেবো।
কাল সকাল ৮টার ফ্লাইট।
ঠিক আছে আনকেল আমি নিজেই আসবো আপনাদের পিক করতে।
ওকে বাবা, কাল দেখা হবে, আল্লাহ্ হাফেজ।
ভাইয়া কি ব্যস্ত, প্রিয়ন্তী অভির রুমের দরজা নক করে জানতে চাইলো।
না তেমন না আয়।
ভাইয়া মা জানতে চাইছে লাঞ্চ দেবে কিনা?
কয়টা বাজে, ঘড়ি দেখলো অভি, আচ্ছা দিতে বল আমি ১০ মিনিট পরে আসছি।
অভি ফোনটা নিয়ে অবণীকে কল দিলো, কয়েকবার রিং হতেই অবণী রিসিভ করলো।
সালামালেকুম, অবণী সালাম দিলো।
ওয়া আলাইকুম সালাম, কেমন আছো?
জি ভালো।
কবে যাচ্ছো তুমি?
আগামী পরশু সন্ধ্যায় ফ্লাইট।
আসলেই কি চলে যাচ্ছো, আসবেনা আর?
না।
তোমার বিয়ে কি আসলেই ঠিক হয়ে গেছে?
কেন বিশ্বাস হচ্ছেনা আপনার?
না না তা নয়, শুধু বলতে চাই তুমি যদি ফিরে আসো অফিসে জয়ন করতে পারো।
না লাগবেনা আর, ধন্যবাদ আপনাকে, আমি এখন বেরুবো তাই রাখছি।
ঠিক আছে, বাই, অপর পাশ থেকে ফোন কেঁটে দিলো অবণী আর অভি কিছুক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো এরপর বড় এক নিশ্বাস ফেলে স্বগতোক্তি করলো আমার কি দরকার ছিলো ওকে কল করার।
মা তোমার মনে আছে সাইদুল হক আনকেলকে, বাবার খুব ভালো বন্ধু ছিলেন, হক শিপিংয়ের মালিক।
হাঁ বাবা মনে আছে, শুনেছি উনার নাকি এখন নিজস্ব শীপইয়ার্ড আছে, বড় বড় শীপ বানান নাকি?
হাঁ, উনি তো এখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎতম শীপিং টাইকুন, মা উনি কাল আসছেন ঢাকায় উনার মেয়েকে নিয়ে, আমি আমাদের এখানে থাকতে অনুরোধ করেছি।
ভালো করেছিস বাবা, তোর বাবার মৃত্যুর পর উনি আমাদের অনেক খেয়াল রেখেছিলেন, খুব ভালো মানুষ উনি।
তা মা ঠিক বলেছো, এক কাজ করো উপরের দুইটা রুম ঠিক করে রাখো উনাদের জন্য, মা আমার খাওয়া শেষ আমি উঠছি বলে অভি উঠে বেসিনে গিয়ে হাতটা ধুয়ে নিজ রুমে চলে গেলো, রুমে এসে সোফায় বসে পিডিএ নিয়ে পড়তে শুরু করবে এই সময় নক করে অনামিকা ঢুকলো।
কি খবর তোমার আজ দেখছি তুমি চুপচাপ, অভি জিজ্ঞেস করলো।
অভি তোমার সাথে আমার একটু কথা ছিলো।
বলে ফেলো।
অভি জীবনে অনেক ভুল করেছি এমন কি তোমার সাথেও আমি বিটট্রে করেছি, জানি তুমি কখনো আমাকে এই জন্য মাফ করোনি আর এর বিপরীতে আমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি অনেক কিন্তু আমি ভেবে ছিলাম এতো বছর পর হয়তো তুমি আমাকে মাফ করে দিয়েছো, পরে বুঝলাম তুমি ভুলোনি সেইসব কথা।
অনামিকা কেনো এইসব কথা তুলছো আবার, আমি ওইসব মনে রাখিনি।
অভি তুমি কি জানো আমি কেনো তোমাদের বাসায় থেকেছি, শুধু তোমার জন্য।
মানে, অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো অভি।
অভি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
অভির ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটলো আর বললো, I never loved you.
___________ চলবে।
ছবিঃ Google
২৬টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
ভাইয়া সিরিজ মিলিয়ে চমৎকার ছবি দিচ্ছেন, সবগুলোই সুন্দর, তবে এইটা বেশি ভালো।
এইবার ঠিক আছে অভির স্ট্রেইটকাট 🙂
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অনিঃশেষ আপু, পাশে আছেন এই আমার শ্রেষ্ট প্রাপ্তি। 🙂
জিসান শা ইকরাম
চলছে চলুক
ভাল হচ্ছে গল্প 🙂
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাইজান পাশে থাকবেন। 🙂
অরুনি মায়া
ওহ অনেকগুলো খণ্ড প্রকাশিত হয়ে গেছে দেখছি | এখন পড়ে অবশ্য বুঝবনা কিছু | তবে শুভ কামনা রেখে যাচ্ছি |
ইঞ্জা
আপনার প্রতিও রইল অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
মিষ্টি জিন
ভালবাসা পূর্নতা আসে মিলনে আর বেঁচে থাকে বিরহে..
তা লেখকের ইচ্ছাটা কি?
যাই হোক না কেন মাথাটা সেইভে রাইখেন পার্টনার। :p
ইঞ্জা
^:^ মাথা সেইভ করেই চলছি কিন্তু গল্পের কারণেই কিছুটা এগোতে হচ্ছে পার্টনার। 😀
মৌনতা রিতু
মিছিলের জন্য রেডি। আর এক বাকের ভাইর ইতিহাস সৃষ্টি করবে সোনেলার পাঠকরা।
মাথা তাই সাবধান। 🙂 লেখক।
ইঞ্জা
এই সেরেছে, তাহলে তো কামারের দোকানে গিয়ে লোহার হেমলেট থুক্কু হেলমেট বানানোর অর্ডার দিতে হবে আমার সাইজের। :p
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
বাহ্!
আপনার লেখার ধৈর্য্য আর লেখুনি দেখে মুগ্ধ হইলাম ইঞ্জা ভাইয়া।
আর একটা প্রশ্ন ” ইঞ্জা কেমন নাম? কে রাখছে?
ইঞ্জা
ঠ্যালায় পড়ে ধৈর্যয ধরতে বাধ্য হয়েছিরে ভাই, ফেবুর Vaskar দাদাভাই চেপে ধরেছে। ;(
ইঞ্জা আমার ডাক নামের শর্ট, ইঞ্জিনিয়ারের ইঞ্জা আর রেখেছে আমার আব্বা। 🙂
মৌনতা রিতু
নতুন নায়িকা যোগ হচ্ছে নাতো ! তাই তো মনে হচ্ছে! জমবে তাইলে ভালো।
অনামিকা এবার ঠিক উত্তর পেয়েছে।
চলুক,,,,,,,,
ইঞ্জা
নতুন নায়িকা এনে একটা প্যাচ কষলাম আর কি। \|/
নীলাঞ্জনা নীলা
মজা পাচ্ছি অনামিকা যে এভাবে ধাক্কা খেলো। এসব মেয়েরা জীবনেও ঠিক হয়না। আজীবন দুই নম্বরী থাকে।
ইঞ্জা
একদম ঠিক বলেছেন আপু, এদের আমি একদম সহ্য করতে পারিনা। 😀
রিমি রুম্মান
লেখাগুলো সব জমিয়ে রেখেছি একসাথে পড়বো বলে। 🙂
ইঞ্জা
জমিয়ে রাখার দরকার নেই আপু, প্রথম থেকে শুরু করলে দেখবেন শেষটাও পেয়ে যাবেন কারণ ফুল স্পীডে গাড়ী চালাচ্ছি। 😀
মোঃ মজিবর রহমান
ইঞ্জা ভাই, এক্টার জ্বালায় থাকতে পারছিনা আবার এরেক্টা হাজির কি যে ঘটান ভাল লাগছে সিরিজ।
চলুক।
ইঞ্জা
😀 অবণী অনামিকা চলে যায় তাহলে অভি ফাকা মাঠ দিয়ে কি করবে ভাইজান।
ধন্যবাদ বারবার। 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
মাঝে ঠুকে যাক কিন্তু চোখের জ্লের নেই কোন দাম।
ইঞ্জা
সময় হোক দাম টাম সব মিলবে। 😀
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ভাইয়া ছবিটার দিকে ভাল করে তাকালেই বুঝা যায় অভির বিরহ এখনো রয়েছে…..সুন্দর।চলুক
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অনিঃশেষ, আজ ২০ তম দিলাম, পড়ে দেখবেন। 🙂
মারজানা ফেরদৌস রুবা
অনামিকা এমন একটা জবাব পাক, তাই চাচ্ছিলাম।
চলুক।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু, আপনারা পড়ছেন দেখে খুবই আনন্দিত হলাম। 🙂