বহুদূরে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে। সেই কবে থেকে একঘেয়ে একটা সময় কাটিয়ে যাচ্ছি। আজ সকালে দেশে মামনিকে ফোন দিলাম। বাপির সাথে কথা কম হয়। ব্রেন সার্জারির পর বাপির কথা জড়িয়ে গেছে। অথচ একসময় ঘন্টার পর ঘন্টা বাপির সাথেই আড্ডা। আজ মামনি বললো, “তোর বাপি মনে করে কেউ তাকে আর ভালোবাসেনা, অবহেলা করে।” ফোনটা বাপির কানে লাগানো হলো, তোমায় আমি এড়িয়ে চলি এটা কেন মনে হলো তোমার? ওপাশ থেকে সঙ্গে সঙ্গে আবদার “হেমন্তের গান কর তো।” কি বুদ্ধি জানে! গানের কথা বললে না করবো না। কারণ ওই মানুষটাকে যে আমি আমার সন্তানের মতোই ভালোবাসি। মায়ের মতো শাসন করি, বন্ধুর মতো গল্প করি। “অলির কথা শুনে বকুল হাসে…” অর্ধেক গাইলাম। বললাম মনে পড়ছে না। বললো যেটা মনে আছে সেটা গাইতে। “এতো সুর আর এতো গান…” সুবীর সেনের এই গান বাপির খুব প্রিয়। আমার সাথে হুহুহুহু করে গাইলো। বললাম এবারে মামনিকে দাও।
মামনির সাথে কথা বলছি, এমন সময় আমার প্রাইমারী স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক জসীম স্যার এলেন। স্যার আমার প্রিয় শিক্ষকদের একজন। যিনি আমায় প্রচন্ড ভালোবাসেন এখনও। “মা গো” এভাবেই ডাকেন। কথা বললাম। কবে আসবো দেশে, জানতে চাইলেন। বললাম আশা করি সামনের বছর। অমন সময় বললেন “যদি বাঁচি থাকি রে মা দেখা হইবো। আমরার লাগি দোয়া রাখিও।” বুকের ভেতর কেমন একটা যন্ত্রণা হচ্ছিলো। মামনিকে বললাম স্যারকে বলো মৃত্যুর কথা না বলতে এবং অবশ্যই দেখা হবে। বাপি অসুস্থ হয়ে পড়ার পর থেকে রোজ সকাল-বিকেল আসা-যাওয়া করেন স্যার। এমনকি প্রায়ই মামনিকে বাজারটাও করে দিয়ে যান। স্যার বলেছিলেন একদিন “মা গো বাড়ীর কাছে থাকি, তাই গো মা আইতে পারি।” বলেছিলাম বাড়ীর কাছে আরোও অনেকেই আছে স্যার। বরং আপনি বলুন নিজের মনের কাছেই রেখেছেন বাপি-মামনিকে, তাই রোজ খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। স্যার হেসে দিয়েছিলেন। জসীম স্যারের হাতেই প্রথম বেত দিয়ে মার খাওয়া। আমার অন্যায় ছিলো ক্লাশের অন্যান্যরা জোর করে আমাকে টেনে নিয়ে যায় স্কুলের বাইরে কি একটা জঙ্গলি ফল কুড়োতে। কেন গিয়েছিলাম সেখানে তার জন্য শাস্তি। বেতের একটা মারে হাত ফুলে ঢোল, ১০৩ ডিগ্রী জ্বর। অনেক ভোরে প্রায় পাঁচটার সময় স্যার এসে আমাদের বাসার দরোজায় কড়া নাড়লেন। বাপি খুলে দিয়ে অবাক। এখনও কানে আসে কন্ঠটা “আমার নীলা মা কই দাদা?” বাপি বললো আমার খুব জ্বর। তখন আমি অনেক ভোরে উঠতাম। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম স্যার বারান্দার চেয়ারে বসা। যেতেই দৌঁড়ে এসে কোলে নিয়ে বসালেন। হাতটা দেখে কি কান্না! তারপর বললেন কেন গেলাম আমি? “জানিতো তোমার কোনো দোষ নাই। কিন্তু সবে কইলো তোমারও তো দোষ, জোর করি হউক গেছিলায় তো!” আমি কিচ্ছু বলিনি। মনে হচ্ছিলো মার খেয়ে এভাবে সবচেয়ে রাগী স্যারের(স্কুলে উনি প্রচণ্ড কড়া শিক্ষক ছিলেন) আদর পাচ্ছি, সাথে চোখের জল। কি মজা! সেই স্যারকে ক্লাশ ফাইভের বৃত্তি পাবার পর একটা কলম দিয়েছিলাম এখনও আছে নাকি সেটা। এতোকিছু কেন বলছি, দেশ খুব টানছে। ওই মানুষগুলোর জন্য যাদের স্নেহ-আদর পেয়ে আজকের এই আমি। যদিও জীবনের ধারায় অনেকটাই পালটে গেছি, কিন্তু অনেক গভীরে সেই আমিটা ছটফট করে সেই সেখানে ফিরে যেতে। চাইলেই কি আর হয়? ঘুম আসছে না।
ভোর হয়ে আসছে সাড়ে চারটা বাজে। জানালা খোলা, হু হু করে বাতাস আসছে। অবশেষে গ্রীষ্মকাল চলেই এলো। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। নানা রঙের ফুলের মেলা। সবার মনে অন্যরকম আনন্দ। কথায় আছে না আবহাওয়া বদলে দেয় মানুষের মন? উঠে দাঁড়ালাম, ভুলেই গিয়েছিলাম এই বাসায় একটা বারান্দা আছে। ওয়াকারটাকে সরিয়ে রেখে কোনোরকমে বারান্দায় গেলাম। খোলা আকাশটাকে দেখে মনে হলো এও তো এক অন্যরকম একাকী আনন্দ!। হয়তো বেঁচে গেছি এসব নি:শব্দ এবং স্থির সৌন্দর্য অনুভব করার জন্যেই। অনেকগুলো মাস পর আবারও নিজেকে বললাম “আরোও বহুদূর যেতে হবে।”
এই দেখো,
এই যে আমি বেঁচে আছি।
ভালোবেসে এবং ভালোবাসা নিয়ে-দিয়ে বেঁচে আছি।
কুঁকড়ে কুঁকড়ে ভাবতাত্ত্বিক আত্মত্যাগী মানুষের মতো
অক্সিজেন গ্রহণ করতে চাইনা কিছুতেই।
আদান-প্রদান আছে বলেই বৃক্ষ বাঁচে, মানুষও।
সেই কথাই বলতে এসেছি,
শুধু দিয়ে যেতে নয়,
পাওয়ার জন্যেও এসেছি।
**১৬ নভেম্বর, ২০১৫ ইং-এর পর আজ আবার লিখলাম “এলোমেলো কিছু কথা” ধারাবাহিকটি। একে কোনোভাবেই সাহিত্যের কোনো ধারায় ফেলা যায়না। একসময় এই ব্লগের প্রায় অনেকেরই পছন্দের ছিলো এলোমেলো কথাগুলো আমার। এখন অনেক নতূনের সমারোহ আমাদের এই সোনেলা নীড়ে। সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। আর যারা আছেন সোনেলাকে ভালোবেসে, তাকে ছুঁয়ে তাঁদেরকে অশেষ ভালোবাসা। আমাদের এই সোনেলা শুধু একটি ব্লগ নয়, পাখীর নীড়। সোনেলার এই অঙ্গন কখনো শূণ্য হবেনা, কোনোদিনই না। কারণ এখানে নিঃস্বার্থ আবেগ আছে। নতূনদের বলছি লিখুন, পড়ুন এবং মন্তব্য করুন। ভালো থাকুন, তবেই না ভালো রাখতে পারবেন সকলকে।
ওহ একটি কথা না বললেই নয়, “অদেখা মন্তব্য” আমার যাচ্ছেইনা। প্রথম অদেখা মন্তব্যটা এভাবে আসছে— ”
“অদেখা মন্তব্য
রহস্য – ১ম পর্ব পোস্টে মন্তব্য করেছেন” কোনো নাম নেই। এমনকি পোষ্টও নেই। তাই পরেরগুলো যাচ্ছেনা। কি যে করি! এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চাই। হে দয়াময় মডু আপনি উদয় হয়ে উদ্ধার করুন এমন বিরক্তিকর যন্ত্রণা থেকে। ^:^
হ্যামিল্টন, কানাডা
১-লা জুন, ২০১৬ ইং।
দুটো ছবি-ই সেলফোনে তোলা। গ্রীষ্মের শুরু এখানে এই হ্যামিল্টনে।
৩০টি মন্তব্য
স্বপ্ন
বিদেশে যাইনি কখনো,তাই বুঝতে পারছি না প্রিয়জনদের অভাব বোধ। তবে বাসা হতে দূরে কোথাও গেলে মন কাঁদে।
অদেখা মন্তব্যের সমস্যা দূর হয়ে যাক।
এলোমেলো কথা নিয়মিত চাই।
নীলাঞ্জনা নীলা
অদেখা মন্তব্যের ঝামেলা থেকে এখনও মুক্তি পাইনি। কি যে করি!
সবাই বিদেশ আসতে চায়, আমি বেড়াতে চেয়েছিলাম, থাকতে নয়। কিন্তু ভাগ্য।
এলোমেলো কথা বুঝি বেশী ভালো লাগে?
ইকবাল কবীর
ভালো গেগেছে আপু, আরো লিখুন। দেশে আসার নাম নিলে আসলে আর কিছু ভালো লাগে না, আমি দেশে আসলাম ২৮ মে, যদিও দেশে একটু গরম কিন্তু ভালো লাগছে অনেক। ভাল থাকুন।
নীলাঞ্জনা নীলা
আর কবে যে যাবো দেশে, জানিনা।
মনটা খুব টানে।
বেড়িয়ে নিন, অন্যরকম আনন্দ আছে দেশের গরমে।
অপার্থিব
সাহিত্যের চলমান কোন ধারায় না পড়লেও সমস্যা নেই। সাহিত্য বা জীবন কোনটাই ষ্ট্যাটিক না। ভাল লেগেছে , আরো লেখেন এলোমেলো কিংবা গুছানো ভাবনা।
নীলাঞ্জনা নীলা
অসংখ্য ধন্যবাদ। এলোমেলো কথা ভালো লেগেছে জেনে সত্যি খুব ভালো লাগছে।
মোঃ মজিবর রহমান
এই দেখো,
এই যে আমি বেঁচে আছি।
ভালোবেসে এবং ভালোবাসা নিয়ে-দিয়ে বেঁচে আছি।
কুঁকড়ে কুঁকড়ে ভাবতাত্ত্বিক আত্মত্যাগী মানুষের মতো
অক্সিজেন গ্রহণ করতে চাইনা কিছুতেই।
আদান-প্রদান আছে বলেই বৃক্ষ বাঁচে, মানুষও।
সেই কথাই বলতে এসেছি,
শুধু দিয়ে যেতে নয়,
পাওয়ার জন্যেও এসেছি।
খুব ভাল লাগলো আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
মজিবর ভাই অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ইনজা
মন ছুঁয়ে যান প্রতিবার যেমন আজ আবার চোখের কোনে পানি এলো।
আসলেই আমি আসবো আসবো করে বেশ কয়েক বছর কেটে গেল আর এখন বুঝছি কি হারাচ্ছিলাম এই নীড়ে।
বাবা, মা, স্যার এর প্রতি আমার সালাম ও স্বশ্রদ্ধ সালাম।
নীলাঞ্জনা নীলা
দেশে বেড়িয়ে আসুন। আমার এ বছর যাবার ইচ্ছে ছিলো, এক্সিডেন্ট হলো আর কবে যে যাবো, জানিনা।
ভালো থাকুন।
সকাল স্বপ্ন
লিখায় — ভালো লাগার—– ধন্যবাদ—
নীলাঞ্জনা নীলা
আপনাকেও ধন্যবাদ পোষ্টটি পড়ার জন্য।
আবু খায়ের আনিছ
দিদি, পুরুনো স্বৃতিগুলো মনের কোঠরে উকিঁ মারে, আর এই লেখাগুলো সেগুলোকে চোখের সামনে নিয়ে আসে। ভালো থাকুক প্রিয়জন।
নীলাঞ্জনা নীলা
আনিছ ভাইয়া হুম সবার সব প্রিয়জনেরা ভালো থাকুক।
জিসান শা ইকরাম
এলোমেলো কথা কেন থেমে যায়? চালালেই তো পারো।
তোমার এমন এলোমেলো লেখায় বৈচিত্র্য আছে, নিয়মিত লিখতে থাকো এই সিরিজ।
মডুরা যে কৈ থাকে কে জানে?
আমারো এমন সমস্যা হয় মাঝে মাঝে, কিছুদিন পরে আবার কেটে যায়।
এমন সমস্যা হলে মোবাইল দিয়ে লগইন হই, এরপর অদেখা মন্তব্য ক্লিক করতে থাকি, একসময় চলে যায় সব।
এমন করে দেখতে পারো।
নীলাঞ্জনা নীলা
এলোমেলো লেখা চালাবো, কিন্তু চলার জন্য তোমার মতো চাকা তো দরকার। 😀
শোনো নানা অদেখা মন্তব্য ঠিক হচ্ছেনা কিছুতেই। ;(
মডুরা কই??? ;?
জিসান শা ইকরাম
বুড়া চাকা তো আছেই 🙂
অদেখা মন্তব্য মডুদের আওতার বাইরে মনে হয়, দেখি কি হয়।
জিসান শা ইকরাম
অদেখা মন্তব্যের সমস্যা বুঝেছি এখন। ব্লগার ‘রহস্য – ১ম পর্ব ‘ লেখাটি মুছে ফেলেছেন। মন্তব্যের জবাব দেখার আগেই মুছে ফেলা হয়েছে বলে সিষ্টেম ঐ মন্তব্য পাচ্ছে না। মডু গনের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
নীলাঞ্জনা নীলা
মডুগণ কই? একটি নিখোঁজ সংবাদ সোনেলা ব্লগের মডুদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। যে বা যারা উনাদের খবর এনে দেবেন তাদেরকে পুরষ্কৃত করা হবে সহস্র ধন্যবাদের সাথে। -{@
জিসান শা ইকরাম
নিখোঁজ সংবাদ দিতেই হবে বুঝা যাচ্ছে 🙂
জিসান শা ইকরাম
খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, দেখি কি হয়।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা যাক বাঁচলাম।
তবে আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করছি ব্লগে মন্তব্যের অভাব পড়ছে। ঠিক করেছি যারা আমার লেখায় মন্তব্য করবে, তাদের লেখাতেই আমি মন্তব্য করবো। আমি হিপোক্রেট নই যে বলবো মন্তব্য পাবার জন্য লিখিনা। লিখি কারণ সকলে পড়ুক, ধরিয়ে দিক লেখাটি ঠিক হচ্ছে নাকি!
মৌনতা রিতু
স্যারেরা মনে হয় এমনি।
এইসব লেখা সাহিত্যে যায় না !
এতো চমৎকারভাবে কয়েকটা সম্পর্কের টান নিয়ে এলে আপু। সত্যি তোমার লেখা মানেই তুমি। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু আমার এই স্যার জীবনের প্রথম প্লাটফর্ম তৈরী করে দিয়েছিলেন।
দেশ খুব টানছে আপু।
ভালো থাকুন। -{@
স্বপ্ন নীলা
খুবই যত্ন নিয়ে মন দিয়ে লেখা পড়লাম, পড়তে পড়তে কখন যে লেখার গভীরে চলে গিয়েছিলাম – বাবার কথাগুলো পড়তে যেয়ে আমার বাবার কথা মনে পড়ে গেল — বাবা না থাকার কী যে কষ্ট তা বোঝাতে পারবো না — সময় করে বাবাকে দেখে যান —
আপু ! ওয়াকার কেন !! কী হয়েছে আপনার !!!!! অনেক দিন ব্লগে ঢু দেই নাই — খুবই চিন্তায় আছি –
”যদিও জীবনের ধারায় অনেকটাই পালটে গেছি, কিন্তু অনেক গভীরে সেই আমিটা ছটফট করে সেই সেখানে ফিরে যেতে।”—হুমম এটাই বাস্তব সত্যি —
অনেক অনেক শুভকামনা
নীলাঞ্জনা নীলা
গতবছর গিয়েছিলাম, এবারও ভেবেছিলাম যাবো। কিন্তু এক্সিডেন্ট হলো আপু। গাড়ীর ধাক্কায় পেলভিক হাড় ভেঙ্গে গিয়েছিলো। এখন জোড়া লেগেছে, তবে ওয়াকার নিয়ে হাঁটাচলা করতে হচ্ছে। আশা করি কয়েক মাসের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবো। ভাববেন না।
তবে আসুন না, রোজ না হলেও সপ্তাহে একবার। কতোদিন আপনার লেখা পড়া হয়না। ভালো থাকুন।
ব্লগার সজীব
আপনার এলোমেলো কথা ভাল লাগে নীলাদি। পনের পাচ্ছি কবে? -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাভু বাইয়া আজকাল লেখায় বড়ো আলসে হয়ে গেছি। আসলে লিখতে পারিনা। জানিনা কেন!
তবে চেষ্টা থাকবে পনেরোকে তাড়াতাড়ি নিয়ে আসার।
ভালো থাকুন।
ব্লগার সজীব
অপেক্ষায় থাকলাম -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
অপেক্ষা আরোও কিছু দীর্ঘায়িত হবে ভাভু বাইয়া 🙂