আজ এই শহরে আকাশ আঁধার করা বৃষ্টি হচ্ছে। আমার বাবাকে যেদিন দাদার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে চিরতরে শুইয়ে রেখে আসা হলো, সেদিনও এমন দুনিয়া আঁধার করা অঝোর বৃষ্টি ছিল।
মনে পড়ে, পরীক্ষা শেষে এক ছুটিতে হোস্টেল থেকে বাড়ি ফিরলে বাবা আমার হাত দেখে আঁতকে উঠে। কাপড় ইস্ত্রি করতে গিয়ে হাতে সামান্য ফোস্কা পড়েছিলো। তাই দেখে বাবার কঠিন প্রশ্ন__ “হাত পুড়াইসোস্ ক্যামনে ? এতগুলো বছর যত্ন করে মানুষ করসি, একটা আঁচড়ও পড়তে দেই নাই। যেই না একলা চলা শুরু করলি, ওম্নি হাত পুড়াইয়া ফেললি ! ফোসকা ফালায়া দিলি ! ফোস্কা তো তোর হাতে পড়ে নাই, আমার কলিজায় পড়্সে।” আমি ভয়ে মিন্মিন করে বলি, “আব্বা, সামান্য একটু পুড়্সে”।
আরেকদিন ইডেন কলেজে সন্ধানী এলে দুই বান্ধবী মিলে রক্ত দেই। রক্ত দেবার পর মাথা ঘুরে পড়ে যাবার খবর মফঃস্বল শহরে আমার বাবার কানে পৌঁছাতে দেরী হয়নি। তিনি আমার বান্ধবীর বাসায় ছুটে গেলেন। ওঁর বাবাকে ক্ষোভের সাথে নালিশ করলেন এভাবে__ “পাটওয়ারী সাহেব, আমার মেয়ের এত সাহস নাই। আপনার মেয়ের পাল্লায় পড়ে সে-ও রক্ত দিসে। আমি খাওয়াই, পড়াই… আর রক্ত দেয় মাইনষেরে ! “
অতঃপর বান্ধবীর বাবা খুব ভোরের লঞ্চে ঢাকায় এসে হাজির। হোস্টেল গেটে দাঁড়িয়ে তিনি মেয়েকে ভীষণভাবে তিরস্কার করলেন এই বলে__ ” এত্তো বড় সাহস ! নিজে রক্ত ডোনেট করছস, ভাল কথা। আবার রব সাহেবের মেয়েরে নিয়া গেছোস সাথে !” বেচারা বান্ধবী কাচুমাচু করে বলল, ” আব্বা, আমি রিমিরে নেই নাই, ও নিজেই রক্ত ডোনেট করসে “।
বাবা যেমন একদিন আমার শরীরের সামান্য আঁচড়ে হুলুস্থুল বাঁধিয়ে ফেলতেন, ঠিক তেমনি ইদানিং বৃষ্টি এলে আমার ভেতরে হুলুস্থুল এক বিষাদ নেমে আসে। বুক চিরে কান্না পায়। কেবলই মনে হয়___ আহা রে, আমার বাবা’র দেহখানি তো প্যাক-কাদা’য় মাখামাখি হয়ে গেলো !
বাবাদের সবচেয়ে দরদের জায়গা তাঁদের কন্যা’রা।
পৃথিবীতে ” পিতা-কন্যা ” ভীষণ শক্তিশালী এক সম্পর্কের নাম।
বাবারা পুত্রের চেয়ে কন্যাকে বেশী শ্নেহ করেন 🙂 আমিই এর প্রমাণ। আপুকে আব্বু বেশী শ্নেহ করেন, আমার ছোট বেলায় খেলতে গিয়ে কত কাঁটা ছেড়া হয়েছে, তেমন আমলে নিতেন না আব্বু। কিন্তু আপু সামান্য একটু ব্যাথা পেলে, অসুস্থ হলে আব্বু হুলুস্থুল করে ফেলতেন।
পৃথিবীতে ” পিতা-কন্যা ” ভীষণ শক্তিশালী এক সম্পর্কের নাম…… একমত আপু। আপনার লেখা পড়ে বুকের মাঝে কেমন হাহুতাশ টের পাই।
পৃথিবীতে বাবার মত আর আছে কেবা।
বাবা” আমার আরেকটি পৃথিবী। পৃথিবীর একমাত্র শ্রদ্ধেয় পুরুষ।
আমার আদর্শ আমার বাবা।
বিনিময়ে বাবাকে আমি কিছুই দিতে পারলাম না।
সময় তো ফুরিয়ে যায়নি, আপু। বাবারা কন্যা’ দের কাছে কিছুই চায় না। চায় শুধু মায়া, ভালোবাসা। চায় শুধু চোখের সামনে থাকা। আগলে রাখুন বাবাকে। যেমন করে খুব ছোট্টটি থাকার সময় আমাদের আগলে রেখেছিলেন বাবা’রা। আপনার সুযোগ আছে। আমার সেই সুযোগ নেই। শুধু নামাজে দোয়া করি, সৃষ্টিকর্তা যেন আমার বাবাকে আগলে রাখেন। 🙁
বাবা যার কাছে চাওয়ার আগেই সব পাওয়া হয়ে যায়। চোখের জল ঝরে পড়ার আগেই শুকিয়ে যায়। কষ্টের ক্ষতের মলম হলো বাবা।
সেই বাবা যখন অসহায় হয়ে যায়, তখন তার সেই ক্ষতের মলম মেয়েরা হতে পারেনা।
আপু আমি ঈশ্বর নয়, আমার বাবা-মায়ের ভেতর দিয়ে ঈশ্বরকে দেখি।
আমরা মেয়েরা অনেক কিছুই চাইলেও পারি না। এটা আমাদের সীমাবদ্ধতা। যদি পৃথিবীর এত নিয়ম কানুন না থাকতো, তবে শেষ নিঃশ্বাস এর আগ অবধি বাবাকে আগলে রাখতাম। পাশে থাকতাম।
শেষ সময়টা আমার বাবা আমাকে দেখতে ভীষণ উদগ্রীব ছিলেন।
অনেক আকুতি মিনতি করেছেন একবার যেন দেশে যাই, দেখা দেই।
কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় ছিল না।
ভাল থাকুন, নীলা’ দি। 🙁
পৃথিবীতে “পিতা-কন্যা” ভীষণ শক্তিশালী এক সম্পর্কের নাম। ঠিক আপু। লেখাটি পড়ে মনটা খচখচ করে উঠলো, কতো কথা মনে পড়লো। বাবারা ভালো থাক, আমার সব আয়ু যেন আমার বাবা-মাকে দেয় আল্লাহ্ প্রার্থনা করি।
১৫টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
ইস্ দিলেন তো কন্যার কথা মনে করিয়ে।
অবশ্যই ভাল থাকবে কন্যারা পিতার প্রাণ হয়ে প্রাণে।
রিমি রুম্মান
শুধু আমার লেখায় কন্যা’কে মনে পড়লো ?
কন্যা থাকুক প্রতি মুহূর্তে, অনুভবে, হৃদয়ে।
ভাল থাকুন কন্যা’র বাবা। 🙂
ছাইরাছ হেলাল
নাহ্, আপনার লেখা দেখেই কন্যাকে মনে পড়েনি,
হৃদয়ে রাখা কন্যার জায়গাটিতে আবার হাত বোলালাম।
খসড়া
তুই কি আমার পুতুল পুতুল সেই ছোট্ট মেয়ে যাকে নিয়ে স্বপ্ন আমার ঝরতো দু’ চোখ বেয়ে।
রিমি রুম্মান
কন্যা’রা চিরকালই বাবা-মা’দের পুতুল পুতুল ছোট্ট মেয়ে হয়েই থাকে।
অনেক শুভকামনা রইলো। -{@
ব্লগার সজীব
বাবারা পুত্রের চেয়ে কন্যাকে বেশী শ্নেহ করেন 🙂 আমিই এর প্রমাণ। আপুকে আব্বু বেশী শ্নেহ করেন, আমার ছোট বেলায় খেলতে গিয়ে কত কাঁটা ছেড়া হয়েছে, তেমন আমলে নিতেন না আব্বু। কিন্তু আপু সামান্য একটু ব্যাথা পেলে, অসুস্থ হলে আব্বু হুলুস্থুল করে ফেলতেন।
পৃথিবীতে ” পিতা-কন্যা ” ভীষণ শক্তিশালী এক সম্পর্কের নাম…… একমত আপু। আপনার লেখা পড়ে বুকের মাঝে কেমন হাহুতাশ টের পাই।
রিমি রুম্মান
আমাদের বেলায়ও এমনটি হতো। আমাদের দুই বোনের প্রতি বাবার অসীম মমতা আর পক্ষপাতিত্ব ছিল। আবার অন্যদিকে আমার ভাইটি ছিল মায়ের এক খণ্ড আবেগ।
ভাল থাকুন, অনেক ভাল।
অরুনি মায়া
পৃথিবীতে বাবার মত আর আছে কেবা।
বাবা” আমার আরেকটি পৃথিবী। পৃথিবীর একমাত্র শ্রদ্ধেয় পুরুষ।
আমার আদর্শ আমার বাবা।
বিনিময়ে বাবাকে আমি কিছুই দিতে পারলাম না।
রিমি রুম্মান
সময় তো ফুরিয়ে যায়নি, আপু। বাবারা কন্যা’ দের কাছে কিছুই চায় না। চায় শুধু মায়া, ভালোবাসা। চায় শুধু চোখের সামনে থাকা। আগলে রাখুন বাবাকে। যেমন করে খুব ছোট্টটি থাকার সময় আমাদের আগলে রেখেছিলেন বাবা’রা। আপনার সুযোগ আছে। আমার সেই সুযোগ নেই। শুধু নামাজে দোয়া করি, সৃষ্টিকর্তা যেন আমার বাবাকে আগলে রাখেন। 🙁
আবু খায়ের আনিছ
পৃথিবীর সব বাবাই শ্রেষ্ঠ বাবা। ভালো থাকুক প্রত্যেক বাবা, আর ভালো থাকুক তার হৃদয়ের টুকরো রাও।
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন আপনিও।
শুভকামনা নিরন্তর। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
বাবা যার কাছে চাওয়ার আগেই সব পাওয়া হয়ে যায়। চোখের জল ঝরে পড়ার আগেই শুকিয়ে যায়। কষ্টের ক্ষতের মলম হলো বাবা।
সেই বাবা যখন অসহায় হয়ে যায়, তখন তার সেই ক্ষতের মলম মেয়েরা হতে পারেনা।
আপু আমি ঈশ্বর নয়, আমার বাবা-মায়ের ভেতর দিয়ে ঈশ্বরকে দেখি।
রিমি রুম্মান
আমরা মেয়েরা অনেক কিছুই চাইলেও পারি না। এটা আমাদের সীমাবদ্ধতা। যদি পৃথিবীর এত নিয়ম কানুন না থাকতো, তবে শেষ নিঃশ্বাস এর আগ অবধি বাবাকে আগলে রাখতাম। পাশে থাকতাম।
শেষ সময়টা আমার বাবা আমাকে দেখতে ভীষণ উদগ্রীব ছিলেন।
অনেক আকুতি মিনতি করেছেন একবার যেন দেশে যাই, দেখা দেই।
কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় ছিল না।
ভাল থাকুন, নীলা’ দি। 🙁
শুন্য শুন্যালয়
পৃথিবীতে “পিতা-কন্যা” ভীষণ শক্তিশালী এক সম্পর্কের নাম। ঠিক আপু। লেখাটি পড়ে মনটা খচখচ করে উঠলো, কতো কথা মনে পড়লো। বাবারা ভালো থাক, আমার সব আয়ু যেন আমার বাবা-মাকে দেয় আল্লাহ্ প্রার্থনা করি।
রিমি রুম্মান
ঠিক একই ভাবে বাবা-মা’ও তাঁদের সব আয়ু সন্তানের জন্যে কামনা করে থাকেন।
আপনার বাবা-মা ভাল থাকুক, অনেক ভাল।
শুভকামনা আপনার জন্যেও ।