বন্ধুবান্ধবরা বলে, “তোমার জীবনী লেখ।” সহকর্মীরা বলে, “রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাগুলি লিখে রাখ, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।” আমার সহধর্মিনী একদিন জেলগেটে বসে বলল, “বসেই তো আছ, লেখ তোমার জীবনের কাহিনী।” বললাম, “লিখতে যে পারি না; আর এমন কি করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলি জেনে জনসাধারনের কি কোন কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না। শুধু এইটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।”
একদিন সন্ধ্যায় বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দিয়ে জমাদার সাহেব চলে গেলেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা। কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হল। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য আমি পেয়েছিলাম। কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম।
হঠাৎ মনে হল লিখতে ভাল না পারলেও ঘটনা যতদূর মনে আছে লিখে রাখতে আপত্তি কি? সময় তো কিছু কাটবে। বই ও কাগজ পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে চোখ দৃইটাও ব্যথা হয়ে যায়। তাই খাতাটা নিয়ে লেখা শুরু করলাম। আমার অনেক কিছুই মনে আছে। স্মরণশক্তিও কিছুটা আছে। দিন তারিখ সামান্য এদিক ওদিক হতে পারে, তবে ঘটনাগুলি ঠিক হবে বলে আশা করি। আমার স্ত্রী যার ডাক নাম রেনু, আমাকে কয়েকটা খাতাও কিনে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিল। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কয়টা আমাকে দিয়েছেন। রেণু আরও একদিন জেলগেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। তাই আজ লিখতে বসলাম।
আমার জন্ম হয় ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে, আমার ইউনিয়ন হল ফরিদপুর জেলার দক্ষিন অঞ্চলের সর্বশেষ ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের পাশেই মধুমতী নদী। মধুমতী ফরিদপুর ও খুলনা জেলাকে ভাগ করে রেখেছে। টুঙ্গিপাড়ার শেখ বংশের নাম কিছুটা এতদঞ্চলে পরিচিত। শেখ পরিবারকে একটা মধ্যবিত্ত পরিবার বলা যেতে পারে। বাড়ির বৃদ্ধ ও দেশের গণ্যমান্য প্রবীণ লোকদের কাছ থেকে এই বংশের কিছ কিছু ঘটনা জানা যায়।
আমার জন্ম হয় এই টুঙ্গিপাড়া শেখ বংশে। শেখ বোরহানউদ্দিন নামে এক ধার্মিক পুরুষ এই বংশের গোড়া পত্তন করেছেন বহুদিন পূর্বে। শেখ বংশের যে একদিন সুদিন ছিল তার প্রমাণ স্বরুপ মোগল আমলের ছোট ছোট ইটের দ্বারা তৈরি চকমিলান দালানগুলি আজও আমাদের বাড়ির শ্রী বৃদ্ধি করে আছে। বাড়ির চার ভিটায় চারটা দালান। বাড়ির ভিতরে প্রবেশের একটা মাত্র দরজা, যা আমরাও ছোট সময় দেখেছি বিরাট একটা কাঠের কপাট দিয়ে বন্ধ করা যেত। একটা দালানে আমার এক দাদা থাকতেন। এক দালানে আমার এক মামা আজও কোনোমতে দিন কাটাচ্ছেন। আর একটা দালান ভেঙে পড়েছে।জানালা, যেখানে বিষাক্ত সর্পকুল দয়া করে আশ্রয় নিয়েছে। এই সকল দালান চুনকাম করার ক্ষমতা আজ তাদের অনেকেরই নাই। এই বংশের অনেকেই এখন এ বাড়ির চারপাশে টিনের ঘরে বাস করেন। আমি এই টিনের ঘরের এক ঘরেই জন্মগ্রহণ করি।
শেখ বংশ কেমন করে বিরাট সম্পদের মালিক থেকে আস্তে আস্তে ধ্বংসের দিকে গিয়েছিলো তার কিছু কিছু ঘটনা বাড়ির মুরুব্বিদের কাছ থেকে এবং আমাদের দেশের চারণ কবিদের গান থেকে আমি জেনেছি। এর অধিকাংশ যে সত্য ঘটনা এ সম্বন্ধে আমার কোন সন্দেহ নাই। শেখ বংশের সব গেছে, শুধু আজও তারা পুরাতন স্মৃতি ও পুরানো ইতিহাস বলে গর্ব করে থাকে।
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ শেখ মুজিবুর রহমান।
(পৃষ্ঠা নং-০১ থেকে ০৩)
চলমান……..
আগের লেখার লিঙ্কঃ বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি সম্বন্ধে কিছু কথা।
২৩টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
কত সহজ সরল ভাবে লেখা শুরু করেছেন বঙ্গবন্ধু
এই সহজ সরলতাই তাঁকে আপন, নিজেদের মানুষ বলে ভাবতে শিখিয়েছে
তিনি আমাদের মত আমাদেরই লোক……… এই ভাবনাই মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি।
আপনি তাহলে আরম্ভ করলেন
আপনার এই প্রচেষ্টা সোনেলার সম্পদ হবে অবশ্যই
শুভ কামনা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আরম্ভ করলাম নিজ উদ্যোগে, এবার এগিয়ে যেতে চাই আপনাদের সহযোগিতায়। সাহস যুগিয়ে পাশে থাকুন।
ইনশাআল্লাহ শেষ হবে।
তানজির খান
খুব ভাল লাগলো পড়ে। আপনার এই প্রচেষ্টা আমাদের সবাইকে সাহায্য করছে বঙ্গবন্ধুকে জানতে। শুভ কামনা রইল ।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
বঙ্গবন্ধুকে যতো বেশি লোক জানবে ততো বেশি তাকে ধারণ করবে আর ততোবেশি মানুষের মননজগতে পরিবর্তন আসবে। আর এতেই আমার প্রচেষ্টার সার্থকতা নিহিত।
নীলাঞ্জনা নীলা
ইতিহাস সকলে তুলে ধরতে পারেনা সহজে। বিশেষ করে রাজনৈতিক কিংবা ঐতিহাসিক ঘটনা।
আপু আপনি এমনভাবে লিখছেন যে পরবর্তী পর্বের জন্যে অপেক্ষা বেড়ে গেছে। -{@
মারজানা ফেরদৌস রুবা
চেষ্টা করছি বঙ্গবন্ধুর নিজের লিখা জীবনী হুবহু তুলে ধরার।
পাশে থাকুন।
নীলাঞ্জনা নীলা
আছি আপু। -{@
ছাইরাছ হেলাল
ভাবতে অবাক লাগে এই মহাপ্রাণ মানুষটি কত সহজ ভাবে লিখে নিজেকে
প্রকাশ করেছেন।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হ্যাঁ, লিখা পড়ে আমি মুগ্ধ! সহজ এবং সাবলীল।
শুন্য শুন্যালয়
আপু আরেকটু বড় করে, শুরু করতেই শেষ হয়ে গেছে 🙁
ভাবতেই কেমন লাগছে, এটা আমাদের প্রিয় মানুষ, আমাদের দেশের অগ্নী পুরুষের নিজের ভাষায় লেখা।
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু, অপেক্ষা করছি ২৪ ঘন্টা পার হবার।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
২৪ ঘন্টা কেনো? আমি তো প্রতি শনিবার পোস্ট দেবো।
অপার্থিব
লেখাটা একটু বেশিই ছোট হয়ে গেছে। পরের পর্বের অপেক্ষায়…
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ছোট দিচ্ছি, যাতে কেউ ধৈর্য হারিয়ে পড়াটা না বাদ দেয়, তাই।
ভোরের শিশির
বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ এইসব নিয়ে মন্তব্য করার মতো জ্ঞান আমার নেই তাই চুপেচাপে পড়তে থাকি আপু। -{@
মারজানা ফেরদৌস রুবা
মন্তব্য না করুন, অন্তত উপস্থিতিটা জানান দিন; বুঝে নেবো পাশে আছেন। নিচে সিম্বল কতোগুলো তো আছেই।
ভালো থাকুন।
ভোরের শিশির
হাহাহহা… আমি আপনার সব পোস্টই পড়ি আপু 😀
অনিকেত নন্দিনী
কী সহজ-সাবলীলভাবে বলতে শুরু করেছেন!
কোথাও কোনো বর্ণনার ঘনঘটা নেই।
পড়তে শুরু করতেই শেষ হয়ে গেলো। আরেকটুখানি বড় করা যায়না আপু?
মারজানা ফেরদৌস রুবা
বড় লিখা সহজে কেউ পড়তে চায় না। তাই ছোট করে দিয়েছি। পড়ার পাশাপাশি পাঠক যেনো অনুভবে ধারণ করতে পারে, সে চিন্তা থেকেই ছোট্ট।
আচ্ছা, মনে থাকবে পরামর্শ
মারজানা ফেরদৌস রুবা
অনিকেত নন্দিনী, আপনার মন্তব্যের জবাব দেয়াকালীন সময়ে আমি এতোই ঘুমে কাতর ছিলাম যে জবাবটি কমপ্লিট করার আগেই পোস্ট করে দিয়েছি। হাহাহা….
হ্যাঁ, আপনার পরামর্শটি মনে থাকবে। আপাতত চলুক। পাঠকপ্রিয়তা তৈরি হয়ে গেলে আরেকটু বড় করে দেবো।
এক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা আমার প্রচেষ্টাকে সফল করবে।
ব্লগার সজীব
প্রতিক্ষার অবসান হলো।প্রতি শনিবার অপেক্ষা করবো এই পোষ্টের। ধন্যবাদ আপু।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
খুশি হলাম শুনে ভাইয়া। অনেক ধন্যবাদ। (y)
মোঃ মজিবর রহমান
শুধু এইটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।”
তাঁদের চিন্তাভাবনা ধ্যানধারণা কত গভির আর কত সাদাসিদে
ভাবাই যায় না! কত কিছু করেও কত নিজেকে আড়াল করার কথা ভাবাআ যায়!
আর আমরা না করেই কত ভাবার ভাবি!
অনেক অনেক শিক্ষার আছে।
ধন্যবাদ আপু জানানা দেয়ার জন্য।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আস্তে আস্তে আরো অনেক কিছু জানবেন আর মুগ্ধতায় ভরে উঠবে মন।
ধন্যবাদ।