মধুমাসে কি বিষ খাবো?

মারজানা ফেরদৌস রুবা ২২ মে ২০১৫, শুক্রবার, ০৮:৪৭:৫৮পূর্বাহ্ন সমসাময়িক ২৭ মন্তব্য

জৈষ্ঠ্য মাস এসে ঢুকলো আজ প্রায় ৮ দিন। আবহমান বাংলায় এ মাসটিকে মধুমাস বলা হয়। প্রকৃতির অপার মহিমায় ষড়ঋতুর দেশ এই বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালের শুরুতে গাছ-গাছালি মৌসুমী ফলে পূর্ণ হয়ে উঠে। জৈষ্ঠ্যের প্রথম থেকে তা বাজারে আসতে শুরু করে। মধুমাসের এই ভরা মৌসুমকে কেন্দ্র করে একশ্রেনির অতি মুনাফালোভী, অসাধু কিছু ব্যবসায়ীদের শুরু হয় রমরমা বানিজ্য।

ফলের ভরা মৌসুম হলেও ফরমালিন ছাড়া কোন ফল বাজারে পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই থাকে না। অতি মুনাফালাভের জন্য ফলকে এরা দীর্ঘক্ষন তাজা রাখতে ব্যবহার করে ফরমালিন। অন্যদিকে রাসায়নিক দ্রব্য কারবাইড ব্যবহার করা হয় সহজে ফল পাকানোর জন্য। অতিমাত্রায় মুনাফা লাভের নেশায় আম গাছে না পাকিয়ে কাচা আম পেড়ে ফেলা হয় আর সুবিধামতো দূরদূরান্তে পার্সেল করার সময় কারবাইড মিশিয়ে পার্সেল করা হয়, যাতে এক রাতের মধ্যে আমগুলো পেকে যায়।

অথচ যারা এই বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান মেশান তারা যেনো অনেকটা এরকম যে, কাকের চোখ বন্ধ করে খাবার লুকানোর মতোই কাজটি করেন। একবারও ভাবেন না এই খাবারই যে আবার ঘুরেফিরে তাদের নিজেদের ঘরেই যাচ্ছে।

কৃষি ও স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী ফরমালিন দেহে গেলে ক্যান্সার, লিউকেমিয়া, কিডনি, চর্ম ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হয়। কার্বাইড মেশানো আম খেলে জন্ডিস, গ্যাসট্রিক, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও ক্যান্সার সমস্যা দেখা দেয়। নষ্ট হয়ে যায় কিডনি ও লিভার। গর্ভবর্তী মা এইসব বিষ মেশানো খাবার খেয়েই তার গর্ভের শিশুটিকে জন্ম দিবেন, ফলশ্রুতিতে আমরা পাবো অসুস্থ, অপুষ্ট ও বিকলাঙ্গ শিশু, যারা আগামীর ভবিষ্যত। চোখ বন্ধ করে একবার আগামীর বাংলাদেশকে দেখুন ভয়াবহতা টের পাবেন।

মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ নীরব এই গণহত্যা চালাচ্ছে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলছে এই গণহত্যা।

শুনেছি বিশ্বের সবচেয়ে বড় খুচরো পন্য বিক্রেতা আমেরিকার ওয়ালমার্ট তাদের লন্ডন শাখার জন্য বাংলাদেশ থেকে আম কিনবে। জানা যায়, গত বছর ওয়ালমার্টের প্রতিনিধিসহ একটি বিদেশী দল রাজশাহী, সাতক্ষীরাসহ কয়েকটি জেলায় উৎপাদনের প্রতিটি পর্যায় দেখার জন্য সরেজমিন পরিদর্শন করে। আমে কোন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহৃত হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত করার পর ওই আম জনস্বাস্থ্য বিভাগের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে নিরাপদ হিসেবে প্রমাণিত হওয়ার পরই ওয়ালমার্টে রফতানির অনুমতি পায়। অথচ আমার দেশে অতি মুনাফাখোর কিছু সরবরাহকারী নির্দ্বিধায় আম কে দীর্ঘক্ষণ সংরক্ষণের জন্য আমে বিভিন্ন রকম কেমিক্যাল মিশ্রণ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে রন্দ্রেরন্দ্রে দুর্নীতি মারাত্মকভাবে ছেয়ে আছে। এখানে সমস্টিগত উদ্যোগ ছাড়া রাষ্ট্র বা সরকারের একার পক্ষে এ অবস্থার পরিবর্তন আদৌ সম্ভব নয়। সরকারী উদ্যেগের পাশপাশি গণসচেতনতা না থাকলে সরকারী উদ্যোগও একসময় মুখ থুবড়ে পড়ে।
গতবছর এই মৌসুমী ফল নিয়ে ব্যাপক হাঙ্গামা হয়েছিলো। বোঝাই বোঝাই ট্রাকভর্তি আম নষ্ট করে ফেলা হয়েছিলো। রাজধানীতে ঢুকার চারটি পয়েন্টেই চেকপোষ্ট বসানো হয়েছিলো। তাতে যদিও বা আপাতদৃষ্টিতে দেখা গেছে ফল ব্যবসায়ীদের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু প্রকারান্তরে পুলিশের ওই সাঁড়াশি অভিযান মানুষকে দীর্ঘমেয়াদী বিষের ছোবল থেকেই বাঁচিয়েছে।

তাই বলছি, সজাগ হোন; ফলের নামে বিষ খেতে যাবেন না। আদর করে আপনি আপনার প্রিয় সন্তানটির জন্য বা অসুস্থ মা-বাবার জন্য সীজনাল ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন অথবা ভাবছেন সীজনের ফল কি করে সন্তানদের না খাওয়াই, সাহস করে তাই কিনেই নিলেন। চোখ বন্ধ করে একবার দেখুন তো আপনি ফলের নামে জেনেশুনে তাদের মুখে বিষ তুলে দিচ্ছেন কি না?

বিষমিশ্রিত বলে হয়তো ২/৩ সীজন আপনি ফল কিনতেই পারলেন না, তাতে কি? ফলের নামে আপনজনদের বিষ তো আর খাওয়াচ্ছেন না। এভাবে পরপর কয়েক বছর ব্যবসায়িক মার খেলে হয়তো অতি মুনাফালোভীদের চৈতন্য আসতেও পারে।

লিখে কিছু হোক বা না হোক, তাই বলেতো আর চুপ করে বসে থাকলে হবে না, যে যার জায়গা থেকে সরব থাকলে কিচ্ছু হবেনা এমনটা আমি বিশ্বাস করিনা। দেশের সিংহভাগ লোক না হয় অসচেতন কিন্তু সচেতন যারা তারাও হাত গুটিয়ে বসে আছে বলেই দিনকে দিন এদের দৌড়াত্ম্য বেড়েই চলেছে। গতবছর রাজধানীতে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের কারনে এবার হয়তো বিষ প্রয়োগের মাত্রা কমলেও কমতে পারে। তবে বাঙালীর তো আবার গোল্ডফিসের মেমোরী!
তাই বলছি, সজাগ হোন; সরব থাকুন।

৬০১জন ৬০১জন
0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ