‘ “হ্যালো, হুম, আব্বা, আমি একমাস পরেই আসবো। একটা ভেকেশন আছে তখন। ওকে। খোদা হাফেজ” ফোনটা কেটেই পাশে তাকিয়ে দেখে ক্লার্ক বসে আছে। ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। আগে কখনো কথা হয় নি ক্লার্কের সাথে। খুবই অমিশুক ছেলে। তবে জিনিয়াস হিসেবে পরিচিত। মোটা কাচের চশমার পেছনে নীল চোখদুটো জলজল করছে। গায়ের রঙটা ফর্সা হলেও চেহারায় অস্ট্রেলিয়ান ভাবটা নেই। ঠোঁট পাতলা, কোঁকড়া চুল।
ক্লার্ক বলল, “আমি ভেবেছিলাম, তুমি আপসেট থাকবে”
শরিফা পুরো আকাশ থেকে পড়ল। বাংলায় কিভাবে কথা বলছে ক্লার্ক? টোনে বিদেশী টান থাকলেও এতো নিখুঁত বাংলা জানাটাও অস্বাভাবিক।
ক্লার্ক আবার বলল, “Hey! Are you listening to me?”
“Yes, I am. তুমি বাংলা জানো?”
ক্লার্ক হাসলো। বলল, “শুধু বাংলা না, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, রুশ, মান্দারিন, কোরিয়ান, হিন্দী, উর্দু…”
“ বাস, বাস, হয়েছে। এতো ভাষা কিভাবে জানো?”
“শিখেছি”
“কেন?”
“আমার রিসার্চের জন্য”
“হুম”
“সিরিয়াসলি?”
“হুম”
“রিসার্চের জন্য ভাষা শেখার কী দরকার? অনুবাদ তো পাওয়াই যায়”
“হুম, তা যায়। কিন্তু অনুবাদগুলোতে অনেকসময় পুরোপুরি ভাবটা প্রকাশ হয় না অরিজিনাল বইয়ের”
“হুম। কী যেন বলছিলে?”
“আমি ভেবেছিলাম, তুমি আপসেট থাকবে”
“কেন?”
“বাংলাদেশ হেরে গেছে, তাই…”
“তা তো একটু আপসেট অবশ্যই। কিন্তু এখনো তো পাকিস্তান আছে। অস্ট্রেলিয়ার সামনে ঘোর অন্ধকার”
“পাকিস্তান! আমি ভেবেছিলাম, ইউ গাইজ হেট পাকিস্তান”
“কেন?”
“এক বাংলাদেশী ফ্রেন্ডের কাছে শুনেছিলাম অ্যাবাউট 71”
“সেটা অতীত। অতীতকে আঁকড়ে ধরে কতদিন? আর 71এর গন্ডগোলে বাংলাদেশ কী পেয়েছে?”
“গন্ডগোল?”
“হুম। আর ইন্ডিয়াকে বন্ধু ভেবে কী হল? অল দোজ বর্ডার কিলিংস, টিপাইমুখ বাঁধ, etc. আমরা 71এর আগেই বরং ভালো ছিলাম”
“ওর কাছে বর্ডার কিলিঙের কথাও শুনেছিলাম। কিন্তু ও বলেছিল, ও পাকিস্তানকে ঘৃণা করে, কখনো পাকিস্তানকে সাপোর্ট করবেনা”
“আমি বুঝি না কেন খেলার সাথে রাজনীতিকে মেশানো হয়!”
“সে বলেছিল, সে নাকি ফ্রীডম-ফাইটারের সন্তান”
“আমার আব্বাও একজন মুক্তিযোদ্ধা। উনিও খেলায় পাকিস্তান সাপোর্ট করেন। পুরোনো ভুল বোঝাবুঝির জন্য ২টি মুসলিম দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক খারাপ থাকতে পারে না, তাই না?”
“হয়ত। আমি তো জানি না ওসব। কিছু বলতে পারছি না”
“বাই দ্যা ওয়ে, তুমি কি আমাকে চেনো? তুমি আগে কখনো আমার সাথে কথা বলো নি”
“হুম, তুমি সরিফা”
“সরিফা না শরিফা”
“আমি ক্লার্ক”
“আমি জানি”
“তোমার রিসার্চের কি অবস্থা?”
“এই তো”
“এখনো অনেক বাকি”
“এক্সপেরিমেন্ট করছি”
“এক্সপেরিমেন্ট?”
“হুম”
“কী এক্সপেরিমেন্ট?”
“পরে কোন একদিন বলবো। স্যার চলে এসেছেন”
ক্লার্ক আবার প্রতিদিনকার মত একদম সামনের সারিতে গিয়ে বসলো। আগের মতই হাতঘড়ির পাশে প্রেস করল। আর লেকচার টুকতে লাগলো। সবার ধারণা হাতঘড়িতে রেকর্ডার আছে। লেকচার রেকর্ড করে ও। ক্লাস শেষে ক্লার্ক শরিফার কাছে এসে বলল, “তুমি কি আজকে ফ্রী আছো?”
শরিফা কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “হুম, আছি”
“বিকালে কি আমরা দেখা করতে পারি? কফি খাবো একসাথে”
শরিফা মৃদু হেসে বলল, “ওকে”
“তাহলে দেখা হচ্ছে বিকালে। বাই”
“হুম। বাই”
ক্লার্ক চলে যেতেই জেসিকা এসে বলল, “What happened to him?”
“I don’t know.”
“I think, he has fallen for you.”
“You think, ‘genius Clark’ has fallen for me?”
“Ya”
“He never asked any girl for coffee.”
“How could you be so sure?”
“Because I once asked him out. He replied, ‘I don’t like going out.’ I thought, he was gay. Now I think, he isn’t gay.”
“Good news for you”বলেই মুচকি হাসি দিল শরিফা।
শরিফা গাঢ় লাল রঙের টাইটফিটিং লংড্রেস পড়ল। সাথে লাল রঙের স্কার্ফ মাথায় হাল্কা করে পেচালো। গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক লাগালো ঠোঁটে। ইচ্ছে করেই আধাঘন্টা দেরীতে গেল কফিশপটায়। গিয়ে দেখলো, ক্লার্ক একটা বই নিয়ে পড়ছে। Meir H. Krygerএর “Principles & Practice of Sleep Medicine”। শরিফা ক্লার্কের টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ক্লার্ক মাথা তুলে বলল, “ইউ আর লেট”
“স্যরি”
“আমি আরো কিছু বলতে চাই”
“কী?”
“ইউ লুক অ্যামেজিং” শরিফা হাসল।
ক্লার্ক বলল, “এই কফিশপটায় আগে কখনো এসেছো?”
“না”
“এখানে মত ভ্যারাইটি আর কোথাও আছে কিনা আমার জানা নেই”
“তাই?”
“হুম। ম্যেনুটা দ্যাখো। কী অর্ডার দেবো তোমার জন্য?”
“তুমি নিজের জন্য কোনটা দিচ্ছো?”
“তোমাকে দেখে রেড ওয়াইন খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এটা কফিশপ। আই উইল হ্যাভ হোয়াইট কফি”
“হোয়াইট কফি? এটা কি ফ্ল্যাট হোয়াইট কফি?”
“উহু। এটা মালয়েশিয়ার ফেমাস কফি। আমার খুব ফেভারিট”
“আমার জন্য লাট্টে”
“ওকে”
ক্লার্ক অর্ডার করল।
শরিফা বলল, “তোমার রিসার্চ কতদূর?”
“থেমে আছে”
“কেন?”
“ইন্সপিরেশন পাচ্ছি না”
“ইন্সপিরেশন?”
“হুম”
“কী রকম ইন্সপিরেশন?”
“তোমার মত”
“স্যরি”
“তোমার কি ধারণা, ইন্সপিরেশন শুধু কবিদের লাগে?”
“না”
“Every person needs a muse in his life.”
“হয়ত”
ক্লার্ক শরিফার ঠোঁটের দিকে গাঢ় দৃষ্টি দিয়ে বলল, “তুমি কি এটা ইচ্ছে করে করছো?”
“কী?”
“তোমার ঠোঁটের উপর মিল্ক ফোম লেগে আছে। ডোন্ট ডু দিজ। আমাকে পক্ষে নিজেকে সংযত রাখা খুবই কঠিন হয়ে যাচ্ছে”
শরিফা টিস্যু দিয়ে মুখ মুছলো। শরিফা বলল, “আমি খুবই আনকমফোর্টেবল ফিল করছি”
“স্যরি। আসলে I’m very much attracted to you.”
“আমরা কি অন্য কোন ব্যাপারে কথা বলতে পারি না?”
“হুম, পারি”
“তোমার রিসার্চ সম্পর্কে বলো”
“অনেক কমপ্লেক্স”
“এক্সপ্লেইন করে বলো”
“কমপক্ষে ৪-৫ঘন্টা লাগবে এক্সপ্লেইন করতে। Why don’t you come to my place?”
“এখন?”
“যদি তুমি আনকমফোর্টেবল ফিল না করো”
“ওকে”
ক্যাবে উঠলো ক্লার্ক ও শরিফা।
ক্লার্ক বলতে লাগলো, “তুমি টাইম-ট্রেভেলের উপর মুভি দেখেছো?”
“হুম। প্রচুর দেখেছি”
“অনেকটা সেরকম”
“আর ইউ কিডিং?”
“নো”
“তুমি টাইম-মেশিন আবিস্কারের চেষ্টা করছো?”
“Did I mention “time-machine”?”
“টাইম-ট্রেভেল বলেছো। টাইম-মেশিন ছাড়া কিভাবে পসিবল?”
“তুমি ‘সমাধি’ সম্পর্কে শুনেছো?”
“কবর?”
“‘সমাধি’ ইয়োগা”
“না”
“সমাধি হল super-conscious state of mind. Meditationএর সর্বোচ্চ পর্যায়, যখন আত্মা দেহ থেকে বেরিয়ে যায় এবং আবার দেহে ফিরে আসে”
“হোয়াট?”
“ইয়াপ”
“ইউ বিলিভ ইন দোজ থিংস?”
“না। আমি এক্সপেরিমেন্ট করছি”
“কী রকম এক্সপেরিমেন্ট?”
এমন সময় ক্যাব এসে থামলো ক্লার্কের বাসার সামনে। ক্লার্ক বলল, “পৌঁছে গেছি। দিজ ইজ মাই প্লেস”
এপার্টমেন্ট ঢুকেই শরিফা দেখলো, সব কিছুই একদম অগোছালো। জিনিয়াসরা এমনই হয় বোধহয়। শরিফা এমনটাই এক্সপেক্ট করেছিল। ক্লার্কের পিছু পিছু ক্লার্কের বেডরুমে গেল শরিফা। ক্লার্ক বেডরুমের দরজা লাগিয়ে দিল।
শরিফা বলল, “এটা তো তোমার ল্যাব নয়, তাই না?”
“হুম” বলে শরিফার দিকে এগিয়ে গেল ক্লার্ক।
শরিফা দুষ্টহাসি দিয়ে বলল, “তোমার ল্যাব দেখাবে না?”
“I’m not in the mood. ল্যাব পরেও দেখানো যাবে” বলেই শরিফাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিল। শরিফা বলল, “কী করছো তুমি?”
“What I had been fantasizing from the first time I met you.”
রাত ৪টার দিকে শরিফার ঘুম ভাঙল। সে বিছানায় ক্লার্ককে দেখলো না। ফ্লোরে তাকিয়ে দেখলো, শুধু শরিফার নিজের জামা-কাপড় পড়ে আছে।
বিছানার চাদরটা গায়ে কোনরকম জড়িয়ে ক্লার্ককে খুঁজতে লাগলো শরিফা। ক্লার্কের এপার্টমেন্টটা বেশ বড়। খুঁজতে খুঁজতে ক্লার্কের ল্যাবে ঢুকল শরিফা। দেখল, ক্লার্ক ল্যাবের কম্পিউটারের সামনে বসে আছে। শরিফাকে দেখে মৃদু হাসল ক্লার্ক। শরিফা বলল, “তোমার ল্যাব তো অনেক বড়”
ক্লার্ক বলল, “আরো বড় করার ইচ্ছে আছে। থ্যাঙ্ক ইউ”
“থ্যাঙ্কস কেন?”
“আমাকে ইন্সপিরেশন দেয়ার জন্য”
“একরাতেই ইন্সপিরেশন পেয়ে গেলে?”
“আশা করছি, সামনের রাতগুলোতেও পাবো”
“তুমি কিছু একটা পরে এসো। নইলে আমার আরো ইন্সপিরেশন নিতে ইচ্ছে করবে”
শরিফা হেসে বলল, “আমি তো বাঁধা দিচ্ছি না”। তারপর মিনিটবাদেই লাল ড্রেসটা পরে এল। এসে বলল, “তোমার এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে বলছিলে”
“কোথায় ছিলাম?”
“সমাধি হল super-conscious state-”
“হুম। হিন্দু যোগীরা ধ্যানের সর্বোচ্চ লেভেলকেই সমাধি বলে থাকে, যখন আত্মা দেহ থেকে বের হয়ে যায়। আমি অনেকগুলো সিডেটিভ, হিপ্নোটিক, মাসল রিল্যাক্সান্ট, অ্যানেস্থেটিক ড্রাগ ও ডিফরেন্ট হারবাল থেকে একটা ড্রাগ কম্পোজিশন প্রিপেয়ার করেছি, যার মাধ্যমে আমরা deep sleepকে induce করি, যা অনেকটা সমাধির মত। তোমার শরীর প্রেজেন্টেই থাকবে, body reflex অর্থাৎ knee jerk, ankle jerk ইত্যাদি থাকবে কিন্তু কোন রেসপন্স থাকবে না, একটা coma-like state. স্লিপের ২টা ধরণ আছে। একটা হল REM স্লিপ অর্থাৎ Rapid Eye movement Sleep। REM স্লিপের স্বপ্নই মানুষ মনে রাখতে পারে। আরেকটা হল Non-REM বা Slow wave Sleep, যেটাকে ড্রীমলেস স্লিপও বলা হয় কারণ এই স্লিপের স্বপ্নগুলো মানুষের মনে থাকে না। নরমাল মানুষের ব্রেনের ইলেক্ট্রোএনকেফালোগ্রাম(Electroencephalogram)এ ঘুমানোর আগে আলফা, বিটা এবং স্লো ওয়েভ ঘুমের সময় ঠিটা, ডেল্টা ব্রেন ওয়েভ পাওয়া যায়। আর REM স্লিপের ব্রেন ওয়েভ ইরেগুলার ও হাই ফ্রিকোয়েন্সির হয়ে থাকে। সেজন্য REM স্লিপকে Dysynchronized স্লিপ বলা হয়ে থাকে”
“প্লিজ, স্টপ”
“কী হল?”
“এমনভাবে বলো, যাতে কিছু বুঝতে পারি”
“ওকে। আই অ্যাম ট্রাইং” বলে একটা ফাইল থেকে কিছু কাগজ বের করল। বলল, “এটা হল নরমাল একজন মানুষের ঘুমের সময়কার ইলেক্ট্রোএনকেফালোগ্রাম। আর এটা হল যখন বিভিন্ন সিডেটিভের সাথে ঐ ড্রাগটি দিয়ে নরমাল কাউকে ঘুম পাড়ানো হয়, তখনকার ইলেক্ট্রোএনকেফালোগ্রাম”
শরিফা হাতে নিয়ে দেখলো ঠিকই, কিন্তু কিছুই বুঝলো না। ক্লার্ক বলতে লাগলো, “ব্রেন ওয়েভগুলোতে অ্যাবনরমালিটি হতে পারে Epilepsy বা parkinsonism type disorderএ। কিন্তু এইরকম ধরণ কোন ডিসিজ বা প্যাথোলজীর সাথে যায় না। ঐ ড্রাগটি দেয়ার ফলে যে স্লিপ আমরা ইনডিউস করি, সেটা REM এবং Slow wave স্লিপের মাঝামাঝি কিছু একটা এবং সেটাতে ব্রেন ওয়েভ ইরেগুলার থাকা সত্ত্বেও একটা বিশেষ ওয়েভ আমরা পাই। সেই ওয়েভের সাথে কোন ওয়েভের ক্রাইটেরিয়া মেলে না”
“তুমি কি থামবে?”
“আমি আগেই বলেছিলাম, পাঁচ মিনিটে বোঝার বিষয় নয়”
“সামারি বলো”
“আমরা অন্যান্য সিডেটিভের সাথে ঐ ড্রাগটি যখন দেই, তখন পসিবলি আত্মা দেহ থেকে বের হয়ে যায়”
“কী?”
“ড্রাগটিতে কোন প্রকার Hallucinogen নেই”
“তুমি ট্রাই করেছো?”
“হুম”
“কার উপর?”
“আমার উপর। আমার অ্যাসিস্টেন্টের উপর”
“কোন গিনিপিগের উপর না করে মানুষের উপর করেছো কেন?”
“গিনিপিগের ভাষা আমার জানা নেই। ওর কথা বুঝবো না তাই”
“ওকে। ট্রায়ালের রেজাল্ট কী?”
“আমরা ২জনেই টাইম-ট্রেভেল করেছি। আমি আজ যে হোয়াইট কফি খেয়েছি, ওটা প্রথম কোথায় খেয়েছি জানো?”
“কোথায়?”
“মালয়েশিয়ায়। কিন্তু আমি কখনো মালয়েশিয়ায় যাই নি। তুমি চাইলে আমার পাসপোর্ট দেখতে পারো। হোয়াইট কফির পুরো নাম হল ‘ইপোহ হোয়াইট কফি’। তুমি ওটাকে এখানকার ‘ফ্ল্যাট হোয়াইট কফি’র সাথে মিলিয়ে ফেলেছিলে”
“আচ্ছা”
“কিন্তু আমরা ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছিলাম না। আমরা যেটা ভাবছি সেটা সত্য হলে, এটা হবে যুগান্তকারী আবিষ্কার। যেসব সত্য কখনো আলোর মুখ দেখেনি, সেসব সত্য আলোর মুখ দেখবে। অনেক বড় বড় রহস্য ও প্রশ্নের উত্তর মিলবে”
“Soul-travel! আত্মা এভাবে অতীতে যেতে পারে। ভবিষ্যতেও কি যেতে পারে?”
“না”
“শরীর যদি বর্তমানে থাকে, তাহলে আত্মা অতীতে গিয়ে কি ইনভিজিবল থাকে?”
“উহু, আমরা যতটুকু বুঝেছি, আত্মা অতীতে গিয়ে ঐ মুহূর্তের কোন অচেতন বা ঘুমন্ত শরীরকে বেছে নেয়”
“অতীতে গিয়ে আত্মা কি কিছু বদলাতে পারে?”
“না। শুধু উইটনেস করে, even mind of that body will be controlled by the unconscious body। আত্মা শরীরকে চুজ করলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না”
“টু কমপ্লেক্স”
“জানি। তুমি ট্রাই করবে?”
“মিউজ থেকে গিনিপিগ বানাচ্ছো?”
“যুগান্তকারী আবিষ্কারকে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হেলায় হারাতে চাও?”
“বাহ। এমনভাবে বাংলা বলছো যেন তুমি বাংলাদেশী”
“বাংলাদেশেও গিয়েছি আমি 71এ। যা দেখেছি, তা যেকোনো দুঃস্বপ্ন থেকেও ভয়াবহ”
“কি যে বলো!”
“আমি নিজে চোখে না দেখলে হয়ত বিশ্বাস করতাম না। মানুষ কতোটা হিংস্র হতে পারে। এতো রক্ত আমি কখনো দেখিনি”
“আমি সিওর। ভারতীয়দের প্রোপ্যাগান্ডা থেকে তোমার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। 71এ মোটেও ৩০লাখ হত্যা ও ২লাখ রেপ হয় নি। সব ভুয়া। ১লাখের মত মানুষ মরেছে, ২হাজারের মত রেপ। যেকোনো যুদ্ধেই অমন হয়”
“রবিনও দেখেছে”
“Shared Psychotic Disorder”
“হয়ত। Why don’t you let your soul visit 71?”
“মানে?”
“যদি আমাদের রিসার্চ ভুল হয়, আমি আর রবিন সাইক্রিয়াট্রিক কাউন্সিলিং নেয়া শুরু করবো। আর যদি রিসার্চ ঠিক হয়, 71এর আসল কালপ্রিটরা ধরা পড়বে। যাদের উপর ফলস অ্যাকুউজেশন আছে, তা মিথ্যা প্রমাণ করাও ব্যাপার না”
“ওকে। আমার আত্মা দেহ দখল করলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না বললে- তাই না?”
“হুম”
“কথাও কি অচেতন আত্মা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত?”
“হুম”
“Ok. Your muse is ready to be your guinea pig.”
ক্লার্ক শরিফাকে ল্যাবের ওটি-টেবিলের উপর শুতে বলল। রবিনকে ফোন করে আসতে বলল। শরিফা বলল, “তুমি ওকে কেন আসতে বললে?”
“সে আমার রিসার্চের সহযোগী”
শরিফা দেখল, ক্লার্ক অনেকগুলো ইনফিউশন সেট, স্যালাইন ব্যাগ বের করছে। শরিফার ভাইটাল সাইনগুলো দেখার জন্য টিভি মনিটর সেট করল, ইলেক্ট্রোএনকেফালোগ্রাফ মেশিন সেট করল। কিছুক্ষনের মধ্যেই রবিন চলে এল। শরিফার হাতে cannula ওপেন করে ইনফিউশন সেট যুক্ত করল রবিন। শরিফার ঘুম আসতে লাগলো। শরিফা বলল, “আমি অতীতে কোথায় যাবো?”
ক্লার্ক বলল, “বাংলাদেশে”
“বাংলাদেশে কোথায়?”
রবিন বলল, “মোহাম্মদপুর ক্যাম্পে যেতে পারো”
ক্লার্ক বলল, “উহু। তুমি যাবে যেখানে তোমার পরিবারের ঠিকানা”
“কখন ক’টায়?”
“৪ এপ্রিল ১৯৭১, সন্ধ্যা ৬টা”
শরিফা ঘুমিয়ে পড়ল।
শরিফা চোখ মেলল, সে শুয়ে আছে। বাসাটা চেনা চেনা লাগছে। রুমগুলো একইরকম। ফার্নিচারগুলো জায়গামত নেই। অনেক ফার্নিচার কখনো দেখেনি সে। বাথরুমের দিকে গেল মুখ ধুতে। আয়নায় তাকিয়ে দেখে সিঁদুর পরা ১৬-১৭বছরের সবুজ শাড়ী পরা তরুণীকে। শেষমেশ একটা হিন্দুমেয়ের শরীরে ওর আত্মা ঢুকেছে। বাথরুম থেকে বের হতেই সমবয়সী সালোয়ার-কামিজ পরা এক তরুণীকে দেখল। সে তাকে ‘দুর্গা’ বলে সম্বোধন করল। শরিফার আত্মা যে শরীরটির মধ্যে আছে তার নাম দুর্গা। দুর্গা মেয়েটিকে বলল, “মরিয়ম, কী হয়েছে?”
“আমি নামায পড়ব। কোথায় পড়ব?”
“নামাজের সময় হয়েছে?”
“হুম, হয়েছে। খুব চিন্তা হচ্ছে, জানো। আমি আর মা তো চলে এসেছি। কিন্তু বাবা ও ভাইজানের কোন খবর এখনো পাই নি। নামায পড়ার পর দোয়া-দরুদ পড়ব”
“আচ্ছা, চলো। আমি দেখিয়ে দিচ্ছি”
মরিয়ম ও মরিয়মের মা নামায পড়তে লাগলো। দুর্গা পাশের রুমে গিয়ে রেডিও ছেড়ে খবর শুনতে লাগলো। শরিফা দেখল, ধুতিপরা একজন এগিয়ে আসছে। খুব সম্ভবত দুর্গার স্বামী। সে বলল, “একটু চা করে আনো। বড্ড ক্লান্ত লাগছে”
“অফিস নেই। এতো ক্লান্তি কিসের?” বলেই দুর্গা রান্নাঘরের দিকে গেল। হঠাৎ দরজায় দড়াম দড়াম শব্দ। বাইরে থেকে শোনা গেল, বাঙালি কেউ একজন বলছে, “এটা হিঁদুবাড়ী”।
দরজা ভাঙ্গার শব্দ পেল দুর্গা রান্নাঘরে থেকেই। দুর্গা ভয়ে চুলার পাশে বসে পড়ল। বৈঠকঘরেই নামায পড়ছিল মরিয়ম ও মরিয়মের মা। দুর্গার স্বামী বৈঠকঘরে আসতেই গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ল। দুর্গা রান্নাঘর থেকে দেখতে পাচ্ছিল, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। পাকি ২জন সৈন্য মরিয়ম ও মরিয়মের মায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করতে লাগলো। মরিয়ম ও মরিয়মের মা চিৎকার করতে লাগলো। পাকি সৈন্য দুজনের পিছে লুঙ্গিপরা একজন দাঁড়াল, পেছন থেকে বাঙালি মনে হল। লুঙ্গিপরা লোকটা বলল, “এই বাসায় একটা হিঁদু মাইয়া থাকার কথা”বলেই পাশের রুমে গেল। দুর্গার হৃদস্পন্দন শরিফা টের পাচ্ছে। শরিফারও ভীষণ ভয় লাগতে শুরু করেছে। একটু পর এই ঘরটাতেও আসবে। কী করবে ও? মিনিটবাদেই লুঙ্গিপরা লোকটা রান্নাঘরে ঢুকল। শরিফা বিস্ফোরিত চোখে তাকাল। লোকটিকে সে চেনে, খুব ভালভাবে চেনে। শরিফার আব্বা। ভয়ংকর বীভৎস হাসি হাসছে লোকটা। শরিফা কথা বলার চেষ্টা করছে “আব্বা, না”, কিন্তু দুর্গা কোন কথা বলছে না। শরিফা দেখল, লোকটা তার সামনে এসে বসেছে। বলছে, “খানসাহেবেরা তো ব্যস্ত। আমি এসেছি। হিঁদু মেয়েদের কখনো ছুঁই নি। আজ তোকে ছোঁব, মাগি” বলেই দুর্গাকে মাটিতে ফেলে দিল। শরিফা কিছুই করতে পারছে না। কতক্ষণ দুর্গার শরীরে থাকবে ও? ওর শরীর ঘিনঘিন করছে। শরিফা শুনতে পেল, দুর্গা একা চিৎকার করছে না, মরিয়ম ও মরিয়মের মাও চিৎকার করছে। শরিফা দেখল, দুর্গার ব্লাউজ, পেটিকোট খুলে ফেলল আব্বা। এরপর নিজের লুঙ্গিটা খুলে ঝাঁপিয়ে পড়ল দুর্গার উপর। একটা সময় দুর্গার বাঁধা দেয়ার শক্তি শেষ হয়ে গেল। সারা শরীরের ব্যাথা অনুভব করছে শরিফা। শরিফার শুধু দেখার কথা। ও ব্যথা কেন অনুভব করছে? শরীরের প্রত্যকটা জায়গা কামড়িয়েছে লোকটা। লুঙ্গি পরে খানসেনাদের ডাক দিল। দুজন খানসেনা একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
ক্লার্ক বলছিল, Soul-travel কয়েকঘন্টার। শরিফার মনে হল, কয়েক যুগ ধরে ও আটকে আছে অতীতে। নিজের আব্বাকে এভাবে দেখবে ভাবে নি ও। শরিফার মনে হচ্ছে, ওর কোন শক্তি নেই। ও কোন দুঃস্বপ্ন দেখছে, এগুলো সত্যি নয়।
ঘন্টাখানেক পরে দুর্গা ও মরিয়মকে ট্রাকে তোলা হল। মরিয়মের মা জায়নামাযের উপরই মারা গেছেন। দুর্গা ও মরিয়ম শরীরে কোন রকমে কাপড় জড়িয়ে রেখেছে। ট্রাকে আরো দশ-বারো জন মেয়েকে দেখল। তাদের গায়েও নামমাত্র কাপড়ের টুকরো, কামড়ের জন্য রক্ত ঝরছে অনেকের। রাত আটটার মধ্যেই ট্রাক ভর্তি হয়ে গেল। ট্রাক থামল। ট্রাক থেকে নামানোর পর যাদের শরীরে যতটুকু কাপড় ছিল, খুলে ফেলে উলঙ্গ করা হল। শরিফার প্রচণ্ড লজ্জা লাগছিল, মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল।
শরিফা দেখল, কিছু মেয়েকে হেডকোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হল, বাকিদের ব্যারাকের ভেতর। যাদের জায়গা হল না ব্যারাকের ভেতর, তাদের বারান্দায় দাঁড় করিয়ে রাখা হল। দুর্গা ও মরিয়মের জায়গা হল ব্যারাকের ভেতরে। শরিফা দেখল, পাকসেনারা কুকুরের মত জিভ চাটতে চাটতে ব্যারাকের মধ্যে প্রবেশ করছে, উন্মত্ত অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে। মেয়েদেরকে টেনে নিয়ে লাথি মারতে মারতে মাটিতে ফেলেই ধর্ষণ করতে লেগে গেল তারা, পাগলের মত ধর্ষণ করছে। ধারালো দাঁত দিয়ে স্তন, গাল, ঘাড়, পেট, পিঠ, কোমর, নিতম্বের অংশ কামড়াতে কামড়াতে রক্তাক্ত করে দিচ্ছে। এক সৈনিক দুর্গার পাশে থেকে মরিয়মকে টান দিয়ে মাটিতে ফেলে দিল। শরিফা টের পেল, দুর্গার সব রোম খাড়া হয়ে গেছে। সেনা মরিয়মের কাছে যেতেই লাথি মারল মরিয়ম। পাকসেনা ক্ষেপে গিয়ে ওর চুল ধরে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। শরিফা টের পেল, দুর্গা স্মৃতিচারণ করছে।
দুর্গা মরিয়মকে বলতো, “মরিয়ম, তোমার বর তোমার চুল দেখেই পাগল হয়ে যাবে”
শরিফার মনে হতে লাগলো, ও নিজেই দুর্গা। শরিফা দেখল, সেনাটি বন্দুকের বেয়োনেট ঢুকিয়ে দিয়েছে মরিয়মের যোনিপথে। মরিয়ম চিৎকার করছে। শুধু মরিয়ম না ধর্ষিত হতে থাকা সব মেয়েই চিৎকার করছে। হঠাত দুর্গাকে একজন টান মারল, মাটিতে ফেলে দিল। আরো ২জন সেনা এগিয়ে এল। তিনজন মিলে দুর্গাকে ধর্ষণ করতে লাগলো, রক্তাক্ত করতে লাগলো। শরিফা ব্যাথায় চিৎকার করছে, কিন্তু দুর্গার চিৎকার শুনতে পেল না। ভোর রাতের দিকে দুর্গাকে ছেড়ে দিল তারা।
শরিফা ভেবেছিল, মরিয়ম বুঝি মারা গেছে। দূর থেকে দেখতে পেল মরিয়মকে, হেডকোয়ার্টারের উপরতলার বারান্দার মোটা লোহা তারের উপর চুলের সাথে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। শরিফা জানে না, বুঝতে পারছে না, দুর্গা কতক্ষণ ধরে কেঁদেছে। দুর্গার চোখের পানি এখনো আছে? শরিফা দুর্গার শরীরের সব ব্যাথা অনুভব করতে পারছে, কিন্তু চোখের পানিকে বুঝতে পারছে না। শরিফা আল্লাহকে ডাকছে, সে এই দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি চায়। ভোরের দিকে আরো গাড়ি এল। আবার শুরু হল। সব দেখছে শরিফা। কিছুক্ষণ আগে দেখলো একটা বাচ্চা মেয়েকে, যার বয়স ৮-৯এর বেশি হবে না। বারংবার ধর্ষণ শেষে দুইপা দুইদিকে থেকে টেনে নাভি পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলা হল।
শরিফা দেখতে লাগলো মরিয়মকে। হেডকোয়ার্টার ঢোকার সময় ও বের হবার সময় সৈন্যরা উন্মত্তভাবে আঘাত করতো মরিয়মকে, মরিয়মের সাথে ঝুলন্ত মেয়েদেরকে। ঝুলন্ত অবস্থাতেই মরিয়মকে পায়খানা করে দিতে দেখল শরিফা। টের পেল দুর্গা ঝুঁকে বমি করছে। আরেকটা মেয়ে, ১৩-১৪ বছরের হবে, দুর্গার কাছে এসে দুর্গাকে ধরে বসলো। শরিফা তাকিয়ে দেখলো, মনে হল, এই মেয়েটকে কোথাও দেখেছে সে। শ্যামলা মেয়েটার ঠোঁট পাতলা, কোকড়া চুল। মেয়েটা দুর্গাকে ধরে রাখল, বলল, “মেয়েটা তোমার সই?”
দুর্গা মাথা নাড়ল। মেয়েটা বলল, “ওদিকে তাকিয়ো না”। মেয়েটা দুর্গাকে বসিয়ে কোথায় যেন গেল। শরিফা দেখল, তার আব্বাকে মেয়েটা ডেকে নিয়ে এসেছে। মেয়েটা বলছে, “পানি লাগবে। পানি। পানি লাগবে”
শরিফার আব্বা বলছে, “কার লাগবে?”
মেয়েটা কিছু বলার আগেই শরিফা দেখল, শরিফার আব্বা লুঙ্গি খুলে দুর্গার মুখের উপর প্রসাব করে দিল। বলতে লাগলো, “লে, মাগি, পানি খা। প্রাণ ভরে খা”। প্রসাবের স্পর্শ গন্ধ সব টের পাচ্ছে শরিফা। গা ঘিনঘিন করতে লাগলো। ও কিছুই করতে পারবে না। দেখতে পারবে, অনুভব করতে পারবে। টাইম-ট্রেভেল আর কতোক্ষণ?
শরিফা টের পেল, দুর্গা মাটিতে শুয়ে পড়েছে। শুয়ে শুয়েই শরিফা দেখল, মরিয়মের ডান স্তনে ছুরি চালিয়ে কেটে নিয়ে গেল এক সৈনিক, দরদর করে রক্ত পড়ছে। আরেক সৈনিক মরিয়মের যোনিপথে লাঠি ঢুকিয়ে দিয়েছে। শরিফা চোখ বন্ধ করতে চাইছে, কিন্তু দুর্গা চোখ বন্ধ করছে না। সেই মেয়েটা এগিয়ে আসলো, দুর্গার মাথা কোলে তুলে নিয়ে বসে রইল। শরিফা টের পেল, দুর্গা বিড়বিড় করে অস্ফুট স্বরে কথা বলছে মেয়েটার সাথে। মেয়েটা দুর্গার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। শরিফা দেখলো, সূর্য মাথার উপরে। কিছু সৈন্য এসে মেয়েটাকে টেনে নিয়ে গেল, অন্যসব মেয়েদের সাথে কড়ারোদে দাঁড় করিয়ে রাখল। দুর্গা পড়ে রইল, কতক্ষণ শরিফা জানে না। পাঁচজন সেনা এসে দাঁড়াল দুর্গার সামনে। পাঁচজন মিলে আবার শুরু করল। দুর্গার ঠোঁটের দুদিকের মাংস টেনে ছিঁড়ে ফেলল। লোহার রড দিয়ে হাতের আঙুল থেতলে দিল। শরিফা চিৎকার করছে, কিন্তু দুর্গার মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। শরিফা টের পাচ্ছে, দুর্গার স্তনের উপর জলন্ত সিগারেট চেপে চেপে ধরছে। কিছুক্ষণ পর হাত ও পায়ের নখ দিয়ে মোটা সূচ ঢুকানো হচ্ছে। শরিফা সহ্যশক্তিও নেই, টের পেল, দুর্গা লাথি মারার চেষ্টা করছে, মেরেছেও ২টো। লাথি খেয়ে সৈন্যগুলো দুর্গাকে ফেলে রেখে যাচ্ছে। শরিফা ভাবল, শেষ বুঝি। কিছুক্ষণ পর পাঁচজন ফিরে এল গরম সিদ্ধ ডিম নিয়ে… শরিফা টের পাচ্ছে, দুর্গার যোনিপথে সিদ্ধ ডিম ঢোকাচ্ছে তারা। শরিফা চিৎকার করছে, কিন্তু দুর্গার মুখে শব্দ নেই। দুর্গার কোন নড়াচড়া নেই। শরিফা দেখলো, ঘন্টাখানেক পর দুর্গাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এই পাকি পুরুষদের নিয়ে একসময় কত ফ্যান্টাসি ছিল শরিফার… একটা জাতির সবাই এতোটা বর্বর কিভাবে হয়? শরিফা টের পেল, দুর্গা শুন্যে। হঠাত ধুপ করে পড়ল একটা বড় গর্তে। পচা গন্ধ টের পাচ্ছে শরিফা। শরিফার নিচে নগ্ন আরো অনেক মেয়ের শরীর। দুর্গার হাতের কাছে শরিফা ভাঙ্গা কাচের চুড়ি, চুলের স্পর্শ পেল। শরিফা চোখ বন্ধ করতে চাইছে, কিন্তু ওর নিয়ন্ত্রণে নেই দুর্গার শরীর। দেখল, আরো অনেকগুলো মেয়ের নগ্ন শরীর দুর্গার শরীরের উপর পড়ছে। সবার শরীর রক্তাক্ত, ছিন্নভিন্ন, এখানে ওখানে রক্তজমাট বেঁধে আছে। আচ্ছা, মেয়েগুলো কি বেঁচে আছে? শরিফা টের পাচ্ছে, দুর্গা মারা যাচ্ছে ধীরে ধীরে…
ক্লার্কের ওটির টেবিলে ওঠে বসলো শরিফা। মাথা ঝুকেই বমি করতে লাগলো।
ক্লার্ক ও রবিন তাকিয়ে আছে ওর দিকে। শরিফা ক্লার্কের দিকে তাকিয়ে বলল, “I need to go to hospital”
শরিফা thorough-check up করালো নিজের। কিছুই ধরা পড়ল না। নিজেই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকলো। ক্লার্ক ওর কেবিনে এসে বলল, “তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ। শুধু তোমার আত্মা গিয়েছিল অতীতে”
শরিফা কোন উত্তর না দিয়ে শুয়ে পড়ল।
সপ্তাহখানেকের মধ্যে শরিফা বাংলাদেশে ফিরল। শরিফা দেখলো, এয়ারপোর্টে আব্বার লোকেরা দাঁড়িয়ে আছে। শরিফার আব্বা ব্যস্ত মানুষ, ধর্মকর্ম নিয়ে থাকেন, অনেক শিষ্য তার। শরিফা বাসায় পৌঁছল রাত ১০টার দিকে। এই সেই বাসা। বাসাটার মাঝখানে তুলসী গাছের বেদী ছিল, সেটার জায়গায় স্নানঘর করা হয়েছিল। শরিফা বৈঠকঘরে গেল, কিছু সেগুন কাঠের আসবাব এখনো নষ্ট হয় নি। রান্নাঘরে গেল, উনুনটা আগের জায়গাতেই আছে। আম্মা অনেক অনুরোধ করা সত্ত্বেও শরিফা মুখে তুলে নি কিছু। না খেয়েই শুয়ে পড়ল। রাত ১২টা। শরিফা জানে, বাসার সবাই শুয়ে পড়েছে। শরিফা রান্নাঘরের দিকে গেল। রান্নাঘরে আলো জ্বলছে। শরিফা দেখল, তার ষাটোর্ধ আব্বা ১৩বছরের কাজের মেয়েটাকে… এই বাসার প্রথমদিনের অভ্যাসটা আজো যায় নি আব্বার। শরিফা বটি তুলে নিল, কোপাতে লাগলো, বলতে লাগলো, “আমি দুর্গা, আমি দুর্গা, আমি দুর্গা”। রান্নাঘরটা লাল হয়ে গেল, আর শরিফার পরনে সবুজ শাড়ী, শাড়ীটাও লাল হয়ে গেল। ঢাকার ড্রেনগুলো, রাস্তাগুলোও এমনই লাল হয়েছিল ৭১-এ… ’
শাওন বলল, “গল্প নিশ্চয় এতটুকু নয়?”
অপু বলল, “কিভাব বুঝলে?”
“টুইস্ট ছাড়া ডিরেক্টর অপুর মুভি হয় কখনো? আগের প্লটেও ছিল”
“তাহলে টুইস্টটা আন্দাজ করো”
“সম্ভবত এপিলগে থাকবে, সেই ১৩-১৪ বছরের শ্যামলা মেয়েটি বেঁচে ছিল। প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছিল। অস্ট্রেলিয়ান Dr. Geoffrey Davisএর অধীনে যে ৪লাখ ৪০হাজার মেয়ের অ্যাবরশন হয়েছিল তাদের মধ্যে সেও ছিল। যে ২লাখ ধর্ষিতার ভাগ্যে ছিল ঐ গর্তগুলোতে মৃত্যু, তাদের থেকেও খুব বেশি ভালো ভাগ্য হয় নি বাকি ৪লাখ ৪০হাজারের। মেয়েটিকে পরিবার গ্রহণ করেনি। পচাত্তরের পর যখন রাজাকারেরা ফিরে আসতে থাকে, সেরকম কোন এক সময়ে মেয়েটি দেশ ছেড়েছিল লজ্জা, কষ্ট, হতাশা ও অভিমানে। অস্ট্রেলিয়াতে এসে এক ফার্মাসিস্টকে বিয়ে করে। আর সেই ঘরের ছেলে হল ক্লার্ক”
অপু টেবিলে তুড়ি মেরে বলবে, “ভেরি গুড। এপিলগে দুর্গা ও সেই মেয়েটির ডায়লগ দেখানো হবে। মহিলা ক্লার্ককে তার স্মৃতির কথা বলবেন, দুর্গার কথা বলবেন”
“So it was preplanned by Clark.”
“হুম”
“আরেকটা ব্যাপার”
“বুঝেছি”
“কী?”
“আরেকটা রহস্য রেখে দেবো”
“শরিফার শরীরে কী শরিফাই ফিরেছিল? না দুর্গা?”
“এপিলগে ক্লার্ক বলবে, আত্মা অতীত ভ্রমণের সময় যে শরীরে আশ্রয় নিয়েছে, সেই শরীরের মৃত্যুতে কি হয়-সে জানে না। তার কোন ভিজিটেই শরীরের মৃত্যু ঘটে নি। তাই শরিফার শরীর কে- সে জানে না”
“হুম। শুরুটা অনেক বেশি Erotic। মুভিটা অনেক বেশি Vulgar হয়ে যাচ্ছে না?”
“Erotic দেখেই লোকজন দেখবে। ডকুমেন্টারি ফিল্ম ক’জন দেখে বলো? আমি আরো অনেক কিছুই ঠিক করেছি”
“কী?”
“আমরা ট্রেইলারে শুধু ক্লার্ক ও শরিফার সেন্সুয়াল সিনগুলোই দেখাবো”
“হুম। এতে দর্শক বাড়বে। প্রযোজকেরও মন ভরবে”
“হুম। কিন্তু মুভিতে রাখবো না। যারা masturbate করতে ঢুকবে, বমি করতে করতে বের হবে”
“আই থিঙ্ক, রাখলেও প্রব্লেম হবে না। ক্ষরণ দুদিক থেকেই হোক। নরমাল ইন্টারকোর্স ও রেপের ডিফরেন্সটাও ফুটে উঠবে, তাই না?”
“দেখা যাক”
“সেন্সরবোর্ড ছাড়পত্র দেবে কি?”
“সেন্সরবোর্ড কোনকালে কোন ভালো মুভিকে একবারে ছাড়পত্র দিয়েছে?”
[ বিঃ দ্রঃ বীরাঙ্গনাদের অত্যাচারের যে বর্ণনা দিয়েছি তা মাত্র কয়েকজন বীরাঙ্গনার স্বীকারোক্তি হুবুহু তুলে দিয়েছি। গল্পটি লেখার জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে খেটেছি। সঞ্জয় ভাইয়া, রুবা আপুর লেখা থেকে কিছু তথ্য পেলেও আরো অনেক তথ্যের দরকার ছিল। পাচ্ছিলাম না। অবশেষে পেলাম। ফাতেমা জোহরা আপুর কাছে পেলাম। তিনজনকেই ধন্যবাদ।]
অপু ও শাওনের গল্প :
অপুর ব্যক্তিগত গল্প :
শাওনের ব্যক্তিগত গল্প :
৪২টি মন্তব্য
খেয়ালী মেয়ে
কোন রকম বিরতি ছাড়াই পড়ে গেলাম–
কি লিখবো বুঝে উঠতে পারছি না, শুধুই ঘৃনা অনুভব করছি……..
কৃন্তনিকা
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ততদিন এই ঘৃণাটাকে বাঁচিয়ে রাখুন যতদিন না রাজাকারদের শাস্তি হয়…
জিসান শা ইকরাম
অসাধারন
আপনি যে লেখার বিষয়ে সম্পূর্ণ আলাদা,এটি আবার প্রমাণ করলেন।
১৯৭১ এর এই অধ্যায়কে যেভাবে আনলেন লেখায়,তা এমন ভাবে কেউ পারেনি আজ পর্যন্ত।
কৃন্তনিকা
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
গল্পটা লেখার জন্য অনেক খাটতে হয়েছে…
গল্পটা এতো বড় হয়েছে যে বুঝতে পারছিলাম না, পর্ব হিসেবে দিবো কিনা ভাবছিলাম… শেষে একবারেই দিলাম।
ব্লগার সজীব
এই লেখায় কি মন্তব্য করবো?কয়েকটি অংশ লেখায়।ধীরে ধীরে মন্তব্য করতে হবে।শরীফার মত প্রথমে আমারও দুর্বোধ্য লাগছিল।তিনবার পড়ে বুঝতে পেরেছি।যতবার পড়ছি পূর্বের বারের চেয়ে ভাল লেগেছে।
কৃন্তনিকা
এতো বড় লেখা তিনবার পড়েছেন? পড়ার জন্য ধন্যবাদ, তিনবার পড়ার জন্য আরো ধন্যবাদ :p
আরো মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম কিন্তু সজীব ভাইয়া… 🙂 🙂 🙂
মন্তব্য না পেলে কিন্তু খবর আছে :@
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
লেখা শুরু আইডিয়াটা বেশ চমকপ্রদ একজন বিদেশীকে দিয়ে যুদ্ধের ভয়াবহতা সৃষ্টিতে আপনি সফল। -{@
কৃন্তনিকা
পড়ার জন্য ধন্যবাদ 😀
আমার লেখা আপনার কাছে সফল মনে হচ্ছে জেনে ভালো লাগলো।
ব্লগার সজীব
এই প্লটে আমাদের দেশে কোন মুভি সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র দেবে না এটি নিশ্চিত।বিদেশে এই মুভি বানাতে হবে।
কৃন্তনিকা
হুম… দেবে না হয়ত
মুক্তিযুদ্ধের উপর ভালো মুভি বানানোর জন্য পরিচালকও দেশে নেই। না আছেন জহির রায়হান, না আছেন তারেক মাসুদ, না আছেন হুমায়ুন আহমেদ…
যে দেশে ‘মাটির ময়না’র মত ভালো মুভি ছাড়পত্র পায় না, সেখানে ভালো কিছু আশা করাও বোকামি হয়ত…
ব্লগার সজীব
শরিফা নিজেই তার বাবাকে খুন করেছে।কারন শরিফা অতীতে ছিলনা তখন।তাই না আপু?
কৃন্তনিকা
শরিফা একজন যুদ্ধাপরাধীর সন্তান যে কিনা স্বাধীনতাকে গন্ডগোল মনে করে। এমন একটি চরিত্রের হুট করে ভালো হয়ে যাওয়াটা অবাস্তব। পুরো গল্পটাই অবাস্তব। কিন্তু এমন কল্পনাকে আমরা ভালবাসি।
আমি নিজেও জানি শরিফার শরীরে কে? কারণ বিশ্বাস হয় না শরিফার মত মানুষেরা ভালো হয়ে যেতে পারে, কিন্তু বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়… তাই এটা রহস্য…
কৃন্তনিকা
*জানি না
রিমি রুম্মান
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখাগুলো বরাবরই মনোযোগ দিয়ে পড়ি ভালোলাগা নিয়ে। ভাললাগলো ।
কৃন্তনিকা
পড়ার জন্য ধন্যবাদ 🙂
ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো…
স্বপ্ন
এই প্লটে একটি মুভি বানালে নতুন প্রজন্ম আর পাকিদের সাপোর্ট করতো না।কত ভয়াবহ ছিল এই সব অত্যাচার।অথচ এর তেমন প্রচার নেই।অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তুলে এনেছেন সব কিছু।
কৃন্তনিকা
হয়ত… নতুন প্রজন্ম জানেই না বা জানতে চায় না পাকিদের এসব নৃশংসতার কথা। এসব ইতিহাসকে মুছে ফেলা হয়েছে, হচ্ছে, হবে। এসবের প্রচার কিভাবে হবে?
আমি নিজেও খুব কম জানতাম। কিন্তু জানতে চাইতাম।
আমার মনে হয় না নিষ্ঠার সাথে তুলে ধরতে পেরেছি, তবে আমি চেষ্টা করেছি। আসলে ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়ত সম্ভব না।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ 🙂
ফাতেমা জোহরা
দুর্দান্ত লিখেছেন আপু !! এরকম টাইম ট্রাভেলের কোন ব্যবস্থা থাকলে আসলেই আমি বেজন্মাগুলোকে ৭১ এ একবার ফিরে যেতে বলতাম। আমি আর কিছু লিখতে পারছি না আপু। এরকম কোন লেখায় কেন যেন কোন মন্তব্য আসে না। অসাধারণ লিখেছেন আপু 🙂
কৃন্তনিকা
আমারো ছোটকাল থেকে এই ইচ্ছে ছিল, বেজন্মাগুলোকে ৭১এ পাঠানোর ইচ্ছে বোধ হয় আমার একার নয়, সকল ‘প্রকৃত’ বাংলাদেশীর।
এই লেখাটা লেখার জন্য অনেক সমস্যায় পড়েছিলাম। সেটা ছিল যথেষ্ট তথ্য ও জ্ঞানের অভাব। অনেক জায়গা খুঁজেও কিছু পাচ্ছিলাম না। সেই সমস্যা থেকে আমাকে উদ্ধার করেছেন আপনি। এই লেখাটা আপনার সহযোগিতা ছাড়া লেখা সম্ভব ছিল না। সেজন্য আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। -{@ -{@ -{@
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনার দুর্দান্ত লেগেছে জেনে অনেক ভালো লাগলো 😀
দুর্দান্ত কাজগুলো করছেন আপনি… সে তুলনায় আমার কাজ অতি নগণ্য।
ফাতেমা জোহরা
এইভাবে বলবেন না আপু 🙂 আমাদের সকলের দায়িত্ব আমাদের শেকড়ের প্রকৃত অনুসন্ধান বের করা। আমাদের জন্মের ইতিহাস, এই মানচিত্রের ইতিহাস, লাল সবুজ পতাকার ইতিহাস শুধু ইতিহাস নয় “প্রকৃত-সত্য-সঠিক” ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেয়া। আর এইজন্য যেকোন ভাবেই আমাদের এগুতে হবে, হোক সেটা গল্প, উপন্যাস,কবিতা, ডকুমেন্টারি,প্রবন্ধ কিংবা আরো অন্যরকম কোন উপায়!! আমাদের উচিৎ ৭১ সম্পর্কে আমাদের কাছে থাকা তথ্যগুলো সকলের কাছে ছড়িয়ে দেয়া। আর এটা আমাদের দায়িত্ব, আমি সেই দায়িত্ববোধ থেকেই কাজটা করেছি আপু। আর এ আর এমন কি কাজ! এতে বরং আমি তৃপ্তি পাই। আমি চাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের একটি ছেলেমেয়েও যাতে একাত্তরকে একটা “সামান্য গণ্ডগোল” না ভাবে, তাঁরা যেন শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিতে না ভোগে, তাঁরা যেন আমাদের বীরাঙ্গনা মায়েদের নিজের “মায়ের” চোখে দেখে। আর আমার এই চাওয়াটা পূর্ণ করা আমার একার পক্ষে অসম্ভব। তাই আপনারা যখন এতো সুন্দরভাবে নিজ নিজ প্রতিভায় একাত্তরকে এতো চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেন, তখন কি যে এক প্রশান্তি লাগে মনে বোঝাতে পারবো নাহ্। এইভাবেই লিখে যান আপু, দরকার পরলে রক্তের শেষ বিন্দু দিয়ে সাহায্য করবো। আবেগাপ্লুত হয়ে যাচ্ছি আপু। আর লিখতে পারছি না।
ভালো থাকুন, শুভকামনা রইলো (3
কৃন্তনিকা
আমিও সেই দিনের অপেক্ষায় আছি যেদিন সবার নিঃশ্বাস বিংশ শতাব্দীতে থাকলেও বিশ্বাস থাকবে ৭১এ…
বীরাঙ্গনা মায়েরদের চোখের জল পূর্ণ মর্যাদা যেন পায়-এই আশায় আছি…
আপনিও ভাল থাকবেন। শুভকামনা আপনার জন্য (3
নুসরাত মৌরিন
স্তব্ধ হয়ে পড়লাম।
কখনো কখনো ভাষাকেও কম মনে হয় অভিব্যক্তি প্রকাশের জন্য।
এত কষ্ট হচ্ছে,মাথা ঝিম ঝিম করছে।
এমন অসাধারন করে কিভাবে লেখেন আপু?আচ্ছন্ন হয়ে যাই!!
কৃন্তনিকা
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আচ্ছন্ন করতে পেরেছি জেনে ভালো লাগলো।
আমরা বীরাঙ্গনাদের সম্পর্কে কিঞ্চিৎ পড়েই স্তব্ধ হয়ে যাই। বীরাঙ্গনারা যখন দেখেন তাদের সাথে অন্যায়কারীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের কি অনুভুতি-সেটা ভাবার শক্তিও বিধাতা আমাদের দেন নি… শুধু একটাই প্রার্থনা, পশুগুলোর শাস্তি হোক।
আজিজুল ইসলাম
বর্বর এক জাতির একাত্তরের উপাখ্যান সুন্দর ও প্রাঞ্জলভাবে উপস্থাপনের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জনাবা আপনাকে।
কৃন্তনিকা
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। 🙂
আপনার কাছে সুন্দর ও প্রাঞ্জল লেগেছে জেনে আনন্দ হচ্ছে। ভালো থাকবেন।
লীলাবতী
ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করলেন ৭১ এর এই অত্যাচারের সত্যি ঘটনাকে।এসব ঘটনাকে দিয়ে মুভি বানালে তা মানুষ জানতো বেশী করে।আপনার প্লটটি ভাল হয়েছে আপু।আপনার উপস্থাপনা অনন্য।
কৃন্তনিকা
হুম, ঠিক বলছেন। মুভি হলে সবাই বেশি জানতে পারতো। আমাদের অকৃতজ্ঞ জাতি বিজয় দিবসের তারিখ মনে রাখতে পারে না, কিন্তু কোন হিন্দি ছবিতে সানি লিওনের গান আছে-সেটা তারা জানে।
চাওয়া একটাই, সবাই একাত্তর সম্পর্কে জানুক। যে যেভাবে পারি, সেভাবে উপস্থাপন করবো।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। 😀 ভালো লেগেছে যেহেতু লেখা সার্থক আমার… 🙂
লীলাবতী
লেখাটি পড়ার পুর্বে ভেবেছিলাম এত বড় লেখা!পড়ার পরে মনে হচ্ছে লেখাটি এত ছোট কেনো,আর একটু বড় হলে ভাল হতো।
মেহেরী তাজ
হাত পা কাঁপছে…..
পড়বো কি না ভেবে ভেবে পড়েই ফেললাম…..
আপনি বেশি ভালো লিখেন, হবে না। সময় নিয়ে আরো দু এক বার পড়তে চাই।
কৃন্তনিকা
লেখার সময় কয়েকবার আমারো কেঁপেছিল, আরো বেশি কেঁপেছিল যখন বীরাঙ্গনাদের কথাগুলো পড়ছিলাম বিভিন্ন জায়গায়… বোধহয় আজীবন কাঁপিয়েই যাবে আমাদের ৭১ এবং ৭১এর স্মৃতি।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। 🙂
পড়ুন যতোবার খুশি…
শুন্য শুন্যালয়
কিছু কিছু অংশ এড়িয়ে গিয়েছি। এগুলো পড়ার মতো সাহস করে উঠতে পারিনা। অনেক অনেক অনেক ভালো লিখেছেন। যাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ একটা গন্ডগোল, যাদের কাছে মুসলিম দেশের বিভক্তি মনে হয়, তাদেরকে একবারের জন্য টাইম ট্রাভেল করানো যেতো!!
আপনি অনেক ভালো লেখেন কৃন্তনিকা। মুগ্ধ হয়েছি এভাবে 71 কে তুলে আনা দেখে।
কৃন্তনিকা
পড়ার জন্য ধন্যবাদ 🙂
মুগ্ধ হয়েছেন জেনে ভালো লাগলো।
আমরা সবাই এমনটাই চাই, তাদের যদি একবার ট্রেভেল করানো যেত অতীতে…
নীতেশ বড়ুয়া
শুন্যাপু!!! অনেক অনেক বেশী ধন্যবাদ এই অসাধারণ প্লটের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যে…
শুন্য শুন্যালয়
মাই প্লেজার 🙂
নীতেশ বড়ুয়া
সমাধি হল super-conscious state এ শরিফাকে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত যেভাবে এই মেডিটেশনের অবস্থাকে এক্সপ্লেইন করা হয়েছে তা ‘Inception’ মুভিতেও দেখানো হয়েছে তবে থিয়োরিটিক্যেলি মুভিতে এক্সপ্লেইন করা হয় নাই। সেখানে ঘুম বা স্বপ্নের স্তরের মধ্যে ঘুম পাড়িয়ে মেডিটেটেড ব্যক্তিকে বিভিন্ন সময়ে পরিভ্রমণ করা দেখানো হয়েছিলো একই রুপে। আর এখানে সঠিকভাবে মেডিটেটেড অবস্থায়। মেডিটেশনেও বলে মেডিটেশনের মধ্যে আত্মাকে সময়ের আগে ও পরে। অর্থাৎ আত্মাকে নিয়ন্ত্রণ করার অতি প্রাচীন ও মডারেট পদ্ধতিই হলো মেডিটেশন। চমৎকার করে পুরোতা প্রকাশ করেছেন- এক শব্দেঃ অনবদ্য।
শরিফা যখনি দূর্গার শরীরে ভর করে আর হানাদারের আক্রমণ শুরু তার পর থেকে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গিয়েছে আক্ষরিক অর্থেই। আমার অনেক পুরনো অভ্যেস হচ্ছে যা পড়ি তা পড়তে পড়তেই ইমাজিন করা… আপনি আবারো আমাকে নিয়ে গেলেন আপনার প্লটের সাথে প্রতিটি চরিত্রে সেই সময়ে। এই অর্থে বলতে পারি আপনার লেখায় আপনি পাঠককে (অন্তত আমাকে) সমাধি হল super-conscious state-এ নিয়ে যেতে পেরেছেন সম্পূর্ণ শারীরিক অনুভূতির মধ্যে না হলেও মানসিক অবস্থায়।
ভাবছি, ‘Inception’ মুভিটি যতোটা মানুষকে ভাবিয়েছে অতোটা করে এই প্লটটি যদি ভিজ্যুয়াল মিডিয়াতে প্রকাশ পায় তবে আসলেই কি আমাদের বর্তমানের দেশপ্রেমীদেরকে ছুঁয়ে যাবে?
আবারো বলতে ইচ্ছে হয়ঃ ব্লগিং বুঝি না তাই সবার পোস্টে যাওয়া হয় না, ছদ্মনামে বলে অস্বস্তি হয় কারণ অন্তর্জালের মুখোশ আর বস্তবের মুখ চিনিনি আজও তাই। তবে তথাকথিত ব্লগিং যা হয় আর আপনি যা করছেন সেভাবে যদি সামাজিক মাধ্যমেও আসতেন তবে নিশ্চিত আরো অনেককেই ভাবাতো…আপনার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং বাকিদের প্রতি একই শ্রদ্ধা রেখেই বলছি- আপনার এই চিন্তাগুলোর শব্দরূপকে পর্দায় দেখতে চাই।
কৃন্তনিকা
অনেকদিন পর সোনেলায় আসলাম।
আপনার বিশাল মন্তব্য দেখে ভালো লাগলো। গল্পটা লেখার জন্য অনেক গবেষণা করতে হয়েছে। আমার গবেষণা বিফলে যায় নি 🙂
আমিও চাই, গল্পটি ভিজুয়ালাইজড হোক। এমন কোন গল্পকার পৃথিবীতে নেই যে এমন চায় না… এই যুগে এই গল্পের উপর মুভি করবে কে?
আমার গল্পটি সামাজিক মাধ্যম ‘ফেসবুক’এও প্রকাশিত (কিছু সংখ্যক মানুষকে ভাবাতে পারলেও, সংখ্যাটা নগণ্য)।
পর্দায় দেখানোর ক্ষমতা আমার নেই। আপনিই পরিচিত পরিচালক থাকলে তাকে বলবেন 😛
ভালো থাকবেন।
নীতেশ বড়ুয়া
আপনাকে ফেসবুকেই তো পেলাম না অনেক খুঁজেও 🙁
এইরকম এক্সপেরিমেন্টাল প্লট নিয়ে কেউ মিডীয়াতে যাবে কি না আমার সন্দেহ আছে কারণ ইদানিং ভাল গল্পের প্লটে ভিজুয়াল মিডিয়াতে কাজ হয় কম। এখন শুধু উনিশ-বিশে সামাজিক বক্তব্য, লুতুপুতু প্রেম আর টোটকা গানের উপরেই সব…
ফেসবুকে যদি এই প্লটের সিক্যুয়েল-প্রিক্যুয়েল দেয়া থাকে তো প্লীজ জানাবেন…
কৃন্তনিকা
ফেসবুকে আমার অরিজিনাল নাম দিয়ে আইডি। তাই খুঁজে পান নি। আমি কিন্তু আপনাকে অনেক আগেই দেখেছি ফেসবুকে… আপনি তো বড় ব্লগার
জ্বি, খুবই দুঃখের বিষয় যে আজকাল ভালো বিষয়ের উপর কিছু তৈরি হয় না। আমাদের এ যুগের সেসব শিশুরাও জি বাংলার ‘কিরণমালা’কে চেনে, যারা কিনা ‘কখ’ লিখতে পর্যন্ত পারে না। এজন্য আসলে মিডিয়াই দায়ী।
আমার ফেসবুকের সকল কিছুই সোনেলায় আছে…
আপনার বিপুল আগ্রহ দেখে ভীষণ ভীষণ এবং ভীষণ আনন্দ অনুভব করছি।
নীতেশ বড়ুয়া
আপনার বাকি সিকুয়্যেল, প্রিকুয়্যেল পড়লাম মাত্রই। নাহ্! আপনাকে বলার কিছু নেই শুধু পড়ার নেশায় থাকছি প্রতিবার 🙂
কৃন্তনিকা
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। 🙂
পড়াশেষে মন্তব্য করতে ভুলবেন না যেন…
পাঠকের মন্তব্যই লেখকের সম্পদ।
নীতেশ বড়ুয়া
আপনাকে আপনার লেখায় মন্তব্য করতে আপনার প্লটের চারপাশের অনেক কিছুই জেনে নিতে হবে। নচেৎ শুধু ভিজুয়ালাইজড করেছি শব্দ লিখেই আমার সমস্ত অনুভূতি প্রকাশ করতে হয়… ;(
কৃন্তনিকা
প্রিকুয়াল বা সিকুয়াল না হলেও প্রকাশিত শেষ গল্প “সওদা” পড়ে দেখতে পারেন। এই গল্পটি পড়ার জন্য আশেপাশের প্লট জানা লাগবেনা :p
আপনার মন্তব্য যত দেখছি, তত খুশি লাগছে…